কীর্তি: ৬০০ উইকেট নিয়ে অ্যান্ডারসন। ছবি: গেটি ইমেজেস
ক্রিকেট বিশ্বের প্রথম পেসার হিসেবে টেস্টে ৬০০ উইকেট পেলেন ইংল্যান্ডের জেমস অ্যান্ডারসন। অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে মঙ্গলবার বৃষ্টিবিঘ্নিত সাউদাম্পটনে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তৃতীয় টেস্টের পঞ্চম দিনে এই নজির গড়লেন ইংল্যান্ডের সুইং তারকা। পাকিস্তানের আজ়হার আলি তাঁর ৬০০তম শিকার। প্রথম স্লিপে জো রুটের কাছে ক্যাচ দিয়ে আউট হন আজহার।
২০০৩-এ টেস্ট অভিষেক হয় অ্যান্ডারসনের। এখনও পর্যন্ত খেলেছেন মোট ১৫৬টি টেস্ট। উইকেট সংগ্রাহকের তালিকায় টেস্টে তিনি চতুর্থ। তাঁর আগে যে তিন জন আছেন, সকলেই স্পিনার। মুথাইয়া মুরলীধরন (৮০০), শেন ওয়ার্ন (৭০৮) এবং অনিল কুম্বলে (৬১৯)। সাউদাম্পটনের এই টেস্ট অ্যান্ডারসন শুরু করেছিলেন ৫৯৩ উইকেটে দাঁড়িয়ে। দুর্দান্ত সুইং বোলিংয়ের নিদর্শন রেখে প্রথম ইনিংসে ৫৬ রানে পাঁচ উইকেট তুলে নেন তিনি। দ্বিতীয় ইনিংসে পাকিস্তানের আবিদ আলিকে এলবিডব্লিউ করে তিনি ৫৯৯ শিকারে পৌঁছন। তার পরেই শুরু হয় মাহেন্দ্রক্ষণের অপেক্ষা।
চতুর্থ দিনে মন্দ আলোর জন্য তাড়াতাড়ি খেলা শেষ হয়ে যায়। শেষ দিনেও মাঠ ভিজে থাকায় দেরিতে খেলা শুরু হয়। অন্তত চারটি ক্যাচও পড়ে তাঁর বোলিংয়ে। তাতে হতাশা আরও বেড়েই যাচ্ছিল। অবশেষে দিনের খেলা শুরু হওয়ার পরে তাঁর ১৪তম ডেলিভারিতে অতিরিক্ত বাউন্স পেয়ে যান তিনি। তাতেই থতমত খেয়ে সামলাতে না পেরে প্রথম স্লিপে রুটের কাছে ক্যাচ দিয়ে যান আজহার। শেষ পর্যন্ত তৃতীয় টেস্ট ড্র হয়ে যায়। ইংল্যান্ড তিন টেস্টের এই সিরিজ জিতল ১-০ ফলে। ২৬৭ রান করে ম্যাচের সেরা জ্যাক ক্রলি। সিরিজ সেরা জস বাটলার।
টেস্টে সর্বোচ্চ দশ উইকেটশিকারি
• মুথাইয়া মুরলীধরন (শ্রীলঙ্কা) টেস্ট ১৩৩ উইকেট ৮০০ সেরা ৯-৫১ গড় ২২.৭২।
• শেন ওয়ার্ন (অস্ট্রেলীয়া) টেস্ট ১৪৫ উইকেট ৭০৮ সেরা ৮-৭১ গড় ২৫.৪১।
• অনিল কুম্বলে (ভারত) টেস্ট ১৩২ উইকেট ৬১৯ সেরা ১০-৭৪ গড় ২৯.৬৫।
• জেমস অ্যান্ডারসন (ইংল্যান্ড) টেস্ট ১৫৬ উইকেট ৬০০। সেরা ৭-৪২ গড় ২৬.৭৯।
• গ্লেন ম্যাকগ্রা (অস্ট্রেলিয়া) টেস্ট ১২৪ উইকেট ৫৬৩ সেরা ৮-২৪ গড় ২১.৬৪।
• কোর্টনি ওয়ালশ (ওয়েস্ট ইন্ডিজ) টেস্ট ১৩২ উইকেট ৫১৯ সেরা ৭-৩৭ গড় ২৪.৪৪।
• স্টুয়ার্ট ব্রড (ইংল্যান্ড) টেস্ট ১৪৩ উইকেট ৫১৪ সেরা ৮-১৫ গড় ২৭.৬৫।
• ডেল স্টেন (দক্ষিণ আফ্রিকা) টেস্ট ৯৩ উইকেট ৪৩৯ সেরা ৭-৫১ গড় ২২.৯৫।
• কপিল দেব (ভারত) টেস্ট ১৩১ উইকেট ৪৩৪ সেরা ৯-৮৩ গড় ২৯.৬৪।
• রঙ্গনা হেরাথ (শ্রীলঙ্কা) টেস্ট ৯৩ উইকেট ৪৩৩ সেরা ৯-১২৭ গড় ২৮.০৭।
৩৮ বছরের অ্যান্ডারসনকে ক্রিকেট বিশ্ব কুর্নিশ করে অন্যতম সেরা সুইং বোলার হিসেবে। ছ’শো উইকেট পেতেই অনিল কুম্বলের টুইট, ‘‘অভিনন্দন। এখানে পৌঁছনোর জন্য তুমি প্রচণ্ড পরিশ্রম করেছ। ছ’শো ক্লাবে তোমায় স্বাগত।’’ অ্যান্ডারসনের আগে পেসার হিসেবে সর্বোচ্চ টেস্ট শিকারের রেকর্ড ছিল গ্লেন ম্যাকগ্রার (৫৬৩)। দু’বছর আগেই ম্যাকগ্রাকে টপকে গিয়েছিলেন জিমি। তাঁকে নিয়ে প্রাক্তন অস্ট্রেলীয় পেসারও মুগ্ধ। জিমিকে সচিনের সঙ্গেও তুলনা করেছিলেন তিনি। ম্যাকগ্রা বলেছিলেন, ‘‘ব্যাটিংয়ের সচিন তেন্ডুলকরের মতো বোলিংয়ে জিমি উদাহরণ হয়ে থাকবে। ম্যাচ বা রানের সংখ্যায় যেমন কেউ সচিনকে ধরতে পারবে না, তেমনই জেমসও সকলের ধরাছোঁয়ার বাইরে।’’ সঙ্গে তাঁর উপলব্ধি, ‘‘জিমির স্কিল আমার ছিল না। ও যখন দু’দিকে বল সুইং করায়, শুধু তাকিয়ে দেখতে হয়। তখন ওর চেয়ে ভাল বোলার আর কেউ নেই।’’ কে বলছেন? না, গ্লেন ম্যাকগ্রা! যাঁকে সর্বকালের অন্যতম সেরা পেসার ধরা হয়।’’
আরও পড়ুন: প্রাক্তন আইপিএল-জয়ীকে বোলিং কোচ করল দিল্লি ক্যাপিটালস
আরও পড়ুন: এক মিনিটেই বার্সায় প্রাক্তন সুয়ারেজ, কোচ হয়েই সিদ্ধান্ত কোম্যানের
ম্যাকগ্রার প্রাক্তন মহাতারকা সতীর্থ শেন ওয়ার্নের আবার পরামর্শ, ‘‘ঘরের মাঠে টেস্ট খেলুক জিমি। আর বিদেশে বোলিং কোচ হিসেবে দলের সঙ্গে যাক।’’ যোগ করছেন, ‘‘জিমি দুর্দান্ত বোলার। এখন ওর বয়স ৩৮। আগামী দিনে ও কী ভাবে ভাল পারফরম্যান্স করবে তা দেখতে মুখিয়ে রয়েছি। যত দিন পারবে, তত দিন আমরা ওকে বল করতে দেখতে চাই। ইংল্যান্ডের ঘরের মাঠে টেস্ট খেলা চালিয়ে যাক। আমার মতে, ইংল্যান্ডের মাঠে ও এখনও ভয়ঙ্কর। বিদেশে ততটা নয়।’’
গত মাসেই অ্যান্ডারসন অবসর নিতে চলেছেন বলে জল্পনা শুরু হয়েছিল। যা উড়িয়ে দিয়ে ইংল্যান্ডের এই পেসার বলেন, ২০২১ সালে অস্ট্রেলিয়ায় অ্যাশেজ সিরিজে খেলতে চান তিনি। স্টুয়ার্ট ব্রডের সঙ্গে জুটি বেঁধে আগামী বছর অ্যাশেজে বল করার ইচ্ছাও প্রকাশ করেছিলেন অ্যান্ডারসন। প্রিয় সতীর্থ স্টুয়ার্ট ব্রড, যিনি সম্প্রতি পাঁচশো শিকারের মাইলফলে পৌঁছন, তিনিও অ্যান্ডারসনে মুগ্ধ। ‘‘ইংল্যান্ডের প্রত্যেক ক্রিকেটারের জন্য এর চেয়ে ভাল রোল মডেল আর হয় না,’’ বলছেন ব্রড। যোগ করছেন, ‘‘আমি নিশ্চিত ছ’শো শিকার নিয়েও থামতে চাইবে না।’’ ১৭ বছর আগে জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে টেস্ট অভিষেক হয় অ্যান্ডারসনের। আট জন বিভিন্ন অধিনায়কের অধীনে খেলেছেন এবং চার বার অ্যাশেজ জয়ী দলের সদস্য। ‘‘আমরা শ্রেষ্ঠত্ব দেখছি চোখের সামনে,’’ বলেছেন মাইকেন ভন। যিনি ২১টি টেস্টে অ্যান্ডারসনের অধিনায়ক ছিলেন।
স্কোরকার্ড
ইংল্যান্ড ৫৮৩-৮ (ডি)
পাকিস্তান ২৭৩ ও ১৮৭-৪
পাকিস্তান (দ্বিতীয় ইনিংস, আগের দিন ১০০-২ এর পরে)
আজহার ক রুট বো অ্যান্ডারসন ৩১ • ১১৪
বাবর আজম ন.আ ৬৩ • ৯২
আসাদ শফিক ক ব্রেসি বো রুট ২১ • ৫৯
ফওয়াদ আলম ন.আ ০ • ৯
অতিরিক্ত ১২
মোট ১৮৭-৪ (৮৩.১)
পতন: ১-৪৯ (শান, ২৩.৪), ২-৮৮ (আবিদ, ৪৯.৫), ৩-১০৯ (আজহার আলি, ৬১.২), ৪-১৭২ (শফিক, ৭৯.৪)।
বোলিং: জেমস অ্যান্ডারসন ১৯-৩-৪৫-২, স্টুয়ার্ট ব্রড ১৪.১-৫-২৭-১, ক্রিস ওকস ৮-২-১৪-০, জোফ্রা আর্চার ১৪-৮-১৪-০, ডম বেস ২১-৪-৫৪-০, জো রুট ৬-০-১৭-১, ডম সিবলি ১-০-৭-০।
ম্যাচ ড্র
ম্যাচের সেরা জ্যাক ক্রলি
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy