শেষ বার এই কলামের মাধ্যমে আনন্দবাজারের পাঠকের সঙ্গে আমার যোগাযোগ হয়েছিল, সে দিনটা ছিল রাজস্থান রয়্যালসের সঙ্গে কেকেআরের মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের ঠিক আগে। এই মুহূর্তে আমি দিল্লির বাড়িতে আর প্রচণ্ড গরমে কাহিল হচ্ছি। অন্তত এক সপ্তাহ খেলব না, এমনকী ট্রেনিংও করব না।
যদিও এর সঙ্গে তীব্র গরমের সম্পর্ক নেই। আসলে নিজের খেলা, ট্রেনিং— এ সব থেকে সুইচ অফ করে টিভির সুইচ অন করেছি ক্রিকেট খেলাটার সবচেয়ে খাঁটি ফর্ম— টেস্ট ক্রিকেটকে উপভোগ করতে। বসার ঘরের সোফার এক কোণে বসেছি যাতে টিভি সেটটা একেবারে সামনে পাই। ঘনঘন ঠান্ডা পানীয় খেতে খেতে দেখছি লর্ডসে এ দিনই শুরু হওয়া ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ড টেস্ট সিরিজ। দেখছি কী ভাবে একটা সময় ৩০-৪-এ খোঁড়ানো ইংল্যান্ড ১৮২-৪ স্কোরে পৌঁছে পাল্টা লড়াই দিচ্ছে।
যিনিই ঠিক করে থাকুন না কেন, টেস্ট ক্রিকেট সর্বদা বড় অক্ষরের ‘টি’ দিয়ে শুরু করা উচিত, তিনি আমার কুর্নিশ নেবেন। কী যে অফুরন্ত মজা এর ভেতর! বারবার মনে হচ্ছে, এখন যদি লর্ডসে নিউজিল্যান্ডের নেতৃত্ব না দিয়ে ব্রেন্ডন ম্যাকালাম আইপিএলে ওর ফ্র্যাঞ্চাইজির দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার ম্যাচের ভাগ্যের সঙ্গে জড়িয়ে থাকত!
ম্যাকালামের চেন্নাই সুপার কিংগসের কাছে এটা বিরাট ম্যাচ। ওদের প্রতিপক্ষ বেঙ্গালুরু খুব ভাল ক্রিকেটটা খেলছে। দু’টো দলই টি-টোয়েন্টির সত্যিকারের স্পিরিটে খেলে। দু’টো দলই ক্রিকেটের প্রচলিত ধ্যানধারণাকে নস্যাৎ করে প্রথম বল থেকেই অলআউট ঝাঁপায়। অন্য অনেক কৃতিত্ব বাদ দিয়েও চেন্নাই এই টুর্নামেন্টটা দু’বার জিতেছে আর তিন বার রানার্স আপ। বড় ম্যাচগুলো কী ভাবে খেলতে হয় ওরা জানে। অন্য দি কে আরসিবি এই মুহূর্তে ছন্দে রয়েছে। যেটা সমান গুরুত্বপূর্ণ, যদি না তার চেয়েও বেশি কিছু!
আজ সন্ধেয় কোনও প্রোগ্রাম রাখবেন না। কেননা ম্যাচটায় চূড়ান্ত উত্তেজক একটা লড়াই হওয়ার সমস্ত প্রতিশ্রুতি রয়েছে। আর তার জন্য আমি দু’টো টিমকেই শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।
রোহিত শর্মার জন্য আমি খুব খুশি। যাবতীয় প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও ও ফের নেতৃত্ব দিয়ে মুম্বইকে ফাইনালে তুলেছে। আমি রোহিতের ব্যাটিংয়ের বিরাট ভক্ত, তবে বেশি ভক্ত ওর ব্যক্তিত্বের। এত প্রতিদ্বন্দ্বিতার যুগে, পিছন থেকে ছুরি মারার যুগে, একনায়কতন্ত্রের যুগে রোহিত টাটকা বাতাস বয়ে এনেছে।
টসের সময় টিভি ভাষ্যকারের রোহিতকে ওর সে দিনের দলটা কী— প্রশ্নের উত্তরে ওকে ওই সামান্য অনিশ্চিত দেখানোটাও আমার বেশ লাগে। কিন্তু একবার খেলা শুরু হয়ে গেলে ওকে দেখে মনে হয় পরিস্থিতি পুরোপুরি ওর নিয়ন্ত্রণে। বেশ মনে পড়ছে, এ বছর একটা ম্যাচে হারের পর ও স্রেফ টিমের ডাগ আউটের বাইরে গিয়ে বসে ছিল। ওর সঙ্গে আর বিপক্ষে খেলার সুবাদে বলতে পারি রোহিত এক জন ভীষণ গর্বিত ক্রিকেটার, যে জিততে চায়।
ইডেন গার্ডেন্সে ওর জন্য আমার সমস্ত শুভেচ্ছা রইল। রোহিত আর মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের সঙ্গে সচিন তেন্ডুলকর রয়েছে। আমার মতে এটাই রবিবার চেন্নাইয়ের হলুদ কিংবা বেঙ্গালুরুর লালের তুলনায় ইডেনের গ্যালারিতে অনেক বেশি মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের নীল রং দেখা যাওয়ার অনেক কারণের মধ্যে একটা বড় কারণ হয়ে উঠবে।
নিজেদের কথায় একটু আসা যাক। রাজস্থানের কাছে আমরা হেরেছি কারণ সে দিন আমরা খুব খারাপ ক্রিকেট খেলেছি। নিটফল— আমাদের ব্যাগপত্তর গুছিয়ে বাড়ি ফিরে যেতে হয়েছে। তার পরেও বৃষ্টির আশায় এবং সেটার ঘাড়ে চেপে প্লে-অফে ওঠার প্রতীক্ষায় মুম্বইয়ে বসে থাকাটা যেন আমাদের কাছে আরও বেশি অস্বস্তিকর ছিল।
একজন ক্রীড়াবিদ সব সময় চায় নিজের ভাগ্য সে নিজেই নিয়ন্ত্রণ করবে। অন্যদের ব্যর্থতার জন্য প্রার্থনা করার চেয়ে। খেলা ব্যাপারটা স্রেফ তা নয় আর সে ভাবে হওয়াও উচিত নয়। আমার মতে যে চার দল প্লে-অফে গিয়েছে তারা সেখানে যাওয়ার যোগ্য। আর যারা প্লে-অফে ওঠেনি তারা অত দূর যাওয়ার মতো ভাল টিম ছিল না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy