Advertisement
৩০ নভেম্বর ২০২৪

হুইলচেয়ারেই স্বপ্ন বিশ্বজয়ের

মেরুদণ্ডে রক্ত জমাট বেঁধে, বাঁ পায়ের হিপ জয়েন্ট খুলে গিয়ে পক্ষাঘাতে আক্রান্ত ময়মনসিংহের নুর নাহিয়ান মাঠের বাইরে বসে ভাবতেন নিজের ওভার বাউন্ডারির কথা। তিনিও আজ সফল ব্যাটসম্যান।

অদম্য: অনুশীলনে ব্যস্ত বাংলাদেশের হুইলচেয়ার ক্রিকেট দলের সদস্যেরা। সল্টলেকে। ছবি: সুমন বল্লভ

অদম্য: অনুশীলনে ব্যস্ত বাংলাদেশের হুইলচেয়ার ক্রিকেট দলের সদস্যেরা। সল্টলেকে। ছবি: সুমন বল্লভ

শান্তনু ঘোষ
শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০১৮ ০২:৩০
Share: Save:

বল লেগে প্রচণ্ড চোট পেয়েছিলেন ডান হাঁটুতে। পা বাদ যাওয়ায় নিভে গিয়েছিল ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন। তবে থেমে থাকেননি ঢাকার মহম্মদ মহিদুল। আজ তিনি অলরাউন্ডার।

মেরুদণ্ডে রক্ত জমাট বেঁধে, বাঁ পায়ের হিপ জয়েন্ট খুলে গিয়ে পক্ষাঘাতে আক্রান্ত ময়মনসিংহের নুর নাহিয়ান মাঠের বাইরে বসে ভাবতেন নিজের ওভার বাউন্ডারির কথা। তিনিও আজ সফল ব্যাটসম্যান।

শু‌ধু ওই দু’জন নন। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও ব্যাট-বল হাতে এখন বিশ্ব জয়ের স্বপ্ন দেখেন তাঁদের মতোই আরও ১৪ জন যুবক। বাংলাদেশের ওই যুবকদের কেউ কেউ এখন বাইশ গজে ছক্কা হাঁকাচ্ছেন, কেউ কেউ করছেন ক্লিন বোল্ড। এবং তার সবই হুইলচেয়ারে বসে।

১ এপ্রিল ‘ভারত ও বাংলাদেশ টি-২০ হুইলচেয়ার ক্রিকেট চ্যাম্পিয়নশিপ’-এর আসর বসবে মুম্বইয়ে। তাতে যোগ দিতে যাওয়ার আগে কলকাতায় এসেছিলেন ১৬ জন। শুক্রবার বিকেলে অনুশীলনের ফাঁকেই দলের ক্যাপ্টেন মহম্মদ মহসিন বললেন, ‘‘বড্ড ভাল লেগেছে শহরটাকে। মুম্বই থেকে দিল্লি যাব ত্রিদেশীয় আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে। সেখান থেকে আবার কলকাতায় আসব।’’ সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের শহরের রসমালাই আর পনির খেয়ে, ইডেন গার্ডেন্স দেখে তবেই পদ্মাতীরে ফেরার ইচ্ছা টিম মহসিনের।

২০১৫ সালে হুইলচেয়ারে বসা যুবকদের এক ছাতার তলায় এনে ‘বাংলাদেশের হুইলচেয়ার ক্রিকেট ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’ গড়ে তোলেন জন্মের ছ’মাস বয়স থেকে পঙ্গু মহসিন। তিনি জানান, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহি, ঢাকা— সংগঠনের চারটি শাখা মিলিয়ে সদস্য ২০০ জন। প্রথমে জেলা, তার পরে দেশের মাটিতে সাফল্য আসার পরে তাঁরা হুইলচেয়ারে বসেই আন্তর্জাতিক স্তরেও সামিল হচ্ছেন। এই লড়াইয়ে স্বেচ্ছায় ম্যানেজার, টিম লিডার পদে যোগ দিয়েছেন আর কয়েক জন। তাঁরা অবশ্য শারীরিক প্রতিবন্ধী নন।

ব্যাটসম্যান আহাদুল ইসলাম বলেন, ‘‘হুইলচেয়ারে বসে মাঠের ধারে গিয়ে বসে থাকতাম। কেউ খেলতে নিত না। খুব কাঁদতাম। এখন জিতে বাড়ি ফিরলে সেই বন্ধুরা শুভেচ্ছা জানাতে এলে আনন্দে কান্না আসে।’’ গত বছরই মহসিনের টিম নেপালে আয়োজিত প্রথম ত্রিদেশীয় আন্তর্জাতিক হুইলচেয়ার ক্রিকেট চ্যাম্পিয়নশিপে রানার্স আপ হয়েছে। এ বার তাঁদের লক্ষ্য চ্যাম্পিয়ন হওয়া।

পড়ন্ত বিকেলে সারিবদ্ধ ভাবে মাঠ থেকে বেরোনোর সময়ে তাই মহসিনদের গলায় শোনা গেল, ‘‘আমরা করব জয়, নিশ্চয়।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy