চমক: অর্থকষ্টে খেলাও ছেড়ে দিচ্ছিলেন গ্রিভস। ছবি আইসিসি।
করোনা পরিস্থিতিতে ক্রিকেটারদের সমস্যার ছবি আরও এক বার উঠে এলো বিশ্বমঞ্চে। বিভিন্ন প্রতিযোগিতা বন্ধ হওয়ায় টান পড়েছে পারিশ্রমিকে। বেঁচে থাকতে বাধ্য হয়ে অন্য পথ বেছে নিতে হয়েছে অনেককেই। কেউ সারা জীবনের মতো ব্যাট, বলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন। কাউকে বেছে নিতে হয়েছে উপার্জনের নতুন রাস্তা।
স্কটল্যান্ডের ক্রিস গ্রিভসের সঙ্গেও একই রকম ঘটনা ঘটেছিল। রবিবার বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ২৮ বলে ৪৫ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস-সহ দু’টি উইকেট নেওয়ার পরে স্কটদের অধিনায়ক কাইল কোয়েটজ়ার আবেগপ্রবণ হয়ে বলেই ফেলেন, ‘‘গ্রিভসের সাফল্যে আমি খুশি। কয়েক দিন আগেই ডেলিভারি বয় হিসেবে ঘরে ঘরে প্রয়োজনীয় বস্তু পৌঁছে দিত ও।’’
মুহূর্তের মধ্যে এই তথ্য ছড়িয়ে পড়ে গণমাধ্যমে। ইনস্টাগ্রাম ও টুইটারে ভক্তদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। প্রত্যেকের মুখে একটাই প্রশ্ন, কী করে এই কাজ করার পাশাপাশি ক্রিকেট চালিয়ে গেলেন গ্রিভস? কী করেই বা পরিবারের আর্থিক সমস্যার সমাধান করলেন?
আনন্দবাজারও এই তথ্যের সন্ধানে নেমে পড়ল। সোমবার গ্রিভসের সঙ্গিনী আলেক্সিস হারভির কাছ থেকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও পাওয়া গেল। গ্রিভসের জন্ম হয় দক্ষিণ আফ্রিকায়। সেখান থেকেই ক্রিকেটের প্রতি তাঁর এত টান। জাক কালিসকে দেখেই অলরাউন্ডার হওয়ার স্বপ্ন দেখা শুরু। দক্ষিণ আফ্রিকায় সফরকারী দল হিসেবে সিরিজ় খেলতে গিয়েছিল ইংল্যান্ড। সেখানে ইংল্যান্ড দলের প্রস্তুতিতে নেট বোলার হিসেবে বল করতে গিয়েছিলেন গ্রিভস। তাঁর লেগস্পিন নজর কাড়ে প্রাক্তন উইকেটকিপার ম্যাট প্রায়রের। গ্রিভস জানিয়েছিলেন, স্কটল্যান্ডে তাঁর পরিবারের অনেকেই থাকেন। সেখানে কাউন্টি খেলার কোনও ব্যবস্থা যদি করে দেওয়া যায়, খুবই উপকৃত হবেন তিনি। প্রায়র তখন ই-মেল আইডি চেয়েছিলেন গ্রিভসের থেকে। কিন্তু তখনও ই-মেল ছিল না তাঁর। মায়ের আইডি দেন প্রায়রকে। কয়েক দিনের মধ্যেই গ্রিভসের মায়ের ই-মেলে দেখা যায় ডারহ্যাম কাউন্টি ক্লাব থেকে ডেকে পাঠানো হয়েছে গ্রিভসকে। প্রাক্তন ইংল্যান্ড উইকেটকিপারের সাহায্যেই জীবন পাল্টাতে শুরু করে গ্রিভসের। ধীরে ধীরে তাঁর বিধ্বংসী ব্যাটিং ও লেগস্পিন নজর কাড়তে শুরু করে। ২০১৯ সালে স্কটল্যান্ড ‘এ’ দলে সুযোগ পান। কিন্তু আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক হয় পাপুয়া নিউগিনির বিরুদ্ধে প্রস্তুতি ম্যাচে। রবিবার বাংলাদেশের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় ম্যাচ ছিল তাঁর।
গ্রিভসের জীবনে অন্ধকার নামতে শুরু করে করোনা অতিমারির সময়। সব ধরনের ক্রিকেট বন্ধ। কোনও পারিশ্রমিকও আসছিল না। পরিবারের পাশে দাঁড়াতে বাধ্য হয়ে ডেলিভারি বয় হিসেবে কাজ করতে শুরু করেন তিনি। এক সময় ক্রিকেট ছেড়েও দেবেন বলেছিলেন। কিন্তু সঙ্গিনী আলেক্সিস তাঁকে এই কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে বাধা দেন। আনন্দবাজারকে তিনি বলছিলেন, ‘‘খেলা ছেড়ে দিলে তো দেওয়াই যায়। তা হলে কি আর এই দিনটা দেখতে পেত ও? সারা বিশ্বে বন্দিত হওয়ার সুযোগও আসত না। কঠিন সময় প্রত্যেকের জীবনে আসে। কী ভাবে সেখান থেকে বেরিয়ে আসা যায়, সেটাই আসল পরীক্ষা।’’
সোমবার স্কটদের সাংবাদিক বৈঠক থেকেও বেরিয়ে এলো আরও কিছু তথ্য। মাইকেল লিস্ক জানিয়ে দিলেন, তাঁদের মধ্যে অনেকেই ক্রিকেটের পাশাপাশি কোনও না কোনও পেশার সঙ্গে যুক্ত। কারণ, করোনা পরিস্থিতির মধ্যে পরিবারের পাশে দাঁড়ানো কঠিন হয়ে গিয়েছিল। লিস্ক নিজেও একটি সংস্থার ডেলিভারি বয় হিসেবে কাজ করেছেন। তা ছাড়া দলের কেউ শিক্ষক, কেউ আবার নির্মাণকর্ম সামলে ক্রিকেট খেলেন। আজ, মঙ্গলবার যোগ্যতা অর্জন পর্বের দ্বিতীয় ম্যাচে তাঁদের প্রতিপক্ষ পাপুয়া নিউগিনি। তার আগে লিস্ক বলছিলেন, ‘‘স্কটরা লড়াকু মানসিকতার। আমরা এই প্রতিযোগিতায় খেলতে এসেছি মাত্র একটি সিরিজ় খেলে। কারণ আমাদের খেলার কোনও রাস্তা ছিল না। প্রত্যেকেই তাঁদের পরিবারের জন্য অর্থ উপার্জন করতে কোনও না কোনও কাজে ঢুকে পড়েছিল।’’ যোগ করেন, ‘‘তবে বিশ্বকাপের মূল পর্বে যাওয়ার জন্য নিজেদের উজাড়
করে দেব।’’
করোনায় জীবন বাজি রেখে খেলার পাশাপাশি কাজ করেছেন। ক্রিকেট মাঠে তাঁদের পারফরম্যান্স ঢাকা পড়ে গেলেও জীবনযুদ্ধে গ্রিভসরাই আসল নায়ক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy