উল্লসিত অনুষ্টুপ। সৌরভের পুণে দলের হয়ে খেলার সুখস্মৃতি। —ফাইল চিত্র।
আইপিএলে ক্ষণিকের অতিথি তিনি। একেবারেই ‘অপ্রত্যাশিত’ ভাবে। আর তাতেই কেড়ে নিয়েছিলেন নজর। ফেলে আসা আইপিএলের আসর তাঁকে তাই ডাকে প্রতিবার। অনুষ্টুপ মজুমদারের অবশ্য জানা আছে যে, সেই ডাকে ব্যাটসম্যান হিসেবে সাড়া দেওয়ার উপায় তাঁর নেই!
বাংলার রঞ্জি দলের গত মরসুমেও চুটিয়ে খেলেছেন তিনি। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে রুখে দাঁড়িয়েছেন ব্যাট হাতে। কিন্তু এই শহরের দল, কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে খেলার সুযোগ তাঁর জোটেনি। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের উদ্যোগে এক সময়ে যোগ দিয়েছিলেন পুণে ওয়ারিয়র্সে। ২০১২ সালের সেই আইপিএলে খেলেছিলেন চার ম্যাচ। করেছিলেন ৮৭ রান। সর্বোচ্চ ৩১। স্ট্রাইক রেট ছিল ১১৪.৪৭।
আনন্দবাজার ডিজিটালকে সেই পড়ে পাওয়া চোদ্দ আনা সুযোগ নিয়ে অনুষ্টুপ বললেন, “ভাবিইনি সুযোগ পাব। নিলামে বিডিংয়ের মাধ্যমে দলে আসিনি। ঘরোয়া ক্রিকেটে পারফরম্যান্সের নিরিখে আমাকে নেওয়া হয়েছিল। অপ্রত্যাশিত ভাবে পুণেতে খেলার সুযোগ এসেছিল বলেই বাড়তি উত্তেজনা কাজ করছিল।”
আরও পড়ুন: টেস্টে গাওস্করের চেয়ে কোহালি এগিয়ে: দিলীপ বেঙ্গসরকর
সে বার ৮ মে পুণের মাঠেই ছিল আইপিএলে তাঁর প্রথম ম্যাচ। উল্টোদিকে ছিল রাহুল দ্রাবিড়ের রাজস্থান রয়্যালস। চার নম্বরে নেমেছিলেন অনুষ্টুপ। ২০ বলে করেন ৩০। যাতে ছিল একটা চার ও দুটো ছক্কা। স্ট্রাইক রেট ছিল ১৫০। পুণে না জিতলেও প্রশংসিত হয়েছিলেন তিনি। সেটাই ছিল আইপিএলে তাঁর সেরা ইনিংস। অনুষ্টুপের অবশ্য নিজের পারফরম্যান্সের চেয়েও সামনে থেকে তারকাদের দেখার রোমাঞ্চ বেশি নাড়া দিয়েছিল।
স্মৃতিচারণের ভঙ্গিতে বললেন, “আমাদের দলে কী সব ক্রিকেটার ছিল! এত সব আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারের সঙ্গে এক ড্রেসিংরুমে থাকার অনুভূতিই আলাদা। মাইকেল ক্লার্ক, স্টিভ স্মিথ, যুবরাজ সিংহ। মহারাজদা তো ছিলই।” আট বছর আগের আইপিএলে ফিরে গিয়ে স্টিভ স্মিথের কথা মনে ভাসছে অনুষ্টুপের। বললেন, “তখন এত বড় তারকা হয়ে ওঠেনি। আর তখন এমন বিপজ্জনক স্টান্সও ছিল না। অন্য ভাবে দাঁড়াত। স্বাভাবিক স্টান্স ছিল। ফিল্ডিং যথারীতি অসাধারণ ছিল। তখন লেগস্পিনও করত।”
আর মাইকেল ক্লার্ক? ৩৫ বছর বয়সির কথায়, “কথাবার্তা হত। একেবারে মাটির মানুষ। তখন তো ও অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক। এখন স্মিথ যে ছন্দে রয়েছে, তখন ক্লার্ক সেই মেজাজে ব্যাট করত। কিন্তু ওকে দেখে তা বোঝা যেত না। ছোট ছোট টিপস দিত মাঝে মাঝেই। এত নম্র, এত সহজ-সরল লোক যে ভাবাই যায় না!” টিপস মানে কী বলেছিলেন? কোনও নির্দিষ্ট বিষয়ে কিছু জিজ্ঞাসা করেছিলেন কি? অনুষ্টুপের উত্তর, “আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বরাবরই পেসাররা ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটার গতিতে বল করে। আমি জানতে চেয়েছিলাম যে এই গতির বোলারদের সামলাও কী ভাবে? ক্লার্ক বলল, নিয়মিত খেলতে খেলতে ওই গতির সঙ্গে ধাতস্থ হয়ে ওঠা যায়। সমস্যা হয় না। ফিল্ডিং নিয়েও প্রশ্ন করেছিলাম। স্লিপে আমার সেরা ফিল্ডার লাগত মার্ক ওয়কে। এটা নিয়েই জানতে চেয়েছিলাম। ক্লার্ক বলল, মার্ক ওয় স্লিপে দারুণ ফিল্ডার ঠিকই। কিন্তু আউটফিল্ডে অতটা ভাল নয়। আমাকে বলেছিল, তুমি যদি স্লিপে ফিল্ডিং করতে চাও, তবে প্রচুর ক্যাচ নিতে হবে নিয়মিত। মাথাটা সোজা রাখতে হবে।”
আরও পড়ুন: আইপিএলে নেই, কিন্তু কেকেআরে আছেন প্রবীণ তাম্বে
ব্যাটিং নিয়ে কোচ প্রবীণ আমরের সঙ্গে কথা হত। সৌরভের সঙ্গেও চলত আলোচনা। অনুষ্টুপের মতে, “আইপিএল খেললে একটা ইতিবাচক মানসিকতা এমনিতেই এসে যায়। চেতেশ্বর পূজারাই খেলুক বা অন্য কেউ, মারতে হবেই। স্ট্রাইক রেট একশোর বেশি রাখতেই হবে। কম বলে বেশি রান করতেই হবে। ঠিক করে নিতে হয় কোন বোলারকে মারতে হবে। এটা খুব জরুরি। মহারাজদা বলত, একটা কি দুটো বোলারকে বেছে নিতে। আমার শক্তি কোথায়, বোলার কোথায় বল ফেলছে, এগুলো দেখে টার্গেট করতে হত বোলারকে। দুটো ঠিকঠাক মিলে গেলে তখন সেই বোলারকে মারার জন্য বেছে নিতাম। কারণ, তাতে ঝুঁকি কম থাকত।”
না খেললেও সে বার ৫ মে-র ইডেনে পুণের ড্রেসিংরুমে ছিলেন অনুষ্টুপ। সেই ম্যাচ চিহ্নিত হয়েছিল ‘বঙ্গভঙ্গের ম্যাচ’ হিসেবে। গৌতম গম্ভীরের কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিরুদ্ধে সৌরভের পূণে ওয়ারিয়র্স দু’ভাগ করে দিয়েছিল ইডেনের গ্যালারিকে। সেই উন্মাদনা ভুলতে পারেননি মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান। বললেন, “ওই রকম গ্যালারি ভর্তি লোক মাঠে কখনও দেখিনি। ইডেনের ওই চেহারাও দেখিনি আর। অসাধারণ অভিজ্ঞতা ছিল সেই ম্যাচ। মহারাজদা ভীষণ ভাবে চেয়েছিল ম্যাচটা জিততে। কিন্তু তা হয়নি। সেই হতাশা ধরা পড়ছিল চেহারায়। আউট হয়ে এসে অনেক ক্ষণ চুপ করে বসেছিল ড্রেসিংরুমে। বেরিয়ে গিয়ে ডাগ আউটে বসেনি। মুখে কিছু না বললেও বোঝা যাচ্ছিল কতটা যন্ত্রণা পেয়েছে জিততে না পারায়।”
ড্রেসিংরুমে বসে থাকা বিধ্বস্ত সৌরভের সেই চেহারা কোনও দিনই ভুলবেন না অনুষ্টুপ!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy