মজিদের আগে কলকাতা মাতিয়েছিলেন সানজারি।—নিজস্ব চিত্র।
কলকাতা থেকে ইরান ফিরে গিয়ে মজিদ বাসকর এখনও ঘোরের মধ্যেই রয়েছেন। পুরনো শহর আশির ‘বেতাজ বাদশা’কে ভালবাসায় মুড়িয়ে দিয়েছে। শহর কলকাতার উষ্ণতার ছোঁয়া পেয়ে অভিভূত মজিদ। খোরামশায়ার থেকে তিনি বলছিলেন, ‘‘কলকাতা আমাকে অবাক করেছে। অল্পবয়সি ছেলেরা আমার নাম ধরে ডাকছিল। আমি ওদের জিজ্ঞাসা করেছিলাম, তোমরা কি আমার খেলা দেখেছ? ওরা বলল, আপনার খেলা সম্পর্কে অনেক শুনেছি। আমাকে এখনও মনে রেখেছে কলকাতা। আমার ধারণা সত্যিই বদলে গিয়েছে।’’
তিরিশ বছর আগে কলকাতা ছাড়ার পরেও শহরের শ্বাসপ্রশ্বাসে মজিদ। আর তাঁর দেশেরই আহমেদ সানজারি বিস্মৃতির অতলে। কংক্রিটের শহরের তাঁকে নিয়ে আগ্রহ কম। তাঁকে নিয়ে চর্চাও তেমন হয় না। অথচ মজিদ-জামশিদ শহর কাঁপানোর আগে ময়দানে ফুল ফুটিয়েছিলেন তেহরানের সানজারি। মহমেডান স্পোর্টিং ক্লাবের (১৯৭৮ নাগাদ) হয়ে এক মরশুম খেলেছিলেন তিনি। বড় সড় চেহারার জন্য সাদা-কালো জার্সিতে সেন্টার ফরোয়ার্ডে খেলানো হয়েছিল তাঁকে। পঁয়ষট্টির সানজারি তেহরান থেকে আনন্দবাজারকে বললেন, ‘‘ইরানের জাতীয় দলে আমি ডিফেন্সে খেলতাম। কিন্তু, মহমেডান স্পোর্টিংয়ে আমাকে ফরোয়ার্ডে খেলানো হত। মিউজিয়ামের কাছে একটা বড় অ্যাপার্টমেন্টে আমাকে রেখেছিলেন মহমেডান স্পোর্টিংয়ের কর্তারা। সেই মিউজিয়ামটার কথা আমার মনে পড়ছে।’’ প্রায় চল্লিশ বছর আগের ফেলে আসা কলকাতা এখনও উঁকি দেয় তাঁর স্মৃতিতে। সানজারির প্রশ্ন, ‘‘আচ্ছা, মহমেডান স্পোর্টিং এখন কোন ডিভিশনে খেলে?’’
রেড রোডের ধারের ক্লাবের সেই সুনাম এখন আর নেই শোনার পরে খানিকটা যেন দমে গেলেন মজিদ-জামশিদের অগ্রজ। নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়ে কৌতূহলী সানজারির প্রশ্ন, ‘‘সাবির আলি, মহম্মদ হাবিব কেমন আছে? মহম্মদ হাবিব তো আমার ক্যাপ্টেন ছিল। ওদের কথা খুব মনে পড়ে।’’ বার্ধক্য এখন থাবা বসিয়েছে ‘বড়ে মিঞ্চা’ হাবিবের শরীরে। কলকাতা ছেড়ে নিজামের শহরে ফিরে গিয়েছেন সাবির আলি। সানজারির প্রসঙ্গ উঠতেই হায়দরাবাদ থেকে সাবির বললেন, ‘‘সে তো বহু দিন আগের কথা! খুব ভাল খেলত। এক বছরই খেলেছিল মহমেডান স্পোর্টিংয়ে। ইরানের জাতীয় দলের হয়ে অনেক দিন খেলেছিল। ২০০০ সালে তেহরানে আমি ওর সঙ্গে দেখাও করেছিলাম।’’
আরও পড়ুন: বিশ্ব ক্রিকেটের এক সময়ের সেরা এই অলরাউন্ডার এখন কী করছেন জানলে চমকে যাবেন
সানজারি এখন ইরানে কোচিং করান।
মজিদ-জামশিদের মতোই আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসেছিলেন সানজারি। সেখান থেকেই চলে আসেন ‘ফুটবলের মক্কা’য়। স্মৃতির পাতা উল্টে সানজারি বলছিলেন, ‘‘আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক আমাকে মহমেডান স্পোর্টিং ক্লাবের কথা বলেছিলেন। ওঁর কথামতোই চলে আসি খেলতে।’’ এক মরশুম খেলেই সানজারি ফিরে গিয়েছিলেন দেশে। পরে আবারও ফেরেন এ দেশে। কিন্তু, কলকাতায় আর খেলতে দেখা যায়নি তাঁকে।
ইস্টবেঙ্গল ক্লাব-তাঁবুতে মজিদ।
সদ্য কলকাতা ঘুরে গিয়েছেন মজিদ। সেই খবর জানেন সানজারি। প্রতিবেদককে প্রশ্ন ছুড়ে দেন ইরানের জাতীয় দলের প্রাক্তন ফুটবলার, ‘‘মজিদ কি এখনও কলকাতায় রয়েছে? মজিদের সঙ্গে কত দিন কথা হয়নি!’’ ইস্টবেঙ্গলের প্রাক্তন ১২ নম্বর জার্সিধারীও সানজারির খবর তেমন রাখেন না। মজিদ বলছিলেন, ‘‘আমার আগে কলকাতায় খেলে গিয়েছিল সানজারি। এখন ওর খবর আমার জানা নেই।’’ একই দেশে রয়েছেন কলকাতায় খেলে যাওয়া দুই তারকা। অথচ কেউ কারও খোঁজখবর রাখেন না। সানজারি এখন শাহরদারি বন্দর আব্বাস এফসি-র কোচ হিসেবে কাজ করছেন। আর অশক্ত শরীরে এখনও সাতটা-তিনটের চাকরি করে যাচ্ছেন মজিদ। শতবর্ষের ইস্টবেঙ্গল ক্লাব-তাঁবুতে এক মাঝবয়সী ভক্ত মজিদকে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘‘আপনি কি ইস্টবেঙ্গলকে কোচিং করাতে চান?’’ মজিদ হেসে ফেলেছিলেন। মাথা নেড়ে জানিয়ে দিয়েছিলেন কোচিংয়ে তাঁর কোনও আগ্রহ নেই।
সানজারি কিন্তু ফিরতে চান তাঁর পুরনো শহরে। কোচিং করাতে চান এ দেশের কোনও ক্লাবে। এএফসি-র প্রো লাইসেন্স সার্টিফিকেট রয়েছে। অতীতে ডেম্পোয় কোচিং করিয়েছেন তিনি। ইরান-আর্মেনিয়ার একাধিক ক্লাবের রিমোট কন্ট্রোল হাতে ঘুরেছে তাঁর। সানজারির বন্ধু আহসান ইয়াজদানি বলছিলেন, ‘‘ইরানে জীবন চালানো খুব কঠিন। সানজারি ভারতে কোচিং করাতে চান। কোচিং করানোর সব সার্টিফিকেটই রয়েছে ওঁর।’’ সানজারি বলছেন, ‘‘ভারতে আমি বহু বার গিয়েছি। আমার মেয়ের বিয়ে হয়েছে মুম্বইতে। ২০০০ সালে আমি ডেম্পোয় কোচিং করিয়েছি। ২০০৭ সালে জামশেদপুরে কোচিং ডিগ্রি করার জন্য গিয়েছিলাম। আরও একবার ফিরতে চাই ভারতে।’’
ভারতীয় ফুটবলের মানচিত্র এখন বদলে গিয়েছে। ইন্ডিয়ান সুপার লিগ (আইএসএল), আই লিগ-এর রমরমা এ দেশে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের কোচ-ফুটবলাররা এ দেশে নিজেদের কেরিয়ার গড়ছেন। ইরানে বসে সে খবর রাখেন সানজারি। প্রাক্তন সাদা-কালো তারকার প্রশ্ন, ‘‘অনেকেই তো ভারতে এখন কোচিং করাচ্ছেন। আমি খেলে এসেছি, কোচিংও করেছি। আমি কি কোচিং করানোর সুযোগ পেতে পারি না?’’ সানজারির প্রশ্ন কি শুনছেন এ দেশের ক্লাবের কর্ণধাররা?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy