Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Durand Cup

রেফারির সিদ্ধান্ত নিয়ে ক্ষুব্ধ আলেয়ান্দ্রো, ডুরান্ড কাপ ফাইনালে গোকুলম

পেনাল্টি স্পট থেকে গোললাইন, পৃথিবীর রহস্যময় সরণী। সেখানে পথ হারালেন ডিকা, কোলাডো, তনডোম্বা।

জোসেফ মার্কাসকে আটকানোর চেষ্টায় ইস্টবেঙ্গলের ডিফেন্ডাররা।

জোসেফ মার্কাসকে আটকানোর চেষ্টায় ইস্টবেঙ্গলের ডিফেন্ডাররা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০১৯ ১৮:২৯
Share: Save:

ইস্টবেঙ্গল — ১ (২) গোকুলম — ১ (৩)

(সামাদ) (মার্কাস)

খেলার বয়স তখন ৯০ মিনিট। অতিরিক্ত ছ’ মিনিট সময় দেওয়া হয়েছে। ইস্টবেঙ্গল তখনও এগিয়ে রয়েছে ১-০ গোলে। গ্যালারিতে উপস্থিত লাল-হলুদ দর্শকরা কেবল ঘড়ি দেখছেন। রেফারি তেজাসের শেষ বাঁশির অপেক্ষায় তাঁরা। হঠাৎই ছন্দপতন।

গতবার মোহনবাগানের জার্সিতে খেলা হেনরি কিসেক্কাকে পেনাল্টি বক্সের ভিতরে টেনে ফেলে দিলেন মেহতাব সিংহ। তখনই আকাশ ভেঙে পড়ে লাল-হলুদ সমর্থকদের মাথায়। পেনাল্টির সিদ্ধান্ত দেন রেফারি। মেহতাবকে মার্চিং অর্ডার দেওয়া হয়। দশ জনে নেমে যায় ইস্টবেঙ্গল। পেনাল্টি স্পট থেকে মার্কাস জোসেফ সমতা ফেরান ম্যাচে। মার্কাস জোসেফের গোলে জীবন ফিরে পায় গোকুলম। ইস্টবেঙ্গল হয়ে পড়ে শক্তিহীন। ম্যাচ গড়ায় পোনাল্টি শুট আউটে।

পেনাল্টি স্পট থেকে গোললাইন, পৃথিবীর রহস্যময় সরণী। সেখানে পথ হারালেন ডিকা, কোলাডো, তনডোম্বা। পাঁচটা শটের মধ্যে তিনটি শট থেকে গোল হল না! বিস্মিত সবাই। হতশ্রী পেনাল্টি মারলেন ইস্টবেঙ্গলের ফুটবলাররা। সে সব দেখে সাইডলাইনের ধারে দাঁড়ানো আলেয়ান্দ্রো হতাশায় মাথা নাড়াচ্ছিলেন। কী ম্যাচ, কী হয়ে গেল! গোকুলমের ব্রুনো পেলিসারি, জাস্টিন, লালরোমাওইয়া গোল করায় ফাইনালের ছাড়পত্র পায় কেরলের ক্লাবটি। ইস্টবেঙ্গলের প্রাক্তন গোলকিপার উবেইদের হাতে থেমে গেল আলেয়ান্দ্রোর ছেলেদের দৌড়।

সাংবাদিক বৈঠকে ইস্টবেঙ্গল কোচ রেফারিংয়ের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন। পেনাল্টির সিদ্ধান্তে তিনি ক্ষিপ্ত। আলেয়ান্দ্রো বলেন, ‘‘একই অপরাধে লাল কার্ড আর পেনাল্টি দেওয়া হল। এরকম নিয়ম তো আজকাল দেখা যায় না। কেন এমন সিদ্ধান্ত দিলেন রেফারি তা বুঝলাম না।’’ ম্যাচ হেরে ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা রেফারিকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছেন।

আরও পড়ুন: সেমিফাইনালে ধোনির ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে এ বার তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করলেন সহবাগ

যদিও সেমিফাইনালের ম্যাচের পরিণতি অন্যরকম হতেই পারত। ১৯ মিনিটে সামাদ আলি মল্লিকের বিশ্বমানের গোলে এগিয়ে যায় ইস্টবেঙ্গল। সুপার কাপ ফাইনালে সামাদের পাহাড়প্রমাণ ভুলে ডুবতে হয়েছিল ইস্টবঙ্গলকে। বেঙ্গালুরুর মতো কঠিন প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে অহেতুক মেরে লাল কার্ড দেখেছিলেন তিনি। আজ, বুধবার যুববারতীতে দুরন্ত গোল করলেন তিনি। প্রায় ৩০ গজ দূর থেকে সামাদের শট প্যারাবোলার মতো গোঁত খেয়ে গোকুলমের জালে বল জড়িয়ে যায়। তাঁর মারা শট গোকুলম ফুটবলারের পায়ে লেগে গোল হয়।

কলকাতা ময়দান এরকম গোল বহুদিন দেখেনি। ওই রকম গোল বিপক্ষের মনোবল মুহূর্তে গুঁড়িয়ে দিতে পারে। আবার ওই গোল এক লাফে মনোবল বাড়িয়ে দিতে পারে দলের সতীর্থদের। সামাদের গোল ইস্টবেঙ্গলের শরীরী ভাষাটাই বদলে দিয়েছিল। কিন্তু, তাঁর ভাগ্য খারাপ। তাঁর দলেরও ভাগ্য খারাপ। কড়া ট্যাকলে চোট পেয়ে মাঠ থেকে বেরিয়ে যেতে হয় সামাদকে। খেলার একেবারে শেষ লগ্নে হেনরিকে পেনাল্টি বক্সে টেনে ফেলে দেন মেহতাব।

ম্যাচের চিত্রনাট্য বদলে যায় তখনই। আর মিনিট দুয়েক গোকুলমের আক্রমণ সামলে দিতে পারলেই তো ইস্টবেঙ্গল পৌঁছে যেত ডুরান্ড কাপের ফাইনালে। গোকুলমের মরণকামড় থেকে রক্ষা পেল না ইস্টবেঙ্গল। ডুরান্ড কাপে দারুণ ছন্দে ছিল গোকুলমের ফরোয়ার্ড লাইন। মার্কাস জোসেফ মেঘের উপর দিয়ে হাঁটছিলেন। সেই মার্কাস জোসেফকে গোটা ম্যাচে ভয়ঙ্কর হতে দেননি ক্রেসপি-মিরশাদরা। ইস্টবেঙ্গলের বারের নীচে অসম্ভব ভাল ম্যাচ খেলেন মিরশাদ। একাধিক বার বাঁচিয়েছেন ইস্টবেঙ্গলকে। কিন্তু, পেনাল্টি শুট আউটে আর পারলেন না। অবশ্য সতীর্থরা যদি হতশ্রী শট মারেন, তা হলে গোলকিপার আর কী করবেন! ইস্টবেঙ্গলের দিকে দুলতে থাকা ম্যাচ জিতে গোকুলম চলে গেল ফাইনালে।

তবে আলেয়ান্দ্রোর ছেলেরা মরিয়া লড়াই করেছেন। বেশ চনমনে দেখিয়েছে পিন্টুদের। গোকুলমের মতো শারীরিক দিক থেকে শক্তিশালী একটা দলের বিরুদ্ধে মরিয়া হয়ে লড়েছে। মরশুমের প্রথম টুর্নামেন্ট। আলেয়ান্দ্রো নিশ্চয় তাঁর ছেলেদের বোঝাবেন, মুহূর্তের ছন্দপতন বিপদ ডেকে আনতে পারে। নব্বই মিনিট পর্যন্ত মনোসংযোগ ধরে রাখতে হবে। কারণ খেলাটার নাম যে ফুটবল।

অন্য বিষয়গুলি:

Durand Cup East Bengal Gokulam
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE