স্মরণীয়: কেশব দত্তের স্টিকের জাদু মুগ্ধ করেছিল সবাইকে। ছবি সৌজন্য: হকি বেঙ্গল
বার্ধক্যজনিত অসুখে দীর্ঘদিন ধরেই ভুগছিলেন। মঙ্গলবার গভীর রাতে দক্ষিণ কলকাতার বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন প্রাক্তন হকি অলিম্পিয়ান কেশব দত্ত। বয়স হয়েছিল ৯৫ বছর।
স্বাধীনতার পরে ১৯৪৮ সালের লন্ডন অলিম্পিক্সে সোনা জিতেছিল ভারত। সেই দলের সেন্টার হাফ ছিলেন কেশব দত্ত। ১৯৫২ সালে হেলসিঙ্কি অলিম্পিক্সেও সোনাজয়ী ভারতীয় দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন তিনি।
প্রয়াত এই হকি অলিম্পিয়ানের এক পুত্র ও এক কন্যা বর্তমান। কন্যা ডেনমার্কে রয়েছেন। রবিবার তাঁর কলকাতায় ফেরার কথা। তিনি ফিরলে শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে। তাঁর মরদেহ ততদিন সংরক্ষিত থাকবে পিস হাভেনে।
কেশব দত্তের প্রয়াণের খবরে মর্মাহত প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক অশোক কুমার। দিল্লি থেকে ফোনে তিনি বললেন, ‘‘আমার বাবা ধ্যানচাঁদের সঙ্গে দারুণ ভাল সম্পর্ক ছিল। উনি আমার গুরু ছিলেন। ১৯৭২ সালে মিউনিখ অলিম্পিক্সে আমাদের ম্যানেজারও ছিলেন। দলের ছেলেদের নিজের সন্তানের মতো আগলে রাখতেন।’’ যোগ করেছেন, ‘‘খেলোয়াড় হিসেবেও দারুণ ছিলেন তিনি। দু’টো অলিম্পিক্সে ভারতীয় দলের নির্ভরযোগ্য সদস্য ছিলেন। ওঁকে সরিয়ে অন্য কাউকে সে সময়ে সেন্টার হাফে ভাবাই যেত না। অমায়িক মানুষ ছিলেন।’’ ভারতীয় হকি দলের আর এক প্রাক্তন অধিনায়ক গুরবক্স সিংহের কথায়, ‘‘১৯৪৮ ও ১৯৫২ সালের অলিম্পিক্সে কেডি সিংহ বাবু, বলবীর সিংহেরা দারুণ সব গোল করেছিলেন। গবেষণা করলে দেখা যাবে, সেই সব গোলের বেশির ভাগ বলই এসেছে কেশব দত্তের স্টিক থেকে। অফিস না ছাড়ায় ১৯৫৬ সালে মেলবোর্ন অলিম্পিক্সে যেতে পারেননি। না হলে সেই দলেও থাকতে পারতেন। ওঁর বিরুদ্ধে খেলেছি। একজন ভদ্র মানুষ চলে গেলেন আমাদের ছেড়ে।’’
প্রয়াত এই ক্রীড়াবিদের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পরেই টুইট করে শোকজ্ঞাপন করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। টুইটে তিনি লেখেন, ‘‘বিশ্ব হকি এক কিংবদন্তিকে হারাল। ১৯৪৮ ও ১৯৫২ অলিম্পিক্সে সোনাজয়ী কেশব দত্ত ছিলেন ভারত ও বাংলার চ্যাম্পিয়ন। তাঁর পরিবারের প্রতি সমবেদনা রইল।’’ শোকজ্ঞাপন করেন ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসও। গত বছর রাজ্য সরকারের তরফে তাঁকে জীবনকৃতি সম্মান দেওয়া হয়েছিল। এ দিন সকালে কেশব দত্তের প্রয়াণের খবর পেয়ে তাঁর বাড়ি ছুটে যান হকি বেঙ্গল ও রাজ্য অলিম্পিক সংস্থার প্রেসিডেন্ট। তাঁদের উদ্যোগেই পরবর্তী পদক্ষেপ করা হয়।
১৯২৫ সালের ২৯ ডিসেম্বর লাহৌরে জন্ম কেশব দত্তের। হকি খেলার পাঠ সেখানেই স্কুল, কলেজে পড়ার সময়ে। খেলোয়াড় জীবনের বিভিন্ন সময়ে খেলেছেন হকির জাদুকর ধ্যানচাঁদ, কেডি সিংহ বাবু, বলবীর সিংহ (সিনিয়র), লেসলি ক্লডিয়াসদের সঙ্গে। দেশভাগের পরে তিনি পাকাপাকি ভাবে কলকাতায় চলে আসেন। ১৯৫১ থেকে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত মোহনবাগানের হয়েই খেলেছেন তিনি। মোহনবাগানের প্রথম বেটন কাপজয়ী দলের সদস্য ছিলেন কেশব দত্ত। ২০১৯ সালে তাঁকে ‘মোহনবাগান রত্ন’ দিয়ে সম্মানিত করে ক্লাব। তিনিই প্রথম এই সম্মানপ্রাপক যিনি ফুটবলের বাইরে অন্য খেলার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy