Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪

ধোনি ভারতের তুরুপের তাস, সেরা ফর্ম নিয়ে বিশ্বকাপে এসেছে

ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, যে দল চ্যাম্পিয়ন হবে, তাদের শারীরিক এবং মানসিক ভাবে সব চেয়ে শক্তিশালী হতে হবে। বিশেষ করে এখনকার দিনে ফিটনেসের উপর জোর অনেক বেড়ে গিয়েছে।

ওয়াসিম আক্রম
শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০১৯ ০৩:১২
Share: Save:

ধারাভাষ্যকার হিসেবে ইংল্যান্ডে বিশ্বকাপ কভার করতে এসে আমার ১৯৯২-এর কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। সে বারে যদিও বিশ্বকাপ হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ায়। আমরা চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম। কিন্তু মনে পড়ে যাওয়ার কারণ বিশ্বকাপের ফর্ম্যাট। সে বারের মতোই ইংল্যান্ডেও সকলের সঙ্গে সকলের খেলার ফর্ম্যাট থাকছে।

ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, যে দল চ্যাম্পিয়ন হবে, তাদের শারীরিক এবং মানসিক ভাবে সব চেয়ে শক্তিশালী হতে হবে। বিশেষ করে এখনকার দিনে ফিটনেসের উপর জোর অনেক বেড়ে গিয়েছে। তাই আমার মনে হচ্ছে, ইংল্যান্ডে যারা কাপ জিতবে তারা নিশ্চয়ই খুব ফিট দলও হবে। শারীরিক সক্ষমতায় যারা পিছিয়ে, তাদের কাপ জেতার সক্বপ্ন না দেখাই ভাল। ঠিক সময়ে ফর্মের চূড়োয় ওঠাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ হতে যাচ্ছে। সেই চারটে দলই সেমিফাইনালে খেলবে, যারা সব চেয়ে বেশি ধারাবাহিকতা দেখাবে। একই সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে, প্রথমে দু’একটা ম্যাচ হেরে গেলেই সেই দল ছিটকে যাবে না। যত সময় এগোবে, তত ছন্দ বাড়তে থাকলে ভাল। শুরুতে সর্বস্ব দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লাম আর পরে গিয়ে তীব্রতা হারিয়ে ফেললাম, সেটা করলে চলবে না। আগ্রাসন দরকার কিন্তু নিয়ন্ত্রিত আগ্রাসন রেখে এগোতে হবে। ধীরস্থির, ঠান্ডা মাথায়। হড়বড় করা যাবে না একদম। যে-হেতু এই ফর্ম্যাটে সব দলই ভাল, কখনওই ধরে নেওয়া যাবে না কারা সেমিফাইনালে যাচ্ছেই।

ইংল্যান্ড অবশ্য সকলের মতেই ফেভারিট। আমারও মনে হচ্ছে, ওরা প্রত্যেক দিন যেন নিজেদের ছাপিয়ে যাচ্ছে। এত বার ওরা কাপ জেতার কাছে এসেছে যে, ঘরের মাঠে এ বারে অইন মর্গ্যানদের জন্য স্লোগানই তৈরি হয়ে গিয়েছে, ‘নাউ অর নেভার’। সত্যিই এ বার না হলে আর কখনও কাপই জেতা হয়তো হবে না ইংল্যান্ডের। ওদের দলে সব কিছু আছে। ব্যাটিংয়ে অবিশ্বাস্য গভীরতা রয়েছে। পাকিস্তানের সঙ্গে ওয়ান ডে সিরিজে দেখছিলাম, এগারো নম্বরে আদিল রশিদ ব্যাট করছিল। যার কি না প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে দশটা সেঞ্চুরি রয়েছে। বেন স্টোকসের মতো অলরাউন্ডার রয়েছে। ঘণ্টায় ১৫০ কিলোমিটার গতিতে বল করার মতো পেসার রয়েছে। ভাল স্পিনার আছে। এত ভাল অলরাউন্ড টিম আমি খুব কম দেখেছি। সত্যিই এ বার না কাপ জিতলে আর কবে ওরা জিতবে!

আমার মতে, হট ফেভারিট ভারতও। মিডল অর্ডার নিয়ে ওদের কিছুটা সমস্যা দেখা দিচ্ছে মাঝেমধ্যে। কোহালি, রোহিত, শিখরের উপর বেশি নির্ভর করে থাকে ভারতের ব্যাটিং। সে দিক দিয়ে দ্বিতীয় প্রস্তুতি ম্যাচে কে এল রাহুলের সেঞ্চুরি খুব উজ্জ্বল দিক ভারতের জন্য। কারণ, চার নম্বর নিয়ে চিন্তাটা আপাতত আর করতে হচ্ছে না।

আমার মতে, এখনও ভারতের এক্স-ফ্যাক্টর হতে পারে ধোনি। ছেলেটাকে যত দেখি, তত মুগ্ধ হই। পাঁচ বা ছয় নম্বরে ব্যাট করতে নেমে ও অনেক তফাত গড়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। যে ভাবে উইকেটের পিছন থেকে ও অধিনায়ক বিরাটকে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে, সেটাও দেখার মতো। আমার সব চেয়ে ভাল লাগছে ব্যাটসম্যান ধোনিকে দেখে। সেই আগের মতো ওর ব্যাট যেন বলকে শাসন করছে। দারুণ ছন্দে রয়েছে। প্রস্তুতি ম্যাচে আগের দিন সেঞ্চুরি করে বুঝিয়ে দিল, চাপের মুখে এখনও কতটা ভরসা দিতে পারে ওর ব্যাট। সেই সঙ্গে এটাও প্রমাণ করে দিল যে, সমালোচকরা যা-ই বলুক না কেন, এখনও ক্রিকেটকে অনেক কিছু দেওয়ার আছে ওর। এই সেঞ্চুরিটা ধোনির আত্মবিশ্বাস আরও বাড়িয়ে দেবে। আমার তো মনে হচ্ছে, সেরা ফর্ম নিয়ে বিশ্বকাপে এসেছে ধোনি।

ফেভারিটদের মধ্যে আমি অস্ট্রেলিয়াকেও ধরছি। আমার মতে এই মুহূর্তে বিশ্ব ক্রিকেটে সেরা বোলিং আক্রমণ রয়েছে ওদের। সঙ্গে দারুণ বৈচিত্র। লেগস্পিনার, অফস্পিনার, এক্সপ্রেস গতির বোলার, বাঁ-হাতি পেসার আছে, ডান-হাতি পেসার— কী নেই! বাঁ-হাতি মিচেল স্টার্ক এবং ডান-হাতি প্যাট কামিন্স যে কোনও অধিনায়কের জন্য স্বপ্নের পেস জুটি। ওদের অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ বেশ ভাল ফর্মে রয়েছে। এর সঙ্গে যোগ করুন স্মিথ এবং ওয়ার্নারের ফিরে আসা। কয়েক দিন আগেও সকলে বলাবলি করছিল, বল-বিকৃতি বিতর্কের জেরে অস্ট্রেলিয়া কত দুর্বল দল হয়ে গিয়েছে। রাতারাতি সে সব আলোচনা উধাও, এখন সকলে ওদের ফেভারিট ধরছে। এর পিছনে বড় কারণ স্মিথ-ওয়ার্নারের ফিরে আসা। সব চেয়ে বড় ব্যাপার, এক বছর নির্বাসিত থাকার পরে ওরা নিজেদের ফের প্রমাণ করার জন্য ক্ষুধার্ত থাকবে।

আমার মতে বিশ্বকাপের সম্ভাব্য চতুর্থ সেমিফাইনালিস্ট হতে পারে নিউজ়িল্যান্ড। ওদের বোলিং বিভাগ ভাল। প্রস্তুতি ম্যাচে ভারতকে হারিয়ে ওরা প্রমাণ করেছে, অঘটন ঘটাতে পারে। নিউজ়িল্যান্ডও কখনও বিশ্বকাপ জেতেনি, তাই বাড়তি তাগিদ নিয়ে খেলতে নামবে।

পাকিস্তান এই মুহূর্তে রীতিমতো সংগ্রাম করছে। শেষ দশটি ম্যাচ হেরে ওরা বিশ্বকাপে খেলতে নেমেছিল। যে বোলিং এক সময় পাকিস্তানের গর্ব ছিল, একের পর এক ম্যাচ জিতিয়েছে, সেটাই এখন ধুঁকছে। ওদের সব চেয়ে সমস্যায় ফেলবে মাঝের ওভারে উইকেট তুলতে না পারার ব্যর্থতা। ইমাদ ওয়াসিম মাঝের দিকে উইকেট তোলার মতো স্পিনার নয়। ও রান আটকে রাখতে পারে কিন্তু বল বেশি টার্ন করাতে পারে না। পাকিস্তানের ফাস্ট বোলারদের দেখেও ভরসা পাওয়া যাচ্ছে না। আমি একটা তথ্য হাতে পেলাম। ২০১৬-তে পাকিস্তানের পেসারদের ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটার গতিতে বল করার শতকরা হার ছিল ৩৫ শতাংশ। আর সেটাই ২০১৯-এ এসে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১০ শতাংশে। এই পরিসংখ্যান থেকে পরিষ্কার, পাকিস্তানের পেসাররা কতটা গতি হারিয়েছে। অথচ, বয়সেও যে ওরা খুব বুড়ো হয়ে গিয়েছে, এমন নয়। জানি না কী করে এতটা গতি হারাল ওরা। ইংল্যান্ডে যদি ব্যাটিং সহায়ক পিচ হয়, তা হলে মহম্মদ আমিররা দ্রুত উন্নতি করতে না পারলে পাকিস্তান সমস্যায় পড়বে। (৩৬০ কর্পোরেট রিলেশনস)

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy