Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Wriddhiman Saha

‘প্রতিদ্বন্দ্বী’ পন্থের ব্রিসবেন ইনিংসকে দরাজ সার্টিফিকেট, তবে হাল ছাড়ছেন না ঋদ্ধি

ঋদ্ধির মতে, ব্রিসবেন টেস্টে পন্থের অপরাজিত ৮৯ টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে অল টাইম স্পেশ্যাল।

পন্থের ব্রিসবেন ইনিংসকে দরাজ সার্টিফিকেট দিলেন ঋদ্ধি।

পন্থের ব্রিসবেন ইনিংসকে দরাজ সার্টিফিকেট দিলেন ঋদ্ধি। নিজস্ব চিত্র

সব্যসাচী বাগচী
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০২১ ১১:৫৬
Share: Save:

আইপিএল এবং তারপর লম্বা অস্ট্রেলিয়া সফর শেষ করে প্রায় পাঁচ মাস পরে বাড়ি ফিরলেন ঋদ্ধিমান সাহা। শুক্রবার সকাল ৮টার পর যখন বিমানবন্দর থেকে বেরলেন, তখন তাঁর মুখে হাজার ওয়াটের হাসি। পাপালিকে সংবর্ধনা দেওয়ার জন্য সিএবি সচিব দেবব্রত দাস ফুল নিয়ে উপস্থিত। ঋষভ পন্থ খেলায় অ্যাডিলেড টেস্টের পর থেকে তাঁকে ড্রেসিংরুমে বসে থাকতে হয়েছিল! পন্থের জন্য নাকি তাঁর জায়গা টলমল। যদিও পাপালি কিন্তু এই ঠান্ডা লড়াই উপভোগ করছেন। শুধু তাই নয়, তাঁর মতে, ব্রিসবেন টেস্টে পন্থের অপরাজিত ৮৯ টেস্ট ক্রিকেটে অল টাইম স্পেশ্যাল হয়ে থেকে যাবে।

আপাতত আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত পরিবারের সঙ্গে ছুটি কাটাবেন। তারপর আবার নতুন লড়াই। নতুনভাবে ফের জৈব বলয়ে ঢুকে যাওয়া। যদিও স্বস্তি, এবার পরিবার সঙ্গে থাকছে। ঘরের মাঠে প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড। বিমানবন্দর ছাড়ার আগে ডনের দেশে অজি বধ ও ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে কী স্ট্রাটেজি হবে, তা নিয়ে আনন্দবাজার ডিজিটাল-কে একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন ঋদ্ধি।

প্রশ্ন: অজি কোচ জাস্টিন ল্যাঙ্গার বলেছেন, যে দেশের জনসংখ্যা প্রায় ১৩৬ কোটি, সেই দেশের এগারো জন তো প্রকৃত যোদ্ধা হবেই। এটাই কি সবচেয়ে বড় সার্টিফিকেট?

ঋদ্ধি: অস্ট্রেলিয়া সফরে যাওয়া মানেই সবাই ধরে নেয় আমরা হারব। ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরাও সেটাই বলেন। তারপর অ্যাডিলেডে ৩৬ রানে অল আউট হয়ে যাওয়ায় অস্ট্রেলিয়াও হয়ত ধরে নিয়েছিল, ওরা অনায়াসে টেস্ট সিরিজ জিতে যাবে। তবে ব্রিসবেন টেস্টের পর হয়তো বুঝতে পেরেছিল যে, এটা অন্য ভারত। দল যেমনই পরিস্থিতিতে থাকুক, একজোট হয়ে খেললে সবকিছু জয় করা সম্ভব। সেটা আমরা প্রমাণ করেছি। হয়তো তাই জাস্টিন ল্যাঙ্গার এমন মন্তব্য করেছেন।

প্রশ্ন: বর্ণবৈষম্যমূলক মন্তব্যের জন্যও অনেক বিতর্ক হয়েছে। আপনাদের ড্রেসিংরুমের পরিবেশ কেমন ছিল?

ঋদ্ধি: এটা এক অদ্ভুত রোগ। মানুষের মনে শুভবুদ্ধির উদয় না হলে এই রোগ যাবে না। বুমরা ও সিরাজের সঙ্গে যে ঘটনা ঘটেছিল, আমরা সকলে তার তীব্র প্রতিবাদ করেছি। গোটা বিষয় নিয়ে অজি ক্রিকেটাররাও লজ্জিত। ওরাও কিন্তু আমাদের পাশে রয়েছে।

প্রশ্ন: এটা আপনার কেরিয়ারের তৃতীয় অস্ট্রেলিয়া সফর। অন্য দুটো থেকে এই ট্যুর কতটা আলাদা ছিল?

ঋদ্ধি :
প্রথম অস্ট্রেলিয়া সফরটাই আমার কাছে সেরা। কারণ, সেবার অ্যাডিলেড টেস্টে মাহি ভাই নির্বাসিত হওয়ায় কিপিং করেছিলাম। তবে এবার মাত্র একটা টেস্ট খেললেও এই ট্যুরও খুব কাছে থাকবে। প্রথম টেস্টে ৩৬-এ অল আউট হয়ে যাওয়া, বিরাট কোহালির না থাকা, একাধিক সিনিয়র ক্রিকেটার চোট পাওয়ার পরেও আমরা গোটা সিরিজে দাপট দেখিয়েছি। তাও আবার একাধিক অনভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের নিয়ে। কিপিংয়ের ক্ষেত্রে দলকে সাহায্য করার চেষ্টা করেছি। এটাই তো নতুন ভারত।

অস্ট্রেলিয়া থেকে টেস্ট সিরিজ জিতে আসার পর শুক্রবার সকালে দমদম বিমানবন্দরে ঋদ্ধি। সঙ্গে থ্রো ডাউন স্পেশালিস্ট দয়ানন্দ। নিজস্ব চিত্র।

অস্ট্রেলিয়া থেকে টেস্ট সিরিজ জিতে আসার পর শুক্রবার সকালে দমদম বিমানবন্দরে ঋদ্ধি। সঙ্গে থ্রো ডাউন স্পেশালিস্ট দয়ানন্দ। নিজস্ব চিত্র।

প্রশ্ন: ৩৬-এ অল আউট হয়ে যাওয়ার পর আপনারা ড্রেসিংরুমে কী আলোচনা করেছিলেন? হেড কোচ রবি শাস্ত্রী কীভাবে উদ্বুদ্ধ করেন?

ঋদ্ধি:
ড্রেসিংরুমে বাড়তি কোনও আলোচনা করিনি। কারণ, আমরা কামব্যাকের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। নিজেরাও সেটা জানতাম। কোচও সেটা বারবার বলেছিলেন। তাই দ্বিতীয় টেস্ট থেকে সবাই আমাদের অন্য মেজাজে দেখল। আসলে ক্রিকেটে এগুলো হয়। এটাই টেস্ট ক্রিকেটের মজা। ৩৬-এ অল আউট হয়ে যাওয়ার জন্য যেমন আমাদের নিন্দা হয়েছে, তেমন আমরাই কিন্তু কিছু দিনের মধ্যে এমন ঐতিহাসিক কামব্যাক করেছি।

প্রশ্ন: অধিনায়ক? না ব্যাটসম্যান অজিঙ্ক রাহানে? কোনটায় দল বেশি মুগ্ধ?

ঋদ্ধি:
দুটোই একে অপরের পরিপূরক। ২০০৩-০৪ সফরে ব্রিসবেন টেস্টে দাদির (সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়) ১৪৪ রান সেই দলের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছিল। ঠিক তেমনই মেলবোর্ন টেস্টে রাহানের ১১২ আমাদের দলকে আরও জোটবদ্ধ করে। আর অধিনায়ক রাহানেকে তো সবাই দেখেছে। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে বিরাটের অবর্তমানে দলকে এগিয়ে নিয়ে টেস্ট সিরিজ জেতা মুখের কথা নয়।

প্রশ্ন: ঋষভ পন্থ ও আপনাকে নিয়ে যে প্রচার মাধ্যমে তুলনা, আলোচনার শেষ নেই। এটা আপনারা দুজনে কেমন এনজয় করেন?

ঋদ্ধি:
ড্রেসিংরুম থেকে শুরু করে টেবিল টেনিস কিংবা ‘প্লে স্টেশন’ খেলার সময়ও আমরা মিডিয়ার পোস্টমর্টেম নিয়ে আলোচনা করি। সেগুলো নিয়ে আমাদের মধ্যে ব্যাপক হাসিঠাট্টা হয়। সত্যি বলতে এগুলো নিয়ে বেশি ভাবনাচিন্তা করলে পারফরম্যান্সের উপর প্রভাব পড়ে। তাই এগুলো আমি অন্তত ভাবি না।

প্রশ্ন: সিডনি না ব্রিসবেন? পন্থের কোন ইনিংস সবচেয়ে পছন্দের?

ঋদ্ধি:
অবশ্যই ব্রিসবেন টেস্ট। কারণ প্রবল চাপের মধ্যেও ও হার মানেনি। ওটা স্পেশ্যাল নক। যতদিন টেস্ট ক্রিকেট বেঁচে থাকবে, পন্থের ওই ইনিংস নিয়ে আলোচনা হবে। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয় পন্থ থাকলে সিডনি টেস্টেও আমরা জিততে পারতাম।

প্রশ্ন: চোট ইস্যুকে কেন্দ্র করে গত কয়েক বছর ন্যাশনাল ক্রিকেট অ্যাকাডেমি বিতর্কের কেন্দ্রে। কিন্ত একাধিক ক্রিকেটার চোট পাওয়ার পরেও রিজার্ভ বেঞ্চ তৈরি ছিল। এটা তো রাহুল দ্রাবিড় ও এনসিএ-র সুফল?

ঋদ্ধি:
যে জুনিয়র ক্রিকেটাররা এবার নজর কেড়েছে তাদের প্রত্যেককে গড়ে তুলেছেন রাহুল ভাই। রাহুল ভাই খুব কঠিন মানসিকতার ক্রিকেটার। তাই ওঁর ছাত্রদের মধ্যেও সেই গুণ থাকবে, এটাই তো স্বাভাবিক। তাছাড়া সিরাজ, শার্দূল, সুন্দর, পন্থ, এরা গত কয়েক বছর ভারত 'এ' দলের হয়ে অনেক বিদেশ সফর করেছে। তাই ওরা জানে বিদেশে চাপের মুখে কেমন পারফরম্যান্স করতে হয়।

প্রশ্ন: আপনি যে ফুরিয়ে যাননি, সেই প্রমাণ আপনি আর কতবার দেবেন?

ঋদ্ধি:
যে ফরম্যাটে যতবার সুযোগ পাব, ততবার নিজেকে প্রমাণ করার চেষ্টা করব। এটা আর নতুন কি! কেরিয়ারের শুরু থেকেই তো প্রমাণ দিচ্ছি।

প্রশ্ন: দেশের প্রাক্তন উইকেট কিপাররা এখনও আপনাকেই পছন্দ করেন।

ঋদ্ধি:
তাঁদের অসংখ্য ধন্যবাদ। তবে দল তো আমার হিসেব মতো হবে না। টিম ম্যানেজমেন্ট যেমন চাইবে তেমন দল খেলবে। তাই আবার যদি সুযোগ পাই আবার প্রমাণ করব। ছোট থেকেই এই মানসিকতা নিয়ে খেলে এসেছি। দলকে সাহায্য করার চেষ্টা করি।


প্রশ্ন: আসন্ন ইংল্যান্ড সিরিজে কারা এগিয়ে?

ঋদ্ধি:
ইংল্যান্ড শক্তিশালী দল হলেও আমরা ঘরের মাঠে খেলব। বিরাট ফিরছে। আমাদের স্পিনাররা ছন্দে আছে। তাই আমরাই এগিয়ে।

প্রশ্ন: আইপিএল, না অস্ট্রেলিয়া সফরের জৈব বলয়? কোনটা বেশি কঠিন?

ঋদ্ধি:
দুটোই দুরকম কঠিন। তবে কঠিন সময় কাটিয়ে সিরিজ জিতে পাঁচ মাস পরে ঘরে ফিরলাম। এটাই সবচেয়ে আনন্দের। অনেকদিন পর আবার ছেলে-মেয়েকে দেখব। এটা অন্য আনন্দ।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE