লিডসে রোহিত-রাহুলের ম্যাজিক। ছবি: এপি।
রোহিত গুরুনাথ শর্মা এখন যা ধরছেন, তাতেই সোনা ফলাচ্ছেন। নতুন রেকর্ড গড়ছেন, তাঁর ব্যাটের দাপটে ভাঙতে বসেছে পুরনো সব রেকর্ড। শনিবার শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে সেঞ্চুরি করে বিশ্বরেকর্ড গড়লেন ‘হিটম্যান’।
এক বিশ্বকাপে পাঁচ-পাঁচটি সেঞ্চুরি করার বিরল রেকর্ড এখন রোহিতের ঝুলিতে। চলতি বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি। তার পরে পাকিস্তান, ইংল্যান্ড, বাংলাদেশের বিরুদ্ধেও সেঞ্চুরির ধারা অব্যাহত ছিল। এ দিন শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে রোহিতের ব্যাট কথা বলল। ১০৩ রান করে ফিরে যাওয়ার আগে লিডসের সর্বত্র তিনি ছড়িয়ে দিলেন মণিমুক্তো। তাঁর ব্যাটিং রোশনাইয়ে মুগ্ধ ক্রিকেটবিশ্ব।
বাংলাদেশের বিরুদ্ধেই কুমার সঙ্গকারাকে ছুঁয়েছিলেন রোহিত। চার বছর আগের বিশ্বকাপে পর পর চারটি সেঞ্চুরি করেছিলেন দ্বীপরাষ্ট্রের তারকা উইকেটকিপার। এ দিন অন্য গ্রহের বাসিন্দা হয়ে গেলেন রোহিত। এক বিশ্বকাপে পাঁচটা সেঞ্চুরি করায় তাঁর আশপাশে কেউ নেই। চলতি বিশ্বকাপে ৬৪৭ রান করে রোহিত এখন সবার উপরে। সচিন তেন্ডুলকরের ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলছেন তিনি। ২০০৩ বিশ্বকাপে ‘মাস্টার ব্লাস্টার’ ৬৭৩ রান করেছিলেন। সেই রেকর্ডও এখন ভাঙনের মুখে।
আরও পড়ুন: বিশ্বকাপে ভারত বনাম শ্রীলঙ্কা
আরও পড়ুন: দলে জোড়া পরিবর্তন, লিডসে প্রথমে ফিল্ডিং করবে ভারত
বিশ্বকাপে মোট ছ’টি সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন সচিন। রোহিতও ছুঁয়ে ফেললেন তাঁর ‘আইডল’কে। চার বছর আগে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সেঞ্চুরি করেছিলেন ভারতের সহ অধিনায়ক। আর এই বিশ্বকাপে তো ইতিহাস গড়লেন— পাঁচ-পাঁচটি সেঞ্চুরি। রোহিতের পাশাপাশি এ দিন লোকেশ রাহুলও সেঞ্চুরি করলেন। শিখর ধওয়ন চোট পাওয়ার পরে রাহুলকে ওপেন করতে পাঠানো হয়েছিল। আগের ম্যাচগুলোয় শুরুটা ভাল করলেও এতদিন বড় রান পাচ্ছিলেন না রাহুল। এ দিন সেঞ্চুরি পেলেন। এগিয়ে আসছে সেমিফাইনাল। তার আগে বিরাট কোহালিকে নিশ্চিত করলেন রাহুল। নিজেও পেলেন দারুণ আত্নবিশ্বাস। মালিঙ্গার বলে ১১১ রানে যখন ফেরেন, তত ক্ষণে ভারতের সাজঘরে জয়ের গন্ধ ম ম করছে।
শ্রীলঙ্কার করা ২৬৪ রানের জবাব দিতে নেমে রোহিত ও রাহুল শুরুটা দুরন্ত করেন। ওপেনিং জুটিতে ১৮৯ রান জোড়েন দুই ভারতীয় ওপেনার। এখানেই তো অর্ধেক রাজ্যপাট জেতা হয়ে গিয়েছিল। বাকি কাজটা সারলেন বিরাট কোহালি-সহ বাকিরা। ৩৯ বল বাকি থাকতে সাত উইকেটে ম্যাচ জিতে নিল ভারত। এরকম দাপুটে জয়ই তো দেখতে চান দেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা।
লিডসে শুরুটা দারুণ করেছিলেন ভারতীয় বোলাররা। দ্রুত শ্রীলঙ্কার চার-চারটি উইকেট তুলে নিয়ে ধাক্কা দিয়েছিলেন বুমরা-পাণ্ড্য-জাডেজারা। ভারতীয় বোলারদের দাপটে তাসের ঘরের মতো তখন ভেঙে পড়ার অবস্থা শ্রীলঙ্কার। কত রানে দ্বীপরাষ্ট্রের ইনিংস শেষ হয়ে যাবে, তা নিয়ে চলছে জল্পনা। বিপর্যয় থেকে শ্রীলঙ্কাকে উদ্ধার করলেন বহু যুদ্ধের সৈনিক অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজ। চোট-আঘাত থাবা বসিয়েছিল তাঁর ক্রিকেটজীবনে। এ দিন ভারতের বিরুদ্ধেই নিজের সেরাটা দিলেন ম্যাথিউজ। পাণ্ড্যকে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে সেঞ্চুরি করেন। ম্যাথিউজের ব্যাটিং দেখে গ্যালারিতে উপস্থিত সনৎ জয়সূর্য, অরবিন্দ ডি'সিলভারা দারুণ খুশি। বাকিদের কাছ থেকেও তো এমনই ব্যাটিং চেয়েছিলেন তাঁরা। ১৯৯৬ সালের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা এখন অতীতের ছায়া। দলে তারকা ক্রিকেটারের সংখ্যা কম। অথচ একসময়ে তো শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটে ছিল তারকার মেলা। জয়সূর্য, ডি’ সিলভা, অর্জুন রণতুঙ্গা, মুথাইয়া মুরলীধরন, চামিণ্ডা ভাস, মাহেলা জয়বর্ধনে, কুমার সঙ্গাকারা—কত নাম। কালের নিয়মে শক্তি হারিয়েছে দ্বীপরাষ্ট্রের ক্রিকেট।
এ দিন টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক দিমুথ করুণারত্নে। শুরু থেকেই বিপর্যয় নামে শ্রীলঙ্কার শিবিরে। করুণারত্নেকে ১০ রানে ফিরিয়ে প্রথম ধাক্কাটি দেন যশপ্রীত বুমরা। শ্রীলঙ্কার রান তখন মাত্র ১৭। এরপর কুশল পেরেরাও (১৮) বুমরার শিকার হন। ফার্নান্দো (২০) ও মেন্ডিসকে (৩) দ্রুত ফিরিয়ে দেন পাণ্ড্য ও জাডেজা। তার পরে ম্যাথিউজ ও থিরিমানে শ্রীলঙ্কার ইনিংস গোছানোর কাজ শুরু করেন। ১২৪ রানের পার্টনারশিপ গড়েন দু’ জনে। থিরিমানে ব্যক্তিগত ৫৩ রানে কুলদীপ যাদবের বলে আউট হলেও ম্যাথিউজ অবিচলিত থেকে যান। ১১৩ রানে বুমরার বলেই আউট হন তিনি। শুরুতে শ্রীলঙ্কার চার-চারটি উইকেট দ্রুত তুলে নিলেও ৫০ ওভারের শেষে শ্রীলঙ্কা করল ৭ উইকেটে ২৬৪ রান। ম্যাথিউজ রুখে না দাঁড়ালে এই রানটাও করতে পারত না শ্রীলঙ্কা।
এ দিন ভারতীয় দলে জোড়া পরিবর্তন আনেন বিরাট কোহালি। বিশ্রাম দেওয়া হয় যুজবেন্দ্র চহালকে। রবীন্দ্র জাডেজা বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে নামলেন। প্রথম ম্যাচেই উইকেট পান তিনি। মহম্মদ শামির জায়গায় কুলদীপ যাদবকে প্রথম একাদশে সুযোগ দেওয়া হয়। ভুবনেশ্বর কুমার নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। তাঁকে খুব সহজেই খেলেন শ্রীলঙ্কার ব্যাটসম্যানরা।
বিশ্বকাপ থেকে আগেই ছিটকে গিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। মালিঙ্গাও খেলে ফেললেন তাঁর শেষ বিশ্বকাপ ম্যাচ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: শ্রীলঙ্কা (৫০ ওভার) ২৬৪/৭।
ভারত (৪৩.৩ ওভার) ২৬৫/৩।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy