সাক্ষাৎ: কলকাতায় দাবা প্রতিযোগিতা উপলক্ষ্যে হাজির সস্ত্রীক বিশ্বনাথন আনন্দ। সেখানে দেখা হয়ে গেল দিব্যেন্দু বড়ুয়ার সঙ্গে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
তিনি আসতেই মুহূর্তে স্পটলাইটটা যেন চুম্বকের মতো টেনে নিলেন।
স্ত্রী অরুণার সঙ্গে স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে ধীর-স্থির ভাবে এক জায়গায় বসতেই ভিড়টা চলে গেল তাঁর দিকে। উপস্থিত জনতা যেন তাঁর জন্যই অপেক্ষা করছিল। ফ্ল্যাশলাইটের মুহূর্মুহু ঝলকানি, তার মধ্যেই কেউ নিজস্বীর জন্য আবদার করছেন, কেউ অটোগ্রাফ নিচ্ছেন, সতীর্থ খেলোয়াড়েরা কথা বলার জন্য এগিয়ে আসছেন। সবার সব আবদার মেটাচ্ছেন। কোনও বিরক্তি নেই। বৃহস্পতিবার দক্ষিণ কলকাতার পাঁচতারা হোটেলে টাটা স্টিল দাবা প্রতিযোগিতার সাংবাদিক বৈঠকের এই ছবিটা অবশ্য অস্বাভাবিক নয়। তাঁর নামটা যে বিশ্বনাথন আনন্দ।
দু’দশকেরও বেশি ভারতে এ রকম কোনও প্রতিযোগিতায় খেলতে দেখা যায়নি আনন্দকে। কলকাতায় যে সুযোগ পাচ্ছেন দাবা ভক্তেরা। সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি এই প্রতিযোগিতা হওয়ার ঘোষণা হতেই ভারতীয় দাবাপ্রেমীদের মধ্যে দারুণ আগ্রহ তৈরি হয়েছিল।
গত বছর র্যাপিড ফর্ম্যাটে আনন্দ বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হলেও ক্ল্যাসিক্যাল ফর্ম্যাটে ম্যাগনাস কার্লসেনের কাছে ২০১৩ সালে বিশ্বসেরার মুকুট হারানোর পরে এখনও তা ফিরিয়ে আনতে পারেননি। তাই রজার ফেডেরারের মতো তাঁর প্রত্যাবর্তনের আশায় বুক বেঁধে আছেন ভক্তেরা। সুইস মহাতারকা ২০১২ উইম্বলডন চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পাঁচ বছর পরে ফের গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতেন ২০১৭ সালে। ৪৮ বছর বয়সি আনন্দ কী পারবেন সুইস মহাতারকার মতো দাবার দুনিয়ায় সেরা প্রত্যাবর্তন ঘটিয়ে নতুন লোকগাথা তৈরি করতে? প্রশ্নটা করতেই আনন্দবাজারকে আনন্দ বললেন, ‘‘খেলতে নেমে সব সময় তো প্রত্যাবর্তনের কথা বা খেলা থেকে দূরে সরে যাওয়ার কথা মাথায় রাখা যায় না। সামনে যেটা আছে, সেটা নিয়ে ভাবতে হয়। আমিও সেটাই করি। কোন প্রতিযোগিতায় নামব, আমার প্রতিদ্বন্দ্বী কারা হতে পারে, তাদের বিরুদ্ধে কী ভাবে খেলব, সেটা নিয়ে ভাবি।’’
প্রায় ২৩ বছর পরে কলকাতায় খেলার সুযোগ পাওয়াটা কী রকম লাগছে? ‘‘ভারতীয় দর্শকদের সামনে খেলতে নামলে সব সময়ই আলাদা একটা অনুভূতি হয়। তা ছাড়া দেশের দশর্কদের সামনে খেলার সুযোগ তো খুব বেশি পাওয়া যায় না। তবে দিনের শেষে খেলাটা দাবা। ৬৪ খোপের খেলা,’’ আনন্দের এই শেষ কথাতেই পরিষ্কার যে আবেগ-উত্তেজনা সামলে এখন প্রবল ভাবে মনসংযোগ করছেন প্রতিযোগিতায়। আর সেই প্রস্তুতিতে তাঁকে সাহায্য করতেই হয়তো এসেছেন স্ত্রী অরুণা আনন্দ। আর এই সুযোগে কলকাতায় এসে খুব খুশি ভারতীয় দাবার ‘ফার্স্ট লেডি’। ‘‘ছ’বছর পরে কলকাতায় এলাম। এখানে শাড়ি কিনতে খুব ভাল লাগে। তা ছাড়া কলকাতার মানুষের ভালবাসা, উষ্ণতার টান ফেলা যায় নাকি! তাই আশা করছি এই প্রতিযোগিতাটা প্রতি বছর কলকাতায় হবে,’’ বলেন অরুণা।
আনন্দ-সহ বিশ্বের প্রথম সারির এগারো জন গ্র্যান্ডমাস্টারকে নিয়ে এই প্রতিযোগিতায় লড়াই হবে র্যাপিড আর ব্লিৎজ ফর্ম্যাটে। প্রতিযোগিতার অন্যতম আকর্ষণ দুই ভারতীয় কিশোর গ্র্যান্ডমাস্টার, ১৩ বছর বয়সি প্রজ্ঞানন্দ রমেশবাবু এবং ১৪ বছর বয়সি নিহাল সারিন। এ ছাড়া ভারতের প্রথম সারির দাবাড়ুদের মধ্যে থাকছেন পেন্টালা হরিকৃষ্ণ এবং বিদিত গুজরাতিও। বিদেশি দাবাড়ুদের মধ্যে খেলতে দেখা যাবে গত বছর বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ম্যাগনাস কার্লেসেনের চ্যালেঞ্জার রাশিয়ার সের্গেই কারইয়াকিন, দুই মার্কিন দাবাড়ু হিকারু নাকামুরা-ওয়েসলি সো, আর্মেনিয়ার লেভন অ্যারোনিয়ান ও আজারবাইজানের শাখরিয়ার মামেদায়ারভকে। বোঝাই যাচ্ছে, দাবার বোর্ডে আগামী কয়েক দিন রক্তক্ষয়ী লড়াই দেখা যেতে পারে এই প্রতিযোগিতায়। শুক্রবার প্রথম রাউন্ডে র্যাপিড রাউন্ডের খেলা হবে। আনন্দের প্রথম প্রতিপক্ষ ওয়েসলি।
চলতি মরসুমে আনন্দ মস্কোয় তাজ মেমোরিয়াল র্যাপিড খেতাব জিতলেও এই ফর্ম্যাটের শেষ তিনটি প্রতিযোগিতা অর্থাৎ লেউভেন, প্যারিস এবং সেন্ট লুইসে সে রকম সাফল্য পাননি। তা ছাড়া এই প্রতিযোগিতায় তাঁকে চ্যালেঞ্জ জানাতে বিশ্বের প্রথম ১০ জনের মধ্যে থাকা তিন জন দাবাড়ু আছেন। তাঁদের মধ্যে কে সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জে ফেলতে পারেন জানতে চাইলে আনন্দ বলছেন, ‘‘রেটিংয়ের দিক থেকে এগিয়ে শাখরিয়ার। আবার সাম্প্রতিক র্যাপিড প্রতিযোগিতায় হিকারু দুটো, ওয়েসলি একটা খেতাব জিতেছে। সব মিলিয়ে বিদেশি দাবাড়ুরা দুটো ফর্ম্যাটেই খুব শক্তিশালী।’’
বিশ্বের সেরা গ্র্যান্ডমাস্টারদের খেলতে দেখার পাশাপাশি কলকাতার দর্শকদের আগ্রহ থাকবে এই শহরের গ্র্যান্ডমাস্টার ও আনন্দের প্রাক্তন সহকারী সূর্যশেখর গঙ্গোপাধ্যায়কে নিয়েও। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে আনন্দকে এক সময় সাহায্য করলেও কখনও তাঁর বিরুদ্ধে কোনও প্রতিযোগিতায় খেলেননি সূর্য। এখানে সেই সুযোগ পেয়ে উত্তেজিত সূর্য। তাঁর প্রথম রাউন্ডের প্রতিপক্ষ হরিকৃষ্ণ। এ দিন ড্র উপলক্ষ্যে সাংবাদিক বৈঠকে হাজির ছিলেন প্রায় সব দাবাড়ুই। তাঁদের সামনে সূর্য বলেন, ‘‘শেষ বার (১৯৯২) কলকাতায় আনন্দ যখন খেলেছিলেন মনে আছে আমি ডেমো বোর্ডে চালগুলো অনুকরণ করছিলাম। এ বার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আনন্দের বিরুদ্ধে খেলব ভেবেই ভীষণ সম্মানিত লাগছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy