রাত পেরোলেই পৌষ সংক্রান্তি, পুর প্রতিনিধির বাড়ির গ্যারাজেই পিঠে-পুলি ভাজছেন স্বনির্ভর গোষ্ঠির মহিলারা। ছবি - সন্দীপ পাল।
পৌষ সংক্রান্তি আসার আগেই জোড়াসাঁকোর ৫ নম্বর দ্বারকানাথ ঠাকুর লেনের ঢেঁকিঘর ঘিরে শুরু হত মহা ব্যস্ততা। একতলার খোলা চাতালে এক ছাউনির নিচে রাখা সেই কাঁঠালকাঠের ঢেঁকিতে পৌষ সংক্রান্তির নবান্ন, পিঠে আর বড়ির জন্য ডাল-চাল-কলাই কুটে রাখত গৃহসহায়কেরা। পৌষ সংক্রান্তির সকালে গিন্নিরা ও কয়েকজন সহযোগী স্নান করে এলোচুলে পরিষ্কার শাড়ি পরে এসে বসতেন। গিন্নিদের সামনে রাখা হত বড়ি দেওয়ার ছোট ছোট খাট— মাঝখানে তাদের জাল লাগানো। কোথায় এখন সে সব?
প্রথমে একটু বড় আকারের দু’টো বড়ি দেওয়া হত। এঁদের বলা হত ‘বুড়ো-বুড়ি’। শাঁখ বাজিয়ে উলু দিয়ে তাদের মাথায় সিঁদুর, ধান, দূর্বা দিয়ে তবে আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু হত বড়ি দেওয়া। এক-একটা খাট বড়িতে ভরে উঠলেই সেটা শুকোনোর জন্য চলে যেত ছাদে বা বারান্দার রোদে। এ ভাবেই ছোট, বড় বা একদম খুদে আকারের নানা রকমের বড়ি দেওয়া চলত প্রায় পনেরো দিন ধরে। বড়ি ছাড়াও সংক্রান্তির দিন থেকেই নানা ধরনের পিঠে তৈরি করাও শুরু হয়ে যেত। দুধ দেওয়া, রসে জড়ানো, নারকেলের পুর দেওয়া পিঠে খাওয়ার পর্ব চলত মাস পেরিয়ে আরও।
অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পৌত্র সুমিতেন্দ্রনাথ ঠাকুরের (জন্ম ১৯৩০) ছোটবেলার স্মৃতিচারণে ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহলে পৌষ সংক্রান্তির এই অন্তরঙ্গ বর্ণনায় গত শতকের তিরিশের দশক পর্যন্ত খোদ কলকাতা শহরের বুকে ঢেঁকির খোঁজ পাওয়া যায় রীতিমতো। বোঝা যায়, গ্রাম-বাংলার যে কোনও সম্পন্ন পরিবারের মতোই রীতি মেনেই ঠাকুরবাড়িতেও পালিত হত পৌষ পার্বণ।
তবে কলকাতার সঙ্গে পৌষ সংক্রান্তির অন্য একটি প্রাচীন সংযোগের কথা চর্চায় আসে না তেমন। সূর্য এই দিনে ধনু থেকে মকর রাশিতে প্রবেশ করে, তাই দিনটি মকর সংক্রান্তি নামেও পরিচিত। সে দিন গঙ্গাসাগরে স্নান সেরে কপিল মুনির আশ্রমে পুজো দেন সারা ভারত থেকে আসা তীর্থযাত্রীরা— সে তো জানা কথা। তাঁদের একটি অংশ আবার দর্শন করতে আসেন বর্তমান দমদমের গোরক্ষবাসী রোডে নাথ যোগী সম্প্রদায়ের এক প্রাচীন মন্দিরও। অনেকেই মনে করেন, গোরক্ষনাথের আগে কপিল মুনির তপস্যাস্থল ছিল এই গোরক্ষবাঁশলী মন্দির চত্বর। তাই এই মন্দিরে গোরক্ষনাথ, মৎস্যেন্দ্রনাথ ও দত্তাত্রেয় মূর্তি ছাড়াও কপিল মুনির মূর্তিও দেখা যায়।
বাংলা প্রবাদে পৌষ মাস বলতে সমৃদ্ধি ও সুখের সময় বোঝায়। সেই সমৃদ্ধিকে ধরে রাখার জন্য কলকাতার প্রাচীন পরিবারগুলিতে সংক্রান্তির আগের দিন খড়ের বিনুনি দিয়ে ঘরের বিভিন্ন জিনিসে বাউনি বাঁধার প্রথা চালু আছে। এ ছাড়াও পৌষলক্ষ্মীর আরাধনা করা হয় মাসের কোনও একটি বৃহস্পতিবার দেখে। সেই দিন ঠাকুরঘরে কুনকের ভিতর সংরক্ষিত আগের বছরের ধান বদলে নতুন ধান রাখা হয়।
উৎসব-পার্বণের মধ্যে বেঁচে থাকে পরম্পরা। সে কথা মনে করিয়ে শীতের কলকাতায় ফেরে পৌষ পার্বণ। তবে বড়ি দেওয়ার সেই গৃহশিল্প এখন কর্মব্যস্ত জীবনে ঝঞ্ঝাটের সমার্থক, তাই কেনা বড়ির দিকেই ঝোঁক বাড়ছে। পিঠেপুলির ভবিতব্যও কি দিনশেষে পিঠেপুলি উৎসবেই?
সঙ্গিনী
অন্তিমকালে রামকিঙ্কর বেজকে বলেছিলেন, “তুমি আমাকে আর জন্মে পেও, আর আমি তোমার পাশে পাশে আছি।” এ রাধারানির কথা, শান্তিনিকেতনের শিল্প-ঐতিহ্যের বিপরীতে প্রথম দিগম্বরী মডেল। সৃষ্টির অন্তর্গত তাগিদে, শান্তিনিকেতনের প্রাতিষ্ঠানিক শিল্পশিক্ষার বাইরে, রাধারানির নিরাবয়ব দেহ অনুশীলনে রামকিঙ্করের শিল্পভুবনে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়। কত না নিরীক্ষা: প্রতিকৃতি (ছবি), কালজয়ী শিলাভাস্কর্য ‘যক্ষী’... রামকিঙ্করের সৃষ্টির মধ্যে অমর হয়ে আছেন রাধারানি। এ বার তাঁকে নিয়ে বেরোচ্ছে বই, প্রকাশ দাসের রামকিঙ্করের রাধারানি (লালমাটি)। ভূমিকা শিল্পী গণেশ হালুইয়ের, প্রচ্ছদও তাঁর। গুণিজন-উপস্থিতিতে প্রকাশ পাবে আগামী ১৪ জানুয়ারি বিকেল ৫টায় গ্যালারি চারুবাসনায়। সংবর্ধিত হবেন রাধারানির উত্তরসূরি, ‘শিল্পকলার দেহ-দুহিতা’ নারী মডেলরা; লোকগান গাইবেন পুরুষ মডেল শেখ একরাম। লালমাটি ও দক্ষিণের বারান্দা-র একত্র উদ্যোগ।
বিজ্ঞান মেলা
বিজ্ঞানের পাঠ তো ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বিজ্ঞানমনস্কতা ছড়িয়ে দেয়ই। সেই সঙ্গে দরকার আরও নানা উদ্যোগ। সেই লক্ষ্যেই ১০-১২ জানুয়ারি যাদবপুর হাই স্কুল প্রাঙ্গণে স্কুলেরই সহযোগিতায় হচ্ছে বিজ্ঞান মেলা: বিশিষ্ট পরিবেশবিজ্ঞানী, বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদের প্রাক্তন সচিব গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্য স্মরণে। পরিবেশ, প্রযুক্তি-সহ নানা ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের সদ্ব্যবহার, ভবিষ্যতে ব্যবহারযোগ্য নানা পরিকল্পনাকে পড়ুয়াদের তৈরি মডেলে তুলে ধরাই উদ্দেশ্য। থাকছে লেক স্কুল ফর গার্লস, যাদবপুর বিদ্যাপীঠ-সহ পঞ্চাশেরও বেশি স্কুল। মিনি প্ল্যানেটারিয়াম, রান্নাঘরে বিজ্ঞান, পুরাতাত্ত্বিক সংগ্রহ, রাতের আকাশ পর্যবেক্ষণ নিয়ে স্টল; থাকছে ইতিহাসে বিজ্ঞান, জে বি এস হ্যালডেনের কৃতি নিয়ে আলোচনাও।
সাঙ্গীতিক
১২ জানুয়ারি স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনে রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অব কালচার, গোলপার্কের আয়োজনে স্বামী বিবেকানন্দ মিউজ়িক ফেস্টিভ্যাল এ শহরের সাংস্কৃতিক দিকচিহ্নগুলির একটি। সারা দিনব্যাপী গীত-বাদ্য-নৃত্যের এই অনুষ্ঠানের অপেক্ষায় থাকেন সঙ্গীতপ্রেমীরা; দেশের নানা প্রান্ত থেকে গুণী সঙ্গীতজ্ঞেরা আসেন মার্গসঙ্গীতের নিবেদনে স্বামীজিকে শ্রদ্ধা জানাতে। দেখতে দেখতে কেটে গেছে সাড়ে তিন দশক, ৩৭তম সঙ্গীত উৎসব আগামী কাল দিনভর ইনস্টিটিউটের বিবেকানন্দ হল-এ। এ বছরে থাকছেন এল সুব্রহ্মণ্যম পণ্ডিত সাজন মিশ্র স্বপন চৌধুরী সঞ্জু সহায় তন্ময় বসু পরিমল চক্রবর্তী নির্মাল্য দে উস্তাদ নিশাত খান বাহাউদ্দিন ডাগর সাবির সুলতান খান-সহ বিশিষ্ট শিল্পীরা।
একটি জীবন
১৯৬৭, পত্রপত্রিকায় কবিতা লিখছেন শোভন মিত্র। পরে তিনিই ‘রাজা মিত্র’! ছাত্রজীবন থেকে বাম রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত, প্রবল উৎসাহী শিল্প-সাহিত্যেও। আশির দশকে চলচ্চিত্রকে আপন করে নিলেন, ’৮৭ তে মুক্তি পেল প্রথম কাহিনিচিত্র একটি জীবন। প্রথম ছবিতেই জাতীয় পুরস্কার। কান চলচ্চিত্র উৎসবে দেখানো হয় ছবিটি। পরে করেছেন নয়নতারা, বেহুলা-র মতো ছবি; ক্যালকাটা ফুটপাত ডুয়েলার, জীবন পটুয়া, স্ক্রোল পেন্টারস অব বীরভূম, কালীঘাট পেন্টিংস অ্যান্ড ড্রয়িংস-এর মতো তথ্যচিত্র, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পঞ্চাশ বছরে ফ্রম আ গোল্ডেন ফাউন্ডেশন টু দ্য গোল্ডেন জুবিলি। জাতীয় পুরস্কার, বিএফজেএ পুরস্কার জয়ী, সম্প্রতি প্রয়াত এই চলচ্চিত্রকারের শ্রদ্ধায় আজ বিকেল ৫টায় স্মরণ-অনুষ্ঠান উত্তরপাড়া জীবনস্মৃতি আর্কাইভ সভাকক্ষে, থাকবেন গৌতম ঘোষ।
বড় পর্দায়
বিশ শতকের ইউরোপিয়ান চলচ্চিত্রের অঙ্গনে প্রবাদপ্রতিম উপস্থিতি আলাঁ ডেলোঁ-র। ফরাসি এই অভিনেতা ষাট, সত্তর ও আশির দশক জুড়ে অভিনয় করেছেন লুচিনো ভিসকন্তি, মিকেলাঞ্জেলো আন্তোনিয়োনি, লুই মাল, জঁ-লুক গোদার, জঁ-পিয়ের মেলভিল-সহ ইউরোপের বিশিষ্ট চলচ্চিত্রকারদের ছবিতে, হলিউডেও। অষ্টাশি বছর বয়সে প্রয়াত হয়েছেন গত বছর অগস্টে। এ বার তাঁর অভিনীত নানা ছবি দেখার সুযোগ এ শহরে, সত্যজিৎ রায় ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট (এসআরএফটিআই) ও ফোরাম ফর ফিল্ম স্টাডিজ় অ্যান্ড অ্যালায়েড আর্টস-এর উদ্যোগে। এসআরএফটিআই প্রেক্ষাগৃহে ১৩-১৭ জানুয়ারি রোজ সন্ধ্যা ৬টায় (প্রথম দিন ৫টা থেকে) দেখানো হবে দ্য লেপার্ড, স্পিরিটস অব দ্য ডেড, দ্য সুইমিং পুল, আ কপ ও মসিঁয়ে ক্লেন ছবিগুলি।
অচিন মানুষ
“বাবা খুব গর্ব করে বলতেন, ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে কেউ বলতে পারবে না যে কমল মিত্র তাঁর অভিনয় জীবনের প্রথম দিন থেকে শেষ দিন পর্যন্ত কারোর কাছে একবারের জন্য কাজ ভিক্ষা করেছেন।” লিখেছেন চন্দনা ঘোষ, আমার বাবা কমল মিত্র বইয়ে। অভিজাত চেহারা, জলদগম্ভীর কণ্ঠ ও রাশভারী মেজাজের পিতা চরিত্রে কমল মিত্র খ্যাত বাংলা ছবির ইতিহাসে, তার আড়ালে কেমন ছিলেন সত্যিকারের পিতা, অভিভাবক কমল মিত্র— তারই চমৎকার, আন্তরিক ও পূর্ণাঙ্গ একটা ছবি এই বইয়ে। সেখানে ওঁর বর্ধমানের কালেক্টরিতে চাকরি, অভিনয়জীবনের গোড়ার দিকের সংগ্রাম ফুটে উঠেছে যেমন, তেমনই মঞ্চ ও পর্দার বাইরে ঘরোয়া মানুষটিও। দাশগুপ্ত অ্যান্ড কোং প্রকাশিত বইটির আনুষ্ঠানিক প্রকাশ হল সম্প্রতি, প্রকাশনা সংস্থার আয়োজনে আশুতোষ ভবনে। ছবিতে সপরিবার কমল মিত্র, বই থেকে।
খাদ্য-রাজনীতি
যত দিন যাচ্ছে, খাবারের থালা ও পাত শিকার হচ্ছে ধর্মীয় বিভাজন, শ্রেণি-রাজনীতির। নানা রূপ তার: কখনও নিরামিষবাদ চাপানোর চেষ্টা, বা মিড-ডে মিল থেকে ডিম কেড়ে নেওয়া, মাংসে নিষেধাজ্ঞা জারি ও তাকে ঘিরে হিংসার রাজনীতি। অথচ ভারতের খাদ্যের ইতিহাস বলে অন্য কথা। রান্নাঘর এক বিচিত্র মোহনা: হিং জাফরান লঙ্কা থেকে নানা মশলা ও আনাজ, উপকরণ ও প্রভাবও এসে ভারতের নানা অঞ্চলের রান্নায় মিশেছে, ঘর বা বাইরের হাওয়ার সঙ্গী হয়ে। আবার, এই ভারতের খাবারও ছড়িয়ে পড়েছে অন্য দেশে। খাবার শুধুই খিদে মেটায় না, জাতিসত্তারও অঙ্গাঙ্গি তা, বয়ে নিয়ে চলে নানা কৌমের সংস্কৃতি-ঐতিহ্য। এই ভাবনা থেকেই নতুন বছরের ক্যালেন্ডার তৈরি করেছেন মিতালি বিশ্বাস আবির নিয়োগী সাগরিকা দত্ত ও বন্ধুরা, বিষয় ভারতের রান্নাঘরের অকথিত ইতিহাস। সঙ্গের ছবিতে বিরিয়ানির ভারত-জয়গাথা, ক্যালেন্ডার থেকে।
জন্মশতবর্ষে
১৯৬৫, চিন যুদ্ধ পেরিয়ে তারুণ্য-ছোঁয়া দেশে তখন ঘরে ঘরে রেডিয়োর সমাদর। আকাশবাণীর সারা ভারত দেশাত্মবোধক সঙ্গীত রচনা প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় স্থান পেলেন জ্যোতিভূষণ চাকী। পরে কলকাতা কেন্দ্র থেকে নিয়মিত প্রচারিত হয়েছে তাঁর বহু গান, ছড়া, নাটকও। দূরদর্শনের সঙ্গেও ছিল দীর্ঘ যোগ। দেশ পত্রিকায় ‘ভট্টোজি’ নামে তাঁর লেখা ‘বাগর্থকৌতুকী’ ভাষাচর্চাকে লোকপ্রিয় করে তোলে। বহু ভাষায় পারঙ্গম মানুষটি আশ্চর্য দক্ষ ছিলেন অনুবাদেও। লিখেছেন দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনী, বাংলা ভাষার ব্যাকরণ; শিক্ষকতা করেছেন বালিগঞ্জে জগদ্বন্ধু ইনস্টিটিউশনে। স্কুলের প্রার্থনাগীতিও তাঁর লেখা, ‘হৃদয় ভরে আলোর গানের মোদের বিদ্যালয়/ এই আমাদের নন্দনলোক এই তো দেবালয়’। এ বছর তাঁর জন্মশতবর্ষ, স্কুল প্রেক্ষাগৃহে আজ বিকেল সাড়ে ৫টায় ‘জ্যোতিভূষণ চাকী স্মারক সমিতি’র উদ্যোগে স্মারক বক্তৃতা, সর্বানন্দ চৌধুরী বলবেন পুরাতনী বাংলা গান নিয়ে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy