রমেশবাবু প্রজ্ঞানন্দ। —ফাইল চিত্র।
কিছু ক্ষণ আগেই হয়ে গিয়েছে ‘টাটা স্টিল চেস ইন্ডিয়া’ প্রতিযোগিতার প্রথম রাউন্ডের সূচি ঘোষণা। ম্যাগনাস কার্লসেন সটান চলে গিয়েছেন হোটেলে নিজের ঘরে। কয়েক জন গ্র্যান্ডমাস্টার ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছেন। সেখানেই দেখা গেল, ভিড় থেকে খানিকটা দূরে দিদি রমেশবাবু বৈশালীর সঙ্গে দাঁড়িয়ে রমেশবাবু প্রজ্ঞানন্দ। নিজেদের মধ্যে কথা বলছেন। খুব কম কথা বলেন প্রজ্ঞা। যা বলেন তা-ও খুব ধীরে। সাংবাদিকদের সঙ্গেও খুব বেশি কথা বলেন না তিনি। সেই প্রজ্ঞানন্দ নিজের ফেরার বার্তা দিলেন আনন্দবাজার অনলাইনকে। জানালেন, পিছিয়ে পড়লেও হাল ছাড়ছেন না তিনি।
মাত্র ১২ বছর বয়সে গ্র্যান্ডমাস্টার হয়েছেন প্রজ্ঞা। বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ ইন্টারন্যাশনাল মাস্টার তিনি। এই বয়সেই হারিয়েছেন পাঁচ বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ম্যাগনাস কার্লসেনকে। এক বছর আগেও তরুণ দাবাড়ুদের মধ্যে ভারতের মুখ ছিলেন তিনি। চলতি বছর জানুয়ারি মাসে ভারতের এক নম্বর দাবাডু হয়েছিলেন। কিন্তু তার পরেই পরিস্থিতি বদলেছে। প্রজ্ঞার পাশে নজর কেড়েছেন ডি গুকেশ ও অর্জুন এরিগাইসি। গুকেশ কয়েক দিন পরেই বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার লড়াইয়ে নামবেন। প্রতিপক্ষ চিনের ডিং লিরেন। যদি তিনি জেতেন তা হলে বিশ্বনাথন আনন্দের পর ভারতের দ্বিতীয় বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হবেন। গুকেশের জায়গায় তো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারতেন প্রজ্ঞানন্দ। কেন পারলেন না?
গত বছর দাবার বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলায় ২৭২৭ রেটিং পয়েন্ট নিয়ে ক্যান্ডিডেটসে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছিলেন প্রজ্ঞানন্দ। কিন্তু সেখানে হেরে যান। তিনি নিজেও জানেন যে গুকেশের জায়গায় খেলতে পারতেন। প্রজ্ঞা বললেন, “হ্যাঁ, আজ আমিও গুকেশের জায়গায় থাকতে পারতাম। বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য লড়াই করতে পারতাম। পারিনি। গুকেশ পেরেছে। ওর জন্য গলা ফাটাব।”
চলতি বছর জানুয়ারিতে ভারতের এক নম্বর হওয়ার পরে গত কয়েক মাসে পিছিয়ে পড়েছেন প্রজ্ঞা। এখন ফিডে ক্রমতালিকায় ভারতে পঞ্চম স্থানে তিনি। শীর্ষে অর্জুন। দ্বিতীয় স্থানে গুকেশ। তিন নম্বরে আনন্দ। চারে বিদিত গুজরাতি। কেন পিছিয়ে পড়ছেন তিনি? কোথাও কি মনঃসংযোগে সমস্যা হচ্ছে? জবাবে প্রজ্ঞা বললেন, “এখন প্রতিযোগিতা অনেক বেশি। অর্জুন, গুকেশ, বিদিত সকলেই খুব ভাল। সকলেই সকলকে হারাতে পারে। কয়েকটা প্রতিযোগিতা ভাল যায়নি বলে একটু পিছিয়ে পড়েছি। তবে লড়াই ছাড়ছি না। আবার ফিরব। ফিরবই।”
গত বছর দাবা বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুযোগ ছিল প্রজ্ঞানন্দের। ফাইনালে কার্লসেনের কাছে অল্পের জন্য হেরে যান। অবশ্য এই বছর ভারত দাবা অলিম্পিয়াডে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। সেই দলে ছিলেন প্রজ্ঞা। ভাল খেলেছেন তিনি। দাবা অলিম্পিয়াডের সাফল্য তাঁর আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রজ্ঞা। তিনি বললেন, “দাবা অলিম্পিয়াডে চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে ভারতের দাবাড়ুরা এখন কতটা শক্তিশালী। আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। এই খেলায় খুব তাড়াতাড়ি পয়েন্ট বাড়ে বা কমে। আশা করছি সামনের দিনে সাফল্য আসবে।”
আনন্দ তাঁর গুরু। ছোট থেকেই খুব পরিশ্রমী প্রজ্ঞানন্দ। অথচ এ সব সম্ভবই হত না দিদি না থাকলে। বৈশালীর টিভি দেখার নেশা ছাড়াতে তাঁকে দাবার ক্লাসে ভর্তি করে দেন বাবা। দিদিকে দেখে প্রজ্ঞাও দাবা শিখতে যান। সেই শুরু। রজনীকান্তের ভক্ত প্রজ্ঞা ঘুমের মধ্যেও দাবা খেলেন। ইন্ডিয়া চেসের উদ্বোধনের মঞ্চে কার্লসেনের কাছেই বসেছিলেন প্রজ্ঞা। তবে দু’জন খুব একটা কথা বলেননি। বোঝা যাচ্ছিল, কতটা একাগ্র তাঁরা। সেই কারণেই তো তাঁরা চ্যাম্পিয়ন। ঘটনাচক্রে প্রতিযোগিতার প্রথম রাউন্ডেই মুখোমুখি কার্লসেন ও প্রজ্ঞা। কলকাতা থেকেই হয়তো নিজের প্রত্যাবর্তনের পালা শুরু করবেন প্রজ্ঞা। তার জন্য এই প্রতিযোগিতায় ভাল খেলতে হবে তাঁকে। প্রতিযোগিতা শুরুর আগে তাঁকে যতটা প্রত্যয়ী দেখাল তা বলে দিচ্ছে, জয় ছাড়া অন্য কিছু দেখছেন না প্রজ্ঞানন্দ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy