পঁয়ষট্টি লাখের রবিন সিংহ-কে ঠায় বসে থাকতে দেখে করুণাই হচ্ছিল।
একের পর এক রাউন্ড শেষ হয়ে যাচ্ছে। আর ঝকঝকে মুখটা ক্রমশ করুণ হচ্ছে। টেনশনে নখ কাটছেন দাঁত দিয়ে। হতাশায় বেশ কয়েকবার দাঁড়িয়ে পড়লেন। বারবার চোখ তুলে তাকাচ্ছেন বিভিন্ন টেবিলে। জাতীয় দলের স্ট্রাইকার হলেও তাঁর নাম যে কেউ আর ডাকছেই না!
কোটি টাকা দামে শুরুতেই বিক্রি হয়ে গেলেন আনাস এথাডোনিকা এবং ইউজেনসিন লিংডো। চোখের সামনে দেখছেন চড়া দামে বিক্রি হচ্ছেন অবসরের দিকে যেতে থাকা সুব্রত পাল এবং মেহতাব হোসেন। নতুন তারকা শৌভিক চক্রবর্তী থেকে গত বছর একটিও ম্যাচ না খেলা অগাস্টিন ফার্নান্ডেজও বিক্রি হয়ে গেলেন। অষ্টম রাউন্ডের পর যখন রবিনের মুখে কালো মেঘ, তখনই তাঁর নাম উঠল।
এটিকে-র টেবিল থেকে উঠে দাঁড়িয়ে অ্যাসলে ওয়েস্টউড নিতে চাইলেন রবিনকে। হাফ ছেঁড়ে যেন বাঁচলেন ‘সিংহ’। এতটাই উচ্ছ্বসিত হলেন ইস্টবেঙ্গলের গতবারের অনিয়মিত স্ট্র্ইকার যে নিজেই হাততালি দিয়ে ফেললেন আনন্দে।
ইন্ডিয়ান সুপার লিগের রবিবাসরীয় নিলামে রবিন একটা প্রতীকী মুখ। সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ২০৫ ফুটবলারের চোখ ছিল মুম্বইয়ের পাঁচ তারা হোটেলে কী হয়, তার দিকে। নিলাম টিভিতে লাইভ দেখানো হয়নি। তবে মোবাইল বা ল্যাপটপে পাওয়া যাচ্ছিল আপডেট। সেখানে চোখ রেখে কেউ উচ্ছ্বসিত হচ্ছিলেন, কেউ বিমর্ষ। মোট ৫০ কোটি টাকায় বিক্রি হলেন ১৩৪ ফুটবলার। দশ ফ্র্যাঞ্জাইজি পনেরো জন করে দেশি ফুটবলার তুলে নেওয়ার পর কারও মুখে হাসি, কেউ গোমড়া মুখে বেরিয়ে গেলেন হল থেকে।
এটিকে-র টিডি-কোচ এবং কর্তারা যখন বেরিয়ে যাচ্ছেন তখন তাঁদের মুখে আলো-আধাঁরি। ফুটবলার বাছার জন্য টিডি অ্যাশলে ওয়েস্টউডের উপর নির্ভর করেছিলেন এটিকে কর্তারা। বেঙ্গালুরুতে শুধু তিন বছর কোচিং করানো নয়, পরবর্তীকালে টিভি ধারাভাষ্যকার হিসাবে অ্যাশলে হাতের তালুর মতো চেনেন এ দেশের ফুটবলারদের। তিনি কেমন টিম গড়লেন?
দেখা যাচ্ছে, তিনি কলকাতার দুই প্রধানের ফুটবলারদের গুরুত্ব না দিয়ে নিজের প্রাক্তন ক্লাব বেঙ্গালুরুতে খেলা ছেলেদের প্রাধান্য দিয়েছেন বেশি। দলে নিয়েছেন তাঁর কোচিংয়ে বিভিন্ন সমযে খেলা লিংডো, কিগান পেরিরা, শঙ্কর সম্পাগিরাজ এবং রবিন সিংহ-দের।
কোটি টাকায় লিংডোকে কিনেছে এটিকে। আই লিগ চ্যাম্পিয়ন আইজলের দুই সেরা ফুটবলার আশুতোষ মেহতা এবং জয়েশ রানে-কে নিয়েছে কলকাতা। এঁদের নিয়ে কোনও প্রশ্ন নেই। কিন্তু কেন কিগান, শঙ্কর বা অগাস্টিন ফার্নান্ডেজদের নেওয়া হল? তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। গত মরসুমে তো এঁরা নিয়মিত খেলেনইনি কোনও লিগে। একই কথা প্রযোজ্য আনোয়ারের ক্ষেত্রেও। গত মরসুমে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ইস্টবেঙ্গল ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন শুরুতে। তারপর আর খেলেননি। তাঁকে নেওয়া হয়েছে ৩৫ লাখ টাকায়। হিতেশ শর্মা জাতীয় যুব দলের স্ট্রাইকার। ভাল খেলছেন। কিন্তু বিপিন সিংহ, রোনাল্ড সিংহ, কুঞ্জন ভুটিয়াকে কোন যোগ্যতায় নেওয়া হল তা নিয়ে এটিকে শিবিরেই গুঞ্জন।
এটা নিয়েও কথা চলছে যে, কলকাতার টিম এটিকে অথচ এ দিন যে ১৩ জনকে নিলাম থেকে নেওয়া হল তাদের একজনও কলকাতার বা বাংলার নন। আগে সই করানো দেবজিৎ মজুমদার এবং প্রবীর দাশ বাদে তাই এ বার ইস্টবেঙ্গল বা মোহনবাগানের কোনও ফুটবলার নেই এটিকে-তে।
অন্য রাজ্যের দলগুলি কিনে নিয়েছে প্রীতম, সুব্রত, মেহতাব, শৌভিকের মতো দামি ফুটবলারকে। এমনকী, অসীম বিশ্বাস বা অবিনাশ রুইদাস-ও বিক্রি হয়েছেন ভাল দামে। দু’বছর না খেলা বিশ্বজিৎ সাহা বা অভ্র মণ্ডল বিক্রি হয়ে গিয়েছেন। নর্থ ইস্ট, গোয়া বা মুম্বই তাদের রাজ্যের ফুটবলারদের প্রাধান্য দিয়েছেন টিম গড়ার সময়। এটিকে সেই রাস্তায় হাঁটেনি। কোচ শেরিংহ্যামকে পাশে নিয়ে টিডি অ্যাশলে ওয়েস্টউড অবশ্য বলে গেলেন, ‘‘লিংডো এবং জয়েসকে পেয়ে যাওয়ায় আমরা লক্ষ্যে সফল। যা টিম হয়েছে তাতে আমরা খুশি।’’
আর যা শুনে কলকাতাকে চ্যাম্পিয়ন করা প্রাক্তন কোচ আন্তোনিও হাবাস হাসতে হাসতে বললেন, ‘‘সবাই বলবে ভাল টিম গড়েছি। রেফারির বাঁশিটা বাজুক তখন বোঝা যাবে কে শক্তিশালী।’’ পুণের হয়ে ফুটবলার বাছতে আসা হাবাসের সঙ্গে একমত সুনীল ছেত্রীও। তিনিও বললেন, ‘‘বেঙ্গালুরু সব ফুটবলারকেই চেয়েছিল। নিলামে তো তা হয় না। তবে অনেককেই রেখে দেওয়া গিয়েছে। এখনই বলা যাবে না কোন টিম ভাল হল।’’
নিলামে অবশ্য সব চেয়ে চমক ছিল টাটার দল জামশেদপুর এফ সি-র দল গঠনে। পৌনে পাঁচ কোটি খরচ করেছে তারা। কলকাতা সেখানে খরচ করেছে সাড়ে পাঁচ কোটি টাকার কিছু বেশি। বেশি খরচ করলেও আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে টাটার টিমই শক্তিশালী হয়েছে। এখন দেখার বিদেশি আসার পর কী দাঁড়ায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy