আবার সোনার মেয়ে হয়ে ফিরে এসে ছড়াচ্ছেন পূর্ণিমার আলো।
অবিশ্বাস্য সেই ফিরে আসা।
হাঁটুতে অস্ত্রোপচারের পরে রিহ্যাবের জন্য প্রায় দেড় বছর অনুশীলনের বাইরে ছিলেন তিনি। পদক জেতা দূরে থাক, আর কোনও প্রতিযোগিতায় নামতে পারবেন কি না তা নিয়েই তৈরি হয়েছিল প্রশ্নচিহ্ন। সব হিসেব উল্টে দিয়ে ফ্লোরে নেমেই পেয়েছেন সোনা। তাও জাতীয় স্তরের কোনও প্রতিযোগিতায় নয়, একেবারে বিশ্ব মঞ্চে। তুরস্কে ওয়ার্ল্ড চ্যালেঞ্জ কাপের ভল্টিং ইভেন্টে সোনা জয়।
ভারতীয় জিমন্যাস্টিক্স ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা ঘটিয়ে ফিরে আসা দীপা কর্মকার এ বার জাকার্তায় এশিয়াডের মঞ্চে হাজির। আশা-আশঙ্কার দোলায় দুলতে দুলতে।
অনেকেই তো বলেছিলেন আপনি কোনও দিন আর পদক গলায় ঝোলাতে পারবেন না! দীপা যেন উত্তর দেওয়ার জন্য তৈরিই ছিলেন। দিল্লির জাতীয় শিবির থেকে ফোনে তাঁর গলায় কটাক্ষ ঝরে পড়ে, ‘‘যাঁরা বলেছিলেন তাদের জন্য শুভেচ্ছা রইল। ওঁরা যত বলবেন ততই আমার জেদ বাড়বে। আমি আরও মানসিক ভাবে শক্ত হব। তবে এটা বলছি, ওই সমালোচকদের একটা জবাব দিয়েছি। সুস্থ থাকলে আরও দেব। আবার এটাও জানাচ্ছি, সমালোচকদের চেয়ে আমাকে শুভেচ্ছা জানানোর মানুষ বেশি। তাঁদের প্রার্থনার জন্যই ফিরতে পেরেছি। সোনা জিতেছি।’’
তাঁর পছন্দের ভল্ট ‘প্রোদুনোভা’র অনুশীলন এখনও শুরু করেননি দীপা। যা ফের শুরু করার ইচ্ছে আছে ২০২০-র টোকিও অলিম্পিক্সের আগে। দীপার কোচ বিশ্বেশ্বর নন্দী আক্ষেপ করছিলেন, ‘‘ও যদি প্রোদুনোভা ভল্টটা অনুশীলন করতে পারত, তা হলে বলতাম জার্কাতায় পদক নিশ্চিত।’’ কোচের কথার প্রতিধ্বনি শোনা যায় প্রথম ভারতীয় মেয়ে হিসাবে রিয়ো অলিম্পিক্সের জিমন্যাস্টিক্সে চতুর্থ হওয়া দীপার মুখেও। তবে একটু ঘুরিয়ে। ‘‘দেখুন আমার মতে জিমন্যাস্টদের কাছে এশিয়াড হল মিনি অলিম্পিক্স। এখানে যাঁরা পদক জেতার জন্য নামবে তাঁরাও বিশ্বসেরা। চিন, জাপান, দুই কোরিয়া, উজবেকিস্তান রয়েছে। পদক জিতব বললেই জেতা যায় না।’’
রিয়ো অলিম্পিক্সের আগে যে রকম বলতেন, জার্কাতায় নামার আগেও সে রকমই কথা শোনা যাচ্ছে দীপার মুখে। বলে দেন, ‘‘এশিয়ান গেমসে আমি কখনও পদক পাইনি। এই মঞ্চে পদক জেতাটা আমার কাছে তাই স্বপ্ন। আগেই বলেছি জিমন্যাস্টিক্সে পদক জিতব বললেই তো জেতা যায় না। আগে আমাকে ফাইনালে উঠতে হবে। সেটাই দারুণ কঠিন। তার পর তো পদকের কথা ভাবব,’’ বাস্তবের জমিতে দাঁড়িয়ে এ ভাবেই নিজের অবস্থান জানিয়ে দেন ভারতীয় খেলাধুলোর
অন্যতম ‘আইকন’।
শেষ দুটো এশিয়ান গেমসে নেমেও ত্রিপুরার মেয়ে পদক পাননি। গত বার হয়েছিলেন চতুর্থ। কিন্তু এ বার ভল্টিং ইভেন্টে তাঁর পদক জেতার ‘অস্ত্র’ কী? দীপা জানাচ্ছেন, পুরনো সুকাহারা ৭২০-র সঙ্গে তিনি এ বার দেবেন ‘ফ্রন্ট সমারসল্ট উইথ ৩৬০ ডিগ্রি টার্ন’। সুকাহারা দীপার বহু দিনের সঙ্গী। কিন্তু অন্যটা? দীপার কোচ বলছিলেন, ‘‘উজবেকিস্তানের ওকাসানা সাত-আটটা ভল্ট দিতে পারে। আর আমার ছাত্রী জানে তিনটে। নতুন যেটা করাচ্ছি সেটা দীপা অনুশীলন করেছে মাত্র আড়াই মাস। তাই একটু চিন্তায় আছি।’’ দীপা নিজেও সে জন্য ‘পদক’ শব্দটা মুখে আনতে নারাজ। বলছিলেন, ‘‘কে কোথায় কী ভাবে তৈরি হচ্ছে সেটাই তো জানি না। সবাই নিজের ‘ভল্ট’ লুকিয়ে রাখে। আমিও চেষ্টা করছি। এর পর দেখা যাক কী হয়। বার বার বলছি, ফাইনালে ওঠাটা সব
চেয়ে আগে।’’
এমনিতে দিনে প্রায় সাত-আট ঘণ্টা অনুশীলন করছেন দিল্লির শিবিরে। তার মধ্যেই যেতে হচ্ছে সরকারি নানা অনুষ্ঠানে। দীপা বলছিলেন, ‘‘এটা ঠিক যে বহু দিন পরে তুরস্কে নেমে সোনা জেতায় আমার আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। কমনওয়েলথে তৈরি হতে পারিনি বলে নামিনি। এশিয়াডে নামছি পুরো সুস্থ হয়ে।’’ গত ৯ অগস্ট পঁচিশ বছরে পা রেখেছেন। কিন্তু শিবিরে সতীর্থরা এসে জন্মদিনের কেক কাটালেও গলায় সংক্রমণ হওয়ায় আনন্দ করতে পারেননি সে ভাবে।
কিন্তু দীপা কর্মকার কোনও প্রতিযোগিতায় নামা মানেই তো দেশবাসী তাঁর গলায় পদক দেখতে চায়! রিয়ো অলিম্পিক্সের পরে সেই আশা বেড়েছে। প্রত্যাশার ঢেউ কী জার্কাতায় আপনাকে চাপে ফেলবে? দীপা হাসেন। তার পরে বলে দেন, ‘‘আমার কোনও চাপ নেই। সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করব। তার পরে পদক পাওয়াটা তো কপাল!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy