নয় উইকেট নিয়ে শীর্ষে আরসিবির যুজবেন্দ্র চহাল
বারো বছর আগের ঘটনা। ভারতীয় ক্রিকেটে সাড়ম্বরে পা রাখতে চলেছে আইপিএল। তার আগে এক অনুষ্ঠানে প্রাক্তন ভারতীয় স্পিনার মনিন্দর সিংহকে জনৈক সাংবাদিক বলেছিলেন, ‘‘স্পিনারদের রাজত্ব তো এ বার থেকে শেষ।’’ পাল্টা জবাব এসেছিল, ‘‘দু’বছর যেতে দাও, দেখবে কারা সফল হয়।’’
ক্রিকেটের ক্রোড়পতি লিগ এগিয়েছে, বেড়েছে স্পিনারদের দাপটও। একটা সময়ে যে স্পিনারদের ব্যবহার করতে ভয় পেতেন অধিনায়কেরা, সেই ক্রিকেট দর্শন আমূল পাল্টে গিয়েছে। টি-টোয়েন্টির হাত ধরে ঘটে গিয়েছে স্পিন-বিপ্লব। নজর কেড়েছেন রিস্টস্পিনারেরাও। স্পিন-অস্ত্রে ভরসা রাখছে সমস্ত দল।
এখনও পর্যন্ত আইপিএলে উইকেট সংগ্রহকারীদের তালিকার প্রথম পাঁচ জনের মধ্যে তিনজন স্পিনার। ১৪৯ উইকেট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে অমিত মিশ্র। ১৪৩ উইকেট নিয়ে পীযূষ চাওলা তৃতীয় স্থানে। পঞ্চম স্থানে থাকা হরভজন সিংহের উইকেট ১৩৭। তিনজন এখনও আইপিএল খেলছেন।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
এ বারের ছবিতেও পরিবর্তন নেই। মরসুমের প্রথম ম্যাচেই তিন উইকেট নিয়ে আরসিবি-র বিরুদ্ধে ঝড় তুলেছিলেন হরভজন সিংহ। এই আরসিবি-র বিরুদ্ধেই ১২ রানে তিন উইকেট নিয়ে নজরে উঠে আসেন রাজস্থান রয়্যালসের শ্রেয়স গোপাল। একই দলের বিরুদ্ধে ১১ রানে চার উইকেট নেন সানরাইজার্স হায়দরাবাদের মহম্মদ নবি। এমনকি মরসুমে ১৭ ম্যাচের মধ্যে স্পিনাররাই তিনটি ম্যাচে ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’।
এ দিকে উইকেট সংগ্রহকারীদের তালিকায় প্রথম ছয় জনের মধ্যে চারজনই স্পিনার। নয় উইকেট নিয়ে যুজবেন্দ্র চহাল শীর্ষে, সাত উইকেট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে ইমরান তাহির। পঞ্চম ও ষষ্ঠ স্থানে থাকা মহম্মদ নবি ও শ্রেয়স গোপালের উইকেটসংখ্যা ছয়। সমস্ত প্রতিকূলতা অতিক্রম করে কী ভাবে সফল হচ্ছেন স্পিনারেরা?
প্রাক্তন ভারতীয় স্পিনার মনিন্দর সিংহ জানাচ্ছেন, সময়ের সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নেওয়ার উপায় বার করে ফেলেছেন স্পিনারেরা। তাঁর কথায়, ‘‘ডারউইনের ‘সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট’ উক্তিটি নিশ্চয়ই মনে আছে। এ ক্ষেত্রেও সেই তত্ত্ব প্রযোজ্য। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের সঙ্গে নিজেদের দ্রুত মানিয়ে নিয়ে অনেক বেশি বৈচিত্র এনেছে স্পিনারেরা। বলে যত গতি কম হবে, তত মারতে অসুবিধা হবে ব্যাটসম্যানের।’’
টি-টোয়েন্টির যুগে ‘বিগ হিটারের’ সংখ্যা বেড়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে একজন স্পিনারের কী মনোভাব থাকা উচিত? মনিন্দরের জবাব, ‘‘যে ব্যাটসম্যান যত বড় শট নেবে, তার আউট হওয়ার সম্ভাবনাও তত বেশি। ভিভকে (রিচার্ডস) যখন আমি বল করতে যেতাম, তখন অনেক বেশি বল হাওয়ায় রাখতাম। যাতে ও আমাকে আক্রমণ করে। ফ্লাইটে পরাস্ত করার চেষ্টা করতাম। একটা, দু’টো মারবে, কিন্তু তার পরে আর পারবে না। এখনও সেটাই হয়েছে। মার খেতে কেউ আর ভয় পায় না। মহম্মদ নবি, হরভজন সিংহ যেমন ফ্লাইট দিতে ভয় পায় না। তেমনই চহাল, রশিদ খানেরা বোলিংয়ে বৈচিত্র প্রয়োগ করছে। শ্রেয়স গোপাল জানে, ওর অস্ত্র গুগলি। কারণ, ওর লেগস্পিন কম ঘোরে।’’
বাংলার প্রাক্তন বাঁ হাতি স্পিনার উৎপল চট্টোপাধ্যায় মনে করছেন, বলে বৈচিত্রের সঙ্গে ক্রিজকে ব্যবহার করাও জানতে হয় স্পিনারদের। তাঁর কথায়, ‘‘অশ্বিন জানে ওর বল বেশি ঘোরে না। একটি বল আম্পায়ারের ঠিক পাশ থেকে করছে। পরের বলটাই ক্রিজের একদম কোণ থেকে করে দিচ্ছে। রিস্টস্পিনারদের এমনিতেই অনেক বেশি বৈচিত্র থাকে। ফিঙ্গার স্পিনারও মানিয়ে নিচ্ছে।’’
আইপিএল শুরু হওয়ার সময় অনেকে বলেছিলেন, ক্রিকেটের সর্বনাশ নিয়ে আসছে এই ক্রোড়পতি লিগ। কিন্তু অজান্তেই স্পিনারদেরও যে নতুন ভাবে প্রতিষ্ঠার পথ খুলে দিয়ে গেল ক্রিকেটের এই বিনোদন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy