Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

ছন্দ ধরে রাখতে বিশ্রামই অস্ত্র ভারতীয় দলের

ইংল্যান্ডে চলতি বিশ্বকাপেও এক ছবি। আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ম্যাচের আগের দিনও অনুশীলন করেনি ভারতীয় দল। অনেকেই হিমশৈলে টাইটানিকের ধাক্কা খাওয়ার আশঙ্কায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।

নজরে: বিশ্রামই মাঠে তরতাজা করে তোলে বুমরাদের। ফাইল চিত্র

নজরে: বিশ্রামই মাঠে তরতাজা করে তোলে বুমরাদের। ফাইল চিত্র

চিন্ময় রায়
শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০১৯ ০৪:২৭
Share: Save:

এক বছর আগে দক্ষিণ আফ্রিকায় দ্বিতীয় টেস্টে হারের পরে বিরাট কোহালিদের তিন দিন ছুটি দিয়েছিলেন রবি শাস্ত্রী। অনেকেই বিস্মিত হয়েছিলেন ভারতীয় ক্রিকেট দলের হেড কোচের সিদ্ধান্তে। টেস্টে হারের পরে অনুশীলন না করে ছুটি!

ইংল্যান্ডে চলতি বিশ্বকাপেও এক ছবি। আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ম্যাচের আগের দিনও অনুশীলন করেনি ভারতীয় দল। অনেকেই হিমশৈলে টাইটানিকের ধাক্কা খাওয়ার আশঙ্কায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। কোথায় ম্যাচের আগে অনুশীলন করবেন ক্রিকেটারেরা, তা না করে হোটেলে সবাই প্লে-স্টেশন খেলতে ব্যস্ত!

পারফরম্যান্সই শেষ কথা: রক্ষণশীলরা যতই প্রশ্ন তুলুন, পারফরম্যান্স ধরে রাখার জন্য বিশ্রামের কোনও বিকল্প নেই। এর জন্য বিখ্যাত ফিটনেস গুরু তুদোর বম্পার শরণাপন্ন হওয়ার দরকার নেই।

জুন ২০১৮ থেকে জুন ’১৯—বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচের আগে পর্যন্ত এক বছরে ভারতীয় দল খেলেছে ১২টি টেস্ট। ওয়ার্ম আপ ম্যাচ মিলিয়ে মোট ওয়ান ডে খেলেছে ২৪টি। টি-টোয়েন্টি ১৪টি। শুধু তাই নয়। অধিকাংশ ক্রিকেটারই একসঙ্গে আইপিএলের একাধিক ম্যাচ খেলেছে। অর্থাৎ, ৩৬৫ দিনের মধ্যে ১১৪ দিনই মাঠে কাটিয়েছেন রোহিত শর্মারা। অঙ্কের হিসেবে ৩.২০ দিন অন্তর ম্যাচ খেলার ধকল। তত্ত্বের বিচারে কাজ ও বিশ্রামের অনুপাত ১ : ৩। এই পরিস্থিতিতে বিশ্রাম নিতেই হবে। না হলেই বিপর্যয়।

পরিশ্রমের মাত্রায় নজরদারি: ম্যাচের সংখ্যা, অনুশীলন থেকে ট্র্যাভেল ডে— সব তথ্যই ট্রেনার শঙ্কর বাসুর ল্যাপটপে রয়েছে। এ বার প্রত্যেক ব্যাটসম্যান বা বোলারের ফিটনেসের মান, চোট-আঘাতের ইতিহাস দেখে ফিজিয়ো প্যাট্রিক ফারহার্টের সঙ্গে আলোচনা করে অনুশীলন সূচি তৈরি করেন। ২০০৭ সাল পর্যন্ত ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক-মরসুম কন্ডিশনিং ক্যাম্প হত জুন মাসে। আইপিএলের জন্য তা এখন সম্ভব নয়। এই কারণেই প্রত্যেকের জন্য আলাদা ভাবে অনুশীলনের সূচি তৈরি করা হয়।

বোলিং কোচ বি. অরুণ ভিডিয়ো অ্যানালিস্টের কাছ থেকে যে তথ্য পেয়েছেন, তাতে দেখা যাচ্ছে জুন ২০১৮ থেকে জুন ’১৯— যশপ্রীত বুমরা ২০৭৬টি বল করেছেন। তিনি ওঁর বোলিং অ্যাকশন ও রান আপ বিশ্লেষণ করেছেন। শঙ্করের সঙ্গে আলোচনা করেই অরুণ ঠিক করেন, বিশ্বকাপে বুমরাকেও সেরা ফর্মে পেতে হলে মাঝে মাঝে বিশ্রামে পাঠাতেই হবে। কারণ, বাউন্সার ও ইয়র্কার দেওয়ার সময় পরিশ্রম অনেক বেশি হয়। যা সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ওভার পিছু দু’টো দিতেই হয়। এর সঙ্গে রয়েছে গড়ে ১৪৫ কিলোমিটার বেগে বল করা। তাই বিশ্রাম না দিলে বুমরাকে ছন্দে পাওয়া যাবে না। এই কারণেই গত এক বছরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজ ও টি-টোয়েন্টি ছাড়াও নিউজ়িল্যান্ডে পাঁচটি ওয়ান ডে-তে বিশ্রাম দেওয়া হয়েছিল বুমরাকে।

বিশ্রামের নেপথ্যে আরও একটা যুক্তি, বোলারদের তরতাজা রাখা। ম্যাচের আগের দিন নেটে বল করলে বোলারেরা আরও ক্লান্ত হয়ে পড়বেন। এই কারণেই নেটে বল করার জন্য নবদীপ সাইনি, দীপক চাহারদের ইংল্যান্ডে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।

বিরাট রানার: জুন ২০১৮ থেকে জুন ’১৯— বিরাট কোহালি সব ফর্ম্যাট মিলিয়ে ২৯৯৩ রান করেছেন। ওঁর বিশেষত্ব হল, প্রচণ্ড গতিতে দৌড়ে খুচরো রান নেওয়া। ধরা যাক ৫০ শতাংশ রানই এ ভাবে নিয়েছেন বিরাট। সে ক্ষেত্রে দুই উইকেটের মধ্যে ২০ মিটার দৌড়েছেন। অর্থাৎ, ১৪৯৬ রানের জন্য ওঁকে দৌড়তে হয়েছে ২৯ হাজার ৯২০ মিটার। শুধু রানিং বিট্যুইন দ্য উইকেটস নয়, ফিল্ডিংয়ের সময়ও প্রচুর দৌড়তে হয়। এই কারণেই বিরাটকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টি, নিউজ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে দু’টো ওয়ান ডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজে না খেলিয়ে বিশ্রাম দেওয়া হয়েছিল।

নেপথ্য নায়ক: ভারতীয় দলের ফিল্ডিং কোচ শ্রীধরও অসাধারণ। শঙ্করের সঙ্গে আলোচনা করেই তিনি অনুশীলন পদ্ধতি ঠিক করেন। ক্ষিপ্রতা বাড়ানোর অনুশীলন থেকে পরিস্থিতি অনুযায়ী ফিল্ডিংয়ের মহড়া, পুরোটাই শ্রীধরের উপরে ছেড়ে দিয়েছেন শঙ্কর। এ ছাড়া দৌড়ে উঁচু ক্যাচ নেওয়া, স্লাইড ডাইভের মধ্যেও অনেকটা দৌড় হয়ে যায়। ম্যাচে ৫০-৭০ রান ও ১৫-২০ ওভার বোলিং একটা কার্ডিয়ো সেশনের সমান। এই কারণেই শঙ্কর শক্তি বাড়ানোর অনুশীলনে বেশি জোর দেন। চোট-আঘাত আটকাতে থাকে প্রি-হ্যাব ট্রেনিংও।

আধুনিক ভাবনা: ভারতীয় দলের ক্রিকেটারেরা বেশিটাই করেন ‘মেনটেনেন্স ট্রেনিং’ অর্থাৎ, ফিটনেসের মান বজায় রাখার অনুশীলন করেন। গত বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টি ম্যাচের আগের দিন টিম হোটেলের জিমে দেখেছি, ভুবনেশ্বর কুমার, বুমরা, হার্দিক পাণ্ড্যদের ওয়েট ট্রেনিং করাচ্ছেন শঙ্কর। ট্রেডমিলে দৌড়চ্ছেন রোহিত, অজিঙ্ক রাহানেরা। পর্দার আড়ালেই আধুনিক পদ্ধতিতে চলছে প্রস্তুতি। এই কারণেই এখনকার ক্রিকেটারদের ফিটনেসের গড় মান দশ বছর আগের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।

অন্য বিষয়গুলি:

Cricket India ICC World Cup 2019 Sri Lanka
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy