এ বারের আইপিএল ফাইনালের পর মহেন্দ্র সিংহ ধোনি অবসর নেবেন কি না তাই নিয়ে জল্পনা চলছে। তাই ‘থালা’কে দেখতে হাজির হয়েছিলেন ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ। চেন্নাই থেকে তো বটেই, বেঙ্গালুরু, কোচি, দিল্লি, চণ্ডীগড় থেকেও অনেকে এসেছিলেন। কিন্তু নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়াম রবিবার হেনস্থার শিকার হতে হল তাঁদের। বৃষ্টির জেরে রবিবার ম্যাচ হয়নি। ফলে দর্শকদের অব্যবস্থার সম্মুখীন হতে হয়েছে।
সোমবার সকাল থেকেই একটি ভিডিয়ো ভাইরাল হয়। সেই ভিডিয়োর সত্যতা আনন্দবাজার অনলাইন যাচাই করেনি। কিন্তু দেখা যায় স্টেডিয়ামের ছাদ ফুটো হয়ে জল পড়ছে। আর সেই জলে ভেসে যাচ্ছে দর্শকাসন। জনৈক দর্শক সেই ভিডিয়ো টুইট করে লেখেন, “যাঁরা ছাদে ঘেরা স্টেডিয়ামের আশা করছেন, তাঁরা দেখুন বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ক্রিকেট বোর্ডের সবচেয়ে ভাল স্টেডিয়ামে কী অবস্থা।” সেই ভিডিয়োয় এক সমর্থক লিখেছেন, “খুব খারাপ অভিজ্ঞতা স্টেডিয়ামের ভিতরে এবং বাইরে। পার্কিংয়ের এলাকায় কাদা ভর্তি এবং সুইমিং পুলের মতো জল।”
স্টেডিয়ামের দুর্দশার আরও তথ্য প্রকাশ্যে এসেছে। কেদার নামে এক সমর্থক পরিবার নিয়ে খেলা দেখতে এসেছিলেন। কিন্তু বৃষ্টি শুরু হওয়ার পরেই সমস্যা বাড়ে। তিনি সংবাদ সংস্থাকে বলেছেন, “বৃষ্টি শুরু হতেই সবাই ছোটাছুটি করে আশ্রয় খুঁজতে শুরু করে। প্রবল ধাক্কাধাক্কি হয়। স্টেডিয়ামে কোনও নেটওয়ার্ক ছিল না। পরিবারের সঙ্গে আমি আর একটু হলেই আলাদা হয়ে যেতাম। তখন যোগাযোগের উপায় থাকত না।”
আমদাবাদের একটি হাসপাতালের ডাক্তার নীবর চাবড়া বলেছেন, “স্টেডিয়ামে ঢুকতে অনেক ক্ষণ দাঁড়াতে হয়েছিল। স্টেডিয়াম থেকে বেরোতেও সমস্যা হয়। কাদায় গাড়ি আটকে গিয়েছিল। ধাক্কা মেরে বের করতে হয়।”
People who are asking for closed roof stadiums have a look at the pillars and roofs of the biggest stadium and the richest cricket board leaking. pic.twitter.com/idKjMeYWYd
— Manya (@CSKian716) May 28, 2023
আরও পড়ুন:
অভিলাষা নামে এক ডাক্তারি কলেজের ছাত্রী বলেছেন, “আমার জীবনের সবচেয়ে খারাপ দিন। বৃষ্টি শুরু হওয়ার পর ৩০ মিনিট দর্শকাসনে বসেছিলাম। পুরো ভিজে গিয়েছিলাম। কেউ ছাদের তলায় গিয়ে দাঁড়াতে চাইছিল না। স্টেডিয়ামে বসেই হালকা অসুস্থ হয়ে পড়ি। পরে দেখি অনেকে নোংরা জমা জলে পা পিছলে পড়ে যাচ্ছে। এক বৃদ্ধাও পড়ে যান।”
রবিবার ম্যাচ না হওয়ায় অনেকেই ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। থাকার জায়গা খুঁজে পাননি। আমদাবাদের বাইরে থাকা ক্রিকেটপ্রেমীদের অনেকের পরিকল্পনা ছিল খেলার পর রাতের ট্রেনে বাড়ি ফেরার। তাই তাঁরা হোটেলের ঘর ভাড়া করেননি। স্টেশন থেকে সোজা চলে এসেছিলেন স্টেডিয়ামে। আবার খেলা শেষ হলে স্টেডিয়াম থেকে সোজা তাঁরা চলে যেতেন স্টেশনে ট্রেন ধরতে। অনেকেই ফেরার ট্রেনের টিকিটও কেটে নিয়ে এসেছিলেন।
খেলা ভেস্তে যাওয়ায় সেই ক্রিকেটপ্রেমীদের অনেকেই স্টেডিয়াম থেকে ফিরেছেন স্টেশনে। তবে তাঁরা ট্রেনে ওঠেননি। রবিবারের ফেরার টিকিট বাতিল করে সোমবার রাতে বাড়ি ফেরার জন্য নতুন করে ট্রেনের টিকিট কেটেছেন। হোটেলের ঘর ভাড়া নেওয়া না থাকায় বা সকলের সেই আর্থিক সঙ্গতি না থাকায় স্টেশনেই রাত কাটিয়েছেন তাঁরা। রবিবার রাতে আমদাবাদ স্টেশনে দেখা গিয়েছে প্রচুর ক্রিকেটপ্রেমীকে। স্টেশনের মেঝেতেই ঘুমিয়েছেন তাঁরা। স্টেশনের অপেক্ষাকক্ষ (ওয়েটিং রুম), প্ল্যাটফর্ম বা স্টেশনের অন্যত্র ঘুমোতে দেখা গিয়েছে ক্রিকেটপ্রেমীদের। তাঁদের অনেকেই পরেছিলেন ধোনির ৭ নম্বর জার্সি। যা থেকে বোঝা যায় তাঁরা চেন্নাই অধিনায়কের ভক্ত। তাঁর খেলা সামনে থেকে দেখার সুযোগ হাতছাড়া করতে চান না তাঁরা। তাই বাড়ি ফেরার পরিকল্পনা বাতিল করে একটা দিন বেশি আমদাবাদেই থেকে গিয়েছেন।