Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪

ভুবিকে ছক্কা মেরে কেঁদে ফেলেন নায়ক

ক্রিকেটের যে কোনও ফর্ম্যাটে তিন ওভারে ৫৩ রান করা বেশ কঠিন। বিপক্ষে রশিদ খান, ভুবনেশ্বর কুমারের মতো বোলার থাকলে লক্ষ্য যেন অবিশ্বাস্য হয়ে দাঁড়ায়।

অভিনন্দন: কার্তিক ও রাসেলকে আলিঙ্গন শাহরুখের। নিজস্ব চিত্র

অভিনন্দন: কার্তিক ও রাসেলকে আলিঙ্গন শাহরুখের। নিজস্ব চিত্র

ইন্দ্রজিৎ সেনগুপ্ত
শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০১৯ ০৩:৫২
Share: Save:

ক্রিকেটের যে কোনও ফর্ম্যাটে তিন ওভারে ৫৩ রান করা বেশ কঠিন। বিপক্ষে রশিদ খান, ভুবনেশ্বর কুমারের মতো বোলার থাকলে লক্ষ্য যেন অবিশ্বাস্য হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু আন্দ্রে রাসেল যে এই মুহূর্তের জন্যই অপেক্ষা করেন। ১৯ বলে ঝোড়ো ৪৯ রান করে মরসুমের প্রথম জয় এনে দিলেন কলকাতা নাইট রাইডার্স শিবিরে।

১৯তম ওভারে ভুবনেশ্বর কুমারকে দ্বিতীয় ছয় মেরে কেঁদে ফেলেন ম্যাচের নায়ক। সেই সঙ্গেই চোখের জল মুছে বলে দেন, ‘‘বিগ ম্যান্স ডোন্ট ক্রাই’’। বড় ম্যাচের নায়কেরা কখনও কাঁদে না।

রাসেল নিজেই এ কথা গিয়ে জানান শাহরুখ খানকে। ম্যাচ শেষে ‘কিং খান’ নিজেই টুইট করে লেখেন, ‘‘আন্দ্রে আমাকে বলে, দর্শকের সমর্থন পেয়ে ও এতটাই আবেগপ্রবণ হয়ে গিয়েছিল যে, মনে করেছিল কেঁদে ফেলবে। তার পরেই সিদ্ধান্ত নেয় যে, বড় ম্যাচের নায়কেরা প্রকাশ্যে কখনও কাঁদে না।’’

আরও পড়ুন: হায়দরাবাদকে হারিয়ে ইডেনে নাইট রাইডার্সের রুদ্ধশ্বাস জয় এল এই সব কারণে

এমনকি ১৯তম ওভারের আগে শুভমন গিলকে রাসেল নিজেই জানিয়ে দেন যে, ওভারের বেশির ভাগ বল তিনিই খেলবেন। কারণ আন্দাজ করতে পেরেছিলেন যে, শেষ ওভারে বল করার মতো উপযুক্ত বোলার হায়দরাবাদের কাছে নেই। ভুবি, সিদ্ধার্থ কল, রশিদ খান প্রত্যেকেরই চার ওভার শেষ হয়ে গিয়েছিল। ১৯তম ওভারে তাই বেশির ভাগ রান তুলে নিতে চেয়েছিলেন রাসেল। সেটাই হল। কিন্তু শেষ ওভারে শুভমন গিল দু’টি ছয় মেরে ম্যাচ জেতানোর পরে মজা করে রাসেল বলেন, ‘‘আমার পুরো স্পটলাইট ও নিয়ে চলে গেল।’’

শেষ ওভারে শুভমন রাসেলকে স্ট্রাইক দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সিনিয়র নির্দেশ দিয়ে দেন, ‘‘মারার বল পেলে একেবারে উড়িয়ে দাও।’’ সেটাই করে দেখালেন পঞ্জাবের তরুণ ব্যাটসম্যান। শাহরুখ আরও লেখেন, ‘‘কলকাতার সমর্থকদের জন্যই শুভমন, রাসেল ও উথাপ্পা এই ইনিংস উপহার দিয়ে গেল। আগামী দিনেও এমন ভাবেই কেকেআর-কে সমর্থন করুন।’’ কলকাতা নাইট রাইডার্সের ওয়েবসাইটে রাসেল নিজেই এই গল্প শুনিয়ে গেলেন।

রাসেল ঝড়ে মুগ্ধ তাঁর সতীর্থ নীতীশ রানাও। দিল্লির এই বাঁ হাতি ব্যাটসম্যানই নাইটদের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, এই ম্যাচটি জেতা সম্ভব। ৪৭ বলে ৬৮ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস হয়তো ক্যারিবিয়ান অলরাউন্ডারকে জেতার অক্সিজেন দিয়ে গিয়েছে। নীতীশ যখন ব্যাট করছিলেন, তখন সিএবি-র সিঁড়ি দিয়ে নামছিলেন গৌতম গম্ভীর। তাঁর মুখে মৃদু হাসি বুঝিয়ে দিল জুনিয়রের ব্যাটিংয়ে তৃপ্ত তাঁর সিনিয়র।

রাসেলের সঙ্গে নীতীশ ব্যাট করার সময় একটি পরিকল্পনা নিয়েই ব্যাট করছিলেন। বাঁ হাতি স্পিনার (শাকিব) ও লেগস্পিনার (রশিদ)-কে যতটা পারবেন সামলাবেন রানা। রাসেল সামলাবেন পেসারদের। নীতীশ বলছিলেন, ‘‘আমাদের এই পরিকল্পনা মোটামুটি কাজে লেগেছে। আমি যতটা পেরেছি শাকিব ও রশিদকে সামলেছি। তার পরে রাসেল যেটা করে দেখাল, সেটা তো ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। অন্তত আমি তো এই ইনিংসকে ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না।’’

এমনকি রশিদের বলে এলবিডব্লিউ হওয়ার পরে রানা ডিআরএস নেওয়ার সিদ্ধান্তও নেননি রাসেলের কথা ভেবে। কারণ, তিনি জানতেন যে, এই ম্যাচ একমাত্র রাসেলের পক্ষেই জেতানো সম্ভব। রানার কথায়, ‘‘এলবিডব্লিউ হওয়ার পরে বেশ কিছুক্ষণ সময় নিয়েছিলাম। ডিআরএস নেব কি না তা রাসেলের সঙ্গে আলোচনা করি। তখন ভাবলাম যে, আমি যদি রিভিউ নিই তা হলে শেষ দিকে রাসেলের কাছে কোনও রিভিউ থাকবে না।’’

হঠাৎ সুনীল নারাইনকে দিয়ে ওপেন না করিয়ে কেন রানাকে পাঠানো হল? নীতীশের উত্তর, ‘‘নারাইনের আঙুলে চোট লেগেছিল। চোট কতটা গুরুতর সে বিষয়ে বলতে পারব না।’’ ম্যাচ শেষে রানা ও রাসেলকে অভিনন্দন জানাতে মাঠে গিয়েছিলেন শাহরুখ খান। কী বললেন ম্যাচের অন্যতম নায়ককে? কিছুক্ষণ হেসে রানা বলে গেলেন, ‘‘আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার স্ত্রীর সঙ্গে আলাপ হল। তা সে তোমারই স্ত্রী তো?’’

সানরাইজার্সের তারকা লেগস্পিনার রশিদ খানও রাসেলের প্রশংসা করে গেলেন। রশিদ বললেন, ‘‘আমরা খারাপ বল করিনি। রাসেল অবিশ্বাস্য ব্যাট করে ম্যাচটি আমাদের নিয়ন্ত্রণ থেকে বার করে দিল।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy