উইকেট নেওয়ার পরে অক্ষর পটেলকে ঘিরে দিল্লির ক্রিকেটারদের উচ্ছ্বাস।
একদিকে বিরাট কোহালি। অন্য দিকে কাগিসো রাবাদা। দুই সেরার দ্বৈরথ আগেও দেখেছে ক্রিকেটবিশ্ব।
সোমবার কোহালি-রাবাদার লড়াইকে কেন্দ্র করে পারদ চড়ছিল দুবাইয়ে। দক্ষিণ আফ্রিকার পেসারের জন্য শেষ হাসি তোলা থাকল। কোহালিকে ৪৩ রানে ফেরালেন তিনি। ব্যক্তিগত ডুয়েলটা তো জিতলেনই। সেই সঙ্গে তাঁর দল দিল্লি ক্যাপিটালস ৫৯ রানে হারাল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরকে। রাবাদার নামের পাশে লেখা থাকল ২৪ রানে চার উইকেট।
প্রথমে ব্যাট করে ২০ ওভারে দিল্লি করেছিল ১৯৬ রান। এক সময়ে যে ভাবে এগোচ্ছিলেন দিল্লির ব্যাটসম্যানরা তাতে দুশোর বেশি রান তাঁরা করতেই পারতেন। টি টোয়েন্টি ক্রিকেটে ১৯৬ রানও মন্দ নয়। পরে ব্যাট করে এই রান তোলা বেশ কঠিন। বিশেষ করে যে দলে রাবাদার মতো বোলার রয়েছেন।
দিল্লির রান তাড়া করতে নেমে শুরু থেকেই যে ব্যাঙ্গালোর ব্যাটসম্যানরা আক্রমণের রাস্তা নেবেন তা বলাই বাহুল্য। কিন্তু আক্রমণ করতে গিয়েই এ দিন ডুবল কোহালির দল। ওপেনার দেবদত্ত পাড়িকল ও অ্যারন ফিঞ্চ শুরুটা একেবারেই ভাল করতে পারেননি। অশ্বিনের বলে স্টোইনিসের হাতে ধরা পড়েন পাড়িকল (৪)।
অন্যদিকে অক্ষর পটেলের বলে ঠকে যান ফিঞ্চ (১৩)। আঙুলের চোটের জন্য টুর্নামেন্ট থেকেই ছিটকে গিয়েছেন অমিত মিশ্র। বর্ষীয়ান লেগ স্পিনার সরে যাওয়ায় অক্ষর পটেল যে দিল্লির প্রথম একাদশে ঢুকবেন, তা সবার জানাই ছিল। আর সেই সুযোগটা দারুণ ভাবে কাজে লাগালেন বাঁ হাতি স্পিনার। ফিঞ্চ ও মঈন আলির উইকেট নিয়ে ম্যাচের সেরাও অক্ষর।
দুই ওপেনারের উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে গিয়েছিল ব্যাঙ্গালোর। এই অবস্থা থেকে তাদের টেনে তুলতে পারতেন কোহালি ও এবি ডিভিলিয়ার্স। অতীতে বহুবার এই দু' জন ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। চাপ প্রশমিত করার জন্য দক্ষিণ আফ্রিকার তারকা ব্যাটসম্যান (৯) নরতিয়েকে তুলে মারতে গিয়ে বিপদ ডেকে আনেন। এবিডি-কে হারিয়ে আরও চাপ অনুভব করতে শুরু করে ব্যাঙ্গালোর। ৬ ওভারের মধ্যে ডাগ আউটে ফিরে যান প্রথম সারির তিন ব্যাটসম্যান।
মঈন আলিকে সঙ্গে নিয়ে এগোচ্ছিলেন কোহালি। অক্ষর পটেলকে মাঠের বাইরে ফেলতে গিয়ে মঈন আলি (১১) ধরা পড়েন হেটমায়ারের হাতে। পার্টনারশিপ হচ্ছে না, পর পর উইকেট চলে যাচ্ছে, বাড়তে থাকছে চাপ। এরকম পরিস্থিতিতে কোহালির ব্যাট কি চওড়া হয়ে উঠবে? দিল্লির ড্রেসিং রুমে প্রায় ঢুকে যাওয়া ম্যাচ কি ব্যাঙ্গালোর ক্যাপ্টেন একাই বের করে আনতে পারবেন? এই সব প্রশ্ন যখন ক্রিকেটভক্তদের মনে ঝড় তুলছে, তখনই বিরাট-পতন।
রাবাদার বল ব্যাঙ্গালোর অধিনায়কের ব্যাট ছুঁয়ে পন্থের হাতে। আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে না থেকে ডাগ আউটের পথে পা বাড়ালেন কোহালি। তিনি ফিরতেই দেওয়াললিখন পড়ে ফেলেছিলেন ব্যাঙ্গালোরের ভক্তরা। কোহালি ফেরার পরে বাকিরা এলেন আর গেলেন। ব্যাঙ্গালোর শেষ মেশ থামল ৯ উইকেটে ১৩৭ রানে। রাবাদা ছাড়া দিল্লির বোলারদের মধ্যে নরিতয়ে (২-২২), অশ্বিন (১-২৬), অক্ষর পটেল (২-১৮) সফল।
আরও পড়ুন: পাড়িকলের দুরন্ত ক্যাচে ফিরলেন শ্রেয়াস
এ দিন টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বিরাট। প্রথম ওভার থেকেই আক্রমণাত্মক মেজাজে ব্যাট করেন দিল্লির ওপেনার পৃথ্বী শ। উদানার প্রথম ওভার থেকে ১৪ রান নেন তিনি। দ্বিতীয় ওভারে ওয়াশিংটন সুন্দর মাত্র ৩ রান দেন। তৃতীয় ওভার করার জন্য কোহালি বল তুলে দেন নভদীপ সাইনির হাতে। তাঁর ওভার থেকে ১৪ রান নেন পৃথ্বী ও শিখর ধওয়ন। ওয়াশিংটন সুন্দরের দ্বিতীয় ওভারে আসে ৪ রান। একদিকে ওয়াশিংটন সুন্দর রান আটকে রাখলেও অন্য বোলারদের উপরে নির্দয় হয়ে ওঠেন পৃথ্বী শ। ঝড়ের গতিতে রান তোলা দিল্লির ওপেনার পৃথ্বীকে (২৩ বলে ৪২ রানে) ফেরান মহম্মদ সিরাজ।
প্রথম ওভার করেছিলেন উদানা। দশম ওভারে আবার তাঁকে ফিরিয়ে আনেন কোহালি। বলে বৈচিত্র্য রয়েছে তাঁর। বল হাতে ফিরেই ব্যাঙ্গালোরকে সাফল্য এনে দেন তিনি। ৩২ রানে ধওয়নকে আউট করেন শ্রীলঙ্কার বাঁ হাতি বোলার। কলকাতার বিরুদ্ধে দারুণ ফর্মে ছিলেন শ্রেয়াস আইয়ার। এ দিন মঈন আলিকে ছক্কা মারতে গিয়ে বাউন্ডারি লাইনে ধরা পড়েন দিল্লি অধিনায়ক (১১)। বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়ে তাঁর ক্যাচটি ধরেন পাড়িকল।
আরও পড়ুন: পন্টিংয়ের পরামর্শেই কি ফিঞ্চকে ‘মাঁকড় আউট’ করলেন না অশ্বিন?
পর পর উইকেট যাওয়ায় দিল্লির রানের গতি কিছুটা কমে গিয়েছিল। ঋষভ পন্থ ও স্টোইনিস দ্রুতগতিতে রান তোলার কাজ শুরু করেন। দু' জনে ৯৯ রান জোড়েন। ব্যাঙ্গালোর বোলারদের মাঠের যত্র তত্র ছুড়ে ফেলেন স্টোইনিস। শেষ পর্যন্ত ২৬ বলে ৫৩ রানে অপরাজিত থেকে যান তিনি। যদিও তাঁর ক্যাচ একাধিকবার ফেলেন ব্যাঙ্গালোরের ফিল্ডাররা। পন্থ ২৫ বলে ৩৭ রানের ইনিংস খেলেন। স্টোইনিস মারমুখী ব্যাটিং না করলে এ দিন ১৯৬ রানে পৌঁছতই না দিল্লি। এই রানের জবাব দিতে নেমে শুরু থেকেই নড়বড়ে দেখায় ব্যাঙ্গালোরকে।কাগজে কলমে সেরা ব্যাটিং লাইন আপ ভেঙে পড়ে। প্রাধান্য রেখে ম্যাচ জিতে পয়েন্ট টেবলে শীর্ষে পৌঁছে গেল শ্রেয়াসের দিল্লি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy