ছবি: রয়টার্স।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগে বায়ার্ন মিউনিখের খেলা দেখে অনেকেই বিস্মিত। একটা দলের এগারো জন ফুটবলার টানা নব্বই মিনিট সব ম্যাচে কী করে একই গতিতে খেলছে? সর্বক্ষণ বিপক্ষের ফুটবলারদের তাড়া করছে থোমাস মুলার, স্যাজ ন্যাব্রি-রা। আক্রমণের সময় পুরো দল যেমন উঠে আসছে, তেমনই নীচে নেমে যাচ্ছে রক্ষণ সামলাতে। চোখ ধাঁধানো এই ফুটবলের রহস্য কী?
বায়ার্নের এই ফুটবলের নেপথ্যে রয়েছে দীর্ঘ দিনের পরিশ্রম ও সাধনা। টাটা ফুটবল অ্যাকাডেমিতে থাকার সময় আমরা প্রত্যেক বছর জার্মানিতে যেতাম ট্রেনিং করতে। ফলে খুব কাছ থেকে দেখেছি বায়ার্ন-সহ জার্মানির অন্যান্য দলগুলির অনুশীলন পদ্ধতি। প্রেসিং ফুটবলই হচ্ছে ওদের প্রধান অস্ত্র। সেই ঘরানা থেকে ওরা কখনও বেরিয়ে আসেনি।
১৯৯২ সালে প্রথমবার জার্মানি গিয়েছিলাম। পি কে বন্দ্যোপাধ্যায়, রঞ্জন চৌধুরী ছাড়াও জার্মানির এক জন কোচ আমাদের অনুশীলন করাতেন। তিনিই শিখিয়েছিলেন প্রেসিং ফুটবল কী ভাবে খেলতে হয়। বিপক্ষের দলের কেউ বল ধরার আগেই সকলে মিলে শিকারির মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে তা ছিনিয়ে নেওয়াই হল ওদের মন্ত্র। অর্থাৎ, সারাক্ষণ প্রতিপক্ষের উপরে চাপ সৃষ্টি করে যাওয়া। বায়ার্নও সেই ছকেই খেলছে। পার্থক্য একটাই— নব্বইয়ের দশকে ম্যাচের দুই অর্ধেই প্রথম পনেরো মিনিট প্রেসিং ফুটবল খেলত বায়ার্ন। এখন পুরো ম্যাচটাই খেলছে ওই ছকে। এর অন্যতম কারণ অবিশ্বাস্য ফিটনেস।
জার্মানির সেই কোচই বলেছিলেন, সর্বোচ্চ পর্যায়ের ফিটনেস না থাকলে প্রেসিং ফুটবল খেলা সম্ভব নয়। আমাদের ধারণা ছিল, মাঠে নেমে বেশি দৌড়লে এবং জিম করলেই ফিটনেস বাড়বে। কিন্তু জার্মানিতে যাওয়ার পরে পুরো ধারণাটাই বদলে যায়। সমতলের পাশাপাশি পাহাড়ি রাস্তাতেও দৌড়তে হবে। এর ফলে কোমরের নীচের অংশের পেশি মজবুত হবে। ফুসফুসের অক্সিজেন গ্রহণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। বায়ার্নের অনুশীলন দেখতে গিয়েই শুনেছিলাম, ওরা প্রাক-মরসুম ট্রেনিং করতে চলে যায় পাহাড়ে। এই সময় ম্যাচ প্র্যাক্টিস কার্যত হয় না। প্রাক-মরসুম প্রস্তুতি শেষ হওয়ার পরেই শুরু করে বল নিয়ে অনুশীলন। এই কারণেই ৩২ বছর বয়সেও লেয়নডস্কি উনিশের আলফান্সো ডেভিসের মতোই ফিট। দ্বিতীয়ত, করোনার ধাক্কা কাটিয়ে ফুটবল ফের শুরু হওয়ার পরে বায়ার্নই সব চেয়ে আগে অনুশীলনে নেমে প়়ড়েছিল।
আমরা যে সময়টায় জার্মানিতে গিয়েছিলাম, তখন ওদের মরসুম শুরু হয়ে গিয়েছিল। লোথার ম্যাথাউস তখন বায়ার্নের হয়ে খেলছেন। এক দিন আমাদের অনুশীলন দেখাতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ম্যাচ যে ভাবে খেলেন, ঠিক সে ভাবেই অনুশীলন করছিলেন বায়ার্নের ফুটবলারেরা। একেবারে নামী শিল্পীদের মতো মানসিকতা— অনুষ্ঠান মঞ্চ হোক অথবা রেওয়াজ, সেরাটাই উজাড় করে দেবেন।
দুরন্ত পারফরম্যান্সের কারণেই অনেকের ধারণা, বার্সেলোনার মতো প্যারিস সাঁ জারমাঁকেও সহজে হারিয়ে দেবে বায়ার্ন। আমি কিন্তু তাঁদের সঙ্গে একমত নই। এই ধরনের ম্যাচের ক্ষেত্রে কখনও ভবিষ্যদ্বাণী করা যায় না। ভুললে চলবে না নেমার দা সিলভা স্যান্টোস (জুনিয়র), কিলিয়ান এমবাপে, অ্যাঙ্খেল দি মারিয়ার মতো তারকা রয়েছে পিএসজি-তে। এই চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ব্রাজিলীয় তারকাকে দেখে তো আমি মুগ্ধ। ওর জন্যই এমবাপে, দি মারিয়া-রা খোলা মনে খেলছে। নেমারই পারে বায়ার্নের আগ্রাসন থামাতে। তা ছাড়া পিএসজি-র ম্যানেজার থোমাস টুহেলও জার্মানির। তিনি জানেন, কী ভাবে বায়ার্নের মতো দলের ছন্দ নষ্ট করে দিতে হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy