ছবি রয়টার্স।
মঙ্গলবার দুপুরে শিখর ধওয়নের চোটের খবরটা পেয়ে একটা ঘটনার কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল।
ঘটনাটা আমাকে শুনিয়েছিল, গুন্ডাপ্পা বিশ্বনাথ। ১৯৭৬ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে পোর্ট অব স্পেনে আমরা চারশোর ওপর রান তাড়া করে টেস্ট জিতেছিলাম। ভিশি সেঞ্চুরি করেছিল। কিন্তু ওই ইনিংস খেলার সময় কোনও এক ফাস্ট বোলারের বলে ভিশির হাত ভেঙে যায়। ওই অবস্থায় ভিশি ব্যাট করে যায়। পরে ও বলেছিল, ‘‘বল লাগার পরে আমার হাতটা কাঁপছিল। তখনই বুঝে যাই, বড় কিছু হয়েছে।’’ পরে ড্রেসিংরুমে ফিরে দেখা যায়, হাত এতটাই ফুলে গিয়েছে যে গ্লাভস কেটে ফেলতে হয়। ভিশি শেষ টেস্টে কোনও মতে নেমেছিল। প্রথম ইনিংসে ব্যাট করলেও দ্বিতীয় ইনিংসে আর নামেনি।
ধওয়নের চোটের গুরুত্ব কতটা, এত দূরে বসে বোঝা সম্ভব নয়। কিন্তু টিম ম্যানেজমেন্ট যখন ওকে রেখে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তখন মনে হচ্ছে ওরা আশাবাদী, দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবে। খবর যা শুনলাম, বাঁ হাতের হাড়ে চিড় ধরার কারণে নাকি তিন সপ্তাহ বাইরে থাকতে হতে পারে ধওয়নকে। কিন্তু মনে রাখবেন, ইংল্যান্ডের চিকিৎসা ব্যবস্থায় আরও দ্রুত ফল পাওয়া যেতে পারে। যে কারণে আমাদের ক্রিকেটারদের চোট লাগলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ওই ইংল্যান্ডেই পাঠানো হয়। সে রকম হলে হয়তো আরও তাড়াতাড়ি মাঠে ফিরতে পারে ধওয়ন।
সেটা পরের কথা। ধরে নিচ্ছি, তিন সপ্তাহই মাঠের বাইরে থাকতে হবে ধওয়নকে। তার মানে চার-থেকে পাঁচটা ম্যাচ বাইরে। অর্থাৎ ও আবার যখন মাঠে ফিরবে, ভারতের তখন প্রায় সেমিফাইনালে পৌঁছে যাওয়ার কথা। এ বার প্রশ্নটা হচ্ছে, ওকে রেখে দেওয়াটা কি ঠিক সিদ্ধান্ত হল? নাকি ধওয়নকে দেশে ফেরত পাঠিয়ে ঋষভ পন্থের মতো তরুণকে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়াটাই ঠিক হত?
আমি পরিষ্কার বলছি, ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট ঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছে ধওয়নকে রেখে দিয়ে। কেন এ কথা বলছি? এক নম্বর, ধওয়ন দারুণ ছন্দে আছে। দুই, বড় ম্যাচ খেলার মানসিকতা। ক্রিকেট খেলাটা অনেকটাই মানসিক। ধওয়ন আত্মবিশ্বাসী যে, আইসিসি প্রতিযোগিতায় খেলতে নামলেই ভাল করবে। যে আত্মবিশ্বাসের প্রতিফলন ঘটে ওর ব্যাটিংয়ে। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচে আমরা সেটাই দেখেছি। ওই ‘জোশ’টা ছিল বলেই চোট লাগা সত্ত্বেও সেঞ্চুরি করে মাঠ ছেড়েছে। তিন, রোহিত শর্মা-ধওয়নের ডান হাতি-বাঁ হাতি জুটি। যা বোলারদের লাইন-লেংথে সমস্যা করে দেয়। পন্থ এলে ও তো আর ওপেন করবে না। ওপেন করবে কে এল রাহুল। সে ক্ষেত্রে ডান হাতি-বাঁ হাতি জুটি ভেঙেই যাবে। চার, ইংল্যান্ডের পরিবেশে ধওয়নের সফল হওয়া। আমার মনে হয়, এই কারণগুলোর কথা মাথায় রেখেই ওকে রেখে দেওয়া হল।
এ বার প্রশ্ন হচ্ছে, ধওয়নের কী কী সমস্যা হতে পারে? সব চেয়ে বড় সমস্যা হবে, ও যখন মাঠে ফিরবে তখন কিন্তু বিপক্ষ ফাস্ট বোলারেরা ধওয়নের চোটের জায়গা লক্ষ্য করেই বল করবে। অর্থাৎ ওকে শর্ট বল দিয়ে যাবে। আমরা যেটা দক্ষিণ আফ্রিকার হাসিম আমলা এবং অস্ট্রেলিয়ার উসমান খোয়াজার ক্ষেত্রে দেখেছি। দু’জনেই শর্ট বলে আহত হয়েছিল। এবং যখন মাঠে ফেরে ওদের টানা শর্ট বল করে যাওয়া হয়। আমলা এমনিতে টেকনিক্যালি খুব শক্তিশালী। কিন্তু চোট লাগার পরে দেখলাম শুরুতেই ব্যাকফুটে চলে যাচ্ছে শর্ট বল আসবে এই ভয়ে। আউটও হচ্ছে শর্ট অব লেংথ বলে ব্যাট বাড়িয়ে দিয়ে। রীতিমতো অস্বস্তিতে রয়েছে শর্ট বলের বিরুদ্ধে।
সপ্তাহ তিনেক বাদে আবার যখন ব্যাট করতে নামবে ধওয়ন, ওকে এই মানসিক বাধা জয় করতে হবে। ফিরতে হবে পুরনো ছন্দে। যার জন্য সবার আগে প্রয়োজন মানসিক কাঠিন্য। আর এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা নিতে পারে দলের কোচ রবি শাস্ত্রী। আমি নিশ্চিত, শাস্ত্রী মানসিক ভাবে তরতাজা রাখবে ধওয়নকে।
আমরা এখন অপেক্ষা করে থাকব আগামী ক’দিন ভারতীয় ক্রিকেট কোন দিকে মোড় নেয়, তা দেখার জন্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy