বিমানের সঙ্গে উড়ছে ‘ইন্ডিয়া স্টপ জেনোসাইড অ্যান্ড ফ্রি কাশ্মীর’। লিডসের আকাশে এই ব্যানার ঘিরে তৈরি হল বিতর্ক। ছবি: রয়টার্স।
বিশ্বকাপে ভারত বনাম শ্রীলঙ্কা ম্যাচের মধ্যেই হঠাৎ কাশ্মীর নিয়ে ভারতের উদ্দেশে বার্তা। আর তা দেওয়া হল কি না আকাশপথে উড়তে থাকা বিমানের গায়ে লাগানো ব্যানারের মাধ্যমে!
এক বার নয়, একাধিক বার বিরাট কোহালি, রোহিত শর্মাদের মাথার উপরে চক্কর কাটতে থাকল সেই বিমান। যা নিয়ে উদ্বেগের বাতাবরণ তৈরি হয়েছে এবং এর প্রভাব সুদূরপ্রসারী হতে পারে বলেও অনেকে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। বিশ্বস্ত সূত্রের খবর, ভারতীয় বোর্ড থেকে ফোন করে খুব জোরের সঙ্গে আইসিসি-কে বলা হয়েছে, এই ঘটনার যথাযথ তদন্ত হতেই হবে।
শনিবার হেডিংলেতে ম্যাচ চলাকালীন দেখা যায়, মাঠের উপরে আকাশে চক্কর কাটছে একটি বিমান। আর তার লেজের দিক থেকে উড়ছে একটি ব্যানার। তাতে লেখা ‘জাস্টিস ফর কাশ্মীর’। অর্থাৎ, কাশ্মীর নিয়ে সুবিচার চাই। গোল করে মাঠের উপরে বেশ কয়েক বার চক্কর কেটে সেই বিমান অদৃশ্য হয়ে যায়। তত ক্ষণে ভারত-শ্রীলঙ্কা ম্যাচ শুরু হয়ে গিয়েছে এবং প্রায় ভর্তি গ্যালারিতে আশি শতাংশ দর্শক ভারতীয়।
সঙ্গে সঙ্গে তীব্র চাঞ্চল্য তৈরি হয়। সব চেয়ে বড় প্রশ্ন দেখা দেয়, এ রকম স্পর্শকাতর বার্তা লেখা ব্যানার নিয়ে হেডিংলের ঠিক উপরে বিমানটি উড়ল কী ভাবে? মাঠের কাছেই লিডস ব্র্যাডফোর্ড বিমানবন্দর। খেলা চলাকালীন অনেক বিমানই উড়ে গেল মাঠের উপরের আকাশ দিয়ে। সাধারণত, বিমানবন্দরের আশেপাশে কঠোরতম নিরাপত্তা থাকে। তার উপরে বিশ্বকাপের মতো ইভেন্ট বলে বাড়তি নিরাপত্তার বলয় থাকার কথা। সেই নিরাপত্তার বলয়কে ফাঁকি দিয়ে একটি বিমান বারবার কী ভাবে ভারতের উদ্দেশে রাজনৈতিক বার্তা নিয়ে আকাশে ঘুরতে থাকল, সেটাই এখন চর্চার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কী করে হেডিংলের আকাশে ঢুকে পড়ল বিমান? ক্রিকেটের নিয়ামক সংস্থা আইসিসি-র জবাব, ‘‘আমরা অত্যন্ত হতাশ। এর আগে পাকিস্তান বনাম আফগানিস্তান ম্যাচের সময়েও এ রকম বার্তা নিয়ে একটি বিমান উড়েছিল। তখনই পুলিশের কাছে আমরা অভিযোগ জানিয়েছিলাম। পশ্চিম ইয়র্কশায়ার পুলিশ তখন আমাদের বলেছিল, যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না। তার পরে এ দিনও ঘটল। আমরা হতাশ। খেলার মধ্যে রাজনৈতিক মদতপুষ্ট বার্তা বহন করাকে আমরা সমর্থন করছি না।’’
কয়েক দিন আগে এ মাঠেই রক্তারক্তি হয়ে যায় পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের ম্যাচে। গ্যালারিতে দু’দলের সমর্থকদের মধ্যে খণ্ডযুদ্ধ হয়। সেই ম্যাচেও আকাশে এ রকমই বার্তা নিয়ে উড়েছিল বিমান। সে দিন দেখা গিয়েছিল ‘জাস্টিস ফর বালোচিস্তান’ ব্যানার। তার পরেই গ্যালারিতে ঝামেলা শুরু হয়। এ দিন অবশ্য এক বার নয়, ভারতীয় সময় রাত ন’টার মধ্যে (ইংল্যান্ডের সময় সাড়ে চারটে) তিন বার আকাশে চক্কর মারে ওই বিমান। এবং, তিন বারই নতুন নতুন বার্তা লেখা উড়তে দেখা যায় বিমানের লেজ থেকে।
প্রথমে লেখা ছিল ‘জাস্টিস ফর কাশ্মীর’। তখন ব্যাট করতে নেমে শ্রীলঙ্কা বেকায়দায়। যশপ্রীত বুমরারা যখন স্লগ ওভার বোলিং করছেন, বিমানটিকে দ্বিতীয় বার দেখা যায় হেডিংলের আকাশে। এ বার আরও সরাসরি, আরও কড়া বার্তা লেখা— ‘ভারত, খুনোখুনি বন্ধ করো। কাশ্মীরকে স্বাধীন করতে হবে।’ এর পর রোহিত শর্মা এবং কে এল রাহুল যখন ভারতকে অনায়াস জয়ের দিকে এগিয়ে দিচ্ছেন, মোটামুটি ২৩ ওভার নাগাদ বিতর্কিত বিমান ফিরে আসে। এ বার ব্যানারে লেখা— ‘হেল্প এন্ড মব লিঞ্চিং ইন ইন্ডিয়া’। অর্থাৎ কি না, ‘ভারতে গণহত্য বন্ধ করতে সাহায্য করুন’।
তখন ব্যাট করছেন কে এল রাহুল। নন-স্ট্রাইকার প্রান্তে দাঁড়িয়ে রোহিত শর্মা আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখতে থাকেন বিমানটিকে। ভারতের দুই ওপেনারের উপর এই ঘটনার কোনও প্রভাব পড়েছে বলে অবশ্য মনেই হল না। তাঁরা দুর্ধর্ষ ফর্মে চালিয়েই গেলেন। শ্রীলঙ্কার ২৬৪-৭ স্কোরের জবাবে ৪৩.৩ ওভারেই সাত উইকেটে জিতে গেল ভারত। আর ভিআইপি বক্সে উঠে দাঁড়িয়ে হাততালি দিতে থাকলেন অনুষ্কা শর্মা। মাঠে তখন দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যানের এক জন তাঁর স্বামী বিরাট কোহালি। অন্য জন হার্দিক পাণ্ড্য। দিনটা যদিও ফের সেই রোহিত শর্মার। চলতি বিশ্বকাপে পঞ্চম সেঞ্চুরি করে নতুন বিশ্বরেকর্ড গ়ড়ে ফেললেন তিনি। সব মিলিয়ে ছ’টি সেঞ্চুরি করে স্পর্শ করলেন সচিন তেন্ডুলকর, রিকি পন্টিংয়ের সব চেয়ে বেশি কাপ সেঞ্চুরির রেকর্ডকে।
যদিও রোহিত রোশনাই ছাপিয়ে এ দিনের আলোচনায় হেডিংলের আকাশে উড়তে থাকা বিমান এবং তাঁর পরিচালক। কে বা কারা ভারতের প্রতি এমন বার্তা নিয়ে উড়ছিল? আইসিসি-র দাবি, তারা পশ্চিম ইয়র্কশায়ার পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে আর্জি জানিয়েছে, দ্রুতই যেন বিমানচালকদের খোঁজ করা হয়। তবে নালিশ করেও সুরাহা কিছু হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ থাকছে। স্থানীয় কয়েক জনের কথায়, হেডিংলের আশেপাশের অঞ্চল এবং ইয়র্কশায়ারে পাক বংশোদ্ভূতরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। প্রাথমিক খোঁজখবরে অনুমান, এখানকার কেউ এমন কাণ্ড বাধিয়েছে। ভারতীয় বোর্ডের ফোনে ঘটনার গুরুত্ব আরও বেড়ে গিয়েছে। কোহালিদের বোর্ড যদি চাপ দিতেই থাকে, তা হলে ইয়র্কশায়ার পুলিশকে সক্রিয় ভূমিকা নিতে হতে পারে।
রোহিতের সেঞ্চুরির ঠিক আগে চতুর্থ বারের জন্য ফিরে এল বিমানটি। এ বার তার বার্তা— ‘লাভ ক্রিকেট, লাভ মুমতাজ-লিডস’। কেউ কেউ তা দেখে বলতে শুরু করলেন, মুমতাজ নামে এখানে একটি জনপ্রিয় রেস্তরাঁ রয়েছে। আরও জানা গেল, তড়িঘড়ি ব্যবস্থা নিয়ে ম্যাঞ্চেস্টার এবং বার্মিংহামে সেমিফাইনাল চলার সময় মাঠের উপরের আকাশে বিমান চলাচলই সম্পূর্ণ বন্ধ রাখার কথা হয়েছে। আইসিসি সূত্রের খবর, এই দুই শহরেরই পুলিশ রাজি হয়েছে খেলা চলাকালীন মাঠের উপরের আকাশপথে বিমান চলাচল বন্ধ রাখার জন্য। ক্রিকেট খেলার জন্য আকাশপথ বন্ধ থাকার ঘটনা বিরল।
জানা গিয়েছে, দু’টো প্রশ্ন আইসিসি-র কাছে তুলতে শুরু করেছে কোহালিদের বোর্ড। এক) বিশ্বকাপের ম্যাচ যেখানে হচ্ছে, তার আকাশপথে কী ভাবে এমন বার্তা নিয়ে উড়তে পারল বিমান? তার মানে তো বিমান নিয়ে যে কেউ বড় কোনও দুর্ঘটনাও ঘটিয়ে দিতে পারত। বিশ্বকাপে নিরাপত্তার বিষয় নিয়ে এত উদাসীন মনোভাব কেন থাকবে নিয়ামক সংস্থার? দুই) মহেন্দ্র সিংহ ধোনি গ্লাভসে সেনাবাহিনীর বিশেষ চিহ্ন লাগিয়ে খেলায় তাঁর গ্লাভস খুলিয়ে দিলে। তা হলে সকাল থেকে এমন রাজনৈতিক বার্তা নিয়ে বিমান উড়ছে দেখেও সন্ধে পর্যন্ত কোনও ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হল না কেন?
খেলার মাঠে মাথার উপর দিয়ে বিশেষ বার্তা-সহ বিমান এর আগেও চক্কর কেটেছে। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের কোচ জোসে মোরিনহোকে সরানোর দাবি তোলা হয়েছিল আকাশপথে তুলে ধরা এমন ব্যানারে। কিন্তু রাজনৈতিক বার্তা-সহ স্পর্শকাতর বিষয়ের দিকে লোকের নজর টানার জন্য আকাশপথের ব্যবহার নজিরবিহীন।
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy