জার্মান-ব্রিগেড। মঙ্গলবার অনুশীলনে। ছবি: রয়টার্স
ফরাসিতে সোয়াফ দো রোভশঁ— বাংলায় প্রতিশোধের জন্য মরিয়া।
মঙ্গলবার ফ্রান্সের জনপ্রিয় ক্রীড়া দৈনিক লেকিপ-এর শিরোনাম এটাই। প্রতিশোধস্পৃহা তো থাকবেই গ্রিজম্যান, পোগবা-সহ গোটা ফ্রান্সের! ফরাসিদের হার্টথ্রব আঁতোয়া গ্রিজম্যান প্রতিশোধ নিতে চান দু’বছর আগে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে জার্মানদের কাছে হারের।
প্রতিশোধের আগুনে আরও ঘি ঢালতে ফরাসি পত্রপত্রিকাগুলোতে এ দিন সচিত্র প্রতিবেদনও ছেপেছে ১৯৮২ বিশ্বকাপের সেই রক্তাক্ত সেমিফাইনালের। যেখানে জার্মান গোলকিপার শুমাখারের সঙ্গে সংঘর্ষে মাঠে হৃদস্পন্দন সাময়িক বন্ধ হয়ে গিয়েছিল ফ্রান্সের বাঁতিস্তর। জার্মানদের কাছে টাইব্রেকারে হেরে বিশ্বকাপ থেকে বিদায়ের যন্ত্রণার সঙ্গে সঙ্গে ড্রেসিংরুমে কী ভাবে আতঙ্কের প্রহর কাটাতে হয়েছিল প্লাতিনিদের, সেই ঘটনাও বড় করে লেখা হয়েছে ফরাসি কাগজগুলোতে। সঙ্গে আবেদন, বৃহস্পতিবার মাঠ ভরিয়ে দেওয়ার। শব্দব্রহ্মেই যাতে কাঁপিয়ে দেওয়া যায় জার্মানদের।
দেশোয়ালি সাংবাদিকদের কাছে সে খবর শুনে বর্তমান জার্মান কোচ জোয়াকিম লো’র পাল্টা চিমটি, ‘‘দুর্দান্ত একটা সেমিফাইনাল হবে। যেমনটা হয়েছিল দু’বছর আগে ব্রাজিলে। ওখানেও মাঠ ও মাঠের বাইরে দু’কোটি জনতা গলা ফাটিয়েছিল আমাদের বিরুদ্ধে। কী হয়েছিল তা আপনারাই জানেন। এখানেও আমরা তৈরি।’’
গত আটান্ন বছরে কোনও বড় টুর্নামেন্টে জার্মানিকে হারাতে পারেনি ফরাসিরা। সেই ১৯৫৮ তে পেলে-গ্যারিঞ্চাময় বিশ্বকাপে শেষ বার ফঁত্যার দাপটে জার্মানিকে হারিয়ে তৃতীয় হয়েছিল ফ্রান্স। এ বার ঘরের মাঠে কি নতুন ইতিহাস রচনা হবে? এ বার নির্লিপ্ত উত্তর জোয়াকিম লো’র। ‘‘আমাদের টিম তো চোটে কাহিল। প্রায় হাসপাতালের চেহারা। সেখানে ওরা ফর্মে রয়েছে। তাই ফরাসিরাই এই ম্যাচে ফেভারিট।’’
জার্মান শিবির সূত্রে আবার খবর, হুমেলস, খেদিরা, মারিও গোমেজ না থাকায় এ বার আর ইতালি ম্যাচের মতো আর ৩-৫-২ নয়, ৪-৪-২ ছকেই নাকি গ্রিজম্যানদের মোকাবিলা করার কথা ভাবছেন লো এবং তাঁর সহকারী অলিভার বিয়েরহফ। জার্মান সমর্থকদের এখন স্বদেশীয় সাংবাদিক দেখলে একটাই প্রশ্ন— সেমিফাইনালে কি সোয়াইনস্টাইগার সুস্থ হয়ে খেলবেন? এ দিন জার্মান কোচ সাংবাদিকদের যা বলেছেন তা কিন্তু আশার আলো দেখাতে পারছে না। ‘‘সেমিফাইনালের আগে যারা একশো শতাংশ সুস্থ হয়ে উঠতে পারবে না, তাদের প্রথম দলে রাখব না। কারণ এ ধরনের বড় ম্যাচে পনেরো-কুড়ি মিনিটের পর ১০ জন হয়ে যেতে কে চায়?’’ উঠছে ২০০৮ ইউরো সেমিফাইনালে চোট নিয়ে মিশায়েল বালাকের খেলার সেই ঘটনা। যেখানে স্পেনের কাছে হারতে হয়েছিল জার্মানদের। তাই সুস্থ না হলে সোয়াইনস্টাইগারকে নিয়ে ঝুঁকি নিতে চাইছেন না বিশ্বজয়ী জার্মান কোচ।
টমাস মুলারের সঙ্গে এ দিন সাংবাদিক বৈঠকে এসেছিলেন বিয়েরহফ। তিনিও আবার চিমটি কেটে গিয়েছেন, ‘‘ভুলে যাবেন না গত এগারোটা টুর্নামেন্টের ন’টাতেই কিন্তু সেমিফাইনাল খেলেছি আমরা। ফরাসিদের জন্যও আমরা তৈরি।’’
আর টমাস মুলার! যাঁকে কয়েক দিন আগে পর্যন্ত জার্মানির যুব ফুটবলারদের আদর্শ বলা হচ্ছিল, ইউরোতে তিনি তো একেবারেই অফ ফর্মে। এখনও পর্যন্ত টুর্নামেন্টে কোনও গোল নেই। উল্টে ইতালির বিরুদ্ধে পেনাল্টিও ফস্কেছেন। ফ্রান্স ম্যাচের আগে সে কথা উঠতেই মুলারের সোজাসাপটা জবাব, ‘‘ফ্রান্সকে ভয় পেতে যাব কোন দুঃখে! আইসল্যান্ড ওদের রক্ষণে অনেক ভুল করেছিল। তাতেই ওদের পাঁচ গোল। সেগুলো চিহ্নিত করেছি আমরা। ওই জায়গাগুলো আঁটসাঁট করে দেখব ওদের ফরোয়ার্ডরা কী করে।’’ পরক্ষণেই আবার তাঁর সৌজন্য, সহিষ্ণুতায় মাখা উত্তর, ‘‘ওরা কিন্তু ভাগ্যের জোরে শেষ চারে ওঠেনি। টুর্নামেন্টের অন্যতম ফেভারিটও। আর বিশেষ করে জিরুঁ, গ্রিজম্যান আর পায়েত তো গোল করেই যাচ্ছে।’’ আর আপনি? এ বার চেগে ওঠেন কলকাতার ইস্টবেঙ্গল মাঠে খেলে যাওয়া জার্মান, ‘‘গোল করলে শান্তি পাই। তবে গোলটা আমার গাড়ির জ্বালানি নয়। রঙিন সাজগোজ বলতে পারেন। দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপে টপ স্কোরার হয়েও কাপ পাইনি। ব্রাজিলে কিন্তু বিশ্বজয় করেছিলাম টপ স্কোরার না হয়েও। টুর্নামেন্ট জেতার জন্য আমার জ্বালানি মজুত করা আছে।’’
জার্মানরা জানে, এখনও অফ ফর্মে থাকলেও এই টিমকে জিরুঁদের বিরুদ্ধে জিতিয়ে একাই ফাইনালে তোলার ক্ষমতা রাখেন মুলার। লো’-বিয়েরহফের সেই তেরো নম্বর জার্সির জন্য এ দিন সকালেই আবার এসেছে কিংবদন্তি বেকেনবাউয়ারের ভোকাল টনিক। তাঁর দেশের সংবাদপত্র ‘বিল্ড’-এর মাধ্যমে কাইজার মুলারকে বলেছেন, ‘‘তুমি যে রকম খেল সে রকমই তো খেলছ। চিন্তার কিছু নেই। খালি গোলটাই পাচ্ছ না। এখনও তো দু’টো ম্যাচ বাকি। কে বলতে পারে, সেমিফাইনাল থেকে তুমি আবার গোলের মধ্যে ফিরবে না।’’
জার্মান মায়েস্ত্রোর ভোকাল টনিক কি রাঙিয়ে দিয়ে যাবে মুলারের গাড়ির সাজসজ্জা?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy