আইপিএলে ২০১৩ পর্যন্ত রাজস্থানের হয়ে খেলেছেন ওয়ার্ন। —ফাইল চিত্র।
নিজের ক্রিকেট জীবনে দু’বার বিশ্বকাপ জিতেছেন। প্রচুর কীর্তি স্থাপন করেছেন। কিন্তু আইপিএল জয় সম্ভবত অন্যতম সেরা সাফল্য শেন ওয়ার্নের জীবনে। আইপিএলের ইতিহাসে প্রথম অধিনায়ক হিসেবে ট্রফি জয় বলে শুধুমাত্র নয়, ওয়ার্নের জীবনে এই জয় ছিল ক্রিকেট জীবনের অন্যতম বড় সাফল্য।
২০০৭ সালে আইসিসি আয়োজিত প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতেছিল ভারত। পরের বছরেই মহা ধুমধামের সঙ্গে চালু হয় আইপিএল। বিভিন্ন দলের নামীদামি ক্রিকেটারদের পাশাপাশি রাজস্থান রয়্যালস তাদের নেতা হিসেবে বেছে নিয়েছিল বহু যুদ্ধের পোড় খাওয়া অস্ট্রেলীয় সৈনিক ওয়ার্নকে। শুধু তাই নয়, নেতৃত্বের পাশাপাশি ওয়ার্নকে সামলাতে হয়েছিল কোচিংয়ের দায়িত্বও। তবে প্রথম ম্যাচের পরেই তাদের স্বপ্ন আচমকা ধাক্কা খায়।
তৎকালীন দিল্লি ডেয়ারডেভিলস দলের বিরুদ্ধে ছিল রাজস্থানের প্রথম ম্যাচ। গৌতম গম্ভীর এবং শিখর ধবনের দাপটের সামনে ফিরোজ শাহ কোটলায় ৯ উইকেটে উড়ে যায় রাজস্থান। ওঁরা দু’জন ছাড়াও সে দিন চরম মূর্তি ধারণ করেছিলেন বীরেন্দ্র সহবাগ। রাজস্থানের কমবয়সি ক্রিকেটাররা সেই হারের ধাক্কা সামলাতে পারেননি। ড্রেসিং রুমে ফিরে ম্যাচের পর অনেকেই ভেঙে পড়েন। ওয়ার্ন ড্রেসিং রুমে ঢুকে সবার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠেন, ‘আরে, এ ভাবে বসে আছ কেন সবাই? কেউ কি মারা গিয়েছে? আমরা তো স্রেফ একটা ক্রিকেট ম্যাচ হেরেছি। এখনও তো ১৩টা ম্যাচ বাকি আছে রে বাবা!'
ওয়ার্নের সেই কথায় কাজ হয়েছিল। পরের ম্যাচে নিজেদের ঘরের মাঠ জয়পুরে কিংস ইলেভেন পঞ্জাবকে হারিয়ে দেয় রাজস্থান। ওয়ার্ন নিজে ১৯ রানে ৩ উইকেট নেন। তার পর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। টানা ১৪টি ম্যাচ জিতে ট্রফি জয় করে রাজস্থান। আইপিএলের ইতিহাসে প্রথম দল হিসেবে ট্রফি জেতে তারা। আজ পর্যন্ত সেটাই তাদের একমাত্র ট্রফি।
সেই দলের সদস্য তথা ইংল্যান্ডের প্রাক্তন অল রাউন্ডার দিমিত্রি মাসকারেনহাস সম্প্রতি বলেছেন, "সে বার সব থেকে খারাপ দল ছিল আমাদের। সবাই সেটা জানত। সংবাদমাধ্যমও জানত। তার পরেও ওই জয় স্রেফ অবিশ্বাস্য ছাড়া আর কিছু বলা যায় না।"
ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে বরাবরই প্রিয় ছিলেন ওয়ার্ন। তাঁর হাতে ট্রফি দেখতে পেয়ে খুশি হয়েছিলেন অনেকেই। সচিন তেন্ডুলকর তো বলেছিলেন, ‘‘ওয়ার্ন যে ভাবে ওই দলটাকে পরিচালনা করেছিল এবং কৌশল তৈরি করেছিল, সেটা ভাবলে এখন অবাক হতে হয়। বিশ্বকাপের কাছে আইপিএল হয়তো কিছুই না। কিন্তু এই ট্রফি ছিল ওর ক্রিকেট জীবনে কেকের উপর চেরির মতো।" ওই রাজস্থান দল থেকেই পরবর্তী কালে উঠে আসেন রবীন্দ্র জাডেজা, ইউসুফ পাঠানের মতো ক্রিকেটার।
২০১৩ পর্যন্ত রাজস্থানের হয়ে খেলেছেন ওয়ার্ন। অন্য দল তাঁকে ডাকলেও যাননি। প্রত্যেক মরসুমেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছেন। আইপিএলে ৫৫টি ম্যাচ খেলে ৫৭টি উইকেট রয়েছে তাঁর। তবে ইনিংসে ৫ উইকেট কখনও পাননি। ২০১৪ সাল থেকে ধারাভাষ্যের কাজে ঢুকে পড়েন। তবে চমকের আরও বাকি ছিল। জীবনের বৃত্ত সম্পূর্ণ হয় ২০১৮ সালে। সে বার কোচ হিসেবে ওয়ার্নকে নিয়োগ করে রাজস্থান। দল প্লে অফেও উঠেছিল। তবে কলকাতা নাইট রাইডার্সের কাছে হেরে যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy