প্রথম ইনিংসে পিছিয়ে পড়েও জয় ছিনিয়ে আনার ক্ষমতা দেখিয়েছে বাংলা। ছবি সিএবির ফেসবুক থেকে নেওয়া।
স্বপ্ন দেখার পালা শুরু। রঞ্জির কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে গিয়েছে বাংলা। এবং সেটাও রীতিমতো দাপটের সঙ্গে শেষ দু’টি অ্যাওয়ে ম্যাচ জিতে। বাকি আর তিন ম্যাচ। তবে বাংলা দল সে ভাবে ভাবতে রাজি নয়। আবেগকে দূরে রেখে বাস্তবে পা রাখছে প্রত্যয়ী বঙ্গ-ব্রিগেড। শনিবার সকালে আনন্দবাজার ডিজিটালকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বাংলার অধিনায়ক অভিমন্যু ঈশ্বরনকেও তেমনই সঙ্কল্পবদ্ধ দেখাল।
অভিনন্দনের বন্যায় নিশ্চয়ই ভাসছেন। নকআউটে ওঠার পর সাফল্যের রেসিপি হিসেবে কোনটা বেছে নেবেন?
অভিমন্যু: আমরা একটা দল হিসাবে খেলছি। প্রতি ম্যাচেই সবার কিছু না কিছু অবদান থাকছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে নতুনদের পারফরম্যান্স। শাহবাজ আহমেদের এটা প্রথম মরসুম। সেখানে ও ব্যাটে রান করেছে, বলে উইকেট নিয়েছে। তার পর আকাশদীপের কথা ধরুন। দুর্দান্ত বল করছে। পঞ্জাবের বিরুদ্ধে না খেললেও মুকেশ কুমারের কথা বলতে হবে। খুব ভাল বল করেছে ও। তার পর ঈশান পোড়েল রয়েছে। আমাদের বোলিং বিভাগ পুরো টুর্নামেন্টে ধারাবাহিক থেকেছে। আর ব্যাটিংয়ে প্রত্যেক ম্যাচেই কেউ না কেউ রুখে দাঁড়িয়েছে। অন্তত দু’জন রান পেয়েছে সব ম্যাচে। আমরা কোনও একজন-দু’জনের উপর নির্ভরশীল নই। জেতার পথে সকলেই ছাপ রাখছে। এটা টিমগেমের লক্ষণ। আর আমার মতে, এটা খুব ভাল ব্যাপার।
তার মানে, টিম গেমই হচ্ছে রেসিপি।
অভিমন্যু: অবশ্যই। চাইছি, নক আউট পর্যায়েও আমরা এ ভাবে খেলব। যে ধারাবাহিকতা দেখাচ্ছি, সেটাই চললে চিন্তার কিছু নেই।
আরও পড়ুন: সচিন, দ্রাবিড় না সহবাগ, নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্টে সবচেয়ে ভাল গড় কার
গ্রিনটপে যেমন জয় এসেছে, তেমনই ঘূর্ণি পিচেও জিতেছে বাংলা। তার মানে দুটো চরম বিপরীত কন্ডিশনে এসেছে সাফল্য। এটা তো শক্তিশালী রিজার্ভ বেঞ্চেরই ইঙ্গিত দিচ্ছে।
অভিমন্যু: হ্যাঁ, তাই তো মনে হচ্ছে। কারণ, দুটো ম্যাচে আলাদা দল খেলেছে। যাঁরাই সুযোগ পেয়েছে, তাঁরাই উজাড় করে দিয়েছে। এটাই তৃপ্তির। যে কোনও উইকেটে, যে কোনও কন্ডিশনে আমরা ভাল খেলতে পারছি, এই ব্যাপারটা স্বস্তিরও। তার উপর টানা দুটো অ্যাওয়ে ম্যাচ জিতেছি। রাজস্থানের পর হারালাম পঞ্জাবকে। দুই ক্ষেত্রেই প্রতিকূল কন্ডিশনের সামনে পড়তে হয়েছে। আর সেটাও প্রথম ইনিংসে দু’বারই আমরা পিছিয়ে পড়েছিলাম। সেখান থেকে ম্যাচ বের করতে হয়েছে। এটাতে আমাদের পজিটিভ মানসিকতা ধরা পড়ছে। দলের আবহাওয়াও দারুণ। যদি এই মানসিকতা নিয়ে আমরা নকআউটে খেলতে পারি, তবে কিন্তু আমাদের দারুণ সম্ভাবনা রয়েছে ট্রফি পাওয়ার।
জয়পুর ও পাটিয়ালায় দুটো আলাদা উইকেটে খেলে জয় এল। এটা থেকে কি বলা যায় যে, বাংলা দল এখন কন্ডিশন বা উইকেটকে হিসেবের বাইরে নিয়ে গিয়েছে? বা, এগুলো নিয়ে আর ভাবতে চাইছে না?
অভিমন্যু: দেখুন, কন্ডিশন বা উইকেটকে হিসেবের একেবারে বাইরে নিয়ে যাওয়া যায় না। কিন্তু, এখন আমাদের দল এমনই যে, কন্ডিশন অনুসারে এগারো বেছে নেওয়া যাচ্ছে। আমাদের পেসাররা উইকেট নিচ্ছে, স্পিনাররাও সাফল্য পাচ্ছে। এটা ভাল লক্ষণ। চাইব, এ ভাবেই খেলতে। যে মাঠেই আমাদের কোয়ার্টার ফাইনাল খেলতে হোক, তার সঙ্গে তো মানিয়ে নিতে হবে। এটা যত তাড়াতাড়ি করতে পারব, ততই মঙ্গল। সুবিধা হল, সব রকমের কন্ডিশনে খেলার মতো ক্রিকেটার আমাদের দলে রয়েছে।
এই যে প্রথম ইনিংসে পিছিয়ে পড়েও ঘুরে দাঁড়ানো, জয় ছিনিয়ে নেওয়া, তার জন্য তো প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসের প্রয়োজন। মানসিক ভাবে পজিটিভ থাকতে হয় চাপের মুখেও। এই মানসিকতা কি এ বারের দলের বড় অস্ত্র?
অভিমন্যু: তা তো বটেই। আমরা এ ভাবেও দেখছি যে এখনও উন্নতির অনেক জায়গা রয়েছে। যেমন, প্রথম ইনিংসে আমরা পিছিয়ে পড়ছি। সেটা যদি না হয়, যদি প্রথম ইনিংসেও আমরা নিজেদের সেরাটা দিতে পারি, তবে তো ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ গোড়া থেকেই হাতে চলে আসবে। পিছিয়ে পড়ার পর লড়াইয়ে ফেরার সংঘর্ষে নামতে হবে না। নকআউটে কিন্তু শুরু থেকেই ম্যাচের রাশ ধরে ফেলতে হবে। পরে ফিরে আসব, এমন ভাবার কোনও জায়গা নেই। হ্যাঁ, এটা ঠিক যে চাপের মুখে আমরা দারুণ খেলছি। সেটা মনোবল বাড়াচ্ছে। কিন্তু সেই চাপটা প্রথম ইনিংসে বেটার খেললে আসবেই না!
বাংলা দলে এখনকার আবহাওয়া খুব ভাল বলে শোনা যাচ্ছে। আপনার কথাও তা উঠে আসছে। এখানে একটা প্রশ্ন উঠছেই। যে, গত চার বছরে সাইরাজ বাহুতুলের আমলে তা হলে কি এই আবহাওয়াই ছিল না?
অভিমন্যু: এই প্রশ্নের উত্তর আমি দেব না।
কোচ অরুণলালের লড়াকু মানসিকতায় উপকৃত হয়েছে বাংলা। ছবি সিএবির ফেসবুক থেকে নেওয়া।
ঠিক আছে। তা হলে এই মরসুমে বাংলার সাফল্যে অরুণ লালের অবদান কতটা, সেটাই বলুন।
অভিমন্যু: অরুণস্যার দারুণ মোটিভেট করেন। সবাইকে উৎসাহ দেন। উনি একটা স্বচ্ছতা এনেছেন। সবাই বুঝতে পারছে যে কার কী ভূমিকা, কাকে কী করতে হবে। এটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এর ফলে ক্রিকেটাররা নিজেদের কাজটা কী ভাবে করতে হবে, সেই দিকে মন দিতে পারছে। এর জন্যয় অরুণলাল স্যারের কৃতিত্ব প্রাপ্য।
এই মরসুমে অনেককে পায়নি বাংলা। যেমন অশোক ডিন্ডা শুরুর দিকের পর দলে নেই। ঈশান পোড়েল ও আপনি ‘এ’ দলের হয়ে খেলতে নিউজিল্যান্ড গিয়েছিলেন। তার পরও অপ্রতিরোধ্য লেগেছে দলকে।
অভিমন্যু: আগেই বলেছি যে আমরা কেউ কারও উপর নির্ভর করছি না। আকাশদীপ, শাহবাজরা দারুণ ভাবে উঠে এসেছে। নিজেদের প্রমাণ করেছে। বাকিদের অভাব বুঝতে দেয়নি। মুকেশ কুমারের কথাও বলতে হবে। আগের ম্যাচেই ছয় উইকেট পেয়েছিল। কিন্তু তার পরও আমাদের মনে হয়েছিল যে পাটিয়ালার উইকেটে একটাই জোরে বোলার নিয়ে খেলব। ফলে, বাদ পড়ে মুকেশ। ও কিন্তু এর জন্য মন খারাপ করে বসে থাকেনি। একবারও ভাবেনি যে, ছয় উইকেট নেওয়ার পরও কেন বাইরে বসে থাকব। ও জানত যে দলের কী দরকার। আর তাই বাইরে থেকে ও সাপোর্ট করে গিয়েছে। এগুলোই একটা দলের পক্ষে ইতিবাচক দিকে। ছোট ছোট এই ব্যাপারগুলোই দলকে শক্তিশালী করে, টিম স্পিরিট গড়ে তোলে। আমরা এখন জানি কী ভাল খেলছি। আর এটাই ধরে রাখতে চাইছি।
আপনার নিজের কথায় আসি। বাংলার হয়ে এ বারের রঞ্জিতে মাত্র একটাই পঞ্চাশ রয়েছে। জয়পুরে রাজস্থানের বিরুদ্ধে ৬২। যা বাদ দিলে ছয়বার দশের মধ্যে ফিরতে হয়েছে ড্রেসিংরুমে। নিউজিল্যান্ডে ‘এ’ দলের বেসরকারি টেস্টেও দুই ইনিংস মিলিয়ে করেছেন ৩৪। টেকনিক নাকি মানসিক, সমস্যা কোথায় হচ্ছে?
অভিমন্যু: বড় রান আসবে, জলদিই আসবে। টেকনিক বা মানসিক, কোথাও সমস্যা নেই। ঠিক সময়েই রান আসবে। নকআউট পর্যায়ে রান পেলেই তা দলের কাজে বেশি আসবে। আর আমি নকআউটে রান করবও।
বাংলা রঞ্জিতে চ্যাম্পিয়ন হয়নি অনেক বছর। দু’বার ফাইনালে উঠেও হারতে হয়েছে। ফলে কোথাও কি প্রত্যাশার একটা চাপ ঘিরে ধরছে শিবিরকে?
অভিমন্যু: না, আমরা প্রত্যাশা নিয়ে ভাবি না। আমাদের কাজ হচ্ছে নিজেদের সেরাটা মেলে ধরা। আর আমাদের মরসুমের শুরুতেই একটা লক্ষ্য ছিল যে যখনই কোনও প্রতিযোগিতায় নামব, জেতার উদ্দেশ্যেই খেলব। রঞ্জিতেও সেই টার্গেট থাকছে। কিন্তু আমরা প্রত্যাশা মাথায় রাখছি না। জানি যে সেরাটা খেলতে পারলে জিততে পারব। আর যদি ভাল ক্রিকেটও খেলতে পারি, তা হলেও সম্ভাবনা থাকছে জেতার। সেটাতেই ফোকাস থাকছে।
আরও পড়ুন: রান আসছে না কেন? হতাশ ময়াঙ্ককে সফল হওয়ার মন্ত্র বাতলে দিলেন কোচ
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy