ডুয়েলটা শুরু থেকেই মুখরোচক ছিল। বাইশ গজে মাহি-কোহালির। আর বাইশ গজের বাইরে গ্যালারিতে সাক্ষী-অনুষ্কার অঘোষিত লড়াই। আইপিএলের আসরে এমন মুখরোচক লড়াই সহজে চোখে পড়ে না। প্রাক্তন এবং বর্তমান ভারত অধিনায়কের যুদ্ধটা যেমন টান টান ছিল, তেমনই জমাটি হল দর্শকাসনে বসা সাক্ষী-অনুষ্কার উপস্থিতিতে তৈরি হওয়া কয়েকটি টুকরো মুহূর্ত।
বুধবার মাঠের ভিতরে তো বটেই, মাঠের বাইরেও তাই বেশ কিছু নাটকীয় মুহূর্ত উঠে এল চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে। আর গোটাটাই উপভোগ করলেন দর্শকেরা। হবে না-ই বা কেন! আইপিএলের আসরে এই প্রথম মুখোমুখি হলেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনি এবং বিরাট কোহালি। না! তথ্যে একটু ভুল রয়েছে। আগেও আইপিএলে একে অপরের মুখোমুখি হয়েছেন তাঁরা। তবে ওয়ান ডে-র অধিনায়কত্ব ছাড়ার পর এই প্রথম আইপিএলে মুখোমুখি ধোনি-কোহালি। ফলে এই লড়াইয়ের মঞ্চ যেন আগে থেকেই তৈরি ছিল। আর এই ডুয়েল আরও জমিয়ে দিলেন মাহি-কোহালির স্ত্রীরা।
ম্যাচের নানা ওঠা-পড়ার মধ্যেই তাই ক্যামেরা বার বার ঘুরে গেল সাক্ষী-অনুষ্কার দিকেও। চলতি আইপিএলে এটাই ছিল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর প্রথম হোম ম্যাচ। আর প্রথম হোম ম্যাচেই স্টেডিয়ামে হাজির ছিলেন বিরাটের স্ত্রী অনুষ্কা শর্মা। এমনিতে আইপিএলের প্রায় সব ম্যাচেই তিনি নজর রাখেন বলে আগেও জানিয়েছিলেন। শুটিংয়ের কাজে ব্যস্ত থাকলেও ১৩ এপ্রিল কিংস ইলেভেন পঞ্জাবের বিপক্ষে বিরাটদের সমর্থন করতে স্টেডিয়ামে পৌঁছে গিয়েছিলেন। তবে তার পর আর মাঠে বসে খেলা দেখা হয়নি।
স্কোরবোর্ডে ডিভিলিয়ার্স-ঝড়। ছবি: পিটিআই।
ফের অনুষ্কাকে দেখা গেল গত কাল। স্লিভলেস সাদা টপ আর ফেডেড ব্লু ড্রেসের অনুষ্কাকে ম্যাচের প্রতিটি মুহূর্তের সঙ্গে মিশে গেলেন। কখনও হাততালিতে ভরিয়ে দিলেন টিমকে, তো কখনও আফসোসে ভরে উঠল তাঁর মুখ। পিছিয়ে ছিলেন না ধোনির স্ত্রী সাক্ষীও। স্লিভলেস ফ্লোরাল টপে তাঁকে দেখা গেল সুরেশ রায়নার স্ত্রী প্রিয়ঙ্কা এবং ইমরান তাহিরের স্ত্রী সুমাইয়া দিলদারের মাঝে। কখনও টিমের উইকেট পতনে হতাশ, তো কখনও মাহির বিশাল ছয়ে উচ্ছ্বসিত! চেন্নাই সুপার কিংস বনাম রয়্যালদের লড়াই তাই হয়ে উঠল যেন ক্রিকেট ডার্বির ক্ল্যাসিক ম্যাচ।
বেঙ্গালুরুর বড় রানে খুশি অনুষ্কা। ছবি: এএফপি।
ম্যাচ কেমন টান টান ছিল? তা বোঝা যাবে স্কোরবোর্ড দেখলেই। এক সময় শেষ আট বলে জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ২৭ রান। স্কোরবোর্ডে তো আগেই ঝড় বইয়ে দিয়েছেন বেঙ্গালুরুর এবি ডিভিলিয়ার্স। ৩০ বলে ৬৮ রানের ইনিংস খেলে টিমকে পৌঁছে দিয়েছিলেন ২০৫ রানে। তবে বিপক্ষে যে মাহির ব্যাট রয়েছে! যার জেরে সে লক্ষ্যও নিরাপদ হল না। টি-টোয়েন্টির সেই ভিন্টেজ মাহিকেই দেখা গেল গত কাল। ব্যাট করতে যখন নেমেছিলেন তখন ৭৪ রানে পড়ে গিয়েছে ৪ উইকেটে। ওভার প্রতি ১২ রানের বোঝা চেপে বসেছে চেন্নাইয়ের কাঁধে। উল্টো দিকে অম্বাতি রায়ডুকে নিয়ে সেই শুরু মাহির। এবি-র মতো ৩৬০ ডিগ্রিতে সব শট না খেললেও মারলেন ৭টি বিশাল ছয়। আর শেষ ওভারের দু’বল বাকি থাকতেই লং অনের ওপর দিয়ে কোরি অ্যান্ডারসনের বল ফেললেন দর্শকাসনে। মনে পড়ে গেল ২০১১-র আইসিসি বিশ্বকাপের সেই উইনিং শটের কথা। যে শটে ভারতকে কাপ এনে দিয়েছিলেন মাহি।
অসাধারণ জয়ের মুহূর্তে সাক্ষী (মাঝে)। ছবি: এএফপি।
মাহির এই অতিমানবীয় ইনিংসের পর আসন ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন টিমের সদস্যরা। ডাগআউটে শেন ওয়াটসন, মার্ক উড, ডেভিড উইলিদের সঙ্গে সঙ্গে হাততালির ঝড় তখন গোটা স্টেডিয়াম জুড়ে।
হতাশ অনুষ্কা। ছবি: এএফপি।
ডোয়েন ব্রাভো ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরলেন মাহিকে। হরভজন সিংহ কাঁধে তুলে নিলেন মাহিকে। উত্তেজনায় উঠে দাঁড়িয়ে পড়েছেন সাক্ষী। অন্য দিকে, হতাশ অনুষ্কার মুখ ভেসে উঠল ফের এক বার। আর ফের এক বার মাহির দিকে মুগ্ধ চোখে মাথা নত করল ক্রিকেট দুনিয়া!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy