চলতি বিশ্বকাপে পথ হারিয়েছে আফগান-ক্রিকেট। ছবি: এএফপি।
আফগানিস্তান ক্রিকেটে এখন অবিশ্বাস। সাজঘরে নেই খোলামেলা ভাব। পাঁচটা ম্যাচে সবকটিতেই হার। কোচ ফিল সিমন্স হুমকি দিয়ে রেখেছেন, বিশ্বকাপের পরেই সব ‘ফাঁস’ করে দেবেন তিনি। প্রথম একাদশ নির্বাচনে বোর্ড হস্তক্ষেপ করছে। মাঠের বাইরে স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ছেন আফগান-ক্রিকেটাররা। তা নিয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে, বিরক্ত গুলবাদিন নাইব সাংবাদিক বৈঠক ছেড়ে চলে যাওয়ার হুমকি দিচ্ছেন।
আফগানিস্তানের ক্রিকেট যেন পথ হারিয়েছে। অথচ এমনটা তো হওয়ার ছিল না। অনেকটা পথ পেরিয়েই তো রশিদ খানরা বিশ্বকাপের মঞ্চে এসেছিলেন। সবাই ধরে নিয়েছিলেন, চলতি বিশ্বকাপে চমকে দেবে আফগানিস্তান। সেই জায়গায় উল্টো ছবি।
কাবুল এখন শান্ত। একটা সময় ছিল যখন মোরগের ডাকে সাধারণ মানুষের ঘুম ভাঙত না সেখানে। বোমা-গুলির শব্দে অনেক আফগান ক্রিকেটারেরই শৈশব কেটেছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ ছেড়ে পাকিস্তান সীমান্তের রিফিউজি ক্যাম্পে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন অসংখ্য মানুষ। পাকিস্তানের সেই রিফিউজি ক্যাম্পে থাকার সময়েই ক্রিকেটের সঙ্গে অনেকের পরিচয়। ক্রিকেটের প্রতি ভালবাসা জন্মায়। সেই সময় থেকেই আফগানদের রক্তে ঢুকে পড়ে ক্রিকেট। এক সময়ে পাকিস্তানের রিফিউজি ক্যাম্পে থাকতেন প্রাক্তন ক্রিকেটার রইস আহমেদজাই। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, “আমি যেখানে থাকতাম, সেখানে বিদ্যুৎ ছিল না। কিছুটা দূরে একটা বাড়িতে খেলা দেখতে যেতাম। সেই বাড়িতে সাদা-কালো টিভি ছিল। ইংল্যান্ড-পাকিস্তান ম্যাচ দেখে অ্যালেক স্টুয়ার্টের নাম জেনেছিলাম।’’
আরও পড়ুন: ফিরিয়ে আনব ২০০৫, অজি ম্যাচের আগে গর্জন মাশরফির
আরও পড়ুন: বিশ্বকাপের জন্য হার্দিকের গলায় হিরের ব্যাট-বল
রশিদ খান, মহম্মদ নবিদের নাম এখন ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়েছে। আইপিএলের দৌলতে খুবই জনপ্রিয় একাধিক আফগান ক্রিকেটার। একদিন ক্রিকেট খেলার মতো পরিবেশই ছিল না আফগানিস্তানে। যাঁরা ক্রিকেট খেলতেন তাঁদের কাছে ছিল না উইকেট। দেওয়ালে উইকেটের ছবি এঁকে খেলতে নেমে পড়তেন রইস আহমেদজাইয়ের মতো প্রাক্তন ক্রিকেটার। বল ছিল না। প্লাস্টিক জমিয়ে তৈরি করা হত বল। লাঠিকে ব্যাট বানিয়ে শুরু হত খেলা। গোড়ার দিকের সেই লড়াইয়ের দিনগুলো কি ভুলে গেলেন আফগান ক্রিকেটাররা?
বিশ্বকাপ শুরু হতেই সাজঘরে অশান্তি। হাঁটুর চোটের জন্য মহম্মদ শেহজাদকে দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি শেহজাদ। বোর্ডের কিছু কর্তা তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছেন বলে অভিযোগ করেছিলেন। বোর্ডের হস্তক্ষেপ সাজঘরের পরিবেশ নষ্ট করছে বলে অনেকেই অভিযোগ করছেন। আফগানিস্তান ক্রিকেটের এই উত্থান তো অজানা নয় বোর্ড-কর্তাদের! ২০১৪-১৮ পর্যন্ত আফগান ক্রিকেট বোর্ডের চিফ এগজিকিউটিভ অফিসার শাফিক স্তানিকজাই এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘‘১৯৯৯ সালে আমি দেশে ফিরে আসি। তখন আমার বয়স ১৩। আফগানিস্তান তখন যুদ্ধবিধ্বস্ত, দেশে তালিবান শাসন। সেই সময়ে আমাদের ১২ জন প্লেয়ারই হত না। ক্রিকেট খেলার জন্য প্রত্যেকের দরজায় দরজায় গিয়ে কড়া নাড়তাম। প্লেয়ারের সংখ্যা বেশি হলে দৌড়তে হতো না।’’
পরিস্থিতি এখন বদলে গিয়েছে। আফগানিস্তানে এখন প্রায় ১২ লাখ মানুষ ক্রিকেট খেলেন। যাঁদের মধ্যে প্রায় ৩০০ জন পুরোদস্তুর পেশাদার ক্রিকেটার। ক্রিকেট খেললে এখন আর কেউ হুমকি দেয় না। অথচ একদিন প্রবল বাধার মুখে পড়তে হয়েছিল আফগানিস্তান ক্রিকেটের জনক তাজ মালুককে। প্রতিভা খুঁজে বেড়াতেন তিনি। এক সাক্ষাৎকারে মালুক বলেছিলেন, ‘‘আমরা তিন ভাই ক্রিকেট অন্ত প্রাণ ছিলাম। সমস্ত আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ দেখতাম। দেশকে প্রতিনিধিত্ব করবে এমন একটা ক্রিকেট দল তৈরি করার স্বপ্ন দেখতাম।’’
প্রতিভাবান ক্রিকেটারদের পরিবারের তরফ থেকেও বাধা পেতে হয়েছিল তাঁকে। এখন আফগানিস্তানের প্রতিটি রাস্তায় ক্রিকেট খেলা হয়। সরকারের বাধা নেই। আফগানিস্তান দেশটার পরিচয় বদলে দিয়েছে ক্রিকেট। রশিদ খানরা কি বিলেতে গিয়ে তা ভুলে গেলেন?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy