অমিত শাহের পুত্র জয় শাহ।—ফাইল চিত্র।
তিনি যে পুরোপুরি ক্রিকেট সাম্রাজ্য থেকে দূরে সরে যাননি, প্রমাণ করে দিলেন এন শ্রীনিবাসন। গত সপ্তাহে বোর্ডের একাধিক সদস্যকে নিয়ে টেলিকনফারেন্স করার পরে প্রতিশ্রুতি মতোই সোমবার নয়াদিল্লিতে বৈঠক করে দেখালেন তিনি। যদিও শারীরিক কারণে তিনি নিজে সশরীরে উপস্থিত থাকতে পারেননি সেই বৈঠকে। তবে সভার নেতৃত্ব তিনিই দেন টেলিকনফারেন্সে যোগ দিয়ে।
সভার উপস্থিতির হার শুনে সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত কমিটি অফ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর্সের (সিওএ) অস্বস্তি বাড়তে পারে। শোনা যাচ্ছে সশরীরে উপস্থিতি এবং টেলিকনফারেন্স মিলিয়ে ২০ জন সদস্য এ দিন হাজির ছিলেন। আরও তাৎপর্যপূর্ণ হচ্ছে, সভায় যোগ দিয়েছিলেন বেশ কয়েক জন প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব। তার মধ্যে সব চেয়ে উল্লেখযোগ্য নাম অমিত শাহের পুত্র জয় শাহ। গুজরাত ক্রিকেট সংস্থার প্রধান তিনি। আরও অনেকের মতো লোঢা কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী তিনিও সংস্থা ছেড়ে চলে যাওয়ার বিধান হাতে পাচ্ছেন। জয় থাকা মানেই বিজেপি হাইকম্যান্ডের বরাভয় শ্রীনিরা পেয়ে গেলেন কি না, এমন একটা গরমাগরম আলোচনা সোমবারেই শুরু হয়ে গিয়েছে। যদিও ওয়াকিবহাল মহলের মতে, এখনই অতটা এগিয়ে ভাবা ঠিক হবে না।
সভায় ছিলেন কর্নাটক ক্রিকেট সংস্থার প্রধানের ভূমিকায় দীর্ঘ দিন থাকা ব্রিজেশ পটেল। যিনি শ্রীনির খুবই ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। কারও কারও মতে, বোর্ডের নির্বাচন যখনই হোক, ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেটার হেভিওয়েট প্রার্থী (এবং অবশ্যই শ্রীনি-সমর্থিত) হিসেবে দৌড়ে এগিয়ে থাকতে পারেন। হিসাব নাকি বলছে, লোঢা কমিটির নিয়ম মানলেও বোর্ডের উচ্চ পদে এখনও বসতে পারেন ব্রিজেশ। উল্লেখযোগ্য উপস্থিতির মধ্যে আরও ছিলেন রাজীব শুক্ল, সৌরাষ্ট্রের নিরঞ্জন শাহ এবং বাংলার জগমোহন ডালমিয়া পুত্র অভিষেক। বাংলার মতো মুম্বই এবং পঞ্জাব— দু’টি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য থেকেও এসেছিলেন প্রতিনিধিরা।
পঞ্জাবের সঙ্গে নতুন করে খটাখটি লেগেছে সিওএ-র, কারণ চণ্ডীগড়কে পূর্ণ সদস্যের সম্মান দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। যেমন শ্রীনির তামিলনাড়ু ক্রিকেট সংস্থার অস্বস্তি বাড়িয়ে পুদুচেরিকে পূর্ণ সদস্যপদ দেওয়া হচ্ছে। অনেক রাজ্য সংস্থার অভিযোগ, ‘‘লোঢা কমিটির সুপারিশেও কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলকে অ্যাসোসিয়েট সদস্যপদ দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। পূর্ণ সদস্য দেওয়ার প্রস্তাব ছিলই না। তা হলে সিওএ কী করে পূর্ণ সদস্য হওয়ার প্রস্তাব দিচ্ছে এদের?’’
মুম্বই তেমনই গজগজ করছে ভোটিং প্রথা পাল্টানোর নির্দেশ নিয়ে। সিওএ বলেছে, প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটারদের ভোটিং ক্ষমতা দিতে হবে। এই পরিবর্তন কার্যকর হলে মুম্বই ক্রিকেট সংস্থার নির্বাচনী সমীকরণই পাল্টে যাবে। কর্তাদের চেয়েও অনেক বেশি ক্ষমতাশালী হয়ে উঠতে পারে ক্রিকেটারদের জোট কারণ মুম্বইয়ে প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটারের সংখ্যা সব চেয়ে বেশি। মুখের হিসাবে সুনীল গাওস্কর, সচিন তেন্ডুলকরের শহরে জীবিত ভারতীয় ক্রিকেটারের সংখ্যা অন্তত ৭০ হবে।
এই নিয়ম বলবৎ করা নিয়ে আপত্তির সুর ছিল সিএবি-তেও। কিন্তু শেষ বৈঠকের যা ইঙ্গিত, সম্ভবত প্রাক্তন ক্রিকেটারদের ভোটদানের সুপারিশ মেনে নতুন গঠনতন্ত্র বানাতে রাজি হতে চলেছে বাংলার ক্রিকেট সংস্থা। আর সেটা হয়ে গেলে সিওএ-র নির্দেশ একশো শতাংশ মেনে গঠনতন্ত্র তৈরি হয়ে যাবে তাদের। তখন প্রস্তাব মতো সেপ্টেম্বরে নির্বাচন সেরে ফেলা সম্ভব। যদিও পর্দার আড়ালে শ্রীনির ফের সক্রিয় হয়ে ওঠা এবং কুড়ি জনের শক্তিশালী উপস্থিতি নিয়ে সোমবারের বৈঠক নতুন এক নাটকের জন্ম দেয় কি না, সেটাও দেখার। আগামী ৮ অগস্ট সুপ্রিম কোর্টে বোর্ডের মামলা নিয়ে শুনানি রয়েছে। সেখানে বোর্ডের আইনজীবীরা আরও সরব হয়ে উঠলে অবাক হওয়ার থাকবে না।
কর্তাদের মধ্যে ক্রমশ অসন্তোষ বাড়ছে যে, সিওএ সদস্যরা অনেক ক্ষেত্রেই সুপ্রিম কোর্ট বা বিচারপতি লোঢার সুপারিশকে লঙ্ঘন করছেন। কারও কারও অভিযোগ, ‘‘অনেক ক্ষেত্রেই এক্তিয়ার বহির্ভূত ভাবে সিওএ নির্দেশ পাঠাচ্ছে। যেমন কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলকে পূর্ণ সদস্যকে দিতে চাওয়া। ক্রিকেটারদের ভোটের বিষয়টিও বাধ্যতামূলক ছিল না।’’ কয়েক জনে আরও এগিয়ে প্রশ্ন তুলছেন, ‘‘সত্তর বছর হয়ে যাওয়ায় বোর্ড কর্তাদের বেরিয়ে যেতে বলা হয়েছে। তাঁরা কেউ নাকি ক্রিকেট প্রশাসনে থাকতে পারবেন না। তা হলে বাহাত্তর বছরের বিনোদ রাই কী করে ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান পরিচালক হয়ে বসে আছেন?’’
বোর্ড কর্তাদের জোট বনাম সিওএ দ্বৈরথ যেন শেষ হয়েও হচ্ছে না। আর এক দফা এসপার-ওসপার আসন্ন!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy