Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Jamie Day

‘ভারত এগিয়ে তো মোটে ১ পয়েন্টে, সুনীলদের জোর টক্কর দেবে আমার ছেলেরা’

১৫ অক্টোবর যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে ইগর স্তিমাচের ভারতের সামনে জেমি ডে-র বাংলাদেশ। শক্তিশালী কাতারকে রুখে দেওয়ার পরে সুনীল ছেত্রীদের নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন দেশের সমর্থকরা। অন্য দিকে, এই কাতারের কাছেই ঘরের মাঠে বাংলাদেশ হার মেনেছে বৃহস্পতিবার। ২০২২ বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বের ম্যাচে দুই প্রতিবেশী দেশের লড়াইয়ের আগে সুনীল-গুরপ্রীতদের নিয়ে চিন্তার কথা জানালেন বাংলাদেশের ইংরেজ কোচ জেমি ডে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ-ফুটবলের উন্নতির রোডম্যাপও জানালেন।

বাংলাদেশ জাতীয় দলের কোচ জেমি ডে। আজই এসে পড়ছেন শহরে। —ফাইল চিত্র।

বাংলাদেশ জাতীয় দলের কোচ জেমি ডে। আজই এসে পড়ছেন শহরে। —ফাইল চিত্র।

ঋষভ রায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০১৯ ০৮:৩০
Share: Save:

১৫ অক্টোবর যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে ইগর স্তিমাচের ভারতের সামনে জেমি ডে-র বাংলাদেশ। শক্তিশালী কাতারকে রুখে দেওয়ার পরে সুনীল ছেত্রীদের নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন দেশের সমর্থকরা। অন্য দিকে, এই কাতারের কাছেই ঘরের মাঠে বাংলাদেশ হার মেনেছে বৃহস্পতিবার। ২০২২ বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বের ম্যাচে দুই প্রতিবেশী দেশের লড়াইয়ের আগে সুনীল-গুরপ্রীতদের নিয়ে চিন্তার কথা জানালেন বাংলাদেশের ইংরেজ কোচ জেমি ডে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ-ফুটবলের উন্নতির রোডম্যাপও জানালেন।

ক্রীড়াজগতে চলতি বছরটা বেশ ভালই কেটেছে আপনার দেশের। বেন স্টোকসরা ক্রিকেট বিশ্বকাপ জিতেছেন। অ্যাশেজে শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ২-২ করেছে। ইংল্যান্ডের মহিলা ফুটবল দল বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে পৌঁছেছে। আপনার দেশের দুরন্ত সব পারফরম্যান্স নিশ্চয় আপনাকেও বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জনকারী পর্বে ভাল করার জন্য মোটিভেট করছে।

জেমি: ইংল্যান্ডের জন্য বছরটা সত্যিই দারুণ। তবে সত্যি কথা বলতে কী, ক্রীড়াক্ষেত্রে ইংল্যান্ডের দুরন্ত পারফরম্যান্স থেকে আমরা অনুপ্রাণিত হচ্ছি না। অন্যদিকে না তাকিয়ে নিজেদের পারফরম্যান্স থেকেই আমরা প্রেরণা খুঁজছি। আর বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জনকারী পর্বে ভাল করার জন্য ফুটবলারদের বাড়তি কোনও মোটিভেশনের দরকার আছে বলে আমার মনে হয় না। দেশকে প্রতিনিধিত্ব করাই বিরাট বড় একটা ব্যাপার।

ইগর স্তিমাচের কোচিংয়ে বিশ্বকাপে যোগ্যতা অর্জনের শুরুটা মন্দ করেনি ভারত। ওমানের কাছে হেরে গেলেও দারুণ শক্তিশালী কাতারকে তাদের ঘরের মাঠে গিয়েই থামিয়ে দিয়েছে। অন্যদিকে, আপনাদের শুরুটা ভাল হয়নি। আফগানিস্তান ও কাতারে কাছে হারতে হয়েছে। ভারতের বিরুদ্ধে আসন্ন ম্যাচটাকে আপনি কী ভাবে দেখছেন? শক্তির দিক থেকে প্রায় সমান সমান দুটো দল একে অপরের মুখোমুখি হচ্ছে, না কি ভারত এগিয়ে থেকে শুরু করছে ম্যাচটায়?

জেমি: কাতারের বিরুদ্ধে ভারত দুর্দান্ত খেললেও ওমানের কাছে কিন্তু ওরা হেরে গিয়েছিল। আফগানিস্তান, কাতারের কাছে আমরা হেরে গেলেও সেই ম্যাচগুলোই আমাদের আত্মবিশ্বাস জোগাচ্ছে। পয়েন্টের দিক থেকে বিচার করলে আমরা ভারতের থেকে মাত্র এক পয়েন্টে পিছিয়ে। ১৫ তারিখ আমার ছেলেরা কিন্তু ভারতকে সহজে ছেড়ে দেবে না। তবে এটা ঠিক, ম্যাচে ফেভারিট হিসেবেই নামছে ভারত।

আপনার দলের ক্যাপ্টেন জামাল ভুঁইয়ার ফুটবল হাতেখড়ি ডেনমার্কে। সেখানকার ক্লাব ফুটবলেও খেলেছেন। ইউরোপে খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে জামালের। এশিয়ার কঠিন কোনও লিগে যদি আপনার ছেলেরা খেলেন, তা হলে তো সার্বিক ভাবে দলটাও শক্তিশালী হয়।

জেমি: আমার দলের সব ফুটবলারই বাংলাদেশের ভূমিপুত্র। বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্লাবেই তারা ফুটবল খেলে। তবে আমি বিশ্বাস করি, ইউরোপ বা এশিয়ার বড় বড় লিগে খেললে, কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হলে, ফুটবলাররা সব দিক থেকেই লাভবান হয়। ওদের খেলাতেও উন্নতি ঘটে। বিদেশের লিগে খেলার অভিজ্ঞতা অবশ্য রয়েছে জামালের। তার প্রতিফলন ঘটে ওর খেলায়।

আরও পড়ুন: সুনীলের জন্যই এগিয়ে ভারত, বলছেন জীবনযুদ্ধে জয়ী বাংলাদেশ অধিনায়ক জামাল

অনেকেই বলছেন, ভারতীয় ফুটবলের উন্নতির পিছনে রয়েছে আইএসএল। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ফুটবলাররা এই লিগে খেলেন। কিন্তু, আইএসএলে বাংলাদেশের কোনও ফুটবলারকে খেলতে দেখা যাচ্ছে না। অনেক দিন আগে মামুনুল খেলেছিলেন। এখন আর কেউ নেই। আপনার দলের ছেলেরা যদি আইএসএলে খেলতেন, তা হলে তো তাঁরাও লাভবান হতেন।

জেমি: গত কয়েক বছরে ভারতীয় ফুটবলের উন্নতিতে আইএসএল বড় ভূমিকা নিয়েছে। সেটা ওদের খেলা দেখলেই বোঝা যায়। অভিজ্ঞ বিদেশি ফুটবলারের সঙ্গে ড্রেসিংরুম শেয়ার করলে, ওঁদের থেকে অনেক কিছু শেখার, জানার সুযোগ পাওয়া যায়। আমার দলেও অনেক প্রতিভাবান প্লেয়ার রয়েছে। ওরা যদি ইউরোপ বা এশিয়ার বিভিন্ন লিগে খেলার সুযোগ পায়, তা হলে তা বাংলাদেশ ফুটবলের উন্নতিতেই সাহায্য করবে বলে আমার মনে হয়। ওরা নিজেদের প্রতিভাও সবার সামনে তুলে ধরার সুযোগ পাবে।

কাতারের বিরুদ্ধে এই দলই নামিয়েছিলেন জেমি ডে।

বাংলাদেশের ফুটবল মরসুম শেষ হয়ে গিয়েছে। অন্য দিকে ভারতের ফুটবল মরসুম সবে শুরু হয়েছে। এটা কি কোনও ভাবে প্রভাব ফেলতে পারে ১৫ তারিখ?

জেমি: আমার মনে হয় না। সুনীলরা ( ছেত্রী ) কিন্তু এখনও একটাও লিগের ম্যাচ খেলেনি। অন্য দিকে বাংলাদেশে ফুটবল মরসুম মাত্র কয়েক দিন আগে শেষ হয়েছে। লিগ শেষের পর থেকেই আমরা বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জনকারী পর্বের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমাদের কোনও সমস্যা হবে না। তার উপরে কাতারের বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে খেলে ওঠার পরেই ভারতের বিরুদ্ধে আমরা নামছি। আমার ছেলেরা খেলার মধ্যেই রয়েছে।

যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে বাঙালি দর্শকদের সামনে খেলতে হবে আপনাদের। কিন্তু, সে দিন কেউ আপনাদের সমর্থন করবেন না। সুনীলদের জন্য সবাই সে দিন গলা ফাটাবেন। কলকাতার দর্শকদের সামনে খেলতে নামার আগে কি নার্ভাস লাগছে?

জেমি: কলকাতায় দারুণ একটা অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে চলেছি আমরা। এ রকম একটা ম্যাচের দিকেই তো তাকিয়ে থাকে ফুটবলাররা। আমার দলের বেশিরভাগ ফুটবলারই অল্পবয়সি। এই ধরনের ম্যাচ ওদের উন্নতিতে সাহায্য করবে বলেই আমার ধারণা। আমরা একেবারেই নার্ভাস নই।

সুনীলের জন্য নিশ্চয় বিশেষ কোনও পরিকল্পনা রয়েছে আপনার। সুনীলকে থামানোর জন্য কি জামাল ভুঁইয়াকে ব্যবহার করবেন?

জেমি: সুনীল বড় ফুটবলার। ওর উপরে অবশ্যই বিশেষ নজর থাকবে। জামাল আমার দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে জামাল দারুণ পারফর্ম করছে। তবে সুনীল, উদান্তাদের থামাতে শুধুমাত্র জামাল নয়, গোটা দলটাকেই একত্রিত হয়ে লড়তে হবে। ভারতীয় ফুটবলারদের বেশি সময় পায়ে বল রাখতে দেওয়া যাবে না।

বাংলাদেশ-কাতার ম্যাচের একটি মুহূর্ত।

বাংলাদেশের জাতীয় দলকে কোচিং করানোর দায়িত্ব নিলেন কেন?

জেমি: যে কোনও দেশের ফুটবল দলকে নিয়ে কাজ করার সুযোগ সব সময়ে পাওয়া যায় না। বাংলাদেশ দলে প্রচুর প্রতিভাবান ফুটবলার রয়েছে। তবুও দলটা ভাল ফল করতে পারছিল না। দলের ভাগ্য ফেরানোর এই কঠিন চ্যালেঞ্জটাই আমাকে কোচের দায়িত্ব নিতে উৎসাহিত করেছে।

গত কয়েক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশের ক্রিকেট দারুণ ভাবে এগিয়ে গিয়েছে। বিশ্ব ক্রিকেটের হেভিওয়েট শক্তিদের নিয়মিত হারাচ্ছে তারা। তুলনায় বাংলাদেশের ফুটবল সে ভাবে এগোতে পারেনি। বাংলাদেশ ফুটবলের সমস্যাটা ঠিক কোন জায়গায়?

জেমি: বাংলাদেশের ক্রিকেট এবং ফুটবলের মধ্যে সবচেয়ে বড় পার্থক্য হল অর্থের। ক্রিকেটের সঙ্গে বড় বড় স্পনসর যুক্ত থাকায় পরিকাঠামোর উন্নতির জন্য সমস্যা হয় না। দুর্ভাগ্যবশত ফুটবলে ক্রিকেটের মতো স্পনসর নেই। অর্থের অভাবে আমরা চাইলেও সময় মতো কোনও পরিবর্তন ফুটবলে আনতে পারি না। এই কারণেই বাংলাদেশের ফুটবল ক্রিকেটের থেকে পিছিয়ে পড়ছে।

বাংলাদেশের ফুটবল মানের উন্নয়নের জন্য কী দরকার?

জেমি: বাংলাদেশ ফুটবলের উন্নতির জন্য দেশের ক্লাবগুলিকে আরও পেশাদার হতে হবে। ক্লাবগুলির পরিকাঠামো উন্নত করার পাশাপাশি জুনিয়র ফুটবলের উন্নতির দিকেও নজর দিতে হবে। জুনিয়র ফুটবলারদের টেকনিকের পাশাপাশি ফুটবল ইনটেলিজেন্স-এরও যাতে উন্নতি হয়, সে দিকে নজর দিতে হবে। ফুটবলাররা ভাল ট্রেনিংয়ের সুযোগ পেলে, আরও বেশি ম্যাচ খেললে, তাতে জাতীয় দলেরই সুবিধা হবে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy