বাগানে তাঁকে বলা হচ্ছে আগুনের পাখি। শনিবারের ফেড কাপ ফাইনাল তাঁর কাছে ধর্মযুদ্ধ। বিপক্ষে নিজেরই রাজ্য মিজোরামের টিম আইজল এফসি। যাদের বিরুদ্ধে কখনও খেলেননি। আবার নিজের টিম মোহনবাগানকে মরসুমের প্রথম ট্রফি দেওয়ার জেদ তাঁর। আইজল সমর্থকেরা তাঁকে এসএমএস পাঠাচ্ছেন ফাইনালে গোল না করার অনুরোধ করে। সবুজ-মেরুন সমর্থকেরা ঠিক তেমনই তাঁর কাছে দাবি করছেন, গোল চাই-ই। উভয় সঙ্কটের সামনে পড়ে কী ভাবছেন এই মুহূর্তে সেরা ভারতীয় ফরোয়ার্ড জেজে লালপেখলুয়া? গুয়াহাটিতে একান্ত সাক্ষাৎকারে যা বললেন...
প্রশ্ন: শুনলাম আপনার মোবাইলের মেসেজ বক্সে এখন হুমকি, আবেদন দুই-ই আসছে?
জেজে: ঠিকই শুনেছেন। গাদা গাদা এসএমএস। কেউ লিখেছে, ‘এই ম্যাচটায় গোল কোরো না।’ কেউ লিখেছে, ‘শনিবার আমরা আইজলবাসী তোমাকে সমর্থন করতে পারছি না। আমাদের ক্লাব কোনও ট্রফি পায়নি। ফেড কাপটা তাই নিতে দাও।’ শুনছি তো কয়েক হাজার আইজল সমর্থক আসছে ফাইনাল দেখতে। আসলে ওরা যে ভাবে ফাইনালে উঠে এসেছে, নিজের রাজ্য বলে আমার গর্ব হচ্ছে। আবার আমিও ফেড কাপ কখনও জিতিনি। আমাকেও তাই শনিবার জিততে হবে। জীবনে কখনও এমন পরিস্থিতি হয়নি। মনের মধ্যে যুদ্ধ চলছে!
প্র: সিদ্ধান্তটা তা হলে কী নিলেন বুঝতে পারলাম না।
জেজে: (হেসে) কী আবার? মোহনবাগানকে ফেড কাপ দিতে হবে। এত ভাল টিম আমাদের। একটাও ট্রফি পাইনি এ মরসুমে। তিরিশ সেকেন্ডের জন্য আই লিগ হাতছাড়া হয়েছে। গ্লেন ইনজুরি টাইমে মাঠের মধ্য দিয়ে রিজার্ভ বেঞ্চের দিকে বেরিয়ে গেলেই শিলং এফসি ম্যাচটা জিতে যাই। এখনও প্রচণ্ড আফশোস হয়। সে জন্যই ফেড কাপটা চাই-ই। আমি গোল করলাম কি না বড় কথা নয়। যে-ই ফাইনালে গোল করুক, ম্যাচটা জিততে হবে। সেই শপথ নিয়ে এখানে এসেছি।
প্র: ফেলে আসা এক বছর তো আপনার ফুটবল জীবনের সোনালি মরসুম। আই লিগ, আইএসএল, সাফ কাপ.. এ দেশে আর কারও নেই।
জেজে: ফেড কাপ জিততে পারলে বৃত্তটা সম্পূর্ণ হবে। আইজল ভাল টিম। টিমগেম খেলে। ওদের হারানো সহজ হবে না। আমি ওদের বিরুদ্ধে আই লিগের দু’টো ম্যাচেই খেলিনি। সে জন্য চ্যালেঞ্জটা আরও বেশি।
প্র: সবুজ-মেরুন জার্সিতে এ বার একটা হ্যাটট্রিক-সহ ১৭ গোল আপনার। রসায়নটা কী?
জেজে: গত মরসুমে চোটের জন্য ক্লাবের হয়ে প্রায় খেলতেই পারিনি। এ বার অনেক ক্লাবের অফার ছিল আমার কাছে। তা সত্ত্বেও মোহনবাগান ছাড়িনি। সাফল্য দেব বলে। তা ছাড়া আমাদের টিমে যা লড়ালড়ি। প্রথম এগারোয় ঢোকার তাগিদ ছিল। প্রচুর খেটেছি। ঈশ্বর সহায় ছিলেন। এ বছর চোট পাইনি। তার পর সনিকে পাশে পেয়েছি। ওর পায়ে বল পড়লেই কেন জানি না মনে হয় এ বার গোলের ফাইনাল পাসটা পাব। খেলতে খেলতে সনির সঙ্গে আমার কেমন যেন একটা বোঝাপড়া তৈরি হয়ে গিয়েছে। ভারতীয় ক্লাব ফুটবলে সেরা বিদেশি ও। আবার এত ভাল ছেলেও!
প্র: সুনীল ছেত্রীর পর দেশের সেরা স্ট্রাইকার বলা হচ্ছে আপনাকেই।
জেজে: (হেসে) সুনীলভাই নয়, ভাইচুং ভুটিয়ার মতো যে দিন খেলতে পারব সে দিন মনে করব কিছু করলাম।
প্র: শুনেছি আপনি প্রতি ম্যাচের আগে বাইবেল পড়েন!
জেজে: ওটা আমার অভ্যেস। শনিবার ফাইনালের সকালেও পড়ব। শিলিগুড়ির ডার্বিতে পেনাল্টি নষ্টের পর সারা রাত ঘুমোতে পারিনি। বাইবেল পড়েই মনকে শান্ত রাখার চেষ্টা করেছিলাম সেই রাতে। ব্যর্থতা থেকে উঠে দাঁড়ানোটা একজন ফুটবলারের কাছে বোধহয় সবচেয়ে কঠিন ব্যাপার। মনে হয়, আমি সেটা পেরেছি সব সময় বাইবেল সঙ্গে থাকে বলেই। বাগানের জার্সিতে প্রথম হ্যাটট্রিক তো পেলাম ডার্বির পরেই। আর একটা কথা— সাফল্য বা ব্যর্থতা সবই আমি ডায়েরিতে লিখে রাখি।
প্র: আইএসএলে আপনি চেন্নাইয়ানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ। পরের বার কি তা হলে লোনে মোহনবাগান খেলবেন?
জেজে: এখনই সামনে দু’টো ম্যাচ আছে মোহনবাগানের। ফেড কাপ ফাইনালের পরপরই এএফসি কাপ প্রি-কোয়ার্টার। সেগুলো আগে খেলি। ইস্টবেঙ্গল, বেঙ্গালুরু এফসি-র অফার আছে। হাতে অঢেল সময়। পরেই না হয় সিদ্ধান্ত নেব।
প্র: বছর দুই পর থেকে তো আই লিগ এবং আইএসএলের মধ্যে যে কোনও একটা টুর্নামেন্টে খেলতে পারবেন? কোনটা খেলবেন?
জেজে: এটা কিন্তু ফুটবলারদের জন্য ভালই হবে। বিশেষ করে আমরা যারা নিয়মিত ইন্ডিয়া খেলি। এখন আমাকে একই মরসুমে তিনটে টুর্নামেন্ট মাতেরাজ্জি, কনস্ট্যান্টাইন, সঞ্জয় স্যারের কোচিংয়ে খেলতে হয়। এটা কি সম্ভব? তবে আমি এও মনে করি মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গলকে আইএসএলে নেওয়া উচিত। অবশ্যই।
প্র: চেন্নাইয়ান আর মোহনবাগান আইএসএলে খেললে আপনি কোন টিম বাছবেন?
জেজে: যে টিম বেশি টাকা দেবে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy