অভিষেক পোড়েল। ছবি: এক্স।
লখনউ সুপার জায়ান্টসের বিরুদ্ধে শুরু থেকে ঝড় তুললেন অভিষেক পোড়েল। জ্যাক ফ্রেজার ম্যাকগার্ক আউট হলেও দলকে তাঁর অভাব বোধ করতে দেননি এই চন্দননগরবাসী। ৩৩ বলে ৫৮ রানের ঝকঝকে ইনিংস খেললেন। চারটি ছক্কা এবং পাঁচটি চার মারলেন। আইপিএলের শুরুটা যে ভাবে করেছিলেন, লিগ পর্বের শেষটাও সেই ভাবেই করলেন অভিষেক।
গত বারেই দিল্লি ক্যাপিটালস দলে সুযোগ পেয়েছিলেন অভিষেক। বাংলার হয়ে ধারাবাহিক ভাবে রান করে আইপিএলে জায়গা করে নেন। ঋষভ পন্থের অভাব ঢাকার জন্য তাঁকে রাখা হয়েছিল দলে। কিন্তু মাত্র চারটি ম্যাচে খেলানো হয়েছিল। সে ভাবে রানও করতে পারেননি। তাতে যদিও সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের দিল্লি তাঁকে ছেঁটে ফেলেনি। তরুণ উইকেটরক্ষকের উপর ভরসা রাখা হয়েছিল আরও একটি মরসুম। নিরাশ করেননি অভিষেক। ভরসার দাম দিয়েছেন। প্রথম ম্যাচেই বুঝিয়ে দিয়েছেন, এ বারের আইপিএলটা তাঁর জন্য আলাদা।
ইংরেজি প্রবাদ অনুযায়ী, সকালটাই নাকি বুঝিয়ে দেয় দিন কেমন যাবে। অভিষেকের ক্ষেত্রে সেটা খুবই সত্যি কথা। এ বারের আইপিএলের প্রথম ম্যাচে দলে ছিলেন না। কিন্তু দল ব্যাট হাতে বেকায়দায় পড়তে ১৮তম ওভারে ব্যাট করতে পাঠানো হয়েছিল ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার অভিষেককে। ১০ বলে ৩২ রান করে দলকে লড়াই করার মতো জায়গায় পৌঁছে দিয়েছিলেন। সেই সঙ্গে দলে নিজের জায়গাটাও করে নেন। হতাশ করেননি বাংলার বাঁহাতি ব্যাটারটি। ১৪ ম্যাচে ৩২৭ রান করেন। দু’টি অর্ধশতরানও করেন। ২২ বছর বয়সেই বুঝিয়ে দিলেন আগামী দিনে আরও কিছু তাঁর কাছ থেকে আশা করা যেতেই পারে।
অভিষেকের এই উন্নতির নেপথ্যে অবশ্যই কৃতিত্ব দিতে হবে বাংলার কোচ লক্ষ্মীরতন শুক্লকে। এ বারের সৈয়দ মুস্তাক আলি ট্রফিতে অভিষেককে ওপেন করতে পাঠিয়েছিলেন লক্ষ্মী। সেই পরিকল্পনা কাজে লাগে। রান পেয়েছিলেন অভিষেক। অর্ধশতরানও করেছিলেন ভারতের ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি প্রতিযোগিতায়। যা দেখে বাহবা দিয়েছিলেন সৌরভ। লক্ষ্মী বলেছিলেন, “আইপিএলে অভিষেক যে ওপেন করছে, নতুন বলে খেলছে, সেই আত্মবিশ্বাসটা মুস্তাক আলি থেকেই পেয়েছে। বাংলার হয়ে ওপেন করতে পাঠিয়েছিলাম। দাদি (সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়) বলেছিল অভিষেককে এই জায়গায় খেলানোর সিদ্ধান্তটা দুর্দান্ত। দিল্লিতেও অভিষেক সেই জায়গায় খেলার সুযোগ পেয়ে সফল।”
অভিষেককে অনুশীলনে নিজে থ্রো ডাউন দেন লক্ষ্মী। বাউন্সার সামলানোর অনুশীলন করান। কাঁধের উপরে বল ছুড়ে যান একের পর এক। আর তা সামলানোর অনুশীলন করেন অভিষেক। এ বারের আইপিএলে বোলারেরা ওভারে দু’টি করে বাউন্সার করার সুযোগ পাচ্ছেন। অভিষেককে তা সামলানোর জন্য তৈরি করে দিয়েছেন লক্ষ্মী। বাংলার কোচের একটি উপদেশ অভিষেককে আরও পরিণত করেছে। লক্ষ্মী বললেন, “অভিষেককে বলেছি মাথা ঠান্ডা রাখতে। যত মাথা ঠান্ডা রাখবে, তত ভাল খেলবে। উইকেটের পিছনে নয়, সামনে খেলতে বলেছি অভিষেককে। তাতেই বদলে গিয়েছে ওর খেলা। যত বেশি উইকেটের সামনে খেলবে, তত বেশি রান করবে।”
বদলে যাওয়া অভিষেকের ক্রিকেট কেরিয়ারের সবে শুরু। অনূর্ধ্ব-১৯ ভারতীয় দলের রিজার্ভ বেঞ্চ থেকে আইপিএলে সামনের সারিতে। এখন দেখার সাদা এবং লাল বলের ক্রিকেটে সাবলীল ভাবে খেলে যাওয়া এই বাঙালি আগামী দিনে ভারতীয় দলের দরজা খুলতে পারেন কি না। তা হলে আরও এক বাঁহাতিকে নিয়ে বাঙালি কলার তুলতে পারবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy