অভিযান: গেমস ভিলেজে পতাকা উত্তোলনের পরে ভারতীয় দল। সোমবার গোল্ড কোস্টে। ছবি: এএফপি
অস্ট্রেলিয়ার গোল্ড কোস্টে কমনওয়েলথ গেমস শুরু হওয়ার তিন দিন আগে হঠাৎ করে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছে ভারত। গেমস ভিলেজে ভারতীয় বক্সারদের ঘরের সামনে নাকি পাওয়া গিয়েছে ইঞ্জেকশনের সিরিঞ্জ। যা নিয়ে বিতর্ক চরমে। নিষিদ্ধ ড্রাগ নেওয়ার জন্য কি ব্যবহার করা হয়েছে ওই সিরিঞ্জ? না অন্য কোনও কারণে? সত্যিই কি ভারতীয় বক্সাররা এর সঙ্গে জড়িত? কমনওয়েলথ গেমস কমিটির তদন্ত শেষ হয়েছে। জানা গিয়েছে, ডোপিংয়ের কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কিন্তু তাতে শাস্তির আশঙ্কা কাটছে না। কারণ গেমসের ‘নো সিরিঞ্জ নীতি’। সিরিঞ্জ-কেলেঙ্কারি নিয়ে উঠে আসছে নেপথ্যের যে কাহিনি...
চোখে পড়ে সাফাইকর্মীর
দিন চারেক আগে ভোরবেলা গেমস ভিলেজে কাজ করতে এসে ভারতীয় বক্সারদের ঘরের সামনে থাকা ডাস্টবিনে নজর চলে যায় এক সাফাইকর্মীর। চোখে পড়ে, ডাস্টবিনে পড়ে থাকা একটা জলের বোতলের ওপর। যে বোতলের মধ্যে ভরা ছিল কয়েকটি ইঞ্জেকশনের সিরিঞ্জ। সঙ্গে সঙ্গে গেমস কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেন তিনি। গেমস কমিটির লোক এসে সেই সব সিরিঞ্জ তুলে নিয়ে যায়।
কাঠগড়ায় ভারতীয় বক্সাররা
খবর ছড়িয়ে পড়ে, ভারতীয় বক্সারদের ঘরের সামনে থেকে পাওয়া গিয়েছে ওই সব সিরিঞ্জ। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই সন্দেহের তির তাঁদের দিকে। সাংবাদিক বৈঠক করে কমনওয়েলথ গেমস ফেডারেশন (সিজিএফ)-এর চিফ এগজিকিউটিভ অফিসার (সিইও) ডেভিড গ্রেভেমবার্গ জানিয়ে দেন, ঘটনা নিয়ে তদন্ত হচ্ছে। তবে কোন দেশের প্রতিযোগীদের ঘরের সামনে থেকে সিরিঞ্জ উদ্ধার করা হয়েছে, তা তিনি সরকারি ভাবে জানাননি।
ভারতের পাল্টা বক্তব্য
ভারতীয় অলিম্পিক সংস্থার (আইওএ) কয়েক জন কর্তার বক্তব্য হল, ভারতীয় বক্সাররা এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। তাঁদের কাছে খবর, সিরিঞ্জ কোনও বিশেষ ঘরের সামনে পাওয়া যায়নি। লবিতে পাওয়া গিয়েছিল। যেখানে সব দেশের অ্যাথলিটরাই ঘোরাফেরা করেন। তাই যে কেউ ওই সব সিরিঞ্জ ডাস্টবিনে ফেলতে পারেন।
আরও এক যুক্তি
আইওএ-র অন্য এক কর্তা বলছেন, সিরিঞ্জ ব্যবহার যদি কেউ করেই থাকে, তা হলে যে ডোপ করতেই করেছে, এমন ভাবা হচ্ছে কেন? তাঁর বক্তব্য, ‘‘সিরিঞ্জে কি শুধুই বিষই থাকে, অমৃত থাকতে পারে না?’’ গোল্ড কোস্ট থেকে রাত পর্যন্ত যে খবর পাওয়া গিয়েছে, তাতে সে রকম সম্ভাবনার কথাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। বলা হচ্ছে, জনৈক ভারতীয় বক্সার নাকি ভিটামিন ইঞ্জেকশন নিয়েছিলেন।
সমস্যাটা কোথায়
ডোপ না করে থাকলেও বিনা অনুমতিতে কোনও অ্যাথলিট সিরিঞ্জ নিয়ে আসতে পারেন না গেমস ভিলেজে। প্রথমত, তাঁকে ডাক্তারের অনুমতি নিয়ে আসতে হবে। দ্বিতীয়ত, এ ব্যাপারে একটা লিখিত ফর্ম জমা দিতে হবে। যা এখনও কোনও ভারতীয় বক্সার জমা দিয়েছেন বলে জানা যায়নি। যার ফলে তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে কিন্তু বড় শাস্তি অপেক্ষা করে থাকবে ভারতীয় বক্সারদের জন্য। সমস্যায় পড়বে ভারতও।
জরুরি প্রশ্নের উত্তর
‘নো সিরিঞ্জ’ নীতি
• ২০১১ সালে বিশ্ব সাইক্লিং সংস্থা এই ‘নো সিরিঞ্জ ক্লজ’ চালু করে। তার পরে কমনওয়েলথ গেমসে। ডোপিং রুখতে এই পদক্ষেপ।
কী এই নীতি
• কোনও প্রতিযোগী গেমসে কোনও রকম সিরিঞ্জ ব্যবহার করতে পারবেন না।
ব্যতিক্রম কোথায়
• প্রতিযোগীরা সিরিঞ্জ ব্যবহার করতে পারবেন একমাত্র চিকিৎসকের অনুমতি নিয়ে। তাও তাঁদের আগাম একটা ফর্মে সব লিখে
জানাতে হবে।
নিয়ম ভাঙার শাস্তি কী
• যদি দোষ প্রমাণিত হয়, তা হলে দীর্ঘদিনের জন্য নির্বাসিত হতে পারেন সংশ্লিষ্ট প্রতিযোগী।
ডোপ না করলে কী হবে
• ডোপ না করলেও বিনা অনুমতিতে সিরিঞ্জ নিয়ে গেমস ভিলেজে এলে শাস্তির মুখে পড়তে হবে।
ভারতীয়দের কী ভবিষ্যৎ
• আজ, মঙ্গলবার, অস্ট্রেলীয় সময় সকাল দশটায় শুনানি। সেখানে যদি প্রমাণিত হয়, ভারতের কোনও বক্সার সিরিঞ্জ ব্যবহার করেছিলেন বিনা অনুমতিতে, তা হলে বড় শাস্তি হতে পারে।
কী ভাবে এগোচ্ছে তদন্ত
সিরিঞ্জ পাওয়া মাত্রই তা ডিএনএ পরীক্ষার জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। সিজিএফ-এর এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, ডিএনএ পরীক্ষার পাশাপাশি দেখা হবে সিরিঞ্জে কোনও নিষিদ্ধ ওষুধের হদিশ মেলে কি না। এও দেখা হবে কোন ওযুধ নেওয়া হয়েছিল সিরিঞ্জ মারফত। আরও জানা গিয়েছে, ভারতের বারো জন বক্সারের (পুরুষ এবং মহিলা মিলে) ডোপ পরীক্ষা করা হয়েছে ইতিমধ্যেই। তবে দলের সঙ্গে থাকা এক কর্তার বক্তব্য, এ রকম ডোপ পরীক্ষা হয়েই থাকে। এর জন্য চিন্তিত হওয়ার কারণ নেই।
তদন্ত শেষ, রায় হয়তো আজ
সিরিঞ্জ-কাণ্ড নিয়ে তদন্ত শেষ করে ফেলেছে সিজিএফ। তাদের এক প্রতিনিধি বলেছেন, ‘‘আমাদের যা পরীক্ষা করার হয়ে গিয়েছে। রিপোর্ট জমা পড়েছে।’’ জানা গিয়েছে, আজ, মঙ্গলবার সিজিএফ আদালতে ভারতীয় প্রতিনিধিদের বক্তব্য শোনা হতে পারে। শুনানি শেষ হলে সম্ভবত মঙ্গলবারই রায় জানিয়ে দেওয়া হবে। তবে স্বস্তির হল, ডোপিংয়ের কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কিন্তু ‘নো সিরিঞ্জ নীতি’ ভঙ্গ হয়েছে প্রমাণিত হলে শাস্তি হতে পারে।
গেমস থেকে পাওয়া শেষ খবর
ভারতীয় অ্যাথলিটদের মধ্যে অবশ্য এই বিতর্কের প্রভাব বিশেষ পড়েনি বলে জানা যাচ্ছে। সংবাদসংস্থা জানিয়েছে, সোমবার গেমস ভিলেজে ভারতের পতাকা উত্তোলনের সময় দলের সবাই খোশমেজাজেই ছিলেন। অনুষ্ঠানে ছিলেন ভারতীয় বক্সাররাও। দলের সঙ্গে থাকা এক বক্সিং কোচ বলেছেন, ‘‘আমরা শুধু প্রস্তুতির ওপর নজর দিচ্ছি। অন্য কিছু নিয়ে ভাবছি না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy