পঞ্চাশ করার পরে গেল। ছবি আইপিএল।
রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরকে হারিয়ে ২ পয়েন্ট ঘরে তোলার পরে ক্রিস গেলকে জড়িয়ে ধরলেন কিংস ইলেভেন পঞ্জাব অধিনায়ক লোকেশ রাহুল। ক্যারিবিয়ান তারকাও তাঁকে জড়িয়ে ধরে তখন হাসছেন।
অথচ শেষ ওভারের পঞ্চম বলে গেলই তাঁর দলের সাজঘরের পরিস্থিতি গুমোট করে দিয়েছিলেন। বিরাটদের ১৭১ রান তাড়া করতে নেমে ৬ বলে পঞ্জাবের দরকার ছিল ২ রান। বোলার যুজবেন্দ্র চহাল। অন্য সময় হলে গেল প্রথম বলই উড়িয়ে দিতেন মাঠের বাইরে। শেষ করে দিতেন খেলা। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাতে চহালের প্রথম দু’বলে রান নিতে পারলেন না তিনি। তৃতীয় বলে স্ট্রাইক দিলেন লোকেশ রাহুলকে। চতুর্থ বলে রাহুলও পারেননি রান নিতে। পঞ্চম বল কভারে ঠেলেই রাহুল দৌড়ন। গেল (৪৫ বলে ৫৩) ক্রিজে পৌঁছনোর আগেই উইকেটকিপার এবি ডিভিলিয়ার্স উইকেট ভেঙে দেন। পঞ্জাব আর ব্যাঙ্গালোর, দুই দলেরই রান তখন ১৭১। শেষ বলে রান না এলে ম্যাচ যাবে সুপার ওভারে। এর আগে দিল্লি-পঞ্জাবের ম্যাচ গড়িয়েছিল সুপার ওভারে। শেষ পর্যন্ত সেই ম্যাচ জিতে নিয়েছিল দিল্লি। এ বারও কি সে রকমই কিছু হবে? পঞ্জাবের হাতের মুঠো থেকে বেরিয়ে যাবে ম্যাচ? গেল আউট হয়ে ফেরার পরে এমনই সব প্রশ্ন নিশ্চয় ঘোরাফেরা করছিল পঞ্জাব সমর্থকদের মনে।
দলের মালকিন প্রীতি জিন্টা ছিলেন চিন্তিত। ডাগ আউটে বসে থাকা কোচ অনিল কুম্বলের কপালেও ছিল চিন্তার ভাঁজ। টানটান উত্তেজনার মধ্যে শেষ বলে নিকোলাস পুরান ছক্কা মেরে ম্যাচ জেতানোয় পঞ্জাব শিবির যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। গেলকেও তখন দেখা গেল হাসতে। প্রত্যাবর্তনের ম্যাচে খলনায়কও হয়ে যেতে পারতেন তিনি।
আরও পড়ুন: নায়ক রাহুল-গেল, নাটকীয় ভাবে শেষ বলে ছয় মেরে পঞ্জাবকে জেতালেন পুরান
বাস্তবে, ‘ইউনিভার্সাল বস’ ফিরলেন পরশপাথর হয়ে। তাঁর পরশে এ দিন সোনা ফলল পঞ্জাবে। এ বারের আইপিএলে বৃহস্পতিবারই প্রথম ম্যাচ খেললেন ক্যারিবিয়ান তারকা। তার আগে ব্যাট হাতে নেমেছিলেন ১৫ জানুয়ারি। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের সেই ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স ও রাজশাহী রয়্যালস। সে দিন ঢাকায় ২৪ বলে ৬০ রানের ইনিংস খেলেও চট্টগ্রামকে জেতাতে পারেননি গেল। তাঁরই দেশের আন্দ্রে রাসেল ২২ বলে অপরাজিত ৫৪ করে জিতিয়ে দেন রাজশাহীকে।
First game of the season and a FIFTY for The Boss 😎👏#Dream11IPL | @henrygayle pic.twitter.com/xoPrFLgjpS
— IndianPremierLeague (@IPL) October 15, 2020
তার এত দিন পরে বৃহস্পতিবার মাঠে ফিরলেন গেল। টুর্নামেন্ট চলাকালীন হাসপাতালে যেতে হয়েছিল পেটের সমস্যায়। অন্য দিকে, ৭টি ম্যাচের মধ্যে ৬টিতেই হেরে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছিল তাঁর দলের। মাঠের বাইরে থেকে এই যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়েছিল গেলকে। এ দিন তিনি নিজের পছন্দের ওপেনিংয়ের জায়গা ছেড়ে দিয়েছিলেন তরুণ ময়ঙ্ক আগরওয়াল ও লোকেশ রাহুলকে। এ বারের টুর্নামেন্টে এই দুই ওপেনারের ব্যাট কথা বলছে। গেল তাই নেমেছিলেন অনভ্যস্ত তিন নম্বরে। পঞ্জাবের রান তখন এক উইকেটে ৭৮।
বেশ কয়েকমাস পরে প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে ব্যাট করতে নামলে শুরু থেকেই পা চলে না। বলের লাইনে ব্যাট যায় না। সহজাত টাইমিং ফিরে পেতে অনেক সময় লাগে। এক সময়ে ১৪ বলে মাত্র ৬ রান করেছিলেন তিনি। যা তাঁর চরিত্রের সঙ্গে বেমানান। অবশেষে, ১৩-তম ওভারে ছন্দ ফিরে পেলেন গেল। ওয়াশিংটন সুন্দরের ওভারে দুটো ছক্কা হাঁকালেন। সেই যে তাঁর গাড়ি চলতে শুরু করল, তা আর সিগন্যাল মানেনি। ৩৬ বলে ৫০ রান করে ব্যাট দেখান ডাগ আউটে। ‘বস’ লেখা শব্দটা জ্বলজ্বল করছিল ব্যাটে। তিনি যে বস আরও একবার তা প্রমাণ করলেন। প্রথম ম্যাচে নেমে হাফ সেঞ্চুরি পেলেন।রাহুলের সঙ্গে ৯৩ রান যোগ করে পঞ্জাবকে নিয়ে গেলেন জয়ের রাস্তায়।
পরের ম্যাচগুলোয় নামার আগে আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে দিলেন দলের। এটাই তো চেয়েছিলেন ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তি। মাঠে নামার আগেই ভিডিয়ো বার্তায় জানিয়ে দিয়েছিলেন, ‘‘অপেক্ষার অবসান। আমরা এখন পয়েন্ট তালিকায় সবার শেষে রয়েছি। আরও সাতটি ম্যাচ আমাদের বাকি। বাকি ম্যাচগুলো জেতার ক্ষমতা রাখি বলেই বিশ্বাস করি। দলের প্রত্যেককে নিজের ক্ষমতার উপরে আস্থা রাখার অনুরোধ করছি। আমরা এখনও ঘুরে দাঁড়াতে পারি।’’
শারজায় জিতে এ দিন হয়তো ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিয়ে গেল পঞ্জাব। গেলও বার্তা দিয়ে গেলেন, এ বারের টুর্নামেন্টে আরও ঝড় তুলবেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy