রাঁচিতে ঝাড়খণ্ড টিমের প্র্যাকটিস থাকলে মাঠে চলে আসতেন তিনি। ভুল হল একটু। শুধু মাঠে আসার জন্য আসতেন না। আসতেন, পুরোদমে প্র্যাকটিস করতে।
টিমের জুনিয়ররা কোনও সমস্যায় পড়লে অভিনব একটা ব্যাপার ঘটত। সংশ্লিষ্ট সেই জুনিয়রের সঙ্গে তিনি নিজেও নেমে পড়তেন নেটে। নিজে ব্যাট করে দেখিয়ে দিতেন, ভুলটা কোথায় হচ্ছে আর ঠিক কী ভাবে সেটা শুধরোতে হবে।
চার দিনের ক্রিকেটে মানসিক ভাবে মানিয়ে নিতে সমস্যা হচ্ছে? বুঝে ওঠা যাচ্ছে না, ঠিক কোন মাইন্ডসেট নিয়ে ব্যাট করা উচিত? ঝাড়খণ্ড ক্রিকেটারদের এখন আর ভাবতে হয় না ও সব নিয়ে। তিনি আছেন তো! ঈশান কিষাণকে ধরা যাক। ঝাড়খণ্ড ক্রিকেটের বর্তমানে সবচেয়ে বড় সম্ভাবনা। এ বছরই রাহুল দ্রাবিড়ের কোচিংয়ে ভারতের যে টিম অনূর্ধ্ব উনিশ বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলল, তার অধিনায়ক ছিলেন। আক্রমণাত্মক উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান হিসেবে তাঁর বেশ নামডাকও আছে। কিন্তু ঈশানকে ডেকে তিনি বলে দিয়েছিলেন, চার দিনের ক্রিকেটে এত আক্রমণাত্মক মনোভাব রাখলে চলবে না। যতটা সম্ভব ঝুঁকি কমাতে হবে।
এক দিকে তিনি টিম মেন্টর। অন্য দিকে তিনি টিম ‘মনোবিদ’। এক কথায়, তিনি মিস্টার ঝাড়খণ্ড ক্রিকেট। যাঁকে রঞ্জি ট্রফিতে ঝাড়খণ্ডের ইতিহাসের পিছনে সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টর ধরা হচ্ছে।
তিনি— মহেন্দ্র সিংহ ধোনি!
সোমবার হরিয়ানাকে পাঁচ উইকেটে হারিয়ে প্রথম বারের জন্য রঞ্জি সেমিফাইনালে চলে গেল ঝাড়খণ্ড। ভাল করে বললে, ঝাড়খণ্ডকে জিতিয়ে দিল দ্বিতীয় ইনিংসে ঈশান কিষাণের ৮৬ রান। কিন্তু তার পরেও তো নিজের পারফরম্যান্স নয়, ঝাড়খণ্ডের ইতিহাস সৃষ্টির পিছনে ধোনির নামটাই সবচেয়ে বেশি করে আসছে। এবং সেটা স্বয়ং ঈশানই আনছেন!
‘‘মাহি ভাইয়ের প্রভাব আমাদের টিমের উপর বিশাল। ইন্ডিয়া ক্যাপ্টেনকে আমরা রঞ্জি প্রস্তুতিতে পেয়েছি, এর চেয়ে ভাল আর কী হতে পারে?’’ এ দিন সন্ধেয় ফোনে বডোদরা থেকে বলছিলেন ঈশান। সঙ্গে যোগ করলেন, ‘‘উনি আমাদের সঙ্গে প্র্যাকটিস করতেন। কারও সমস্যা হলে তার সঙ্গে তো আলাদা করে করতেন। টিমটার খোলনলচে পাল্টে দেওয়ার পিছনে ওঁর অবদান অনেক। নিজেরটা বলতে পারি। উনি আমাকে বলেছিলেন, ডে’জ ক্রিকেটে কম ঝুঁকি নিতে হবে। লোভ ছাড়তে হবে। কারণ দারুণ শট খেলার চেয়ে চার দিনের ক্রিকেটে অনেক বেশি জরুরি ক্রিজে থাকা। আমি পরের ম্যাচেই ঝুঁকি নেওয়া পুরোপুরি বাদ দিয়ে দিই।’’
লাভও হয়েছিল। পরের ম্যাচটাই ছিল কর্নাটকের সঙ্গে। যেখানে ঈশান ১৫৯ নট আউট থেকে যান। এবং রঞ্জি ট্রফিতে এর পর ডাবল সে়ঞ্চুরিও করেন। ঝাড়খণ্ড ক্রিকেট সংস্থার কেউ কেউ বললেন যে, টিম যেখানে যাক, যেখানে থাকুক, ধোনির সঙ্গে যোগাযোগটা সব সময় থাকে। এ-ও বলা হল যে, টিমে এখন একটা ফিটনেস-সংস্কৃতির আমদানি হয়েছে। মরসুমের আগে প্রচুর ফিটনেস ক্যাম্পও করা হয়েছে। যার নেপথ্যেও বলা হল, ধোনির মস্তিষ্ক। এক কর্তা বললেন যে, ‘স্পটারের’ কাজটাও নাকি এখন ধোনির। ঝাড়খণ্ডের মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান কৌশল সিংহের উপর বর্তমানে নাকি মন দিয়েছেন ধোনি। কারণ— কুড়ি বছরের কৌশলকে সম্ভাবনাময় মনে হয়েছে তাঁর।
ঈশান বলছিলেন যে, তাঁরা এখন রঞ্জি ট্রফি জয়ের স্বপ্ন দেখছেন। বললেন, এ ভাবে চললে তা সম্ভবও। শেষ পর্যন্ত তা হবে কি না, সময় বলবে। না পেলেও বা কী? ঝাড়খণ্ড ক্রিকেটের বর্তমান বিশ্বাসের শালগ্রামশিলা তো মর্যাদা পেয়েই গিয়েছে। রঞ্জি আসুক চাই না আসুক।
শুধু ক্যাপ্টেন নয়, এমএস ধোনি এখন থেকে এক সফল ‘মেন্টরে’র নামও বটে!
সংক্ষিপ্ত স্কোর: হরিয়ানা ২৫৮ ও ২৬২। ঝাড়খণ্ড ৩৪৫ ও ১৭৮-৫ (ঈশান ৮৬)।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy