Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Gurpreet Singh Sandhu

গোল করতে উঠে গোল খেয়ে একদিন ভিলেন হয়েছিলেন এই গুরপ্রীতই

কাতারের মাঠে অতীতের সব ভুল-ত্রুটি, কেরিয়ারের কালো দাগ অদৃশ্য কোনও ইরেজার দিয়ে যেন মুছে দিলেন গুরপ্রীত। এশিয়ান চ্যাম্পিয়নদের ‘গোলাবর্ষণ’ বুক চিতিয়ে বাঁচালেন।

নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন গুরপ্রীত। ছবি: রয়টার্স।

নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন গুরপ্রীত। ছবি: রয়টার্স।

কৃশানু মজুমদার
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১৪:৪০
Share: Save:

প্রায় সাত বছর আগের এক ম্যাচ গুরপ্রীত সিংহ সান্ধুকে খলনায়ক বানিয়ে দিয়েছিল। সে দিন যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন থেকে মাথা নিচু করে ফিরতে হয়েছিল পঞ্জাবতনয়কে। আই লিগের সেই ম্যাচে ইউনাইটেড স্পোর্টসের বিরুদ্ধে খেলার একেবারে শেষ লগ্নে গোল করার জন্য গুরপ্রীত পৌঁছে গিয়েছিলেন বিপক্ষের পেনাল্টি বক্সে।

তার পর অন্য দৃশ্য দেখেছিল যুবভারতী। একটা লুজ বল ধরে কেন ভিনসেন্ট সাপের মতো এঁকেবেঁকে দৌড়তে দৌড়তে লাল-হলুদের জাল কাঁপিয়ে দেন। ইউনাইটেড স্পোর্টসের ভিনসেন্টকে ধরার মরিয়া একটা চেষ্টা করেছিলেন গুরপ্রীত। কিন্তু, তাঁর নাগাল পাননি। ইস্টবেঙ্গল পেনাল্টি বক্সের ভিতরে মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকতে দেখা গিয়েছিল হতাশ গুরপ্রীতকে। তাঁকে লক্ষ্য করে গ্যালারি থেকে উন্মত্ত লাল-হলুদ সমর্থকদের তীব্র কটাক্ষ উড়ে এসেছিল।

সেই ঘটনার পরে গঙ্গা দিয়ে বয়ে গিয়েছে অনেক জল। নরওয়ের ক্লাবে তিন বছর থেকে গুরপ্রীত নিজেকে নিয়ে গিয়েছেন অন্য এক উচ্চতায়। ভিনসেন্টও ভারত ছেড়ে এখন খেলেন তাইল্যান্ডের ক্লাবে। বুধবার ইউনাইটেড স্পোর্টসের প্রাক্তন স্ট্রাইকার ভিনসেন্ট আনন্দবাজারকে বলেন, ‘‘গুরপ্রীতকে অভিনন্দন। বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জনকারী পর্বের ম্যাচে নিজেকে দারুণ ভাবে প্রতিষ্ঠা করল ও। কাতারের মতো দলকে ও একাই রুখে দিয়েছে। এগিয়ে চল বন্ধু।’’

আরও পড়ুন: এই লড়াইয়ের তুলনা হয় না, টুইট সুনীলের

আরও পড়ুন: নায়ক গুরপ্রীত, সেরা অঘটন ঘটিয়ে কাতারকে আটকে দিল ভারত

মঙ্গলবার কাতারের মাঠে অতীতের সব ভুল-ত্রুটি, কেরিয়ারের কালো দাগ অদৃশ্য কোনও ইরেজার দিয়ে যেন মুছে দিলেন গুরপ্রীত। কাতারের ‘গোলাবর্ষণ’ বুক চিতিয়ে বাঁচালেন। ভারতের বারের নীচে তিনি যেন হয়ে উঠেছিলেন ‘নীলকণ্ঠ’। এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন কাতারের সব বিষ তিনি প্রায় একাই শুষে নেন। পরিসংখ্যান বলছে, ভারতের গোল লক্ষ্য করে ২৭টা শট নিয়েছিল কাতার। গুরপ্রীতকে পরাস্ত করা য়ায়নি। খেলার শেষে সোশ্যাল মিডিয়ায় গুরপ্রীতকে নিয়ে দারুণ চর্চা। ভারতের গোলকিপার টুইট করেন, ‘এই রাত ভোলার নয়। দলের প্রত্যেকেই ইচ্ছাশক্তি ও সাহসের পরিচয় দিয়েছে। এই পারফরম্যান্স একটা দল হিসেবে আমাদের এগিয়ে নিয়ে যাবে। সেই সঙ্গে দেশের নামও উজ্জ্বল করবে।’

খেলার শেষে গুরপ্রীতকে আদর সতীর্থের।

গুরপ্রীত সম্পর্কে কিছু বলতে গিয়ে অতীতে উজ্জ্বল হয়ে উঠত ট্রেভর জেমস মর্গ্যানের চোখ-মুখ। ইস্টবেঙ্গলের কোচ থাকার সময়ে তরুণ গোলকিপারকে নিয়ে প্রায়ই কটূ প্রশ্ন উড়ে আসত সাহেব কোচের দিকে। মর্গ্যান বলতেন, ‘‘ওর পাশে থাকুন। ওর মধ্যে দারুণ সম্ভাবনা রয়েছে।’’ লাল-হলুদ-এ সেই কবেই প্রাক্তন হয়ে গিয়েছেন মর্গ্যান। পুরনো ছাত্রের দারুণ পারফরম্যান্সে এখনও গর্ব বোধ করেন সাহেব কোচ। লন্ডন থেকে বুধবার তিনি বলছিলেন, ‘‘গুরপ্রীতের জন্য আমার দারুণ গর্ব হয়। ও দারুণ উন্নতি করেছে।’’ কাতারকে আটকে দেওয়া প্রসঙ্গে সাহেব বলছেন, ‘‘ভারতের এটা দারুণ পারফরম্যান্স বলতেই হবে। তবে যোগ্যতা অর্জন করতে হলে ভারতের লড়াই কিন্তু খুব কঠিন। হাল ছাড়লে চলবে না।’’

কথায় বলে, ক্যাপ্টেন সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন। গতকাল রাতে সুনীল ছেত্রী অসুস্থ থাকায় খেলতে পারেননি। গুরপ্রীতের হাতে ওঠে নেতৃত্বের আর্মব্যান্ড। শেষ প্রহরী হয়ে দলকে নেতৃত্ব দেন তিনি। খেলার শেষে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়তে দেখা যায় ভারতের গোলকিপারকে। গ্যালারিতে উপস্থিত ভারতীয় সমর্থকদের উদ্দেশে তিনি ইঙ্গিত করে যেন বলার চেষ্টা করছিলেন, ‘‘আমাকে ভুলো না।’’ এমন দুরন্ত পারফরম্যান্সের পরে গুরপ্রীতকে কি কেউ ভুলে যেতে পারেন?

খেলার শেষে গুরপ্রীত।

এক সময়ে তাঁর সতীর্থ মেহতাব হোসেন বলছিলেন, ‘‘বিদেশে গিয়ে ট্রেনিং নেওয়ার জন্যই গুরপ্রীত এত উন্নতি করেছে। কলকাতায় থাকলে চাপেই ও শেষ হয়ে যেত। ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগানে খেলার যা চাপ!’’ সেই সময়ে হয়তো চাপ অনুভব করতেন গুরপ্রীতও। মুখে কিছু বলতেন না তিনি। এক বার কল্যাণীর মাঠে সেই ইউনাইটেড স্পোর্টসের কাছেই হতশ্রী গোল হজম করে বসেন জাতীয় দলের গোলকিপার। প্রায় মাঝমাঠ থেকে শট নিয়েছিলেন কোস্তারিকার বিশ্বকাপার কার্লোস হার্নান্দেজ। অদ্ভুত ভাবে গোল খেয়েছিলেন গুরপ্রীত। লাল-হলুদে‌র ডিফেন্ডার গুরবিন্দর সিংহ বলেছিলেন, ‘‘বল মাটিতে পড়ে স্পিন করে যে গোলে ঢোকে, এমন দৃশ্য এর আগে দেখিনি।’’ এর পরেও সাহেব কোচ ও এশিয়ান অল-স্টার খ্যাত গোলকিপার অতনু ভট্টাচার্য পঞ্জাবতনয়ের উপরে আস্থা হারাননি। লাল-হলুদ-এর গোলকিপার কোচ অতনু বলতেন, ‘‘গুরপ্রীতের যা উচ্চতা, তাতে যে কোনও কোচই ওকে গোলরক্ষার দায়িত্ব দেবেন।’’

কাতারের বিরুদ্ধে প্রাক্তন ছাত্রের উজ্জীবিত পারফরম্যান্সের পরে মর্গ্যান বলছেন, ‘‘গুরপ্রীতের জন্য আমি খুশি। ও প্র্যাকটিসের সময়ে কঠিন অনুশীলন করত। ওর ইতিবাচক মানসিকতা আমাকে মুগ্ধ করেছিল।’’ গুরপ্রীতের উপরে কখনও আস্থা হারাননি মর্গ্যান। গোটা দেশের শ্বাসপ্রশ্বাসে এখন শুধুই গুরপ্রীত সিংহ সান্ধু। গোলে গুরপ্রীত মানেই দেশ নিরাপদ।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy