প্রায় এক বছর বিরাট-রোহিতদের থাকতে হচ্ছে আত্মীয়, পরিবার, স্ত্রী-সন্তান ছাড়া এক নির্বান্ধব পুরীতে।
বায়ো-সিকিওর বাব্লের ‘নির্বান্ধব পুরী’-তে রোহিত শর্মা, জশপ্রীত বুমরাহদের আগামী প্রায় একবছর কাটতে চলেছে। এখন এটাই ক্রিকেটারদের ‘নিউ নর্মাল’ জীবন। কেমন সেই জীবন, এ নিয়ে অনেকের যেমন কৌতূহল রয়েছে, তেমনই ক্রিকেটারদেরও এই নতুন জীবনচর্যা একটা বড় চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড় করিয়েছে। দুবাইয়ে সদ্যসমাপ্ত আইপিএলে ধারাভাষ্য দিয়ে ফেরা এক প্রাক্তন ক্রিকেটারের কথায়, ‘‘যখন থেকে বায়ো-সিকিওর বাব্লের মধ্যে ক্রিকেটারদের রাখা হয়, তখন থেকে জীবন বলতে কাগজের থালায় খাওয়া-দাওয়া, এক দিন অন্তর কোভিড টেস্ট এবং হোটেল থেকে মাঠ আর মাঠ থেকে সেই বাব্ল। ফলে অবধারিত ভাবে তার একটা প্রভাব পড়ে প্লেয়ারদের মনের উপর।’’
তা হলে প্লেয়াররা এই পরিস্থিতি কী ভাবে কাটাবেন?
ওই প্রাক্তন ক্রিকেটারের কথায়, ‘‘সেখানেই গুরুত্ব পায় সেই প্লেয়ারের পারফরম্যান্স। অর্থাৎ, তোমার পারফরম্যান্স ঠিক থাকলে তবে তোমার মানসিক স্বাস্থ্যও ঠিক থাকবে। এমনটাই বলা হচ্ছে।’’ কিন্তু মানসিকভাবে তো সব প্লেয়ার একরকম নন। তাই শুধু পারফরম্যান্সই একমাত্র তাঁদের দাওয়াই হতে পারে না। যেমন জোফ্রা আর্চার। মরুশহরের আইপিএলে তাঁর পারফরম্যান্স দুর্দান্ত। কিন্তু তিনি সাফ বলেছিলেন, ‘‘এই বায়ো-সিকিওর বাব্ল থেকে আমি বেরিয়ে যেতে চাই।’’
পিপিই কিট পরে রাহুল, ময়ঙ্ক এবং হার্দিক।
আরও পড়ুন: করোনা সংক্রমণ অ্যাডিলেডে, পেনদের সরিয়ে আনা হল সিডনিতে
এই মানসিক সমস্যাকে গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে চাইছেন মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘সত্যিই তো আমরা একটা অভূতপূর্ব পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। এক সময় মনে হয়েছিল, খেলা কত দিন বন্ধ থাকবে কে জানে! এখন খেলা হচ্ছে দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামে বা স্বল্প দর্শক রেখে।এটা যেমন একটা ভাল দিক, তেমনই প্লেয়ারদের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকটাও গুরুত্বপূর্ণ। এই যে বায়ো-সিকিওর বাব্লের মধ্যে প্লেয়ারদের রাখা হচ্ছে, এর পিছনে কী কারণ রয়েছে, তা প্লেয়ারদের আরও স্পষ্ট করে বোঝানোর প্রয়োজন। অর্থাৎ, কেন আমি বায়ো-সিকিওর বাব্লে রয়েছি। এই ‘কেন’টা স্পষ্ট করে বলতে হবে। বোঝাতে হবে, এখানে থাকার পর যখন আমি আমার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী-র কাছে যাব, তখন তিনি সুস্থ থাকবেন। তাঁর কোনও সংক্রমণ হবে না। ঠিক তেমন ভাবেই আমার বাবা-মা-ভাই বোনও সুস্থ থাকবেন।’’
বায়ো-সিকিওর বাব্লে টানা দিনরাত কাটিয়ে কী ভাবে সুস্থ থাকতে পারেন ক্রিকেটাররা, তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা করেছে বিসিসিআই। এক প্রাক্তন ক্রিকেটারের কথায়, ‘‘এর জন্য নানাবিধ পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে ক্রিকেটারদের। যেমন, নিজের সঙ্গে সময় কাটানো। ভিডিও গেম খেলা। ওটিটি প্ল্যাটফর্মে সময় কাটানো।’’ মঙ্গলবারই বিরাট কোহলি টুইটারে একটি নিজস্বী পোস্ট করেছেন। যেখানে দেখা যাচ্ছে তাঁর ল্যাপটপে খোলা একটি ওটিটি প্ল্যাটফর্ম। বিরাটের টুইটেও তারই অনুরণন, ‘কোয়ারেন্টিন ডায়েরিজ। আন-আয়রন্ড টি-শার্ট, আরামদায়ক সোফা কাউচ এবং ভাল সিরিজ দেখা’।
মাস্কে ঢাকা ভারতীয় বোলাররা।
অনুত্তমা অবশ্য মনে করছেন, ক্রিকেটাররা দাবার গ্র্যান্ডমাস্টার নন। তাই নিজের সঙ্গে সময় কাটালেই যে সমস্যার সমাধান হবে, তা নয়। তাঁর কথায়, ‘‘টিম স্পিরিটের কথা ভেবে তাঁদের মানসিক সাহচর্যের দিকটাও ভাবতে হবে। প্র্যাক্টিসের পর পরিবারের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলা বা হোটেলের ওপেন কোনও স্পেসে দূরে দূরে চেয়ারে বসে মাস্ক পরে টিমমেটদের সঙ্গে সময় কাটানোও হতে পারে এর নিদান। অর্থাৎ, দেখতে হবে কী ভাবে পরস্পরের সঙ্গে তাঁরা জুড়ে-জুড়ে থাকতে পারেন।’’
আরও পড়ুন: টাইগারকে হারিয়েই মাস্টার্স জয় এক নম্বর গলফারের
ঠিক কত দিন এ ভাবে রোহিতদের কাটবে? তথ্য বলছে, আইপিএল শুরুর আগে থেকে ভারতীয় ক্রিকেটাররা ‘বায়ো-সিকিওর বাব্ল’-এর মধ্যে ছিলেন। আইপিএল শেষ হতে না হতেই তাঁদের মধ্যে অনেকে এখন অস্ট্রেলিয়ায়। সেখানেও তাঁরা সেই বাব্লেই থাকছেন। এর পর ভারতীয় টিম খেলবে দেশের মাটিতে (অথবা দুবাইয়ে) ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে। সেখানেও বিরাটদের থাকতে হবে সেই ‘বায়ো-সিকিওর বাবল’-এরই মধ্যে। তার পরে ২০২১ সালের আইপিএল। অর্থাৎ, প্রায় এক বছর বিরাট-রোহিতদের থাকতে হচ্ছে আত্মীয়, পরিবার, স্ত্রী-সন্তান ছাড়া এক নির্বান্ধব পুরীতে। যা তাঁদের উপর মানসিকভাবেও প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন প্রাক্তন ক্রিকেটার এবং মনস্তত্ত্ববিদেরা।
বাস্তব অবশ্য বলছে, এর মধ্যেই পারফর্ম করতে হবে বিরাট-রোহিতদের। কষ্টিপাথরে ফেলে তাঁদের পারফরম্যান্সের তুল্যমূল্য বিচারও হবে। সংবাদমাধ্যমেও হবে নানা সমালোচনা-বিশ্লেষণ। চুম্বকে এই হল তারকাদের আগামী একটা বছর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy