ফাইল চিত্র।
বুয়েনোস এয়ার্স, ৯ জুলাই: এ বারের কোপা আমেরিকা আর্জেন্টিনাবাসীদের কাছে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। গত বছর দিয়েগো মারাদোনাকে হারিয়েছি। রবিবার মারাকানায় ব্রাজিলকে হারিয়ে কোপা আমেরিকায় চ্যাম্পিয়ন হতে পারলে সেটাই হবে ফুটবল ঈশ্বরের প্রতি সেরা শ্রদ্ধার্ঘ্য।
করোনার কারণে ২০২০-র কোপা আমেরিকা এক বছর পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এ বার আমাদের দেশ আর্জেন্টিনাতেই এই প্রতিযোগিতা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মারণ ভাইরাসের প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় তা শেষ মুহূর্তে ব্রাজিলে স্থানান্তরিত হয়। আর্জেন্টিনার পরিস্থিতি এখনও উদ্বেগজনক।
ব্রাজিল কোপা আয়োজনের দায়িত্ব পাওয়ায় চিন্তিত হয়ে পড়েছিলাম। ২০১৪ সালের বিশ্বকাপের পরে ২০১৯-র কোপা— খালি হাতেই পেলের দেশ থেকে ফিরতে হয়েছিল লিয়োনেল মেসিদের। এ বার প্রথম ম্যাচেই চিলির সঙ্গে ১-১ ড্রয়ের পরে উদ্বেগ আরও বেড়ে গিয়েছিল।
আর্জেন্টিনীয়দের স্বস্তি দিয়ে দ্বিতীয় ম্যাচে উরুগুয়েকে হারিয়ে ঘুরে দাঁড়ালেন মেসিরা। তার পরে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। টাইব্রেকারে কলম্বিয়াকে হারিয়ে ফাইনালে উঠল আর্জেন্টিনা। নেপথ্যে সেই মেসি। রক্তাক্ত পা নিয়েই সেমিফাইনালে খেললেন। আর্জেন্টিনা অধিনায়কের মধ্যে যেন মারাদোনার সেই হার-না-মানা মানসিকতাই ফুটে উঠেছে। মেসির সম্পর্কে অদ্ভুত একটা প্রচার রয়েছে, আর্জেন্টিনা অধিনায়ক না কি সকলের সঙ্গে মেশেন না। নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। সেমিফাইনালে কলম্বিয়ার বিরুদ্ধে জয়ের পরে মেসি যে ভাবে উচ্ছ্বসিত হয়ে লাফিয়ে উঠেছিলেন, তা দলের প্রতি দায়বদ্ধতা না থাকলে সম্ভব নয়। চোটের কারণে আর্জেন্টিনা অধিনায়কের ফাইনালে খেলা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছিল। স্বস্তি ফিরল ব্রাজিলের বিরুদ্ধে মেসি খেলছেন জানার পরে।
মারাদোনার মতো দেশভক্ত আমি অন্তত দেখিনি। বুয়েনোস এয়ার্সে আমি যেখানে থাকি, সেখান থেকে ফুটবল ঈশ্বরের বাড়ি বড় জোর আধঘণ্টার পথ। গত ২৫ নভেম্বর মারাদোনার মৃত্যুর খবর শোনার পরেই সেখানে চলে গিয়েছিলাম। কোপা ফাইনালের আগেও বারবার মনে পড়ছে মারাদোনার কথা। করোনার কারণে, এ বার আর্জেন্টিনা দলের সঙ্গে যাঁরা যুক্ত, তাঁরাই শুধু ব্রাজিল গিয়েছেন। আমি নিশ্চিত মারাদোনা যদি বেঁচে থাকতেন, কোপা দেখতে কেউ ওঁর ব্রাজিল যাওয়া আটকাতে পারত না। দেখা যেত, আর্জেন্টিনার জাতীয় পতাকা শরীরে জড়িয়ে চিৎকার করে মেসি, অ্যাঙ্খেল দি মারিয়া, সের্খিয়ো আগুয়েরোদের উৎসাহ দিচ্ছেন ১৯৮৬-র বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক।
মারাদোনার এই জেদটাই এ বার কোপায় দেখছি মেসির মধ্যে। বিশ্বের সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনও ট্রফি জিততে না পারার যন্ত্রণা যেন আর্জেন্টিনা অধিনায়ককে ক্ষতবিক্ষত করে দিচ্ছে। আর্জেন্টিনার মানুষ মনে করেন অঘটন না ঘটলে ২৮ বছর পরে কোপায় চ্যাম্পিয়ন হবে আর্জেন্টিনা। প্রশ্ন উঠছে, একা মেসির পক্ষে কি দলকে চ্যাম্পিয়ন করা সম্ভব? আশা করব, দি মারিয়া, লাওতারো মার্তিনেসদের সাহায্য পাবেন অধিনায়ক। এই ম্যাচে ব্রাজিলের কাসেমিরোকে নিয়েই আমি সব চেয়ে চিন্তিত। এল ক্লাসিকোয় বারবার দেখেছি রিয়াল মাদ্রিদের এই তারকার একটাই লক্ষ্য থাকে, মেসিকে খেলতে না দেওয়া। কোপা ফাইনালেও তার ব্যতিক্রম হবে বলে মনে হয় না।
শুক্রবার সকালে মারাদোনার বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে মনে মনে নিজেকে বলছিলাম, হে ফুটবল ঈশ্বর আপনাকেও আটকানোর কম চেষ্টা করেননি বিপক্ষের কোচ, ফুটবলারেরা। আপনি সব প্রতিবন্ধকতা ভেঙে লক্ষ্যে পৌঁছেছিলেন। মেসিকেও আটকানো যাবে না।
(লেখক আর্জেন্টিনার ক্রীড়া সাংবাদিক)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy