দুবাইয়ে শেষ হাসি তোলা থাকল হায়দরাবাদের জন্য।
টানা তিন ম্যাচ হারল চেন্নাই সুপার কিংস। শুক্রবার সানরাইজার্স হায়দরাবাদ সাত রানে হারিয়ে দিল মহেন্দ্র সিংহ ধোনির দলকে। হারের হ্যাটট্রিক করায় আইপিএলের সাপ-লুডোর পয়েন্ট টেবলে আট নম্বরেই রয়ে গেল চেন্নাই। হায়দরাবাদ উঠে এল চার নম্বরে।
দুবাইয়ে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির মরিয়া লড়াই ক্রিকেটভক্তদের স্মৃতিতে অনেক দিন জীবন্ত থাকবে। বয়স থাবা বসিয়েছে তাঁর শরীরে। আগের সেই তেজ হারিয়েছেন। তার উপরে মরুশহরের প্রবল গরম ধোনির শক্তি শুষে নিয়েছিল অনেকটাই। এক রানকে দু' রানে পরিণত করার জন্য বিদ্যুৎগতিতে দৌড়লেন। ঘাটতি দেখা দিল দমে। ব্যাট করার সময়ে ঘর্মাক্ত ধোনিকে হাঁপাতে পর্যন্ত দেখা গেল। এ দৃশ্য এর আগে কখনও দেখেনি ক্রিকেটবিশ্ব। শটে পাচ্ছিলেন না জোর। খেলার শেষে ধোনির স্বীকারোক্তি, “খুব জোরে মারার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু টাইমিং ঠিকঠাক হচ্ছিল না।” অসহায় লাগছিল বহু যুদ্ধের সৈনিককে।
শেষ ২ ওভারে জেতার জন্য চেন্নাইয়ের দরকার ৪৪ রান। অনেকে আশায় বসেছিলেন ‘বৃদ্ধ সিংহ’ হয়তো ফিনিশার হয়ে ধরা দেবেন। হাতের বাইরে চলে যাওয়া ম্যাচ জিতিয়ে সমালোচকদের বার্তা দেবেন, “আমি এখনও শেষ হয়ে যাইনি।” মোক্ষম সময়ে বিশ্বাসঘাতকতা করে বসল তাঁর ‘গাণ্ডীব’। সামনে অপরিণত, অনভিজ্ঞ বোলারকে পেয়েও ঝড় তুলতে পারলেন না মাহি। ১৯ তম ওভারে ধোনি নিলেন ১৬ রান। তাও এক বল করার পরে চোটের জন্য অভিজ্ঞ ভুবনেশ্বর কুমার আর বলই করতে পারেননি। খলিল আহমেদ পাঁচ বল করে ওভার শেষ করেন।
আরও পড়ুন: শেষ কবে টানা তিন ম্যাচ হেরেছেন মনে করতে পারছেন না ধোনি
ওয়ার্নার বড় ঝুঁকি নিয়ে ফেলেন শেষ ওভারে। বল তুলে দেন অখ্যাত স্পিনার আবদুল সামাদের হাতে। হায়দরাবাদ অধিনায়কের কাছে এ ছাড়া দ্বিতীয় কোনও রাস্তাই খোলা ছিল না। বিপজ্জনক সিদ্ধান্ত সন্দেহ নেই। উল্টোদিকে আবার ব্যাট হাতে ধোনি। এই অবস্থায় যে কোনও তরুণ স্পিনারের পক্ষে নার্ভ ঠিক রাখাই কঠিন। প্রথম বলটাই ওয়াইড করে বসেন সামাদ। উইকেটকিপার বেয়ারস্টো বলের নাগালই পাননি। বল বাউন্ডারিতে। পরের বলে ধোনি চালালেন। এল দু' রান। দ্বিতীয় বল বাউন্ডারিতে পাঠালেন চেন্নাই অধিনায়ক। তৃতীয় বলে এক রান নিলেন ক্লান্ত মাহি। জয়ের আশাও তত ক্ষণে শেষ হয়ে গিয়েছে।
হায়দরাবাদের ১৬৪ রান তাড়া করতে নেমে এক সময়ে চেন্নাই চার উইকেট হারিয়ে ৪২ রান করেছিল। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছিল ধোনির দলের। দলকে খাদের কিনারা থেকে টেনে তোলার চেষ্টা করেন ধোনি ও জাদেজা। দুই ব্যাটসম্যান ৭২ রানের পার্টনারশিপ গড়েন। ধোনি-জাদেজার পার্টনারশিপ ক্রিকেটভক্তদের ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল ২০১৯ বিশ্বকাপের সেই হৃদয়বিদারক সেমিফাইনালে। সেই ম্যাচেও তো ধোনি-জাদেজার পার্টনারশিপ ভারতকে জয়ের স্বপ্ন দেখাচ্ছিল। ধোনি স্ট্রাইক দিচ্ছিলেন জাদেজাকে। আর বাঁ হাতি আক্রমণ করছিলেন কিউয়ি বোলারদের।
এ দিনও প্রায় একই ছবি। হায়দরাবাদ বোলারদের বিরুদ্ধে পাল্টা মারের খেলা শুরু করেন জাদেজা। একাধিকবার তাঁর ক্যাচ ফস্কান হায়দরাবাদের ফিল্ডাররা। শেষ মেশ নটরাজনের বলে জাদেজা (৩৫ বলে ৫০) আউট হন। প্রিয় জাড্ডু আউট হওয়ার পরে দলকে জেতানোর দায়িত্ব এসে পড়ে ধোনির উপরে। ৩৬ বলে ৪৭ রান করলেন ধোনি। শেষ পর্যন্ত টিকেও থাকলেন। কিন্তু ‘ফিনিশার’ ধোনির দেখা মিলল না।
টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন ওয়ার্নার। শুরুতেই হায়দরাবাদের ইনিংসে আঘাত হানেন দীপক চহার। প্রথম তিনটি বল আউটসুইং করেছিলেন তিনি। চতুর্থ বলটা ইনসুইং করিয়ে ভিতরে ঢুকিয়ে আনেন চহার। বেয়ারস্টো (০) বুঝতেই পারেননি। মারতে গিয়ে বোল্ড হন হায়দরাবাদের ওপেনার।
আরও পড়ুন: অরেঞ্জ ক্যাপ ছিনিয়ে নেব! ময়াঙ্ককে চ্যালেঞ্জ রাহুলের
শুরুতেই উইকেট গেলে চাপে পড়ে যায় যে কোনও দল। হায়দরাবাদও চাপে পড়েছিল। ওয়ার্নারের উপরে অনেক কিছু নির্ভর করেছিল। এক সময়ে বিপজ্জনক দেখাচ্ছিল অজি ব্যাটসম্যানকে। পীযূষ চাওলার গুগলি মারতে গিয়ে লং অনে ফ্যাফ দু প্লেসির হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন হায়দরাবাদ অধিনায়ক (২৮)। অন্যদিকে শার্দুল ঠাকুরের বলে মণীশ পাণ্ডে (২৯) স্যাম কারেনের হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হন। পরের বলেই নন স্ট্রাইকার্স এন্ডে দাঁড়ানো প্রিয়ম গর্গের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হন কেন উইলিয়ামসন (৯)। পর পর দু'বলে দু' উইকেট চলে যাওয়ায় দারুণ চাপে পড়ে যায় হায়দরাবাদ।
এই সময়ে অভিষেক শর্মা ও প্রিয়ম গর্গ হায়দরাবাদের ইনিংসে গতি আনেন। ৭৭ রান জোড়েন দু'জন। দীপক চহারের ১৮ তম ওভারে দু'বার জীবন ফিরে পান অভিষেক। প্রথম বার তাঁকে ফেলেন রবীন্দ্র জাদেজা। দ্বিতীয় বার শার্দুল ঠাকুর। সেই ওভারেই অভিষেক শর্মাকে (৩১) আউট করেন চহার। প্রিয়ম গর্গ ২৬ বলে মারমুখী ৫১ রানের ইনিংস খেলেন। তাঁর জন্যই ২০ ওভারে হায়দরাবাদ করে ৫ উইকেটে ১৬৪ রান।
আরও পড়ুন: মুকুটে নতুন পালক, আইপিএলে সর্বাধিক ম্যাচ খেলার রেকর্ড ধোনির
রান তাড়া করতে নেমে শুরু থেকেই বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয় চেন্নাই। ভুবির বলে বোল্ড হন শেন ওয়াটসন (১)। নটরাজন বোল্ড করেন প্রথম ম্যাচের নায়ক অম্বাতি রায়ুডুকে (৮)। রান আউট হন ফ্যাফ দু’প্লেসি (২২)। জম্মু-কাশ্মীরের ক্রিকেটার আবদুল সামাদের বলে ঠকে যান কেদার যাদব (৩)। একে একে যখন ‘নিবিছে দেউটি’ তখন চেন্নাইয়ের ত্রাতা হতে পারতেন ধোনি-জাদেজা। চেষ্টা করেছিলেন দু'জনে। কিন্তু শেষরক্ষা আর হয়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy