মুগ্ধ: টেস্ট, ওয়ান ডে এবং টি-টোয়েন্টি, তিন ধরনের ক্রিকেটেই আদর্শ কোহালি। মেনে নিচ্ছেন রাসেল। ফাইল চিত্র
স্থানীয় সময় সোমবার রাত বারোটা পেরিয়ে গিয়েছে। কিন্তু তখনও তাঁর দেখা নেই। আবু ধাবির টিম হোটেলে আরও আধ ঘণ্টা কাটানোর পরে দেখা গেল, তিনি ঢুকছেন দু’টো শপিং ব্যাগ হাতে নিয়ে। সে দুটো লবির সোফায় রেখে এর পরে সাক্ষাৎকার দেওয়া শুরু করলেন ক্যারিবিয়ান অলরাউন্ডার আন্দ্রে রাসেল।
প্রশ্ন: পঞ্চাশ ওভারের পরে এসেছিল টি-টোয়েন্টি। এখন শুরু হয়ে গিয়েছে টি-টেন। কোন দিকে এগোচ্ছে ক্রিকেট?
রাসেল: টি-টেন ক্রিকেটটা কিন্তু দারুণ মজার, দারুণ উত্তেজক। আমরা নানা ভাবে ক্রিকেটের বিবর্তন দেখে এসেছি। এটাও সে রকমই একটা বিবর্তন। টি-টোয়েন্টিতে ব্যাটসম্যান তাও আট-দশ বল খেলার সময় পায় মানিয়ে নিতে। কিন্তু টি-টেনে সেই সুযোগ নেই। নেমেই আপনাকে মারতে হবে।
প্র: আগে একটা দল যদি ১০ ওভারে একশো করত, তখন মনে হত বিশাল ব্যাপার। কিন্তু এখন তো এক জন ব্যাটসম্যান এই সময়ের মধ্যে সেঞ্চুরি করে দিচ্ছেন প্রায়। যেমন ৯ রানের জন্য সেঞ্চুরি পেলেন না লিন। কী বলবেন?
রাসেল: দারুণ ব্যাট করল লিন। আমি নিশ্চিত, শেষ ওভারে গোটা চারেক বল খেলার সুযোগ পেলে ও সেঞ্চুরি করে দিত।
প্র: আপনার থেকে কি এ বার টি-টেন ক্রিকেটে সেঞ্চুরি দেখতে পাবে দর্শকরা?
রাসেল: পেতেই পারে। আবু ধাবি টি-টেন লিগে আমার দল নর্দার্ন ওয়ারিয়র্সের হয়ে তিন নম্বরে নামছি। ফলে একটু বেশি বল খেলার সুযোগ থাকছে। এই ধরনের ক্রিকেটে যা খুশি হতে পারে। আমি আশা করছি, সেঞ্চুরিটা করে ফেলতে পারব।
প্র: ভারত এবং কলকাতায় আপনার ভীষণ জনপ্রিয়তা। তা সে কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়েই খেলুন বা ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে। কী বলবেন?
রাসেল: আইপিএলের জন্য ভারতে জনপ্রিয়তা আরও বেড়েছে। সবাই দেখতে চায় মাঠে নেমে আমি ভাল ব্যাট করছি, বোলারদের পেটাচ্ছি। ওদের সামনে ভাল খেলাটা একটা বড় প্রাপ্তি।
প্র: কেকেআরে আপনার কয়েক বছরের সতীর্থ ছিলেন ক্রিস লিন। নাইটরা ওঁকে আপাতত ছেড়ে দিয়েছে। যে সিদ্ধান্তকে পুরোপুরি ভুল বলেছেন যুবরাজ সিংহ। আপনি কী বলবেন?
রাসেল: এই প্রশ্নের জবাব আমি দিতে চাই না।
প্র: বিরাট কোহালি তো আপনার ভাল বন্ধু। কী বলবেন ক্রিকেটার কোহালিকে নিয়ে?
রাসেল: বিরাট অসাধারণ ক্রিকেটার। মাঝে মাঝে তো আট-দশটা শব্দ লেগে যায় ক্রিকেটার বিরাটকে বোঝাতে। কী প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। ভারতীয় ক্রিকেটারদের মানদণ্ডটা ও অনেক উঁচুতে নিয়ে গিয়েছে। সেটা ফিটনেস নিয়েই হোক কী শৃঙ্খলায়। কী খেতে হবে, কী ভাবে শরীরের যত্ন নিতে হবে, কী ভাবে আগ্রাসী ক্রিকেট খেলতে হবে, এ সব কিছুই বিরাটকে দেখে শিখতে হয়।
প্র: আপনাদের দু’জনের দ্বৈরথ নিয়ে বলুন?
রাসেল: আইপিএল বলুন বা ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচ, যেখানেই আমার আর বিরাটের মুখোমুখি দেখা হয়, লড়াইটা জমে যায়। কেউ হারতে চায় না। যেটা খেলাটার জন্য খুব ভাল। দিনের শেষে বিরাট কিন্তু এক জন সত্যিকারের চ্যাম্পিয়ন ক্রিকেটার। টেস্ট, ৫০ ওভার, টি-টোয়েন্টি— সব কিছুর জন্যই আদর্শ।
প্র: আপনি এক জন ধ্বংসাত্মক ব্যাটসম্যান। কিন্তু কখনও কি বিরাটের টেকনিক দেখে প্রভাবিত হন? ভারত অধিনায়কের ব্যাটিং টেকনিক থেকে কিছু শিখতে চান?
রাসেল: ক্রিকেটাররা অনেকেই একে অন্যকে দেখে শেখে। আমাকে দেখেও অনেকে শেখার চেষ্টা করে। আমিও করি। সেটা শুধু বিরাট বলে নয়। ব্যাপারটা হল, বিরাট আর আমার টেকনিকের মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে।
প্র: একটু খুলে বলবেন?
রাসেল: বিরাট এক জন ধ্রুপদী ঘরানার ব্যাটসম্যান। আমার ব্যাটিং ধরনটা একটু অদ্ভুত ধরনের। আমি জানি, আমার টেকনিক খুব মসৃণ বা ঠিক নয়। আমি দৃষ্টিনন্দন কভার ড্রাইভ মারব না। আমি বল পেলে কভার দিয়ে উড়িয়ে দেব। পরিষ্কার কথা, আমার খেলার ধরন হল নির্মম শক্তি আর আগ্রাসী ক্রিকেটের মিশ্রণ। আমি যদি মাটিতে বল রেখেও শটটা খেলি, তা হলেও তার পিছনে থাকবে পুরো শক্তি। আমি আলতো করে বল ঠেলব না। আমার লক্ষ্যই থাকে প্রতিটা বলকে যত জোরে সম্ভব মারা।
প্র: টেস্টে সফল হতে গেলে কি এই টেকনিকের বদল করা প্রয়োজন?
রাসেল: একটা কথা পরিষ্কার বলছি। কোনও কোনও টেকনিক টেস্ট ক্রিকেটে চলবে, কোনও কোনও টেকনিক টি-টোয়েন্টিতে। টেস্ট ক্রিকেটে যে টেকনিকে খেলে সফল হওয়া যায়, তা সব সময় টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে কাজে লাগে না। টেস্টে এক জন ব্যাটসম্যানের লক্ষ্যই থাকে অনেক সময় ধরে উইকেটে টিকে থেকে বড় রান করা। যা টি-টোয়েন্টিতে সম্ভব নয়।
প্র: আর কিছু দিন পরেই ভারত সফরে আসছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ওই সফরে আপনার লক্ষ্য কী থাকবে?
রাসেল: আমি তো জানি না ভবিষ্যতে কী হবে। আমি বর্তমান নিয়ে মাথা ঘামাই। এখন যে প্রতিযোগিতায় খেলছি, সেটা নিয়ে ভাবি। আমি এও জানি না, নির্বাচকেরা আমাকে ভারত সফরের জন্য দলে রাখবেন কি না। যদি রাখেন, নিজের সেরাটা দেব। আর না রাখলে যে কাজটা (ধ্বংসাত্মক ব্যাটিং) ভাল জানি, সেটাই করে যাব।
প্র: ভারতের মাটিতে বিরাট কোহালির দলকে হারানো কি সম্ভব বলে মনে করেন?
রাসেল: দলের সব ক্রিকেটাররা যখন খেলাটার উপরে ফোকাস করবে, তখন ভাল ফল হওয়া অবশ্যই সম্ভব। আমাদের র্যাঙ্কিং (টি-টোয়েন্টি র্যাঙ্কিংয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ এখন ১০ নম্বরে) আরও ভাল হওয়া উচিত। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে প্রথম পাঁচ দলের মধ্যে থাকতে হবে। সেখানেই দলকে নিয়ে যেতে হবে আমাদের।
প্র: কায়রন পোলার্ড নতুন অধিনায়ক হয়েছেন। কী ভাবে দেখছেন ব্যাপারটা?
রাসেল: পোলার্ড খুব ভাল নেতা। ওয়েস্ট ইন্ডিজ অবশেষে এক জন অধিনায়ককে পেয়েছে যে, সামনে থেকে দলকে নেতৃত্ব দিতে পারে। এর আগে কার্লোসও (ব্রাথওয়েট) ভাল অধিনায়ক ছিল। দু’জনেই আমার দারুণ বন্ধু।
প্র: পরের বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। গত বারের চ্যাম্পিয়ন হিসেবে নামবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বাড়তি একটা চাপ থাকবে না আপনাদের উপরে?
রাসেল: অবশ্যই থাকবে। সে জন্যই আমি বলছি, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভাল কিছু করতে গেলে এখন থেকেই সিরিজগুলো জেতা শুরু করতে হবে। চাপের মুখে ম্যাচ জিততে হবে। জয়ের অভ্যাসটা তৈরি করতে হবে। আমি আশাবাদী, কাপটা রেখে দিতে পারব।
প্র: বিশ্বকাপের প্রধান দাবিদার হিসেবে দুটো দলকে বেছে নিতে বললে কাদের রাখবেন?
রাসেল: কাউকেই না। কারণ দুটো দল বেছে নেওয়া সম্ভব নয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy