মধ্যমণি: সঞ্জয় ও অনিল কপূরের সঙ্গে কপিল। ম্যাঞ্চেস্টারে। টুইটার
ছত্রিশ বছর আগের কথা। ২২ জুন, ১৯৮৩। এই ওল্ড ট্র্যাফোর্ডেই ছিল সেই সেমিফাইনাল। ইংল্যান্ডকে ছয় উইকেটে উড়িয়ে দিয়ে তাঁরা পৌঁছে গেলেন ফাইনালে। ছুটতে থাকল অশ্বমেধের ঘোড়া। এর পর ২৫ জুনের ফাইনালে গিয়ে তাঁরা থামিয়ে দেবেন ফেভারিট ক্লাইভ লয়েডের ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা জয় যাঁর নেতৃত্বে এসেছিল, তিনি হঠাৎ হাজির মঙ্গলবারের সেমিফাইনালে। দেখতে পেয়েই সকলে ছুটল তাঁর পিছনে। যেন বিশ্বকাপের মঞ্চ এত দিনে পেয়েছে তার সেরা মহাতারকাকে। চরম ব্যস্ততার মধ্যেও তিনি— কপিল দেব সাক্ষাৎকার দিলেন ধোনি থেকে শুরু করে বিরাট, নানা বিষয় নিয়ে।
প্রশ্ন: এখনকার ভারতীয় দল সম্পর্কে কী বলবেন?
কপিল দেব: অনেক কিছু পাল্টে গিয়েছে। অনেক বেশি অ্যাথলেটিক হয়েছে ক্রিকেটারেরা। সেটা দেখেই আমার সব চেয়ে ভাল লাগছে। খেলাটাও অনেক এগিয়েছে। মানুষের আগ্রহ বেড়েছে। ওল্ড ট্র্যাফোর্ডেও দেখা যাচ্ছে বেশির ভাগ দর্শক ভারতীয়। এখনকার ভারতীয় দলকে খুবই ভাল লাগছে আমার। দারুণ সব খেলোয়াড় রয়েছে আমাদের।
প্র: তিরাশিতে এখানেই আপনার নেতৃত্বে ভারত সেমিফাইনাল খেলে জেতে। কী বদল দেখছেন?
কপিল: অনেক কিছুই বদলে গিয়েছে। পিচের অবস্থানটাই তো পুরোপুরি পাল্টে গিয়েছে দেখছি। যত দূর মনে করতে পারছি, পিচটা ছিল অন্য দিকে মুখ করা। দেখে মনে হচ্ছে, কেউ যেন ওটাকে ঘুরিয়ে দিয়েছে। পুরনো ওল্ড ট্র্যাফোর্ডের সঙ্গে মেলাতেই পারছি না। তবে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে ফিরে আসতে পেরে ভাল লাগছে। আমি দারুণ খুশি। সব চেয়ে বেশি উপভোগ করছি, আবার একটা বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল হচ্ছে। এবং আমাদের দল খেলছে।
প্র: মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকে নিয়ে খুব বিতর্ক হচ্ছে। কিপিং ভাল করলেও ব্যাটিংয়ে স্ট্রাইক রেট ঠিক না থাকার জন্য সমালোচিত হচ্ছেন। আপনি
কী বলবেন?
কপিল: খুবই অন্যায় হচ্ছে এ ভাবে ধোনির সমালোচনা করাটা। আমি একেবারেই সমর্থন করছি না। ধোনি আমাদের সর্বকালের সেরা ক্রিকেটারদের এক জন। এখন তো আর আশা করলে হবে না যে, ধোনিকে কুড়ি বছরের তরুণের মতো দেখাবে। যাঁরা সমালোচনা করছেন, তাঁদের প্রশ্ন করতে চাই, সমস্যাটা কোথায়? টিমের কাজে কি ধোনি আসছে না? না কি আপনাদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছে না? সমস্যাটা ওখানেই। আমরা এত কিছু প্রত্যাশা করে ফেলি যে, সেটার উপরে দাঁড়িয়েই আমাদের ভাল-মন্দ বিচারের মাপকাঠিটা তৈরি হয়ে যায়। আমার তো ধোনির খেলা দেখে মনে হচ্ছে, দারুণ করছে। আর সেটা মনে হচ্ছে কারণ আমি টিমের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ওর পারফরম্যান্সকে বিচার করার চেষ্টা করছি। সেটাই তো ঠিক।
প্র: আপনি ধোনির উপরেই
আস্থা রাখছেন?
কপিল: আমার মনে কোনও সন্দেহই নেই যে, ধোনি এখনও ভারতীয় দলের সম্পদ। এই দলের খুবই গুরুত্বপূর্ণ এক জন ক্রিকেটার। কিন্তু আমরা যে দশ-পনেরো বছর আগের ধোনিকে সব সময় দেখতে চাইছি। সেটাই সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমার মনে হয়, আর একটু বাস্তব দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখার চেষ্টা করলে সকলেই সত্যিটা দেখতে পাবে। ধোনিকে এখনও দরকার এবং মোটেও ও খারাপ কিছু করছে না।
প্র: রোহিত শর্মার এই স্বপ্নের ফর্ম দেখে কী বলবেন?
কপিল: অসাধারণ। হ্যাট্স অফ। দারুণ ফর্ম দেখানো এক জিনিস। কিন্তু বিশ্বকাপে এসে এ রকম ফর্ম দেখানো সত্যিই অভাবনীয়। মুগ্ধ হয়ে সকলে দেখছে রোহিতের ব্যাটিং।
প্র: ভারত এ দিন প্রথম বলেই রিভিউ নিল। সেটা নষ্ট হওয়ায় সারা দিনে আর ডিআরএস রইলই না। আপনার মনে হয়, অন্তত দু’টো রিভিউ থাকা উচিত ছিল?
কপিল: দু’টো কেন, আমি তো বলব তিনটে রাখো। প্রযুক্তির সাহায্য নিচ্ছি যখন, আরও ভাল ভাবে নেব না কেন? মাত্র একটা রিভিউ কেন থাকবে? মোটেও উচিত হচ্ছে না। আমার তো মনে হয়, ওয়াইড হয়েছে কি না দেখার জন্যও রিভিউ রাখা যেতে পারে। এই তো কিছুক্ষণ আগে আম্পায়ার একটা ওয়াইড দিলেন। রিপ্লে দেখাল, বলটা প্যাডে লেগেছে। এই অতিরিক্ত রানটার কৈফিয়ত কে দেবে? ফিল্ডিং ক্যাপ্টেনের তো এটা নিয়ে প্রশ্ন করার অধিকারই নেই। অথচ, ক্রিকেটে একটা রানই অনেক সময় খেলার মোড় ঘুরিয়ে দিয়ে যেতে পারে। আমার কথা হচ্ছে, প্রযুক্তি যখন হাতের সামনে রয়েইছে আর তার সাহায্যও নিচ্ছি, তা হলে আজকের ক্রিকেটে আর এই ভুলগুলোই বা রাখব কেন?
প্র: এই প্রজন্মের ভারতীয় ফাস্ট বোলিং দেখে আপনার মূল্যায়ন কী?
কপিল: আমাদের পেস বোলিং বিভাগ এখন দারুণ করছে। বুমরা তো আছেই, শামিও দারুণ বল করেছে। ভুবনেশ্বরও খুব ভাল। শামি এই ম্যাচটায় হয়তো খেলছে না, কিন্তু এই বিশ্বকাপে ভাল বল করেছে। ভুবনেশ্বর আজ শুরুতে অসাধারণ বোলিং করল। বুমরাকে নিয়ে যত প্রশংসাই করি না কেন, যথেষ্ট হবে না। আমি মুগ্ধ ওকে দেখে। পাঁচ বছর আগে ওকে দেখে সত্যিই আশা করিনি, এত দূর পৌঁছবে ছেলেটা। হ্যাট্স অফ! দশ গজ দৌড়ে নিয়মিত ভাবে ঘণ্টায় ১৪৫ কিলোমিটার গতিতে বল করে যাচ্ছে! জানি না, কী করে সম্ভব! মুখে বলা খুব সহজ, কিন্তু কাজে করে দেখানো
অনেক কঠিন।
প্র: মেঘলা আকাশ ছিল বলে কি জাডেজার জায়গায় শামিকে খেলানো উচিত ছিল আজ?
কপিল: সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। আসল হচ্ছে, যে দলটা ওরা বেছে নিয়েছে সেই এগারো জনের উপর সম্পূর্ণ আস্থা রয়েছে বলেই বেছে নিয়েছে। নিশ্চয়ই টিমের একটা ভাবনা রয়েছে এই দলটা বেছে নেওয়ার পিছনে। আমি দূরে বসে প্রথম একাদশ নিয়ে তর্ক-বিতর্ক তোলায় বিশ্বাসী নই। এটা টিমের সিদ্ধান্ত, তাকে সম্মান করব। ভারত সেমিফাইনালে খেলছে, আসুন সকলে মিলে দলের সঙ্গে থাকি। কী হলে কী হত, তা নিয়ে তর্ক তোলার বা বলার সময় এটা নয়।
প্র: তিরাশির বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক কি আশা করছেন এ বার ইংল্যান্ডে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হবে?
কপিল: সকলেই আশাবাদী দল নিয়ে। কিন্তু আমি ব্যক্তিগত ভাবে এখন সেমিফাইনাল ম্যাচটা নিয়ে ভাবার কথাই বলব। আগে এই ম্যাচটা জিতব, তার পরে ফাইনাল নিয়ে না হয় ভাবা যাবে।
প্র: বিরাট কোহালির অধিনায়কত্ব আপনার কেমন লাগছে?
কপিল: বিরাট অন্য রকম। ও ধোনির মতো নয়। অনেক বেশি আগ্রাসী ভঙ্গি। প্রত্যেক ক্যাপ্টেনেরই একটা নিজস্ব ভঙ্গি থাকে। বিরাটেরও আছে এবং নিজস্ব ভঙ্গিতে ও খুবই ভাল করছে। অসাধারণ এক ব্যাটসম্যান, ক্রিকেট বিশ্ব যাদের দেখেছে এত দিন ধরে, তাদের মধ্যে অন্যতম সেরা। সকলে ওর খেলা দেখতে চায়।
প্র: বিশ্বকাপে বিরাটের কোনও সেঞ্চুরি নেই দেখে কি আপনি অবাক?
কপিল: একেবারেই না। এ ভাবে ভাবতে বসলে তো সেই জায়গাটাতেই চলে আসব। প্রত্যাশার কোনও শেষ নেই। এ বার হয়তো লোকে প্রশ্ন করা শুরু করবে, রোহিত পরের বিশ্বকাপেও পাঁচটা সেঞ্চুরি করতে পারবে? প্রত্যেক বার মাঠে নেমেই তো আর সেঞ্চুরি করা যায় না। বিরাট দারুণ ফর্মে আছে, দলের কাজে আসছে। টিমের প্রতি অবদান রাখা, টিমকে জেতানোটাই আসল।
প্র: ধোনির কী রকম ফেয়ারওয়েল পাওয়া উচিত?
কপিল: সেটা তো ধোনির হাতে নেই। আর তা ছাড়া, ধোনির ফেয়ারওয়েল নিয়ে কথা বলার মঞ্চ এটা নয়। ভারত সেমিফাইনাল খেলছে, আমরা বরং প্রার্থনা করি যেন এই ম্যাচটা জিতে আমাদের দল লর্ডসে ফাইনাল খেলতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy