আলোচনা: বৃহস্পতিবার ইডেনে অনুশীলনের ফাঁকে কালিসের সঙ্গে অধিনায়ক কার্তিক। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
গাড়ি মসৃণ ভাবে চলতে চলতে হঠাৎ যেন স্পিডব্রেকারে ধাক্কা খেয়েছে। কী মনে হচ্ছে তাঁর? ইডেনে আজ, শুক্রবার, দিল্লি ক্যাপিটালসের বিরুদ্ধে খেলতে নামার আগে তুমুল চর্চা বাইশ গজ নিয়ে। পিচ নিয়ে কি তিনি উদ্বিগ্ন? সাধারণত প্রচারমাধ্যমের সামনে খুব একটা আসেন না। বৃহস্পতিবার দুপুরে অবশ্য ব্যতিক্রম ঘটল। টিম হোটেলে বসে আনন্দবাজারকে বিশেষ সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে ইডেনের পিচ থেকে বিশ্বকাপে ভারতীয় দলে কাকে দেখতে চান, সব নিয়েই খোলামেলা কথা বললেন কলকাতা নাইট রাইডার্সের হেড কোচ জাক কালিস।
প্রশ্ন: প্রথম ছ’টা ম্যাচে চারটেতে জিতেছে কেকেআর। দল কী রকম জায়গায় আছে?
জাক কালিস: ছ’টা ম্যাচে চার জয় খারাপ নয়। আমি তো বলব, ভাল জায়গাতেই আছি। ভাল ক্রিকেট খেলেছি। এ বার ঘরের মাঠে কয়েকটা ম্যাচ আছে। সেগুলো জিততে হবে। লক্ষ্য থাকবে, ইডেনে ভাল করে দৌড়ে বাকিদের থেকে এগিয়ে যাওয়া।
প্র: আগের ম্যাচে চেন্নাই সুপার কিংসের বিরুদ্ধে হার কি দলের পক্ষে বড় ধাক্কা হয়ে গেল না?
আরও পড়ুন: ইডেনে আজ সবুজ পিচ? দলে দুটি পরিবর্তন? দেখে নিন নাইটদের সম্ভাব্য একাদশ
কালিস: ও রকম হতেই পারে। আমরা যে ধরনের ক্রিকেট খেলি, যে রণনীতি নিয়ে মাঠে নামি, সেটা ওই দিন কাজ করেনি। এক এক দিন এ রকম আসতেই পারে। আমরা ওই হার নিয়ে বেশি ভাবছি না। ছেলেরা জানে, কী ভাবে ওই পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়াতে হয়।
প্র: আন্দ্রে রাসেল দুরন্ত ফর্মে রয়েছেন। কিন্তু মিডল অর্ডারে বাকিদের নিয়ে কি আপনি একটু চিন্তিত?
কালিস: আমি কিন্তু দলের ব্যাটিং বিভাগ নিয়ে যথেষ্ট খুশি। ছেলেরা ভাল অবস্থাতেই আছে। ওরা বড় রান তুলেছে, বড় রান তাড়া করে জিতছে। কোনও সমস্যা তো দেখছি না। কে কত রান করল, তার চেয়েও আমার কাছে বড়, নিজেদের কাজটা ব্যাটসম্যানরা বুঝতে পারছে কি না। আমি খুশি যে, ব্যাটসম্যানরা নিজেদের ভূমিকাটা ঠিকঠাক বুঝতে পারছে এবং যে পরিস্থিতিতে যে রকম দরকার, সে রকমই খেলছে। এটাই সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
প্র: শুভমন গিলকে নিয়ে কী মনে হচ্ছে? বিরাট কোহালি তো ওঁর প্রচুর প্রশংসা করেছেন।
কালিস: আমি যে ক’জন তরুণ ক্রিকেটারকে ইদানীং ভারতে দেখেছি, তাদের মধ্যে শুভমনই সেরা। টেস্ট, ওয়ান ডে, টি-টোয়েন্টি— তিন ধরনের ক্রিকেট খেলার মতো দক্ষতা আছে ওর। টেকনিক্যালি খুবই ভাল ব্যাটসম্যান। কেকেআরের হয়ে ছয় বা সাত নম্বরে নেমে দারুণ খেলছে। এই সব জায়গায় ব্যাট করা কিন্তু সহজ কাজ নয়। ও খুব ভাল শিক্ষার্থী। সব সময় শেখার চেষ্টা করছে। যে জন্য শুভমনের উন্নতি করতে সমস্যা হবে না।
প্র: তার মানে ভারত এবং কেকেআরের জন্য শুভমন ভবিষ্যতের সম্পদ হতে চলেছেন?
কালিস: অবশ্যই। শুধু টেকনিক্যাল দিক দিয়েই নয়, মানসিক ভাবেও শুভমন খুব শক্তিশালী। এ ছাড়া ভাল অধিনায়ক হওয়ার মশলা আছে ওর মধ্যে। ভবিষ্যতে ওকে নিয়ে অনেক কিছুই শুনতে পাবেন।
প্র: এ বার কেকেআরের লড়াই দিল্লির সঙ্গে। ওদের দল নিয়ে কী বলবেন? ওখানেও তো শিখর ধওয়ন, ঋষভ পন্থের মতো বিগ হিটাররা আছে?
কালিস: দিল্লি ধারাবাহিক ভাবে ভাল খেলছে। ওরা যথেষ্ট ভাল দল। ভাল ক্রিকেটার আছে। দিল্লির মতো দলকে হারাতে হলে আমাদের সেরা খেলাটাই খেলতে হবে।
প্র: দিল্লির উপদেষ্টা আবার সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। ইডেনের পিচে তো ঘাস আছে। পুরো সবুজ। দিল্লির পেসাররা কি বাড়তি সাহায্য পাবেন?
কালিস: আমার মনে হয় গত দু’বছর ইডেনের পিচ যে রকম ছিল, এ বার তা নেই। চরিত্র বদলেছে। অন্তত দুটো ম্যাচ পর্যন্ত সে রকম গতি বা বাউন্স দেখিনি। তবে ব্যাটসম্যানরা স্ট্রোক খেলতে পারছে। ১৬০-১৭০ রান যে উইকেটে উঠবে, সেটাই আমার কাছে ভাল উইকেট।
প্র: ঘরের মাঠের সুবিধেটা কি আপনারা নিতে পারছেন? সিএসকে তো নিজেদের সুবিধে মতো পিচ বানিয়ে ফায়দা তুলছে। আপনারা যে ধরনের পিচ চেয়েছেন, তা কি পাচ্ছেন?
কালিস: আমাদের শক্তি হল অলরাউন্ড ক্রিকেট খেলার দক্ষতা। আমাদের দলে ভাল পেসার, স্পিনার ব্যাটসম্যান আছে। আমরা একটা ভাল উইকেট চাই, যেখানে ক্রিকেটারদের দক্ষতা দেখানোর সুযোগ থাকবে। আমি মনে করি, যে কোনও উইকেটে খেলার ক্ষমতা রাখে কেকেআর। পরিবেশের ওপর আমাদের পারফরম্যান্স নির্ভর করে না।
প্র: তার মানে ইডেনের পিচে ঘাস থাকল কি ফাটল থাকল, তাতে আপনাদের কিছু যায়-আসে না।
কালিস: না, না, একেবারেই কিছু যায়-আসে না। আমরা মাথা ঘামাই না। আমরা কখনওই কোনও বিশেষ ধরনের উইকেট বানাতে বলিনি ইডেনে। আমরা শুধু একটা ভাল উইকেট চাই। যেখানে আমাদের ক্রিকেটারেরা নিজেদের দক্ষতা তুলে ধরতে পারে।
প্র: আইপিএল এখন পাওয়ার হিটিংয়ের চূড়ান্ত নমুনা দেখছে। ক্রিস গেল, আন্দ্রে রাসেল। গত কাল কিংস ইলেভেন পঞ্জাব ম্যাচে কায়রন পোলার্ড। এঁরা তো ব্যাটিংয়ের সংজ্ঞাটাই বদলে দিচ্ছেন। ক্রিকেট কি এখন একটা বিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে?
কালিস: বলতেই পারেন। পাওয়ার হিটিংয়ের ক্ষেত্রে দেখতে পাচ্ছি, এখন ব্যাটসম্যানরা অন্য ধরনের টেকনিক কাজে লাগাচ্ছে। টেস্ট ক্রিকেটে এক রকম টেকনিক, টি-টোয়েন্টিতে আর এক রকম। এটাই পরের প্রজন্মের ক্রিকেট হতে চলেছে। দু’ধরনের ফর্ম্যাটে সম্পূর্ণ দু’ধরনের ব্যাটসম্যান পাওয়া যাবে। আন্দ্রে রাসেলকেই দেখুন। টি-টোয়েন্টির বিশেষজ্ঞ ক্রিকেটার। পাওয়ার হিটারদের ক্ষেত্রে শক্তিটাই প্রধান হয়ে ওঠে। তাই শক্তি বাড়ানোর ওপর এরা জোর দেয়।
প্র: আপনার দলে এক জন পাওয়ার হিটার আছে। কিন্তু বিপক্ষ দলেও তো আছে। এই তো মুম্বইয়ের পোলার্ডকেই ধরুন। মুম্বইয়ের সঙ্গে এখনও দুটো ম্যাচ বাকি। পোলার্ডকে সামলাতে হবে। কোচ হিসেবে আপনার কী ধরনের পরিকল্পনা থাকবে?
কালিস: এই ধরনের পাওয়ার হিটারদের বিরুদ্ধে খেলতে নামার সময় আমাদের বিশেষ পরিকল্পনা অবশ্যই থাকে। কিন্তু এটাও আপনাকে বুঝতে হবে, সব দিন এদের বিরুদ্ধে কৌশল খাটে না। কোনও কোনও দিন ওরাও মেরে দেবে বোলারদের। সেটা মেনে নিতেই হবে। সেখানেই হয় আসল পরীক্ষাটা।
প্র: কী রকম?
কালিস: এই রকম পরিস্থিতি হলেও যে পরিকল্পনাটা নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন, সেটা ধরে রাখতে হবে। অনেক দলই এখানে ভুলটা করে বসে। বোলাররা মার খাচ্ছে দেখে কৌশল বদলে ফেলার চেষ্টা করে। তখন কিন্তু হাতে আর কোনও পরিকল্পনাই থাকে না। সমস্যাও বেড়ে যায়। তাই পরিস্থিতি যা-ই হোক না কেন, নিজেদের পরিকল্পনা অনুযায়ী খেলতে হবে। আর প্রার্থনা করতে হবে, দিনটা যেন বোলারদের হয়।
প্র: পাওয়ার হিটারদের আটকাতে রিস্ট স্পিনাররা কি বড় অস্ত্র হয়ে উঠতে পারে? আপনার দলে তো দু’জন আছে, কুলদীপ যাদব এবং পীযূষ চাওলা।
কালিস: পাওয়ার হিটার বনাম রিস্ট স্পিনারদের লড়াইটা কিন্তু জমে যেতে পারে। রিস্ট স্পিনারদের ধাঁধার সামনে মিসহিট করে ওরা বাউন্ডারি লাইনে ক্যাচ আউট হতে পারে। তবে শুধু রিস্ট স্পিনারদের কথা বললেই হবে না। ফিঙ্গার স্পিনারদের ভূমিকাটাও কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ। ওরা দলে ধারাবাহিকতাও নিয়ে আসে। পাশাপাশি আরও একটা কথা বলতে চাই। বাউন্ডারি যতটা সম্ভব বড় করতে হবে। তা হলে বোলারদের জন্যও কিছু থাকে। আমরা কয়েকটা জায়গায় খেলেছি, যেখানে বাউন্ডারি সে রকম বড় ছিল না। বাউন্ডারির মাপটা যত বেশি সম্ভব বাড়ানো উচিত।
প্র: সোমবার ভারতের বিশ্বকাপ দল নির্বাচন। আপনার কি মনে হয়, দীনেশ কার্তিককে ভারতীয় দলে রাখা উচিত?
কালিস: নিশ্চয়ই। কার্তিক দারুণ ক্রিকেটার, খুব ভাল ফিনিশার। আমাদের প্রচুর ম্যাচ জিতিয়েছে। ও খেলাটা খুব ভাল বোঝে। জানে কোন পরিস্থিতিতে কী রকম খেলতে হয়। পরিষ্কার বলছি, কার্তিককে বিশ্বকাপের দলে না রাখাটা বোকামি হবে। ও দলে থাকা মানে হাতে এক জন উইকেটকিপার থাকা। কিপিং না করলেও কার্তিক ভাল ফিল্ডার। আমি দল বাছলে, কার্তিক অবশ্যই সুযোগ পেত।
প্র: বিরাট কোহালির আরসিবি এ বারে পরপর হারছে। এই হার কি বিশ্বকাপে অধিনায়ক কোহালির ওপর প্রভাব ফেলতে পারে?
কালিস: একেবারেই না। বিশ্বকাপ সম্পূর্ণ অন্য ফর্ম্যাটের ক্রিকেট। কোহালি জানে এই ধাক্কা কী ভাবে সামলাতে হবে। মানসিক ভাবে ও খুবই শক্তিশালী।
প্র: শেষ প্রশ্ন। শুক্রবারের দিল্লি ম্যাচ নিয়ে আপনার ভবিষ্যদ্বাণী কী?
কালিস: আমার মনে হয়, ম্যাচটা আমরা বার করে নেব। তবে এটাও সত্যি যে, সেরা খেলাটা খেলতে না পারলে প্রত্যাশিত ফলটা পাব না। আমরা যে ভাবে খেলে আসছি, সেই ছন্দটা ধরে রাখতে পারলে ম্যাচটা জিতে যাব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy