Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪

দিনে একশো ইয়র্কার করত শামি, শোনালেন ছোটবেলার কোচ

বিশ্বকাপের আগে ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সফল হয়েছিলেন শামি। সুইংয়ে পরাস্ত করেছিলেন অ্যারন ফিঞ্চ, উসমান খোয়াজাদের। কিন্তু ডেথ ওভারে রান আটকাতে সমস্যায় পড়তেন।

আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে সুযোগ পেয়েই হ্যাটট্রিক করে শামি।—ছবি পিটিআই।

আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে সুযোগ পেয়েই হ্যাটট্রিক করে শামি।—ছবি পিটিআই।

ইন্দ্রজিৎ সেনগুপ্ত
শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০১৯ ০৪:১০
Share: Save:

শনিবার আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে সুযোগ পেয়েই হ্যাটট্রিক করে দেশকে জিতিয়েছেন ভারতীয় পেসার। তাঁর পরিসংখ্যান ৯.৫-১-৪০-৪। শেষ ওভারের প্রত্যেকটি বলই ছিল ইয়র্কার। বিশ্বকাপ অভিযানের আগে মোরাদাবাদে তাঁর ছোটবেলার কোচের কাছে কী ভাবে প্রস্তুতি নিয়েছেন ডান হাতি পেসার? কতটা পরিশ্রম করতেন? খোঁজ করল আনন্দবাজার।

রবিবার মোরাদাবাদ থেকে ফোনে শামির ছোটবেলার কোচ বদরুদ্দিন সিদ্দিকি বলেন, ‘‘আইপিএল শেষ হওয়ার পরে কয়েক দিন বিশ্রাম নেয়। কিন্তু বিশ্বকাপের প্রস্তুতির জন্য হাতে বেশি সময় ছিল না। কয়েক দিন বোলিং না করলেও নিয়মিত দু’বেলা ফিটনেস ট্রেনিং করত শামি। ভারী ওজন কখনওই বেশি তুলতে পছন্দ করত না। ছোট জায়গায় স্প্রিন্ট ও শক্তি বাড়ানোর ব্যায়াম করত।’’

বিশ্বকাপের আগে ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সফল হয়েছিলেন শামি। সুইংয়ে পরাস্ত করেছিলেন অ্যারন ফিঞ্চ, উসমান খোয়াজাদের। কিন্তু ডেথ ওভারে রান আটকাতে সমস্যায় পড়তেন। আইপিএলেও ছিলেন ভাল ফর্মে। ১৪ ম্যাচে নিয়েছিলেন ১৯ উইকেট। কিন্তু সেখানেও সমস্যা হয়েছিল ডেথ ওভারে রান আটকানোর ক্ষেত্রে। কী ভাবে মেটালেন সেই সমস্যা? বদরুদ্দিনের উত্তর, ‘‘মোরাদাবাদে কোকাবুরা বল পাওয়া যায় না। তাই দিল্লি থেকে সেই বল আনিয়ে দু’বেলা অনুশীলন চলত শামির। সকালে একশোটা ডেলিভারি নতুন বল দিয়ে করত। বিকেলে চলত ডেথ ওভারের প্রস্তুতি। একশোটা বল ইয়র্কার লেংথে করত। বাকি সময় দিত বৈচিত্র বাড়ানোর পিছনে। লক্ষ্য করলে বুঝবেন, আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ইয়র্কারের পাশাপাশি স্লোয়ার বাউন্সারগুলোও জায়গায় পড়ছিল শামির। এগুলো রপ্ত করার জন্য বাড়তি সময় দিত ও।’’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘‘ওয়ান ডে-তে ইনিংস প্রতি দু’টি নতুন বল ব্যবহারের পর থেকে বন্ধ হয়ে গিয়েছে রিভার্স সুইং। যা ছিল শামির অন্যতম শক্তি। তাই স্লোয়ার ও বাকি বৈচিত্র রপ্ত করতে না পারলে ভুবনেশ্বর, বুমরাদের টেক্কা দিয়ে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারত না।’’

১৬ বছর বয়সে যখন কলকাতা এসেছিলেন, ভাবতেও পারেননি একদিন নীল জার্সিটা পরে দেশকে সাফল্য এনে দেবেন। ডালহৌসি মাঠে তাঁর বোলিং দেখে টাউন ক্লাবে সুযোগ দিয়েছিলেন সিএবি-র এক শীর্ষকর্তা। সেখান থেকে অনূর্ধ্ব-২৩ দলে সুযোগ। নেটে শামিকে দেখেই রঞ্জি ট্রফি দলে নেওয়ার পরিকল্পনা করে নেন তৎকালীন অধিনায়ক লক্ষ্মীরতন শুক্ল। সেই লক্ষ্মী বলছিলেন, ‘‘সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায় তখন বাংলার নির্বাচক। ওঁকে বলি, শামিকে সিনিয়র দলে সুযোগ দিতে। প্রথম দিন নেটে দেখেই শামির গতিতে মুগ্ধ হই। বুঝে যাই অনেক দূর যাওয়ার ক্ষমতা ওর রয়েছে।’’ লক্ষ্মী আরও বলেন, ‘‘তখন আমরা ভাবতাম ডিন্ডাই বাংলার দ্রুততম বোলার। কিন্তু শামিকে দেখার পরে সেই ধারণা পাল্টে যায়। গতির পাশাপাশি দু’দিকে সাবলীল সুইং করাতে পারত। ক্রস সিমে বল করত না। যতই বল পুরনো হোক, বলের সিম (সেলাই) বরাবর সোজা রাখতেই পছন্দ করত।’’

পারিবারিক সমস্যায় যখন ক্রিকেট ছাড়ার কথা ভেবেছিলেন, ছাত্রকে বাধা দিয়েছিলেন বদরুদ্দিন। বললেন, ‘‘শামির সব চেয়ে প্রিয় ওর একমাত্র মেয়ে। ওর সঙ্গে থাকতে না পেরে খুব ভেঙে পড়েছিল। তখন ওকে বলি, এই দুর্বলতাই একদিন তোর শক্তি হয়ে উঠবে। সেটাই হয়েছে। ওজন কমিয়ে অন্য চেহারায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরে এসেছে শামি। এই হ্যাটট্রিকই ওর নিন্দুকদের প্রতি যোগ্য জবাব।’’

চোট সেরে গেলে প্রথম একাদশে ভুবনেশ্বর আবার ফিরবেন কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গেল শনিবার। শামির ছোটবেলার গুরু মনে করছেন, তাঁর প্রিয় ছাত্রকে আর হয়তো থামানো যাবে না।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy