বাবর আজমের পাশে পাকিস্তানের প্রাক্তন অধিনায়ক আসিফ ইকবাল।— ফাইল চিত্র।
ওল্ড ট্র্যাফোর্ডের প্রথম টেস্টে হারের পরে সমালোচনায় বিদ্ধ পাকিস্তান। কেউ বলছেন, অধিনায়ক আজহার আলিকে বিভ্রান্ত দেখিয়েছে। আবার কেউ বলেছেন, এই অবস্থা থেকে একমাত্র পাকিস্তানের পক্ষেই হারা সম্ভব!
তিনি কিন্তু অনুজ বাবর আজম, আজহার আলিদের বুক দিয়ে আগলে বলছেন, ‘‘পাকিস্তানও দারুণ লড়াই করেছে। প্রথম টেস্টটা জিততেও পারত। পাকিস্তানের সমালোচনা করার থেকে বরং ইংল্যান্ডকে কতিত্ব দিন।’’
কে তিনি? তিনি আর কেউ নন। পাকিস্তানের প্রাক্তন অধিনায়ক আসিফ ইকবাল। এই ৭৭ বছর বয়সেও তাঁর ক্রিকেট-মস্তিষ্ক দারুণ পরিষ্কার। নিরপেক্ষ ভাবে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডের প্রথম টেস্ট ম্যাচকে কাটাছেঁড়া করে তিনি বলছেন, ‘‘প্রথম ইনিংসে পাকিস্তান ভাল ব্যাটিং করেছে। লিডও নিয়েছিল। দ্বিতীয় ইনিংসে আরও কিছুটা রান করতেই পারত পাকিস্তান। তবে লড়াই থেকে সরে যায়নি কখনও। রান তাড়া করতে নেমে এক সময়ে ১১৭ রানে পাঁচ উইকেট চলে যায় ইংল্যান্ডের। তার পরে দারুণ ভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে ম্যাচ জিতে নেয় ইংল্যান্ড।’’
কঠিন পরিস্থিতিতে জ্বলে ওঠেন জস বাটলার ও ক্রিস ওকস। প্রাক্তন পাক অধিনায়ক বলছেন, ‘‘জন্মলগ্ন থেকেই ক্রিকেট মহান অনিশ্চয়তার খেলা। হয়তো আরও একটু রান করতে পারত পাকিস্তান। বা ইংল্যান্ড যখন পাঁচ উইকেট হারিয়ে বেকায়দায়, তখন স্পিনাররা ডমিনেট করতে পারত। ফাস্ট বোলারদের বেশি ব্যবহার করাও যেতে পারত। কী হলে কী হত, সেটা তো পরের কথা। দারুণ ভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে ম্যাচ জেতার জন্য ইংল্যান্ডকে কৃতিত্ব তো দিতেই হবে।’’
আরও পড়ুন: আইএসএলের দশটি দল দিল জার্সির নকশা, নেই লাল-হলুদ
দেশের হারের পরে প্রাক্তন ক্রিকেটাররা অধিনায়ক আজহার আলিকেই দুষছেন। হাতে নাসিম শাহ ও শাহিন আফ্রিদির মতো গতিশীল তরুণ পেসার থাকা সত্ত্বেও তাঁদের বেশি করে ব্যবহার করা হয়নি। বাটলার-ওকসকে ক্রিজে জমে যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। আজহার আলির দিকে ধেয়ে আসছে সমালোচনার ঝড়। ইডেনে ব্যাট-প্যাড তুলে রাখা আসিফ ইকবাল বর্তমান অধিনায়কের পাশে দাঁড়িয়ে বলছেন, ‘‘সবাই আজহার আলির সমালোচনা করলেও আমি সেই দলে পড়ি না। আজহার আলির কিন্তু ট্রিপল হান্ড্রেড রয়েছে। ওর ব্যাটিং গড় প্রায় ৪৩। একটা ম্যাচ হারলেই ক্যাপ্টেনের সমালোচনা করা উচিত নয়। পাকিস্তানও জিততে পারত। আর জিতলে কেউই আজহার আলিকে সমালোচনা করত না।’’
ইংল্যান্ড-পাকিস্তান টেস্ট সিরিজ মানেই বাড়তি উত্তেজনা। বাড়তি রোমাঞ্চ। বল বিকৃতি, স্পট ফিক্সিং কেলেঙ্কারি— কত ঘটনাই না ঘটেছে দুই দেশের লড়াইয়ে।
১৯৬৭ সালের ওভাল টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে দলের ভাঙনের মুখে জ্বলে ওঠেন স্বয়ং আসিফ ইকবাল। ইন্তিখাব আলমের সঙ্গে ১৯০ রানের পার্টনারশিপ গড়েন তিনি। আসিফ ইকবাল করেন ১৪৬ রান। ইন্তিখাবের অবদান ৫১। নবম উইকেটে সেই রেকর্ড অক্ষত ছিল ৩০ বছর। ১৯৯৮ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জোহানেসবার্গে সেই রেকর্ড ভেঙে দেন দক্ষিণ আফ্রিকার মার্ক বাউচার ও প্যাট সিমকক্স (১৯৫ রান)।
পাকিস্তানের ক্রিকেট মানেই বড় মঞ্চে দারুণ লড়াই। চোখ ধাঁধানো ক্রিকেট খেলে সবার নজর কেড়ে নেওয়া। ওল্ড ট্র্যাফোর্ডের প্রথম ইনিংসে বাবর আজমের ব্যাটিং দেখে সবাই মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁকে নিয়ে কোথায় মাতামাতি! অনুযোগের সুরে ইংল্যান্ডের প্রাক্তন অধিনায়ক নাসের হুসেন সম্প্রতি বলেছেন, বিরাট কোহালির ব্যাটিং দেখে সবাই ‘ধন্য ধন্য’ করেন। বাবর আজমকে নিয়ে বেশি কালিই খরচ হয় না। অতীতে ইমরান খান বলতেন, “ভারতের যদি সচিন তেন্ডুলকর থাকে, তা হলে আমাদেরও রয়েছে ইনজি।’’ অনেকটা সেই সুরেই ৫৮ টেস্টে এগারোটি সেঞ্চুরির মালিক বলছেন, ‘‘সবাই বলে থাকেন বিশ্ব ক্রিকেট এখন ফ্যাব ফোর শাসন করছে। আমি বলব, ফ্যাব ফোর নয়, ফ্যাব ফাইভ দাপট দেখাচ্ছে বিশ্ব ক্রিকেটে। বিরাট কোহালি, স্টিভ স্মিথ, কেন উইলিয়ামসন, জো রুটদের সঙ্গে রাখতে হবে বাবর আজমকেও। বাবর দারুণ ট্যালেন্টেড। একই ক্লাসের ব্যাটসম্যান।’’
ফ্যাব ফোর। কোহালি, স্মিথ, রুট ও উইলিয়ামসন।
ব্যাট হাতে বোলারদের শাসন করলেও কোহালিকে শুনতে হয় গঞ্জনা। নিন্দুকরা প্রশ্ন ছোড়েন, ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেস ব্যাটারির মুখোমুখি হলে এই ‘বিরাট’ দাপট কি দেখা যেত? দারুণ ফর্মের ওয়াসিম আক্রম বা ওয়াকার ইউনিসের বিষাক্ত ডেলিভারিও তো কোনও দিন সামলাতে হয়নি বর্তমান ভারত অধিনায়ককে। তা হলে শ্রেষ্ঠত্বের তাজ কেন উঠবে কোহালির মাথায়? প্রতিবেশী দেশের তারকার প্রতি স্নেহ জড়ানো গলায় আসিফ ইকবাল বলছেন, “এ রকম তুলনা করা অত্যন্ত অন্যায়। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেস ব্যাটারির সময়ে তো খেলতই না কোহালি। আক্রম-ইউনিসের সময়েও নয়। এখনকার সময়ের ক্রিকেটারের সঙ্গে অতীতের ক্রিকেটারের কোনও তুলনা টানাই যায় না। উচিতও নয়। কোহালি এই সময়ের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। এ বিষয়ে কোনও সন্দেহই নেই।”
বদলে গিয়েছে ক্রিকেট। দাপট বেড়েছে টি টোয়েন্টি ক্রিকেটের। প্রশ্নও উঠেছে, মান কি পড়েছে ক্রিকেটের? ভারতের হায়দরাবাদে জন্ম হলেও পাকিস্তানের প্রতিনিধিত্ব করা আসিফ ইকবাল বলছেন, “ক্রিকেটের মান আগের থেকে অনেক উন্নত হয়েছে বলেই আমার বিশ্বাস। বিশেষ করে ফিল্ডিংয়ের মান আগের থেকে এখন অনেক ভাল হয়েছে।”
আরও পড়ুন: আক্রমের ভিডিয়ো, কাদির-মন্ত্রে উদয় নতুন তারা নাসিম
ক্যাপ্টেন থাকার সময়ে নেতিবাচক চিন্তাকে প্রশ্রয় দেননি। ক্রিকেট ছাড়ার পরেও থেকে গিয়েছেন একই রকম পজিটিভ। ম্যাঞ্চেস্টারে হারের পরে যাঁরা পাকিস্তানকে নিয়ে ‘গেল গেল’ রব তুলছেন, তাঁদের জন্য প্রাক্তন পাক অধিনায়কের পরামর্শ, ‘‘ইংল্যান্ড-ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে কী হল? প্রথম টেস্টটা তো জিতেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। পরের দুটো টেস্ট ম্যাচ জিতে সিরিজ জিতে নিল ইংল্যান্ড। অপেক্ষা করা ছাড়া আমাদের কোনও উপায় নেই।’’
পাকিস্তানের দারুণ একটা প্রত্যাবর্তনের অপেক্ষায় আসিফ ইকবাল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy