প্রস্তুতি: অনুশীলনে দুই ওপেনার ধওয়ন (বাঁ দিকে) ও রাহুল। —ছবি পিটিআই।
ওপেনার সমস্যার সমাধান করতে ফের সেই বিশ্বকাপের রণনীতিতেই ফিরে যাওয়ার কথা ভাবছে বিরাট কোহালির ভারত। ইংল্যান্ডে যেমন শুরুর দিকে রোহিত শর্মা, শিখর ধওয়ন, কে এল রাহুল— তিন ওপেনারকেই প্রথম একাদশে রেখে দল সাজানো হয়েছিল, তেমনই ছক নেওয়া হতে পারে ওয়াংখেড়েতে। রোহিতের সঙ্গে ওপেন করবেন শিখর। পরিস্থিতি বুঝে তিন বা চারে নামবেন রাহুল।
তিন ওপেনারকে রেখেই যে দল গড়া হতে পারে, তার একটা আভাস সকাল থেকেই ওয়াংখেড়েতে পাওয়া যাচ্ছিল। সচরাচর নেট প্র্যাক্টিসে এ সব ধাঁধার উত্তর ভাল পাওয়া যায়। সহজ ফর্মুলা হচ্ছে, প্র্যাক্টিসে কে বেশি প্রাধান্য পাচ্ছেন, কার মেজাজ ফুরফুরে, কার মুখ বেশি অন্ধকার— তা দেখে নাও। তা হলেই ইঙ্গিত পাওয়া যাবে, কে খেলছেন আর কাকে বাইরে বসতে হবে।
সোমবার ওয়াংখেড়েতে ভারতীয় দলের অনুশীলনে ধওয়ন এবং রাহুল দু’জনকেই বেশ ফুরফুরে মেজাজে দেখা যাচ্ছিল। নেট প্র্যাক্টিসে দু’জনেই বেশ প্রাধান্য পেলেন। ধওয়ন রবিবারের ঐচ্ছিক অনুশীলনে আসেননি। এ দিন তাই জোরদার প্র্যাক্টিস করতে দেখা গেল। আলাদা করে সামনে থেকে ছোড়া বলে বাউন্সের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার মহড়ায় ব্যস্ত থাকলেন তিনি। কোহালি পরে সাংবাদিক সম্মেলনে এসে বলেও গেলেন, ‘‘তিন জন ওপেনারেরই খেলার সম্ভাবনা রয়েছে। এক জনকে মিডল অর্ডারে ব্যবহার করা হবে। তার জন্য ব্যাটিং অর্ডারে আমাকে নেমে আসতে হলেও অসুবিধা নেই।’’
আদর্শ অধিনায়কের মতো এর পরে তাঁকে বলতে শোনা গেল, ‘‘ব্যক্তি নয়, টিমের স্বার্থ সবার আগে। টিমের জন্য আমার কী ভূমিকা নেওয়া দরকার, সেটাই ভাবব। নিজে কোথায় খেললে রেকর্ড বাড়বে, তা মাথায় থাকে না।’’ আরও মন ছুঁয়ে যাওয়ার মতো বক্তব্য এল এর পরে, ‘‘অধিনায়ক হিসেবে বর্তমানে কী করছি, সেটাই সব নয়। ভবিষ্যতের জন্য কী অবস্থায় দলকে রেখে গেলাম, কতটা নতুন প্রজন্মকে তৈরি করে দিয়ে যেতে পারলাম, আমার পরে যে অধিনায়ক আসবে তার হাতে কী তুলে দিতে পারলাম, সে সবও আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ।’’
এই ওয়াংখেড়েতেই ২০১১-র ২ এপ্রিল যখন মহেন্দ্র সিংহ ধোনি ছক্কা মেরে বিশ্বকাপ জেতাচ্ছেন, কোহালি ছিলেন দলের এক তরুণ সদস্য। ফোলা গালের সেই কোহালি এখন সিক্স প্যাকের কোহালিতে পাল্টে গিয়েছেন। সে দিনের তরুণ প্রতিভা এখন ব্যাট হাতে বিশ্বের শাসক। অনেক পরিণত তিনি, অনেক গভীরে গিয়ে ভাবেন। বলে দিলেন, ‘‘নিজের ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে পজেসিভ নই আমি। নিজের ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগি না।’’
যাঁকে নিয়ে ‘পজেসিভ’ হলেও হতে পারেন, সেই অনুষ্কা শর্মার উপস্থিতি তাঁর জীবনদর্শনই পাল্টে দিয়েছে বলে শোনা যায়। বিয়ের পরে মুম্বইয়ে ফ্ল্যাট নিয়েছেন কোহালি। এখন দিল্লির চেয়ে বেশি মুম্বইয়েই থাকেন। এখানে জনপ্রিয়তা আরও বেড়েছে। প্র্যাক্টিসের পরে দেখা গেল নেট বোলার এসে উপদেশ চাইছেন। তাঁকে মিনিট পাঁচেক ধরে দারুণ ভাবে উন্নতির রাস্তা বাতলে দিলেন কোহালি। সে তরুণ যেন হাতে চাঁদ পেলেন। একান্তে কোহালি, তা-ও আবার এত ক্ষণ! এর পর স্থানীয় এক জনকে দিয়ে নতুন ব্যাটও আনালেন। বার বার নেড়েচেড়ে ওজন দেখে নিলেন। মহারণের জন্য হয়তো নতুন সেই হাতিয়ার নিয়েই নামবেন।
রাতের দিকে আবার শোনা গেল, তিন ওপেনার খেলানোর মত যেমন রয়েছে, তেমনই একেবারে উড়ে যায়নি মিডল অর্ডারে অন্য কাউকে নামানোর ভাবনা। যদি ধওয়ন, রাহুল দু’জনকেই খেলাতে হয়, তা হলে কেদার যাদব বা মণীশ পাণ্ডেকে বাড়তি ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলানোর উপায় নেই। কারও কারও বক্তব্য, তা কেন হবে? ধওয়ন যদি এতই যোগ্য হয়, তা হলে ও খেলুক। রাহুল বাইরে বসুক। মিডল অর্ডারকে বার বার উপেক্ষা করা হবে কেন? এই অংশের মত হচ্ছে, রোহিত-ধওয়ন জুটি ওপেন করুক। তিনে কোহালি। চারে শ্রেয়স আইয়ার। পাঁচে ঋষভ। ছয়ে মণীশ পাণ্ডে। এর পর রবীন্দ্র জাডেজা, সঙ্গে কুলদীপ বা চহালের এক জন এবং তিন পেসার— বুমরা, শামি এবং শার্দূল ঠাকুর। তবে স্বয়ং অধিনায়ক কোহালি যখন ইঙ্গিত দিয়ে গিয়েছেন, তিন ওপেনারকে দল গড়ার সম্ভাবনাই সব চেয়ে বেশি।
তবে ধওয়ন-জট যদি ওয়াংখেড়ের জন্য খোলেও, আবার তা ফিরে আসতে পারে। দল পরিচালন সমিতি রোহিতের সঙ্গী হিসেবে এখন রাহুলের দিকে ঝুঁকে। ভবিষ্যতের কথা ভেবে বাঁ-হাতি শিখর নন, ডান হাতি রাহুল প্রাধান্য পাচ্ছেন। অস্ট্রেলিয়ায় এ বছরেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। সেখানেও ধওয়নকে নিয়ে অনিশ্চয়তার বাতাবরণ রয়েছে। রাহুল সঙ্গে কিপিংও করে দিতে পারবেন, এমন আলোচনাও চলছে। যেমন এর আগে রাহুল মানে রাহুল দ্রাবিড়কে কিপারের ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল ২০০৩ বিশ্বকাপে।
এ দিন কোহালিও বলতে বাধ্য হলেন, ‘‘ফর্মে থাকা ক্রিকেটার (এ ক্ষেত্রে রাহুল) দলের সম্পদ।’’ সাংবাদিক সম্মেলনে এক জন জিজ্ঞেস করলেন, এ বছরে তো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে এই পঞ্চাশ ওভারের ওয়ান ডে সিরিজটা অপ্রাসঙ্গিক মনে হচ্ছে কি না? কোহালি দ্রুত থামিয়ে দিলেন, ‘‘অস্ট্রেলিয়া এমনই একটা দল, ওদের সঙ্গে কোনও সিরিজই অপ্রাসঙ্গিক হতে পারে না।’’ ওয়াংখেড়েতে প্রথাগত ভাবে আরব সাগরের হাওয়ায় পেসাররা সুইং পান। মানে মহম্মদ শামির মতো শিল্পীর এখানে আনন্দিত হওয়ার কথা। কিন্তু টি-টোয়েন্টি যুগে বাইশ গজ এমনই ব্যাটিং-স্বর্গ বানানোর হিড়িক পড়েছে যে, ওয়াংখেড়ের সেই পুরনো ব্যাট ও বলের ভারসাম্যের দিনও এখন লুপ্ত হওয়ার মুখে। তার সঙ্গে রাতের দিকে শিশির পড়ে বোলারদের কাজ খুবই কঠিন করে দিতে পারে। ভারতীয় শিবির তাই ঠিক করে ফেলেছে, টসে জিতলে ফিল্ডিং করবে। একে তো রান তাড়া করায় তাঁদের রেকর্ড দারুণ। ‘চেজমাস্টার’ কোহালি রয়েছেন। তার উপরে রাতের দিকে স্পিনারেরা বল গ্রিপ করতে গিয়ে সমস্যায় পড়বেন।
ধওয়নের জন্য অবশ্য শুধু ওয়াংখেড়ে নয়, পুরো অস্ট্রেলিয়া সিরিজই অগ্নিপরীক্ষা হতে যাচ্ছে। আগের মতো জায়গা পাকা করতে হলে তাঁকে ধারাবাহিক ভাবে বড় রান করতে হবে। অন্যরা ক্রিকেট খেলবেন, তাঁর চলবে ট্র্যাপিজের খেলা। সামান্য ভারসাম্য হারালেই নীচে অপেক্ষা করছে মৃত্যু!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy