Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪

বাউন্সার-অস্ত্রে স্বর্ণযুগ ফেরাতে চান রাসেলরা

স্টিভ ওয় মনে করেন, এ বারের বিশ্বকাপে যে ক’টি দেশ খেলছে তাদের মধ্যে ওয়েস্ট ইন্ডিজের খেলাই সব চেয়ে চিত্তাকর্ষক।

লক্ষ্য: আজও বড় রানের খোঁজে  ক্রিস গেল। গেটি ইমেজেস

লক্ষ্য: আজও বড় রানের খোঁজে ক্রিস গেল। গেটি ইমেজেস

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০১৯ ০৩:৫২
Share: Save:

ওয়েস্ট ইন্ডিজের আগুনে ফর্মের কথা মাথায় রেখে অস্ট্রেলিয়াকে সাবধান করে দিলেন স্টিভ ওয়। বৃহস্পতিবার ট্রেন্ট ব্রিজ ম্যাচের আগে বিশ্বকাপজয়ী প্রাক্তন অস্ট্রেলীয় অধিনায়কের মন্তব্য, ‘‘আমার মনে হয় ওয়েস্ট ইন্ডিয়ানরাই আমাদের সত্যিকারের পরীক্ষার সামনে ফেলবে। ওদের দলে ম্যাচউইনার প্রচুর। আমাদের খেলায় কোনও রকম শৈথিল্য দেখলেই ওরা কিন্তু রীতিমতো কর্তৃত্ব করবে।’’

স্টিভ ওয় মনে করেন, এ বারের বিশ্বকাপে যে ক’টি দেশ খেলছে তাদের মধ্যে ওয়েস্ট ইন্ডিজের খেলাই সব চেয়ে চিত্তাকর্ষক। ‘‘ওদের ব্যাটিংয়ের যা মানসিকতা, তাতে যে কোনও দলের জয়ের স্বপ্নকে অপহরণ করে নিয়ে যেতে পারে। যে কোনও বোলিং আক্রমণের বিরুদ্ধেই ওদের নিষ্ঠুরতম হয়ে ওঠার ক্ষমতা আছে। আর একবার ছন্দ পেয়ে গেলে কোনও ক্রিকেট মাঠই ওদের কাছে বড় নয়,’’ বলেছেন স্টিভ।

স্টিভ বিস্মিত, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে ক্যারিবিয়ানদের বাউন্সার-বৃষ্টি দেখে, ‘‘বহু দিন পরে ওদের ফাস্ট বোলিংয়ে এতটা গভীরতা দেখতে পাচ্ছি। আমার তো মনে হয়, শুধু অস্ট্রেলিয়া নয়, এই বিশ্বকাপের অন্য সব দলই ওদের বিরুদ্ধে মারাত্মক উদ্বেগ নিয়ে খেলতে নামবে। আর আমি কখনওই চাইব না, নক-আউটে গিয়ে অস্ট্রেলিয়া এই ওয়েস্ট ইন্ডিজের সামনে পড়ুক। ওরা এমন একটা দল, যারা একবার ছন্দ পেয়ে গেলে যে কোনও ম্যাচ জিতে বেরিয়ে যাবে।’’

আপাতত ক্রিকেটবিশ্ব উন্মুখ, অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে আন্দ্রে রাসেল, শেল্ডন কটরেল, ওশেন থমাসরা কতটা বিধ্বংসী হয়ে ওঠেন তা দেখার জন্য। তাঁদের উদ্বুদ্ধ করতে, ইংল্যান্ডে চ্যাম্পিয়ন হওয়া দু’টি বিশ্বকাপেরই ভিডিয়ো দেখানো হচ্ছে।

এই পরিস্থিতিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের অলরাউন্ডার কার্লোস ব্রাথওয়েট তো প্রায় হুমকির সুরে বলে দিলেন যে, তাঁদের পেসাররা ঠিকঠাক বাউন্সার দিতে পারলে কেঁপে যাবে অস্ট্রেলীয় ব্যাটিং। চল্লিশ বছর আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজ শেষ বার বিশ্বকাপ জিতেছিল ইংল্যান্ডের মাটিতেই। এমনকি প্রথম বিশ্বকাপও তারা ইংল্যান্ডেই জেতে। এ বার কি ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হবে? ব্রাথওয়েটের জবাব, ‘‘আমরা সবাই চল্লিশ বছর অপেক্ষার তাৎপর্যটা বুঝি। শুধু এটুকু বলতে পারি যে, মাঠে নেমে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত প্রাণপাত করব।’’ ব্রাথওয়েট যোগ করেছেন, ‘‘ইংল্যান্ডের পরিবেশে দারুণ কিছু করার জন্য আমরা তৈরি। আমাদের দলেও অভিজ্ঞতা ও তারুণ্যের অসাধারণ মিশ্রণ।’’ এখানেই থামেননি ব্রাথওয়েট, ‘‘ড্রেসিংরুমে আমাদের সবার বিশ্বাস যে, শেষ চল্লিশ বছরে এ বারই দলের সামনে কাপ জয়ের সেরা সুযোগ এসেছে। প্রত্যেকে সেরাটা দিয়ে বিশ্বকাপটা ওয়েস্ট ইন্ডিজের মানুষের কাছে নিয়ে যেতে মরিয়া।’’

ক্লাইভ লয়েড, ভিভ রিচার্ডসদের সেই যুগের পরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দারুণ ভাবে চমকে দিয়েছিল ২০১৬ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয়ে। তার উপর এ বছরই ইংল্যান্ডকে টেস্ট সিরিজে হারিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দাপট দেখিয়ে বিশ্বকাপের মূলপর্বে খেলার যোগ্যতাও অর্জন করেছে। আর ট্রেন্ট ব্রিজে সবাইকে চমকে দিয়ে এ বারের বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে কার্যত উড়িয়ে দিয়েছে পাকিস্তানকে। যে ম্যাচে শুধু রাসেলই নিজের ১৮টি বলের ১৬টি এমন শর্টপিচ করেছেন যা খেলতেই পারেননি পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানেরা। কম যাননি ওশেনও। সঙ্গে নিখুঁত নিশানায় বল রেখেছেন বাঁ-হাতি পেসার শেল্ডন, অধিনায়ক জেসন হোল্ডার এবং ব্রাথওয়েট। ক্রিকেট বিশ্লেষকরা মনে করছেন, স্টিভ স্মিথ-ডেভিড ওয়ার্নারদের বিরুদ্ধেও একই রণকৌশল নেবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তবে অস্ট্রেলিয়ায় বিগ ব্যাশ লিগে খেলা ব্রাথওয়েট মনে করেন, তাঁদের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানদের যতটা অসহায় দেখিয়েছে, ততটা অস্বস্তিতে নাও পড়তে পারেন ওয়ার্নাররা। ‘‘অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটারেরা দ্রুত গতি সম্পন্ন উইকেটে খেলতেই অভ্যস্ত। যেখানে বল সব সময়ই প্রায় লাফিয়ে ওঠে। তা ছাড়া এক ওভারে দু’টির বেশি বাউন্সার দেওয়াও যায় না। তাই লড়াই হয়ে উঠতে পারে মানসিকতার। তবে ওভারের দু’টি বাউন্সারের একটা যদি ব্যাটসম্যানের মাথায় লাগে এবং বাকি বলগুলো ঠিকঠাক জায়গায় ফেলা যায় তা হলে পুরো ব্যাপারটা আমাদের পক্ষে যাবে। ঘণ্টায় ১৪০ বা ১৪৫ কিলোমিটার গতিতে আসা বলের বিরুদ্ধে খেলতে কেউই পছন্দ করে না। তার সঙ্গে বাউন্সার দিতে পারলে কথাই নেই।’’ সরাসরি বলেছেন ব্রাথওয়েট।

এই রণনীতি কাজে না লাগলে অন্য অস্ত্রও তৈরি আছে বলে দাবি করেছেন তিনি। বলেছেন, ‘‘বাউন্সারে ওদের ভয় পাইয়ে দেওয়ার কৌশল কাজে না লাগলে অন্য যা যা করতে হবে সেটাও ঠিক করা হয়েছে।’’ আরও মন্তব্য, ‘‘ক্যারিবিয়ানে একটা মজার প্রবাদ আছে যে, যারা সাঁতার জানে না, তারা জলে ডুবে মারা যায় না। আমাদের বিরুদ্ধেও হয়তো যারা শর্ট বল ভাল খেলে তারা বিশেষ কিছু করতে পারবে না। আবার যারা ভাল শর্ট বল খেলতে পারে না, তারাই হয়তো রান পেয়ে গেল। শুধু বাউন্সার দিয়ে ম্যাচ বার করা যাবে এমন ভাবনা নিয়ে পড়ে থাকাও তাই ঠিক না। ’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy