প্রত্যাবর্তন: শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টি খেলবেন বুমরা।
যশপ্রীত বুমরা ফিট কিন্তু ফিটনেস সার্টিফিকেট দেবে কে?
এ নিয়ে গত আটচল্লিশ ঘণ্টা ভারতীয় ক্রিকেট তোলপাড় হওয়ার পরে অবশেষে সুরাহা মিলল। রাহুল দ্রাবিড় পরিচালিত জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমি বুমরার ফিটনেস পরীক্ষা নিতে অস্বীকার করার পরে ভারতীয় দলের ফিজিয়োই সবুজ সঙ্কেত দিয়ে দিলেন। তার ভিত্তিতে বুমরা ফিরছেন দ্রুতই। নতুন বছরে শ্রীলঙ্কা আসছে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে। প্রথম ম্যাচ গুয়াহাটিতে ৫ জানুয়ারি। সেখানেই দেশের জার্সিতে প্রত্যাবর্তন ঘটছে বুম বুম বুমরার।
কিন্তু যে ভাবে তাঁকে দুয়ারে দুয়ারে ঘুরতে হল ফিটনেস সার্টিফিকেট পাওয়ার জন্য, কে বলবে তিনি দেশের সেরা পেসার! কারও কারও মতে, সমস্ত ধরনের ক্রিকেটে বিশ্বেও তিনি এক নম্বর! আজ পর্যন্ত এমন ঘটনা শোনা যায়নি যে, দেশের প্রধান সম্পদ এক পেসারের মুখের উপরে তাঁর দেশের জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমি বলে দিচ্ছে, তোমার ফিটনেস পরীক্ষা আমরা নেব না! বুমরার অপরাধ? জাতীয় অ্যাকাডেমির অত্যন্ত বিতর্কিত ফিজিয়োর কাছে না গিয়ে অন্য এক পেশাদারের কাছে চোটের পরে রিহ্যাবিলিটেশন করতে যাওয়া।
প্রশ্ন উঠছে, বুমরাই বা জাতীয় অ্যাকাডেমির বিশেষজ্ঞদের অবজ্ঞা করে দিল্লি ক্যাপিটালসের ফিজিয়োর কাছে গেলেন কেন? এ নিয়ে কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে সাপ বেরিয়ে পড়ার মতো হয়েছে। অভিযোগ, জাতীয় অ্যাকাডেমির ফিজিয়ো আশিস কৌশিক ঠিক মতো চোটের পরিচর্যা করতে পারছেন না। ক্রিকেটারেরা রীতিমতো আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন তাঁর কাছে রিহ্যাব করতে যাওয়ার কথা শুনে। ওয়াকিবহাল মহলের কারও কারও কথায়, ‘‘ঋদ্ধিমান সাহা থেকে শুরু করে মহম্মদ শামি, ভুবনেশ্বর কুমার— সকলেরই খুব ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা হয়েছে জাতীয় অ্যাকাডেমিতে চোট সারাতে গিয়ে। বুমরা ভারতীয় দলের সম্পদ। ওর ব্যাপারে ঝুঁকি নিতে চায়নি কেউ।’’
শোনা যাচ্ছে, ভারতীয় দল পরিচালন সমিতির সঙ্গে আলোচনা করেই জাতীয় অ্যাকাডেমি-মুখো হননি বুমরা। এর আগে জাতীয় অ্যাকাডেমিতে রিহ্যাব করতে গিয়ে ঋদ্ধিমান সাহাকে কাঁধের চোট নিয়ে ভুগতে হয়েছে। শেষ পর্যন্ত অস্ত্রোপচার করাতে হয় ঋদ্ধিকে এবং আঠারো মাস আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বাইরে থাকেন তিনি। ভুবনেশ্বর কুমারের চোটের রিপোর্ট কুলদীপ যাদবের বোলিংয়ের চেয়েও রহস্যময় হয়ে উঠেছে। চোট পাওয়া ভুবি বেঙ্গালুরুর জাতীয় অ্যাকাডেমিতে রিহ্যাব করে মাঠে ফিরে আবিষ্কার করেন, বলের গতি অবিশ্বাস্য ভাবে কমে গিয়েছে। এখানেই দুর্ভোগ শেষ হয়নি, স্পোর্টস হার্নিয়াও ধরা পড়েছে তাঁর। দুই পাণ্ড্য ভাই জাতীয় অ্যাকাডেমিতে রিহ্যাব করতে গিয়ে হোঁচট খেয়েছেন। হার্দিক এখনও মাঠের বাইরে। তাঁর দাদা ক্রুণাল কয়েক মাস আগে বুমরার মতো জাতীয় অ্যাকাডেমিতে যেতে অস্বীকার করেন। কেদার যাদব এবং মহম্মদ শামিরও জাতীয় অ্যাকাডেমিতে যাওয়ার অভিজ্ঞতা ডিজনিল্যান্ড ভ্রমণের মতো চমকপ্রদ কিছু নয়।
বিশ্বস্ত সূত্রের খবর, অতীতের এই সব ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা মাথায় রেখেই বুমরাকে বেঙ্গালুরু পাঠানো হয়নি। এবং সিদ্ধান্ত যে ঠিকই ছিল তার প্রমাণ হচ্ছে, বুমরা চোট সারিয়ে সম্পূর্ণ সুস্থও হয়ে গিয়েছেন। বিশাখাপত্তনমে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ওয়ান ডে ম্যাচের আগে ভারতীয় দলের নেটে এসে সম্পূর্ণ শক্তিতে বোলিংও করেন। তখন নেটে অনেকেই তাঁকে খেলতে গিয়ে নাকানিচোবানি খেয়েছেন। সে দিনই তাঁর এক প্রস্ত ফিটনেস পরীক্ষা নিয়েছিলেন দলের ফিজিয়ো এবং ট্রেনার। সেই পরীক্ষার ভিত্তিতে ‘ফিট’ আখ্যা দিয়ে দেওয়া হয়েছে বুমরাকে। হার্দিকের মাঠে ফিরতে আরও কয়েক দিন লাগবে। তিনি এখনও পুরোমাত্রায় ব্যাটিং, বোলিং করার মতো জায়গায় আসেননি।
কিন্তু কে দলে আসবে বা আসবে না, তার চেয়েও বড় প্রশ্ন হচ্ছে, জাতীয় অ্যাকাডেমির আকাশে ঘুরতে থাকা ফিটনেস বিতর্কের কী করে নিষ্পত্তি হবে? বল এখন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের কোর্টে। এক দিকে ক্রিকেট মাঠের প্রাক্তন সতীর্থ রাহুল দ্রাবিড়। যিনি এখন জাতীয় অ্যাকাডেমির প্রধান এবং কাঠগড়ায় থাকা ফিজিয়োর পাশে দাঁড়িয়ে বুমরাকে বেঙ্গালুরু থেকে ফিরিয়ে দিয়েছেন বলে খবর। অন্য দিকে, নিরপেক্ষ চোখে অ্যাকাডেমির গলদ ছানবিন করার ডাক এবং প্রয়োজন পড়লে সঠিক পেশাদার নিয়োগ করে ক্রিকেটারদের আস্থা ফেরানো। সৌরভ ইতিমধ্যেই বলেছেন, জাতীয় অ্যাকাডেমির মাধ্যমে সকলকে আসতে হবে। কিন্তু ক্রিকেটার মহলে যা পরিস্থিতি, কেরিয়ার শেষ হওয়ার আতঙ্ক বাড়িয়ে অ্যাকাডেমির বিতর্কিত ফিজিয়োর ডিসপেনসারিতে নাম লেখাতে চাইছেন না কেউ। ক্রিকেটারদের কাছে এখন বেঙ্গালুরু যাওয়ার চেয়ে সান্তা ক্লজের উপহারে চোট সেরে যাওয়ার অপেক্ষা করা ভাল। দ্বিতীয়টা তা-ও ঘটতে পারে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy