নেতা: হোটেলে সাংবাদিক বৈঠকে আসার পথে কোহালি। নিজস্ব চিত্র
অবিরাম বৃষ্টিতে সারা কলকাতায় যখন স্যাঁতসেঁতে ভাব, তখন শহরের ক্রিকেট মক্কাতে তেজি ভাব থাকবেই বা কী করে? টেস্ট শুরুর এক দিন আগে ইডেনও যেন নেতিয়ে পড়ল বুধবার। তার আশপাশের রাজপথ জুড়েও সারা দিন ধরে চলল ঘ্যানঘ্যানে যানজট।
কলকাতার এক ছোট্ট অংশে অবশ্য এ সব কিছুই নেই। পুরো উল্টো ছবি সেখানে। না আছে কোনও স্যাঁতসেঁতে ভাব, না আছে যানজটের বিরক্তি। বিরাট কোহালির ভারতীয় ক্রিকেট সংসার যথারীতি উজ্জীবিত। একই রকমের তাজা। কোনও জট তো দূরের কথা, সেখানে সব কিছুই চলছে মসৃণ গতিতে। ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহালি বুধবার টিম হোটেলে সাংবাদিক বৈঠকে কথা বলার সময় মনে হচ্ছিল, চারদিকের জলমগ্ন ছবির পরিবেশটা যেন বেশ বেমানান।
মাত্র তিন মাস আগে যে দলকে তাদের দেশে গিয়ে দুরমুশ করে এসেছে ভারত, ফের সেই দলই এ বার সামনে। নিজেদের কতটাই বা উত্তপ্ত রাখা যায়? কিন্তু বিরাটের কথায় উত্তাপ কমার কোনও ইঙ্গিত নেই। বললেন, ‘‘নিজেদের প্রাণশক্তি একই রকম বাড়িয়ে রাখতে হবে এই সিরিজেও। সামনে দীর্ঘ মরসুম। তার জন্য ভাল প্রস্তুতি চালু রাখতে হবে আমাদের।’’
যে দীর্ঘ মরসুমের কথা বলছেন ভারত অধিনায়ক, তার শুরুতেই ভারতীয় দলকে সম্ভবত ফেলা হচ্ছে সবুজ উইকেটে। সঙ্গে স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়া। ব্যাটসম্যানদের জীবন এখানে কঠিন হয়ে উঠতে পারে। তবে এই নিয়ে অভিযোগ নেই বিরাটের। বলছেন, ‘‘এখানে তো স্পোর্টিং উইকেট। অনেক ঘাস আছে। আমরা এমন উইকেটে খেলার দিকে তাকিয়ে আছি। আগেও বলেছি যে, নিজেদের আমরা এমন ভাবে তৈরি করে তুলতে চাই যাতে, যেখানেই খেলি, ভাল ক্রিকেট খেলতে পারি।’’
আরও পড়ুন: নিম্নচাপের দাপটে টেস্ট শুরু নিয়ে সংশয়, পরীক্ষা সিএবি-র
পিচ-চরিত্রে বেশি গুরুত্ব না দিয়ে অধিনায়ক বলছেন, ‘‘কোন পরিবেশে আমাদের সুবিধা হবে, বা হবে না, এ সব ভেবে বসে থাকার কোনও মানে হয় না। বরং পরিবেশের সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিতে হবে। বিশ্বের এক নম্বর হতে গেলে যে কোনও জায়গায় জিততে হবে আমাদের।’’
দলের উপর আস্থাশীল বিরাট বলেন, ‘‘দল হিসেবে নিজেদের উপর যথেষ্ট আস্থা আছে আমাদের। যে সময়ে ঘরের মাঠে টানা খেললাম, সেই সময়ে যদি বিদেশে খেলতাম, তা হলেও একই মানসিকতা আর তীব্রতা থাকত আমাদের খেলায়। ভারতের পরিবেশে কখনও ঢিলেমি দেওয়া যায় না। সব সময় পরিশ্রম করতে হয়। এখানে জেতার মানসিকতা থাকা খুব দরকার। সেটাই আছে আমাদের।’’
বুধবার ভারতীয় দলের ক্রিকেটাররা হোটেলবন্দিই ছিলেন। কেউ কেউ হোটেলের জিমে গা ঘামান। এর মধ্যে অবশ্য একটা কাজ করে ফেলেছেন চেতেশ্বর পূজারা। সৌরাষ্ট্র ব্যাটসম্যানটি ভারতীয় ক্রিকেট সংসারে ফিরে এসে নিজের চেহারায় পরিবর্তন আনলেন। শখের দাড়িটিই উড়িয়ে দিলেন তিনি। রবীন্দ্র জাডেজার অনুপ্রেরণায় শুধু একটা রাজসিক গোঁফ রেখেছেন। যার ছবিও টুইটারে পোস্ট করেন তিনি।
পূজারা একঘেয়েমি কাটানোর উপায় যেমন বার করেছেন, তেমনই টানা ক্রিকেটে সতীর্থদের ক্লান্তি দূর করতে তৎপর বিরাট। অনেকের আবার যা পছন্দ নয়। হার্দিক পাণ্ড্য এই সিরিজে বিশ্রাম চাওয়ার পরে সমালোচনাও হয়েছে তাঁর। এই নিয়ে বিরাট এ দিন যাবতীয় তর্কের জট কাটিয়ে বলে দেন, ‘‘কাকে বিশ্রাম দেওয়া উচিত বা নয়, এই নিয়ে কথাবার্তা চলছে ঠিকই। কিন্তু আসল কথা হল, দলের সবাই তো আর ওয়ান ডে-তে ৪৫ ওভার ব্যাটিং করে না বা টেস্টে দিনে ৩০ ওভার বোলিং করে না। এতটা চাপ যাদের উপর পড়ে, তাদের বিশ্রাম দিতেই হবে। লোকে দেখছে একজন বছরে ৪০টা ম্যাচ খেলে ফেলেছে। বলছে, ওকে বিশ্রাম দেওয়াই উচিত। কিন্তু এটা তো দেখতে হবে, এই ৪০টা ম্যাচে কাদের উপর বেশি চাপ পড়ছে, কাদের উপর অতটা পড়ছে না।’’
তা হলে বিরাট কোহালিরও কি বিশ্রাম প্রয়োজন? এই প্রশ্নে তিনি ফ্রন্টফুটে খেললেন, ‘‘অবশ্যই আছে। কেন নয়? আমি তো আর রোবট নই যে, আমার বিশ্রাম দরকার পড়বে না। আমার শরীরের এক টুকরো মাংস কেটে নিয়ে দেখুন না, রক্ত বেরোয় কি না।’’
বিরাট সংসারে এখন একটাই দুশ্চিন্তা। তিন ওপেনারের মধ্যে কোন দু’জনকে বেছে নেবেন? এই ব্যাপারে জানতে চাইলে বিরাট বলেন, ‘‘এই চিন্তা তো আমাদের বরাবরই। কোনও কাউকে না কাউকে বাইরে থাকতেই হয়। প্রথমে কেএল (রাহুল)-কে, তার পরে শিখরকে। কিন্তু এখন কেএল আর শিখর ভাল ফর্মে আছে, তিন জনের মধ্য থেকে দু’জন বেছে নেওয়া বেশ কঠিন। শিখর আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করে দলের অন্য ব্যাটসম্যানদের জন্য একটা মজবুত ভিত তৈরি করে দেয়। এতে বিপক্ষের উপরেও চাপ বাড়ে। ওদের দক্ষতা বিভিন্ন রকমের। তবে কোন পরিস্থিতিতে কী ধরনের দক্ষতা কাজে লাগাতে হবে, সেটাই ঠিক করে নিতে হয়। এটা ওরাও বোঝে। তাই যে বাদ পড়ে, তার খারাপ লাগে বলে মনে হয় না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy