হার্দিক পাণ্ড্য।
হার্দিক পাণ্ড্যকে নিয়ে যতই ভারতীয় ক্রিকেটমহলে তর্ক চলুক, এক প্রাক্তন অস্ট্রেলীয় তাঁর পাশেই দাঁড়াচ্ছেন। তিনি— মাইক হাসি মনে করছেন, তাঁর দেশে বিরাট কোহালিদের আসন্ন সফরে হার্দিকের না থাকাটা ভারতীয় দলকে ভোগাবে।
গত সেপ্টেম্বরে এশিয়া কাপে খেলার সময় কোমরের নীচের দিকে চোট পান হার্দিক। তার পর থেকেই তিনি মাঠের বাইরে। এখন তাঁর রিহ্যাব শুরু হয়েছে। অস্ট্রেলিয়া সফরের দলে তাই তিনি নেই। সংবাদসংস্থা পিটিআই-কে দেওয়া এক একান্ত সাক্ষাৎকারে হাসি বলছেন, ‘‘আমি মনে করি, হার্দিক দারুণ এক প্রতিভা। আমি নিশ্চিত যে, ওর খেলার ধরন অস্ট্রেলিয়ার পরিবেশের জন্য খুব মানানসই হত।’’ এখানেই না থেমে প্রাক্তন অস্ট্রেলীয় ব্যাটিং তারকা যোগ করছেন, ‘‘ভারতীয় দলে দারুণ ভারসাম্য যোগ করেছে হার্দিক। ওর অলরাউন্ড দক্ষতা অনেক কাজে লাগছে। আমার মনে কোনও সন্দেহ নেই যে, ওর অভাব খুবই অনুভব করবে ভারতীয় দল।’’
অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশে কোহালিরা বেরিয়ে পড়েছেন শুক্রবার সকালেই। টি-টোয়েন্টি সিরিজ দিয়ে শুরু হচ্ছে তাঁদের অভিযান। ৬ ডিসেম্বর অ্যাডিলেডে শুরু হচ্ছে টেস্ট সিরিজ। বল-বিকৃতি কেলেঙ্কারির জেরে স্টিভ স্মিথ ও ডেভিড ওয়ার্নারের না থাকা অস্ট্রেলিয়াকে অনেক দুর্বল করে দেবে বলে সকলে মনে করছেন। কিন্তু হাসি বলছেন, ‘‘আমিও মনে করি ভারতের সামনে খুব ভাল সুযোগ রয়েছে জেতার। কারণ, ওদের এখনকার দলটা বেশ ভাল এবং দারুণ সব ফাস্ট বোলার রয়েছে। তবু আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি, অস্ট্রেলিয়ার বোলিং আক্রমণ বিশ্ব মানের এবং ওরা বিশেষ করে ভারতের নতুন ব্যাটসম্যানদের বড় রকমের পরীক্ষায় ফেলে দেবে।’’ যোগ করছেন, ‘‘অস্ট্রেলিয়া ঘরের মাঠে সব সময়ই ভাল খেলে এবং এ বারও ওদের হারানো কঠিন হবে।’’
কিন্তু অস্ট্রেলীয় বোলাররা কি বিরাট কোহালিকে আউট করার রাস্তা খুঁজে পাবেন? হাসির জবাব, ‘‘আমি নিশ্চিত অস্ট্রেলিয়া কোহালির জন্য খুব ভাল ভাবে তৈরি হয়ে নামবে। কিন্তু সব কিছুই নির্ভর করবে পরিকল্পনা কতটা সফল ভাবে ওরা কাজে লাগাতে পারল তার উপর। কোহালি বিশ্বমানের ব্যাটসম্যান আর ওর বিরুদ্ধে সাফল্য পেতে গেলে ধৈর্য ধরতে হবে, ধারাবাহিকতা দেখাতে হবে।’’ তিন বছর আগে শেষ বার যখন অস্ট্রেলিয়া সফর করেছিলেন কোহালি, চার টেস্টে চার সেঞ্চুরি করে ক্রিকেট বিশ্বকে মুগ্ধ করে দিয়েছিলেন।
অস্ট্রেলিয়ার ‘মিস্টার ক্রিকেট’ বলে পরিচিত এবং ৭৯টি টেস্ট ও ১৮৫ ওয়ান ডে খেলা হাসি মনে করেন, ইংল্যান্ডে কোহালিদের ১-৪ সিরিজ হারের কোনও প্রভাব আসন্ন সিরিজে পড়বে না। ‘‘এটা সম্পূর্ণ নতুন একটা সিরিজ। সম্পূর্ণ আলাদা পরিবেশ। আমি মনে করি ইংল্যান্ডে দারুণ ক্রিকেট খেলেছে ভারতীয় দল। দুর্ভাগ্যবশত, ফলাফল ওদের পক্ষে যায়নি।’’ নিজের দেশের বল-বিকৃতি বিতর্কও এখন অতীত বলে মন্তব্য করেছেন হাসি। ‘‘অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটের জন্য খুব ঝোড়ো একটা সময় গিয়েছে। কিন্তু এখন বিতর্ককে পিছনে ফেলে রেখে পুরোপুরি ক্রিকেটের উপর মনোনিবেশ করতে হবে।’’ তবে হাসির মনে কোনও সন্দেহ নেই যে, অস্ট্রেলিয়া ওয়ার্নার, স্মিথ এবং ব্যানক্রফ্টের অভাব অনুভব করবে।
অস্ট্রেলিয়ায় কোনও কোনও মহল থেকে দাবি উঠেছিল, স্মিথ এবং ওয়ার্নারকে আগেই ফিরিয়ে আনা হোক। যাতে তাঁরা ভারতের বিরুদ্ধে খেলতে পারেন। হাসিকে এ নিয়ে জিজ্ঞেস করা হলে বলেন, ‘‘আমার মনে হয় না সেটা হবে বলে। ঘরোয়া ক্রিকেটে ওদের খেলিয়েই জাতীয় দলে ফেরত আনা উচিত। বিশেষ করে শেফিল্ড শিল্ডে ওদের আগে খেলানো উচিত।’’ সাম্প্রতিককালে ভারতের বোলিং বিদেশের মাঠে সমস্ত প্রতিপক্ষকে আতঙ্ক উপহার দিয়েছে। স্মিথ এবং ওয়ার্নারের অনুপস্থিতিতে অস্ট্রেলীয় ব্যাটিং কি পারবে বুমরা, ভুবনেশ্বর, শামিদের সামনে পরীক্ষায় সফল হতে? হাসি বলছেন, ‘‘ভারতীয় বোলিং অবশ্যই আমাদের ব্যাটিংয়ের পরীক্ষা নেবে। কিন্তু একই সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার এই ব্যাটসম্যানদের সামনেও দারুণ একটা সুযোগ রয়েছে। যদি এই সিরিজে ওরা বড় রান করে দিতে পারে, তা হলে দারুণ ভবিষ্যৎ ওদের জন্য অপেক্ষা করছে।’’
স্লেজিং নিয়ে তর্ক শুরু হয়ে গিয়েছে অস্ট্রেলিয়ায়। শোনা যাচ্ছে, অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটারেরা এ বার কোহালিদের সঙ্গে বাগ্যুদ্ধে না জড়ানোর শপথ নিচ্ছেন। সত্যিই কি তা হলে স্লেজিং বন্ধ করা উচিত? অস্ট্রেলিয়ার ‘জেন্টলম্যান ক্রিকেটার’ হাসি বলেন, ‘‘একটা নতুন সংস্কৃতি আনার চেষ্টা হচ্ছে। স্লেজিং নিয়ে একটা সীমারেখা টানার কথা ভাবা হচ্ছে। কিন্তু কোথাও তো বলা হচ্ছে না যে, অস্ট্রেলীয়রা তাদের সেই নাছোড় ক্রিকেট খেলবে না। সেটা তো খেলে যেতেই হবে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy